পবিত্র ঈদুল আজহা : ইতিহাস ঐতিহ্য এবং আজকের প্রত্যাশা

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫, ১৯:২২ , অনলাইন ভার্সন
সারা বিশ্বের মুসলমানদের জন্য আনন্দ ও খুশির বার্তা নিয়ে আবারও হাজির হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মুসলমানদের বৃহত্তম দুটি ঈদের একটি হলো ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এই ঈদ। ইসলামের দৃষ্টিতে দুটি ঈদেরই গুরুত্ব ও তাৎপর্যময় ইতিহাস আছে। এর মধ্যে ঈদুল আজহার রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। যে ঈদের উৎপত্তির সঙ্গে মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং তাঁর পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.) জড়িত।

ঈদুল আজহাকে কোরবানির ঈদও বলা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে কোরবানির ঈদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে পিতা ইবরাহিম এবং পুত্র ইসমাইলের মধ্যকার এক মহা অগ্নিপরীক্ষার ইতিহাস। হজরত ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করার এক কঠিন পরীক্ষার মাধ্যমে পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করেছিলেন। একইভাবে সুযোগ্য পুত্র শিশু ইসমাইলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্য দিয়ে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ মানুষের সর্বোত্তম মর্যাদায় উন্নীত হয়েছেন।

আল্লাহ নির্দেশিত কোরবানি করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান ও বিশেষ ইবাদত। মানবতার কল্যাণে সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় পূর্ণতা অর্জনের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে খুশির বার্তাই মূলত ঈদ। ঈদের আনন্দকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ঈদের দিন সবাই সমবেত হন এবং ঈদের সালাত আদায় করেন।

মানবজাতির ইতিহাসে সেই আদিকাল থেকেই তথা হজরত আদম আলাইহিস সালামের যুগ থেকে কোরবানির বিধান চালু আছে। তবে সকল নবীর শরিয়তের ক্ষেত্রে তার বিধান একরকম ছিল না। ইসলামি শরিয়তে যে পদ্ধতি নির্দেশিত হয়েছে, তার মূল সূত্রপাত ঘটে হজরত ইবরাহিম (আ.) এর নিকট থেকে। সেটি মিল্লাতে ইবরাহিম হিসেবে বিদ্যমান ছিল। এ জন্য এই কোরবানিকে ‘সুন্নতে ইবরাহিমি’ বলা হয়।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের এই কোরবানির কথা কোরআন শরিফে একাধিকবার উল্লেখিত হয়েছে। যার সঙ্গে জুড়ে আছে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। বহুদিন ধরে ইবরাহিম (আ.) এর কোনো সন্তান ছিল না। বার্ধক্য জীবনে দাঁড়িয়েও তিনি আল্লাহ তায়ালার কাছে নেক সন্তান প্রার্থনা করেন এভাবে :
‘হে আমার রব! আমাকে নেক সন্তান দান করুন।’ সুরা সাফফাত (৩৭) : ১০০
অবশেষে আল্লাহ ইবরাহিমকে (আ.) পুত্রসন্তান দান করেন। একজন অশীতিপর বৃদ্ধলোক সন্তানের মুখ দেখলে কত আনন্দের হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। ইবরাহিম (আ.) শুধু আনন্দিতই হননি, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় তাঁর হৃদয়, মন ভরে যায়। তিনি শোকর আদায় করে বলেন :
‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে বৃদ্ধ বয়সে ইসমাইল ও ইসহাক দান করেছেন। নিশ্চয় আমার রব প্রার্থনা শ্রবণকারী।’ সুরা ইবরাহিম (১৪) : ৩৯
সেই থেকে সমগ্র মানবজাতির মধ্যে, বিশেষ করে বিশ্ব মুসলিমদের জন্য ঈদুল আজহা উদ্্যাপন করা বাধ্যতামূলক বিধান। মানবতার কল্যাণে চরম ত্যাগ স্বীকার করার অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টান্ত হিসেবে মুসলিম জাতির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ। পৃথিবীতে ইবরাহিমের (আ.) মতো এত পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়া ইতিহাসে বিরল। যার পরীক্ষাপর্ব শুরু হয়েছিল সেই শিশুকাল থেকে। প্রতিটি পরীক্ষায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিল নিজের একমাত্র সন্তানের কোরবানি করার নির্দেশনা। মহান আল্লাহ নির্দেশিত স্বপ্নটি দেখার পর তিনি অনেক ভেবেচিন্তে বুঝতে পেরেছিলেন, প্রিয় পুত্র ইসমাইল ছাড়া আর কোনো প্রিয় বস্তু নেই। তখন তিনি পুত্রকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানির উদ্দেশ্যে প্রস্তুতিসহ পাহাড়ি এলাকার মরুভূমি দিয়ে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এ সময় শয়তান আল্লাহর আদেশ পালন করা থেকে বিরত রাখার জন্য ইবরাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারকে প্রলুব্ধ করছিল। তখন হজরত ইবরাহিম (আ.) শয়তানকে পাথর ছুড়ে মেরে তাড়িয়ে দেন। এখানেও হজরত ইবরাহিম (আ.) শয়তানের ধোঁকায় বিভ্রান্ত না হয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। শয়তানকে তার প্রত্যাখ্যানের কথা স্মরণ করে পবিত্র হজের সময় শয়তানের অবস্থানের চিহ্নস্বরূপ নির্মিত তিনটি স্তম্ভে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এটি হজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হজের প্রতিটি শর্তকে পালন করার মাধ্যমেই পবিত্র হজের পূর্ণতা।

