৩৬শে জুলাই ২০২৪ : একটি সৃজনশীল গণঅভ্যুত্থান-৫

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ২৩:০০ , অনলাইন ভার্সন
গ্রাফিতি নিয়ে আমাদের আরও কথা বলার আছে। লোকে বলেÑদেয়ালেরও কান আছে। গোপন কথা চুপিসারে বলতে হয়, যাতে অন্য কেউ শুনতে না পায়। এখন দেখছি, দেয়াল শুধু শুনতে পায় না, কথাও বলে। দেয়াললিখন গোপন রাখার জন্য নয়, সর্বজনের কাছে আপন কথা প্রকাশের জন্য। কথা কম, বার্তা বেশি। কথা-চিত্রের মেলবন্ধনে তা অনেক প্রবল ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

আমরা কথা-চিত্রের মিলিত রূপ গ্রাফিতিকে আন্দোলনের ‘মহাকাব্য’ বলেছি। উদাহরণস্বরূপ মাত্র ১৫টি গ্রাফিতির ভাষিক বিবরণ দিয়েছি। আমাদের সংগ্রহে আরও যেসব গ্রাফিতি রয়েছে, সেগুলোর পরিচিতি না দিলে মহাকাব্যের অনেক রূপরস অব্যাখ্যাত ও অনাস্বাদিত থেকে যায়। ছাত্র-জনতার সম্মিলিত আন্দোলন সমাজের একটি পেশাজীবী শ্রেণি শিল্পীদের মনোজগৎকে কীভাবে কতখানি আলোড়িত করেছিল, তারা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে কতটা গভীরে প্রবেশ করেছিলেন, এসব দেয়াললিখন ও পথচিত্র থেকে তা জানা যাবে। টেক্সট ও কন্টেক্স একসঙ্গে আলোচনা না হলে এগুলোর সারবস্তু অনুধাবন ও মর্মোপলব্ধি করা যায় না। গ্রাফিতির বেশির ভাগ শিল্পী বয়সে তরুণ ও নবীন শিক্ষার্থী। অনেক চিত্রকর্মে ও হস্তলিপিতে নবিশি ও অনভিজ্ঞতার ছাপ রয়েছে সত্য, তবে এও সত্য, তাদের আবেগের অন্তর্দৃষ্টির আত্মপ্রকাশের কমতি ছিল না। গ্রাফিতিগুলোতে কদাচিৎ নাম-স্বাক্ষর রয়েছে। যাদের নাম-স্বাক্ষর রয়েছে, তাদের পরিচয় জানা গেলেও নামহীন শিল্পীরা চিরকাল অজানাই থেকে যাবেন। আমরা গ্রাফিতির বিবরণে এসব বিষয় পাঠকের গোচরীভূত করার চেষ্টা করেছি। বর্ণনার পাশাপাশি চিত্রগুলো উপস্থাপন করতে পারলে উত্তম হতো, কিন্তু প্রবন্ধের পরিসরে তা সম্ভব নয়, তাই ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানো’ ছাড়া আমাদের আর অন্য উপায় নেই। মনে রাখা দরকার, গ্রাফিতিগুলো জুলাই আন্দোলনের ‘রাজনৈতিক ইতিহাসে’র সমান্তরালে সৃষ্ট ‘সাংস্কৃতিক ইতিহাস’ও বটে।

গ্রাফিতি একটি যৌথ পথশিল্প। একটি দলে ৮-১০ জন থেকে ২০-২৫ জন শিল্পী ও কর্মী থাকেন। প্রথমে লোক চলাচল করে, তাদের চোখে পড়ে এমন সরকারি-বেসরকারি প্রাচীর নির্বাচন করা হয়; দু-চারজন দেয়াল পরিষ্কার করে প্রত্যাশিত রং লাগিয়ে দেন, যা ক্যানভাস রূপে কাজ করে। তারপর দু-একজন মিলে অভীষ্ট কথা, বচন, পঙ্্ক্তি বা বিশিষ্ট শব্দ লিপিবদ্ধ করেন। এখানে কলমের ব্যবহার নেই, হয় খড়ি দিয়ে অথবা স্প্রে পেইন্ট করে অক্ষর ফুটিয়ে তোলা হয়। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় দেয়াললিখন লক্ষ করা যায়। তারপর কথার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অভিজ্ঞ চিত্রশিল্পী রংতুলি দিয়ে ছবি আঁকেন। শিল্পী পছন্দের রং নিজেই তৈরি করেন, তিনি সহযোগীদের সাহায্যও নিয়ে থাকেন। যারা রাস্তায় নেমে গ্রাফিতি তৈরি করেন, তারা আন্দোলনের অংশীদার, তারা আন্দোলনের আবেগ অন্তরে ধারণ করেই বাণী ও চিত্র ফুটিয়ে তোলেন, যা ‘থট প্রভোকিং’ বা চিন্তা উদ্রেককারী ও গভীর ভাবপ্রকাশক হয়ে থাকে।

