চলছে আম-কাঁঠলির দিন

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫, ২২:১৭ , অনলাইন ভার্সন
বছরের এই সময়টা আসলে মানুষের মনটা বড় আনচান করে উঠে বাড়ি যাওয়ার জন্য। বাড়ি মানে জন্মভিটা, বাড়ি মানে যেখানে লেপ্টে আছে নিরাবরণ শৈশব। আবার যারা শেকড় থেকে বহুদূরে প্রবাসে থাকেন তাদের মনটাও উচাটন করে উঠে। বাড়ি ছেড়ে যারা থাকেন বৈশাখ, জৈষ্ঠ্য এলে কেবল বাড়ির কথা মনে হয় তাদের। মনটা বড়ো হেয়ালী হয়ে যায়। রোদ উঠলে, মেঘ জমলে, বৃষ্টি ঝরলে আকুপাকু লাগে তাদের। ছুটে যেতে চায় ফেলে আসা দিনগুলোর কাছে। তখন কেবলই পাখির কলরব কানে আসে। কেবল পুকুর পাড়ের আম গাছটার কথা মনে হয়। ঘরের টিনের চালে আম পড়ার শব্দটা কানে আসে। সময়টা এমনই, খালি কাঠালের ঘ্রাণ নাকে আসে, গাছে ঝোলা বাদুড়ে খাওয়া আধখানা কাঠালের ছবিটা ভেসে আসে সামনে। জামের রঙ লাগা সাদা সেন্ডু গেঞ্জিটার কথা মনে হয়। আকাশ কালো দেখলে ভাইবোন মিলে দৌড়ে আম গাছের নীচে চলে যাওয়ার কথা, দুষ্টুমি করে গাছে ঢিল ছুঁড়ে সবাইকে বোকা বানানোর দিনগুলোর কথা মনে হয়। পথের পাশে তালের শাস, আনারসের ঝাপি, লটকনের মোহনীয় ঝাড়, থোকা থোকা লিচু-এসব কেবল মনে পড়ে এই দিনগুলো এলে।
দেশে এখন মধুমাস। আম- কাঠলির দিন। ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে জৈষ্ঠ্য গত হলো মাত্র। কিন্তু প্রকৃতিতে আম-কাঠালের গন্ধ এখনো তীব্রভাবে। বাজার সয়লাব মৌসুমি ফলে। সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় প্রচুর আম, কাঁঠাল, লিচু ও আনারসের চাষ হয়। প্রতিটি উপজেলাতেই নানারকম রসালো ফলের উৎপাদন হলেও শ্রীমঙ্গল আর বিয়ানীবাজারে জলঢুপের আনারস, জৈন্তাপুর, ব্রাহ্মণবাজারের  কাঁঠাল, ফেঞ্চুগঞ্জের লিচু ইত্যাদি বেশ আলোচিত। তাছাড়া মৌলভীবাজারের ফলের হাটও বেশ জনপ্রিয়। মোট কথা, সিলেটের শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত এখন ফলের বাজার টুইটম্বুর। অনেকে মৌসুমি ব্যবসায়ী হিসেবে অন্য পেশা ছেড়ে ফলের ব্যবসায় এসেছেন মুনাফার জন্য। প্রতিদিন সিলেটের কদমতলীর আড়তে আসছে ট্রাক বোঝাই নানা ফল। এখান থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে বিভাগের নানা জেলা, উপজেলায়। আবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফলমূলও আছে স্থানীয় বাজারে।
দেখা যাচ্ছে ফলের ব্যবসাও জমে উঠেছে সমানতালে। শহরের মোড়ে মোড়ে পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বাহারী ফল নিয়ে। ফুটপাতেও একই চিত্র। উপচে পড়ছেন ক্রেতারা। নিজের পরিবারের জন্য কিনছেন, আত্নীয় স্বজনকে উপহার পাঠাচ্ছেন। ফলের মৌসুমকে অনেকেই কাজে লাগাচ্ছেন নানাভাবে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ফল উৎসব। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর আয়োজন আছে। আবার সিলেটজুড়ে চলছে মেয়ের বাড়িতে বাবার পক্ষ থেকে ‘আম কাঁঠাল’ দেয়ার ঐতিহ্যবাহী আয়োজন। যদিও আধুনিকতার দাপটে এ সংস্কৃতি এখন বিলোপের পথে তবুও থেমে নেই। রেওয়াজ অনুযায়ী বিয়ের পর মেয়েদের পিত্রালয় (বাবার বাড়ি) থেকে এই মৌসুমে আম-কাঠাল-খই-মুড়ি ইত্যাদি পাঠানো হয়। এ প্রথাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করা হয়। মেয়েরাও এ মাসে বাবার বাড়ি থেকে ফলমূল আসবে বলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। ফলমূলের সাথে দধিসহ মিষ্টিজাত দ্রব্যও থাকে মাঝেমাঝে। এসব সুস্বাদু ফলমূল নিয়ে শ্বশুর পক্ষের লোকজন জামাইর বাড়িতে যান। আর এ দিনকে উপলক্ষ করেই পালন করা হয় নানা অনুষ্ঠান।
জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠ মাস এলেই বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলের নববধূরা শ্বশুরবাড়িতে প্রতীক্ষায় থাকেন, কখন বাবা বা ভাইয়ের বাড়ি থেকে পাঠানো হবে ‘আম-কাঠলি’। বিয়ের প্রথম বছর ‘আম-কাঠলি’ দেওয়া হয় ধুমধাম করে। এই উপলক্ষে দুই পক্ষের আত্মীয়স্বজনদের ঘটে মহামিলন। ফলমূলকে কেন্দ্র করে রচিত হয় সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক উৎসব। ধনী-গরিবনির্বিশেষে, নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী প্রায় সবাই কমবেশি ফল নিয়ে মেয়ে, ভাতিজি-ভাগনি বা বোনের বাড়িতে যান এসময়। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের অনেক এলাকাতেই বংশপরম্পরায় উদ্যাপন করা হয় এই লোক পার্বণ।
মূলত এ আম-কাঠলির সাথে মিশে আছে এক অন্যরকম আবেগ, উচ্ছ্বাস, যা পারিবারিক বন্ধনকে মজবুত করে, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সম্পর্কগুলোকে ভিন্নমাত্রা দেয়।
সব মিলিয়ে সিলেটে এখন আম-কাঠালের দিন চলছে বলা যায়। পাকারসের মধুর হাড়ি যেন উপুড় হয়ে পড়ে আছে সিলেটের পথে প্রান্তরে। আদর, মমতা, প্রীতি আর সৌহার্দ্যরে বার্তা ছড়িয়ে নানা রঙের, নানা ঘ্রাণের ফুল, ফল, রূপ, রস যেন দু’হাত উঁচিয়ে রঙিন করে ডাকছে মানুষকে।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078