যখন ইবরাহিম আরাফাত পর্বতের ওপর তাঁর পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার জন্য গলদেশে ছুরি চালানোর চেষ্টা করেন, তখন তিনি বিস্মিত হয়ে দেখেন যে তাঁর পুত্রের পরিবর্তে একটি প্রাণী কোরবানি হয়েছে এবং তাঁর পুত্রের কোনো ক্ষতি হয়নি। ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশ পালন দ্বারা কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইবরাহিম (আ.) এর জন্য সেটি ছিল এক কঠিন পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায়ও তিনি সফল হয়েছিলেন। এতে সন্তুষ্ট হয়ে মহান আল্লাহ ইবরাহিমকে (আ.) তাঁর খলিল (বন্ধু) হিসেবে গ্রহণ করেন।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে কোরবানির পূর্ণ ইতিহাস সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন :
‘অতঃপর সে যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হলো, তখন ইবরাহিম তাকে বলল, বৎস! স্বপ্নে দেখলাম, আমি তোমাকে জবেহ করছি; এখন তুমি তোমার অভিমত বলো। সে (ইসমাইল আ.) বলল, হে পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই নির্বিঘ্নে করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীল হিসেবে পাবেন। যখন পিতা-পুত্র উভয়েই আনুগত্য প্রকাশ করল এবং ইবরাহিম তাকে জবেহ করার জন্য শায়িত করল, তখন আমি আল্লাহ তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহিম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখিয়েছ! আমি এভাবেই সৎকর্মীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি।’ সুরা সাফফাত : ১০২-১০৫।

ইবরাহিম (আ.)-এর এই দুম্বা কোরবানি হলো ইসলামি শরিয়তে নির্দেশিত কোরবানির পদ্ধতির মূল সূত্র। (সামর্থ্যবান) মুসলমানদের কর্তব্য হলো (নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট) পশু কোরবানি করা। এটা কোরআন ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘সুতরাং আপনার প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করুন এবং কোরবানি করুন। সুরা কাওসার (১০৮) : ২
বিশ্বনবীর (সা.) সময় হজ ফরজ হওয়ার পর আরাফাত ময়দানে অবস্থানের পর ঈদুল আজহা পালন এবং কোরবানির রীতি চিরকালের জন্য ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে। সামর্থ্যবানদের কোরবানি করা অত‍্যাবশ্যকীয় বিধান। কোরআনুল কারিম এবং হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এবং তাঁর মাধ্যমে গোটা উম্মতকে নামাজ ও কোরবানির আদেশ করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দ্বীন সম্পর্কে জানতে এসেছিল। ফিরে যাওয়ার সময় নবীজি তাকে ডেকে বললেন, আমাকে ‘ইয়াওমুল আযহার’ আদেশ করা হয়েছে। এ দিবসকে আল্লাহ এ উম্মতের জন্য ঈদ বানিয়েছেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৬৫৭৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৭৮৯; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৫৯১৪)

তা ছাড়া নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাদানি জীবনে প্রতিবছর কোরবানি করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় ১০ বছর ছিলেন। প্রতিবছরই তিনি কোরবানি করেছেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস ১৫০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৪৯৫৫)। কোরবানি ঈদের প্রধান শিক্ষা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎকৃষ্ট সম্পদকে দান করা। নিজের সম্পদকে দুঃখী মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা। ত্যাগের মহিমায় আর্তমানবতার সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা। কিন্তু বর্তমান সমাজে কোরবানি ও ত‍্যাগের সেই দৃষ্টান্ত কতটুকু বিদ‍্যমান। আর্থসামাজিক উন্নয়নে এবং মানবকল‍্যাণে সর্বোচ্চ ত‍্যাগের দৃষ্টান্ত রাখা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য।

পবিত্র ঈদুল আজহার এই সময় বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম জনগোষ্ঠীর অবস্থা মোটেও ভালো নেই। বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে চেপে থাকা স্বৈরশাসন, যুদ্ধবিগ্রহ সংশ্লিষ্ট দেশের জনগণের দুর্ভোগ, দুর্দশা ও অন্তহীন সমস্যা বিরাজমান। ঈদের দাবি অনুযায়ী মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট দেশের শাসকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের মানববিধ্বংসী যুদ্ধ পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করে আছে। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের বিক্ষুব্ধ দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ফিলিস্তিন। ফিলিস্তিনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হয়েছেন ফিলিস্তিনের নিপীড়িত জনগণ।