ধপরে যখন মানুষের প্রতি মানুষের শোষণ-নির্যাতন বাড়তে থাকে, তখন গ্রাফিতি হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ক্ষোভের বিদ্রোহের জ্বলন্ত ভাষ্য। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘শিল্প এবং সক্রিয়তাবাদ বা অ্যাক্টিভিজম একযোগে যখন প্রাচীরে গ্রাফিতি হয়ে ফুটে উঠতে থাকে, প্রতিবাদ প্রকাশের দৃশ্যমান স্বরূপ হয়ে উঠতে শুরু করে, তখন একদিকে দুনিয়ার নজর পড়তে শুরু করে। বিরোধের প্রাচীর এখন প্রতিরোধের ম্যুরাল হয়ে উঠেছে, পৃথিবীর দর্শকদের নজর টানছে। ভবিষ্যৎ ন্যায্য অধিকার, শান্তি এবং সুন্দর জীবনের আশার বার্তা হয়ে উঠেছে প্রাচীরের প্রতিরোধ অঙ্কন বা লেখন।’ (সৈয়দ মুসা রেজা, ইজেল, ২৪ আগস্ট ২০২৪)।
নির্যাতিত দেশ ও দেশের নির্যাতিত গোষ্ঠীর মধ্যে গ্রাফিতির চর্চা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ‘আরব বসন্তে’ মিসরবাসী, আমেরিকার কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়, বর্তমানে নিপীড়িত ফিলিস্তিনি, হংকংবাসীর কাছে প্রতিবাদী মতপ্রকাশের শিল্পমাধ্যম গ্রাফিতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে গ্রাফিতির চর্চা ‘হাই পিকে’ উঠে এসেছে। গণশিল্প হিসেবে গ্রাফিতি নিয়ে গবেষণাও হচ্ছে। মার্কিন নৃবিজ্ঞানী ও গ্রাফিতি গবেষক সুসাস এ ফিলিপস গ্রাফিতিকে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক মতাদর্শের ‘চাক্ষুষ অভিব্যক্তি’ রূপে আখ্যাত করেছেন। তিনি একে অতি ‘আকর্ষণীয়, জোরালো এবং উত্তেজক’ বলেও মন্তব্য করেছেন। ‘ব্যাঙ্কিস’ ছদ্মনামে ব্রিটিশ পথশিল্পী ফিলিস্তিনিদের গ্রাফিতিকে প্রতিবাদের ‘শক্তিশালী অস্ত্র’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি নিজেও ‘রোজ, দ‍্য ফ্লাওয়ার থ্রোয়ার’, ‘ফ্লাইং বেলুন গার্ল’ শীর্ষক চিত্র এঁকে খ্যাতি অর্জন করেছেন। (ইজেল, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’ বাংলা প্রকাশনা, ২৪ আগস্ট ২০২৪)।
জুলাই ’২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, বিদ্রোহ, সৎসাহস, বৈষম্যহীনতা, অঙ্গীকার, স্বপ্ন, প্রত্যাশা ইত্যাদি নানা মাত্রিক চেতনার বার্তাবহ গ্রাফিতি নিয়ে আলোচনা এখন অতি জরুরি ও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। এখন দূর-দূরান্তের পাঠকের জন্য আরও কতক নির্বাচিত গ্রাফিতির পরিচয় দেওয়া হলো।

