রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় হিমশিম খাচ্ছে কমিশন

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫, ১৪:২৬ , অনলাইন ভার্সন
লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে, এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যৌথ বিবৃতিতে। সে ক্ষেত্রে ওই সময়ের মধ্যেই সংস্কার এবং জুলাই হত্যাযজ্ঞের বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি‌ অর্জন করা প্রয়োজন হবে। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তবে এখন পর্যন্ত মৌলিক কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় হিমশিম খাচ্ছে কমিশন। বিষয়গুলো সমাধান না হলে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় কাটছে না।
জুলাই সনদ চলতি মাসেই দেওয়া এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ভাবনা থেকে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক পদ্ধতি সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সংস্কার প্রস্তাবের বেশির ভাগ দল মোটামুটি একমত হলেও দুটি বিষয়ে প্রায় অনড় অবস্থান নিয়েছে জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। এতে সংলাপে বেশ ভালোই জট লেগেছে। যে দুই বিষয়ে বিএনপির প্রবল আপত্তি, তার একটি হলো সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য কমিটি গঠন, অন্যটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভার উচ্চকক্ষের গঠন পদ্ধতি ও এর এখতিয়ার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সংবিধান ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের জন্য কমিটি গঠনের বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। অনেক দল এ প্রস্তাব সমর্থন করেছে। কিন্তু বিএনপি সংবিধানে এই বিধান যুক্ত করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। দলটি মনে করছে, এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিষয়ে সাংবিধানিক বিধিবিধান যুক্ত করা হলে তা নির্বাহী বিভাগের এখতিয়ার বেশ সীমিত করে দেবে। এতে যে দলই ভোটে জিতে আসুক, তাদের জন্য রাষ্ট্র পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। বিএনপির এ অবস্থান সমর্থন করছে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এনডিএম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও লেবার পার্টি। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, এলডিপি, সিপিবি, বাসদসহ সংলাপে অংশ নেওয়া বাকি ২৪টি দল সংবিধানে নিয়োগ কমিটির বিধান চায়।
জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরাসরি ভোটে আইনসভার নিম্নকক্ষের সদস্য নির্বাচনের বর্তমান বিধান বহাল রেখে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব করেছে ঐকমত্য কমিশন। এ প্রস্তাবটি অনেক দলের সমর্থন পেয়েছে। তবে বিএনপি বলছে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচন একটি অবাস্তব ধারণা। দলটি বলেছে, সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের যে ব্যবস্থা বিদ্যমান, সেটার মতোই নিম্নকক্ষে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনসংখ্যার ভিত্তিতে উচ্চকক্ষের সদস্য নির্বাচন করা যেতে পারে। ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এনডিএম ও লেবার পার্টি বিএনপির এ ধারণা সমর্থন করছে। তবে সংলাপে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ দল বিএনপির এ ধারণার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উভয় কক্ষ চায় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ ইসলামপন্থী দলগুলো। এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, নাগরিক ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদসহ ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষের দাবি করছে। অন্যদিকে সিপিবি ও বাসদ এক কক্ষের সংসদ রাখার পক্ষে।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলো, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) মাঠে সক্রিয় দলগুলোর সাম্প্রতিক বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে আইনসভার গঠনপ্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে দলগুলো কমপক্ষে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো আগে জাতীয় নির্বাচন চায়; অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও এনসিপি চায় আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। তারা মনে করছে, ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে দল তিনটির ভালো করার সুযোগ আছে। এতে বিএনপি এককভাবে জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ফল পেতে পারে, এমন ধারণা ভুল প্রমাণ করা যেতে পারে। এর বাইরে নির্বাচন কমিশন ও মাঠ প্রশাসনের অবস্থাও যাচাই হয়ে যেতে পারে।
টানা সংলাপের পরও দলগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে বড় ধরনের ব্যবধান থেকে যাওয়ায় কমিশন এখন কৌশল বদলাতে শুরু করেছে। প্রকাশ্য সংলাপে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নেপথ্যে প্রভাবশালী দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা চলছে। একই সঙ্গে জট যে যে প্রস্তাব নিয়ে লেগেছে, সেগুলোর মূল ধারণা ঠিক রেখে কিছুটা শিথিল করা যায় কি না, তাও বিবেচনা করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রব্যবস্থার মৌলিক সংস্কারের আলোচনায় যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাচ্ছে তা হলোÑপ্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি গঠন, জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন, বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রীকরণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে আবার যুক্ত করা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ও সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া এবং একজন সংসদ সদস্য কতগুলো পদে থাকতে পারবেন তা।
একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার প্রস্তাব করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় এক ব্যক্তির জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করার বিষয়ে মোটামুটি ঐকমত্য হয়েছে। তবে বিএনপি বলেছে, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে কমিটি গঠনের বিষয়টি সংবিধানে যুক্ত করা হলে এক ব্যক্তির সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী পদে থাকার বিষয়ে দেওয়া সমর্থন প্রত্যাহার করবে তারা।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতি থেকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। এ ছাড়া আইনসভায় উভয় কক্ষের দুই-তৃতীয়াংশে ভোটে সংবিধান সংশোধনের বিধান সুপারিশ করেছে কমিশন। তবে বিএনপি বলছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় কোনো দল ৫০ শতাংশ ভোট পায় না। সে ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশের এ বিধান থাকলে প্রয়োজন হলেও সংবিধান সংশোধন করা যাবে না।
সংলাপে এ পর্যন্ত দুই ধাপে ৫২টি অধিবেশনে কথা হয়েছে। প্রথম ধাপে পৃথকভাবে ৩৩টি দল ও জোটের সঙ্গে ৪৫টি অধিবেশনে কমিশন মতবিনিময় করেছে। দ্বিতীয় ধাপে সব দল ও জোটের সঙ্গে একসঙ্গে আলোচনা চলছে।
সংলাপ প্রায় অচলাবস্থা দেখা দেওয়ার পর্যায়ে গড়ালেও আশা ছাড়ছেন না ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘যেখানে আমাদের যাওয়ার কথা ছিল, সেখানে আমরা এখন পর্যন্ত পৌঁছাতে পারিনি। এখনো আমরা আশাবাদী, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ভূমিকা বুঝতে পারবে।’
বিএনপির হয়ে সংলাপে নেতৃত্ব দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সব বিষয়ে সব দল একমত হতে হবে, এটা গণতান্ত্রিক ধারণা নয়। ভিন্নমত থাকতেই পারে। দেখতে হবে বিভিন্ন ইস্যুতে দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে দলীয় অবস্থান ঠিক করা হচ্ছে কি না।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান মনে করেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া উচিত। এতে নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও দক্ষতা যাচাই করা যাবে।
অন্যদিকে সরকারের ভেতর-বাইরে অনেকে মনে করছেন, আনুষ্ঠানিক সংলাপ ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের বাইরেও বিভিন্ন মহল নানা ইস্যুতে সংলাপের গতিপ্রকৃতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রভাব খাটাচ্ছে। এতে করে ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টায় গতি আনা যাচ্ছে না।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078