প্রাণের ক্যাম্পাস-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৫, ১১:১৪ , অনলাইন ভার্সন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অপরূপ সৌন্দর্য দেখে চোখ যায় জুড়ে আর মন যায় ভরে। এরূপ প্রাণের ক্যাম্পাস মিলবে না আর পৃথিবীর কোথাও গেলে। আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, যার কোনো হয় না তুলনা। ভালোবাসি, মনে প্রাণে ভালোবাসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের জীবনের কত স্মৃতি! দেশ এবং দেশের বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কত ছাত্রছাত্রী। মা যেমন শিশুর হাসি দেখলে তার আনন্দ যায় বেড়ে, তাকে আদর করে ভালোবেসে নেয় কোলে তুলে, মুখে দেয় চুমু, কোলে করে রাখে অনেকক্ষণ ধরে, সোহাগ-ভালোবাসা দিয়ে আলতো করে আগলে রাখে; আমাদের প্রাণের ক্যাম্পাস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে বারবার তাকাই, এর পরও মন বলে, দেখে তৃপ্তি হয়নি। একবার তাকাই গাছপালার দিকে, আবার তাকাই রাস্তাঘাটের দিকে, আবার তাকাই সুন্দর সুন্দর ইমারতের দিকে। কী সুন্দর ঝিরঝির বাতাস এসে গায়ে লাগে। প্যারিস রোডে বড় বড় গাছপালা লাইন বাই লাইন রাস্তার দু’পাশে আছে সুন্দরভাবে দাঁড়িয়ে। পাখিদের কলতানে মন যায় ভরে। গাছের ছায়ায় বসে ছাত্রছাত্রীরা আড্ডায় মেতে ওঠে। গাছে কত রকমের ফুল ফোটে আর কত রকমের ফল ধরে। বাতাসে গাছের পাতাগুলো কী সুন্দর নড়াচড়া করে। ফুলের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। সেই মিষ্টি গন্ধ নাকে এসে লাগলে মনে আনন্দ যায় আরও বেশি বেড়ে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাড়াটা সৌন্দর্যের অপরূপ সমাহারে ভরা। রিকশা থাকে মেয়েদের হলের গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। ছাত্রীরা রিকশায় উঠে বলে, মামা, ক্লাসে যাব, তাড়াতাড়ি করোÑআমাদের আছে তাড়া। ছাত্রছাত্রীরা বিকেলে ইবলিশ চত্বরে থাকে ভরা। একসাথে জমা হয়ে বসে থেকে গল্প করে আর চায়ের দোকানদার মামাকে ডেকে বলে, মামা, গরম গরম চা দেন তাড়াতাড়ি করে। কাঁচা আদা দেবেন একটু বেশি করে। গল্প আর একটু পরপর চায়ের কাপে চুমুক! অনেক রাত পর্যন্ত চলে আড্ডা। আস্তে আস্তে ইবলিশ চত্বর হয়ে যায় ফাঁকা। ছাত্রছাত্রীরা দলে দলে ফেরে হলের দিকে। সারা ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পরে লাইট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এতে ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যায় আরও কয়েক গুণ বেড়ে। উচ্চস্বরে করে গল্প, কেউ বলে জোকস, কেউ ধরে গান, কেউ শুধু হো হো করে হাসে, কেউ এমন সব গল্প করে-না হেসে কেউ থাকতে পারে! ছুটে চলে হলের দিকে। খাবার খায় হলে একসঙ্গে বসে।

ছুটে চলে টিভির রুমে, বাংলাদেশের সঙ্গে অন্য দেশের ক্রিকেট খেলা দেখে। বাংলাদেশের খেলোয়াড় চার বা ছক্কা মারলে হাতে তালি মারে জোরেÑকত মধুময় ক্যাম্পাসের জীবন। কত স্মৃতি যে মনের ভেতর উঁকি মারে। কেমন যেন মনে হয় যাইÑসেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিরে।