প্রথমে সমধর্মী দুটি গ্রাফিতির কথা বলি : ১. সমতল থেকে পাহাড়, এবারের মুক্তি সবার। চিত্রÑনিচে দুজন ছাত্রী ডান হাত উঁচু করে স্লোগান দিচ্ছে। মিরপুরের ১০ নং রোডের দেয়ালে অঙ্কনরত একজন শিল্পীর অভিমত : ‘গ্রাফিতির ভাবনাটি সুমিষ্ট চাকমার। ... পাহাড়ের আদিবাসীদের আমরা অনেক সময় মনে রাখতে পারি না, অথচ পাহাড়ের লোকও বৈষম্যের শিকার, নিগ্রহের শিকার। শুধু সমতলের বৈষম্য দূর করলে মুক্তি আসবে না, সব স্থান থেকে বিভেদ দূর করতে হবে।’ ( ইজেল, ২৪ আগস্ট ২০২৪)। ২. ধর্মবৈষম্য নিপাত যাক। লেখাটি ক্যানভাসের ওপর লিপিকৃত। নিচে এক সারিতে বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান ও হিন্দু চারজনের চিত্র অঙ্কিত; পোশাকের ভিন্নতা দ্বারা তা বোঝানো হয়েছে। চার ধর্মের চারজন প্রতিনিধির অবয়ব এঁকে বোঝানো হয়েছে, দেশটা সবার। এখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রকাশ ঘটেছে।
দাঁড়িপাল্লা নিয়ে দুটি গ্রাফিতি পাওয়া যায় : ৩. হলুদ রঙের স্ট্যান্ডের ওপর ঝোলানো একই রঙের একটি দাঁড়িপাল্লা; ডানদিকের পাল্লায় লেখা ‘দফা ১ দাবি’, বাম দিকের পাল্লায় ‘স্বৈরতন্ত্র’। ওজনে ডান পাল্লা নিচে ঝুলে আছে, যার অর্থ এটি অধিক ভারী। ৪. অপর দাঁড়িপাল্লার রং কালো; এটি একজন নারী বাম হাতে ধরে রয়েছেন, তার চোখ লাল ফিতা দিয়ে বাঁধা। ডান দিকের পাল্লায় রয়েছে বই, পাশে লেখা : ‘ছাত্রসমাজ’ এবং বাম দিকের পাল্লায় রয়েছে অস্ত্র, পাশে লেখা : ‘স্বৈরাচার’। ওজনে ডান পাল্লা ভারী। দাঁড়িপাল্লা ন্যায়বিচারের প্রতীক। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের চেয়ে ছাত্রসমাজের এক দফা দাবি, তার পদত্যাগ যে অধিক ভারী অর্থাৎ ন্যায়সংগত ও যুক্তিসম্মত, এই গ্রাফিতি দুটিতে তা বোঝানো হয়েছে।
৫. মুক্তি অথবা মৃত্যু/ দেশটা সবার। ৬. Yes voice matter/ Motherland or Death. প্রথম শব্দত্রয় ক্যানভাসের বামে বাংলাদেশের মানচিত্রের ওপর এবং দ্বিতীয় শব্দদ্বয় ডানে লাল কালিতে লেখা রয়েছে। মাঝখানে হাতকড়া পরা দুটি মুষ্টিবদ্ধ হাত আঁকা হয়েছে। মুষ্টিবদ্ধ হাত প্রতিবাদের প্রতীক। ইংরেজি ভাষায় লেখা দ্বিতীয় গ্রাফিতির মাঝখানে শিক্ষার্থীরা স্লোগান দিচ্ছে। উভয় গ্রাফিতির উৎস এক ও অভিন্ন। কিউবার রাষ্ট্রবিপ্লবের সময় এর জন্ম; বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ও চে গুয়েভারা তা ব্যবহার করেন। চে গুয়েভারা জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণটি land or Death উক্তি দিয়ে শেষ করেন।
৭. লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না। চিত্র-উপরে জনতার ছবি। শেখ মুজিব বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছেন; অতএব দেশশাসনের অধিকার শেখ হাসিনার ও তার রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের-প্রচারে ও প্রশাসনে এরূপ একটা বয়ান তৈরি হয়েছিল। এরই প্রেক্ষাপটে দেবাশিষ চক্রবর্তী পোস্টারটি এঁকে ফেসবুকে প্রচার করেন। এটি ছাত্রদের স্লোগানে পরিণত হয়। দেশ কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়, দেশ সবারÑস্লোগানের দ্বিতীয়াংশ দ্বারা তা-ই বোঝানো হয়েছে।
সমধর্মী আরও দুটি গ্রাফিতি আছে : ৮. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশটা কারো বাপের না। ৯. দেশটা কারো বাপের না/ ছাত্রসমাজ জেগেছে। চিত্রÑডান পাশে জনতার ছবি; দুটি প্ল্যাকার্ডে পঙ্্ক্তি দুটি লেখা হয়েছে।
১০. এসেছে ফাগুন, হয়েছি আমরা দ্বিগুণ। চিত্র-ক্যানভাসে আগুনের লেলিহান শিখা ও চারটি উত্থিত মুষ্টিবদ্ধ হাত। এর ভাষান্তর : ১১. আসছে ফাগুন আমরা কিন্তু দ্বিগুণ হব। এটি কথাসাহিত্যিক জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’ (১৯৫৫) উপন্যাসের একটি চরিত্রের সংলাপের অংশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উক্তিটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