বিকেলে ছেলেরা ছুটে চলে মেয়েদের হলের দিকে। কেউ আবার এক টুকরো কাগজে রুম নম্বর লেখে কোনো এক ছাত্রীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, অমুককে বলুন, আমি দাঁড়িয়ে আছি তার জন্য হলের গেটে, কেউ আবার ফোনে কল দেয় তাড়াতাড়ি আসতে, যেন হয় না দেরি। হল থেকে বের হয়ে এসে দেয় মুচকি হাসি, সেই হাসি দেখে কলিজা যায় জুড়ে, মন যায় আনন্দে ভরে। প্রথমে দাঁড়িয়ে করে গল্প, তারপর করে হাঁটাহাঁটি। কখনো আবার হয় কোথাও বসা।
তেঁতুল, আম বা বরইয়ের আচার, চালতার আচার, পেয়ারা, গাজর, শসা, সবরি কলা, আমড়া, ঝালমুড়ি খাওয়া হয় দোকান থেকে কিনে। কেউ আবার খায় শিঙাড়া, চটপটি, পেঁয়াজু, বড়া। কেউ খায় মিষ্টি, কেউ আবার খাবার শেষে খায় মিষ্টি জর্দা আর পান। আহা, ক্যাম্পাসের জীবন কত আনন্দময় ছিল, তা মনে পড়ে অবিরাম।

চারপাশ থেকে ক্যাম্পাসে ছুটে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি। কত ছাত্রছাত্রী কত জায়গা থেকে গাড়িতে এসে ক্লাস করে। ক্যাম্পাসে সারি সারি পার্ক করা আছে অনেক গাড়ি। গাড়িগুলো ক্যাম্পাস থেকে একসঙ্গে ছাড়ে। দেখতে কী সুন্দর লাগে! ক্যাম্পাসের মেইন গেট দিয়ে গাড়িগুলো আসা-যাওয়া করে।

উত্তরবঙ্গের সর্বশ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। অনেক বিশাল এলাকা নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসটা। কলা অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ ও বাণিজ্য অনুষদে অনেক ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয় প্রতিবছর। আরও নতুন নতুন অনেক অনুষদ হয়েছে।

মনে পড়ে, আমাদের ক্যাম্পাসের স্মৃতিগুলোর মধ্যে সুবর্ণজয়ন্তীর সেই কয়েকটা দিনের কথা। সারা ক্যাম্পাস নতুনভাবে সজ্জিত হয়েছিল। মৃণাল হকের সেই শিল্পকর্ম ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে। কত আনন্দ, কত ঘোরাঘুরি, এইখান থেকে ওইখানে ছোটাছুটি। কত শিল্পী এসেছিল সুবর্ণজয়ন্তীতে গান পরিবেশন করতে। আমরা মনোমুগ্ধ হয়ে গান শুনেছিলাম। কত যে হাতে তালি, কত নাচানাচি। কত মজা যে হয়েছিল। শিল্পীরা সবাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ছিল। কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের স্মৃতিচারণা অনুষ্ঠান হয়েছিল।

একজনের স্মৃতিচারণা ছিল অন্যজনের চেয়ে আলাদা। এমন কিছু স্মৃতির কথা শুনে আমরা হাসছি বেশ জোরে জোরে। কত মিডিয়া কর্মী এসেছিল। আমাদের তিন দিনের মেইন মেইন অনুষ্ঠান কোনো এক টিভি চ্যানেল প্রচার করেছিল। আমরা দেখে অনেক মজা পেয়েছিলাম। মনের ডায়েরিতে সে স্মৃতি আছে জমা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়, ভুলি নাই, কোনো দিন ভুলব না।

রাজশাহীর ভাষার আছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। এই মামুর বুটা, মামা, কিবে-কত মনে পড়ে। রাজশাহীতে রিকশাওয়ালারা সবাইকে মামা বলে ডাকে। রাজশাহী ক্যাম্পাসে কালার পিঠা বিক্রি করে। পেঁয়াজ আর মরিচ দিয়ে সেই পিঠা খেতে কী স্বাদ লাগে। কত যে খেয়েছি, তা শুধু মনে পড়ে। আমরা আমেরিকায় থাকি। এখানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কত ছাত্রছাত্রী দেখি। আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো অনুষ্ঠানে প্রবাসে অংশগ্রহণ করি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো বেলুনের সঙ্গে উড়িয়ে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। কিছুদিন আগে একটা অনুষ্ঠানে হলো নিউইয়র্কে। কত ছাত্রছাত্রী ছুটে এসেছিল অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠান শেষে কত রকমের খাবার খাওয়া হয়, একসঙ্গে বসে খাওয়ার মজাটাই আলাদা।

হে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস, তোমাকে ছেড়ে আমরা সুদূর আমেরিকায় বসবাস করলেও কখনো তোমাকে ভুলব না। তোমার স্থান আমাদের অন্তরের অন্তস্তলে গাঁথা। তোমার কত স্মৃতি আজও মনে পড়ে। আমরা যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি ও যারা বর্তমানে করছে, সবাই মিলে স্যালুট জানাই তোমাকে। আমরা হলফ করে বলতে পারি, তোমাকে ভালোবাসি, অনেকের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078