১২. যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ।/ যদি তুমি রুখে দাঁড়াও, তুমিই বাংলাদেশ। পঙ্্ক্তিদ্বয় নিয়ে নির্মিত দুটি গ্রাফিতি পাওয়া যায়। এর একটি চিত্রের বামে একটি বালকছাত্র দাঁড়িয়ে আছে, উপরে দুটি সাদা পায়রা উড়ছে। বচন। অপর গ্রাফিতিতে দেখা যায়, এটি বাংলাদেশের মানচিত্রের লাল অংশের ওপর কালো অক্ষরে লেখা হয়েছে, আর সামনে একজন যুবক দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে আছে। সম্ভবত এটি আবু সাঈদের ছবি। পঙ্ক্তিদ্বয় ২০১৮ সালে ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে’র সময় রচিত হয়; অর্থগত উচ্চ ‘ফেসভ্যালু’র জন্য ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানেও গৃহীত হয়েছে।

১৩. ২০২৪ বাংলাদেশ। চিত্র-বাম দিকের কোনায় উক্ত সংখ্যা ও শব্দ উপর-নিচ করে লেখা। এর অল্প নিচে গাছের একটি ডাল কোনাকুনিভাবে ডান দিকে প্রসারিত। ডাল থেকে একটি খাঁচা ঝুলছে, দুয়ার খোলা, তিনটি পাখি বের হয়ে উড়ে যাচ্ছে। ডালের একটু উপর দিকে একটি ছোট রঙিন পাখি বসে আছে। নিচে সারিবদ্ধ ফুলের গাছ, নানা রঙের ফুল ফুটে আছে। গ্রাফিতিটি যেমন অর্থবহ, তেমনি নান্দনিক। খাঁচার পাখি বের হয়ে আকাশে ওড়ার মধ্যে মানুষের বন্দিদশা থেকে মুক্তির আনন্দের বার্তা রয়েছে।
১৪. অদম্য বাংলাদেশ, নো বডি ক্যান স্টপ আস। চিত্র-একজন ছাত্রী পুলিশের গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে বাধা দিচ্ছে। ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালনের দিন হাইকোর্টের সামনের ঘটনা অবলম্বনে রচিত। ছবি এঁকেছেন গালিব; তার স্বাক্ষর রয়েছে।

১৫. তুমি হাকিম হইয়া হুকুম করো, পুলিশ হইয়া ধরো। চিত্র-বাম পাশে একজন পুলিশ এক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে; নিচে লেখা-আয়নাঘর। শেখ হাসিনার রেজিমে ‘আয়নাঘর’ ছিল কুখ্যাত টর্চার সেল। ভিন্নমতের লোক ধরে নিয়ে এখানে বন্দী করে রাখা হতো এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো।
১৬. স্বাধীনতা গণতন্ত্র ন্যায়বিচার সহনশীলতা দেশপ্রেম। চিত্র-ক্যানভাসে শহরের উচ্চ দালানসারির মাঝে এই শব্দগুলো লেখা হয়েছে। প্রতিটি শব্দই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করে।

১৭. নাটক অভিনয় রক্তচোষা, এসব ছিল তোমার নেশা।/ তোমার গুণের নাই শেষ, গিলেছিলে গোটা দেশ। চিত্র-নিচে ইংরেজি হরফে কালো কালিতে লেখা Bangladesh; তার ওপর লাল রঙের একটা বিছুটি; তার গায়ে সাদা রঙে লেখা-আপা। ‘আপা’ বলতে শেখ হাসিনাকে বোঝানো হয়েছে। বিছুটির বিষ মরণান্তিক। এর সঙ্গে শেখ হাসিনার তুলনা করার মধ্যে তার খুনি রূপের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ছন্দোবদ্ধ এই পঙ্্ক্তির মধ্যে সাহিত্য রস ও সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে।

১৮. যতবার হত্যা কর জন্মাব আবার/ দারুণ সূর্য হয়ে ফিরব আবার। চিত্র-দুই সারিতে লেখা এই উক্তির উপরে একজন রিকশাচালক মৃতবৎ এক ব্যক্তিকে নিয়ে যাচ্ছে। আহত ব্যক্তি রিকশার পাদানিতে শুয়ে আছেন, তার মাথা নিচের দিকে ঝুলে আছে।

১৯. Compilation of the important statement of the Movement 2024 ২০২৪. চিত্র-শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ অনেকের নাম ও বিবিধ উক্তি দিয়ে গ্রাফিতিটি সাজানো হয়েছে। যেমন ১. সন্তানদের রক্ষা করতে এসেছি, কারোর বাপের প্রয়োজনে আসিনি। ২. জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। ৩. মা তুমি সাবধানে থেকো। ৪. বাবা তোমার বুকেই থাকব আমি। ৫. আসমান কাঁপে, আপনাদের বুক কাঁপে না। ৬. চাই বিবেকের সংস্কার, চাই জাতির সংস্কার। ৭. আমার ভাইকে ছাড়তে হবে। ৮. সম্পদের চেয়ে মানুষের জীবন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ৯. পানি লাগবে কারো পানি। উক্তিগুলো আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড-পোস্টারেও দেখা গেছে। প্রথম উক্তিটি শিল্পী মঞ্জুর আল-মতিনের; শেষ উক্তিটি শহীদ মীর মুগ্ধের। বিটিভিসহ কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার প্রাণহানির কথা না বলে দেশের সম্পদহানির ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ৮ নং গ্রাফিতি এরই প্রেক্ষাপটে রচিত হয়। এখানে ভাষা মৃদু, কিন্তু সুর প্রতিবাদের।

২০. বীর শহীদ। চিত্র-একটি বৃক্ষের পাতায় পাতায় বিভিন্ন শহীদের নাম লেখা, যেমন রিফাত, নুর, সাদ মাহমুদ, সমুদ্র, ইমন, তাহমিদ, মোবারক, মুগ্ধ, আবু সাঈদ, আবির, প্রিয়, জাফর, রাসেল, অরুণ, শাকিল, আরিফ, রিয়াদ, গিয়াস, শান্ত, সেলিম, রিয়া, আবু সায়েদ প্রমুখ। অনুরূপ অপর গ্রাফিতির কথা-আমরা তোমাদের ভুলব না। চিত্র-পঙ্্ক্তিটি বৃক্ষের কাণ্ডে লেখা; নিচ থেকে উপর দিকে প্রতি পাতায় যাদের নাম লেখা আছে, তারা হলেন ইমন, শান্ত, রুদ্র, মুগ্ধ, তামিম, সৈকত (কাণ্ডের বাম দিকে) এবং মোহাম্মদ, ওয়াসিম, রিয়া, আবু সাঈদ, ইরফান, সিয়াম, ইয়াসিন, আহাদ, ফারহান (কাণ্ডের ডান দিকে)।
আমরা আশা করি, দৃষ্টান্তগুলো থেকে গ্রাফিতির বৈচিত্র্য, গভীরতা ও ওজস্বিতা আংশিক হলেও অনুধাবন করতে পারব। [চলবে]
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078