বিগত ৭৫ বছর ধরে সমগ্র ফিলিস্তিন অবরুদ্ধ। কিন্তু ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ জীবনের গ্লানির মধ্যে গাজা ভূখণ্ডে পরিস্থিতি একদমই ভিন্ন। টানা প্রায় দুই বছর সময় ধরে চলা ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার উপত্যকা। সেখানকার হাজার হাজার ঘরবাড়ি, স্কুল-কলেজ, উপাসনালয়সহ সবকিছুই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এখন খোলা আকাশের নিচে মরুভূমিতে পড়ে থাকা লাখ লাখ ফিলিস্তিনি নারী-শিশুসহ সর্বহারা মানুষের হাহাকার। খাদ্য নেই, পানি নেই। নেই কোনো ত্রাণসামগ্রী ও চিকিৎসাসেবা। সবকিছুকে টার্গেট করে ইসরায়েল সৈন্যদের বোমা হামলার শিকার হয়ে প্রতিদিন শত শত লোকের করুণ মৃত্যু হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ আহত হচ্ছেন, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।

বিগত ঈদের দিন এবং রাতেও ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অগণিত মানুষ, যাদের বেশির ভাগই শিশু। দেশটিতে ইসরায়েলি হামলায় বর্তমানে নিহতের সংখ্যা ইতিমধ্যে এক লাখ ছাড়িয়ে গেছে। বিগত রোজার ঈদ কেটেছে ফিলিস্তিনের অসহায় গাজাবাসী মানুষের স্বজনদের দাফনের মাধ্যমে। ইসরায়েলের গণহত্যা থেকে কেউ রেহাই পায়নি এবং এখনো পাচ্ছে না। জাতিসংঘসহ সমগ্র বিশ্বের মানুষ ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়ে এলেও ইসরায়েল কেউকে পরোয়া করছে না। ফিলিস্তিনিদের প্রতি যেকোনো মুহূর্তে আক্রমণ করা হতে পারে, সেই কষ্ট নিয়ে সেখানকার মানুষ দিনরাত আতঙ্কে থাকেন।

এ অবস্থায় ঈদের খুশি কীভাবে মুসলিম বিশ্বে হতে পারে। এদিক দিয়ে বিচার করলে দেখা যাবে, এবারকার ঈদ আনন্দের নয়, এটা শুধু দুঃখের। আর্তনাদকারী ফিলিস্তিনিদের দৃষ্টিতে এটি ঈদ নয়, শুধুই অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বিষাদময় হাহাকার। তাদের ভাষায়, দুঃখ-কষ্ট আর শোক ছাড়া আমরা উদ্্যাপন করতে পারি, এমন কিছু আর নেই। এখানে শিশুদের আর্তনাদ, অসহায় নারীর কান্না আর অসহায়ত্বের শোকের কথা ছাড়া আর কিছুই নেই। এখানকার অসহায় নারী ও শিশুরা বলে, এ নশ্বর পৃথিবী আমাদের নয়, ‘হে মহান স্রষ্টা, তুমি আমাদের উঠিয়ে নিয়ে যাও।’

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ঈদুল আজহার শুভেচ্ছায় গাজা এবং অন্যত্র মুসলমানদের ওপর সহিংসতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমার হৃদয় ভেঙে গেছে যে গাজা, সুদান এবং আরও অনেক জায়গায় সংঘাত ও ক্ষুধার কারণে মুসলিমরা সঠিকভাবে ঈদ উদ্্যাপন করতে পারবে না !’ এর আগেও তিনি মুসলিম জাতির ঈদ উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। একই আহ্বান জানায় ইউরোপীয় দেশগুলোসহ আরও অনেক মুসলিম দেশ। সকলের দাবি নিরাপদ ত্রাণ করিডরের ব্যবস্থার মাধ্যমে যেন ফিলিস্তিনিদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়। ফিলিস্তিনের বাসিন্দাদের নিরাপদে বসবাসসহ সব ধরনের বৈধ অধিকার দিয়ে তাদের দুর্ভোগ অবসানেরও আহ্বান জানায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র।
একই অবস্থা পৃথিবীর আরও কয়েকটি দেশে। এর মধ্যে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের অবস্থা করুণ। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। মিয়ানমারের স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মির যুদ্ধে গোটা দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
আমরাও চাই, সমগ্র পৃথিবীতে যুদ্ধহীন সমাজ, শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হোক। মানুষের মধ‍্যকার সকল বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে, সকলের মাঝে শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা লাভ করুক। আমাদের কাম্য, পৃথিবীর যুদ্ধংদেহী চরমতম অশান্তির অশুভ দাবানলের হাত থেকে যেন বিশ্বের সকল মানুষ রক্ষা পায়।

ঈদের শিক্ষা : ঈদ মুসলমানদেরকে সাম্য-মৈত্রী এবং একে অপরের মাঝে ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা দান করে। ঈদ আমাদেরকে শিক্ষা দেয়, বিশ্বের সকল মুসলিম ভাই ভাই। তাদের মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই। আমরা ঈদের দিনে একই সময়, একই স্থানে, একই কাতারে একজন ইমামের পেছনে দাঁড়িয়ে একই কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে এক মহান আল্লাহর সামনে হাজির হই। এখানে ধনী-গরিব, উঁচু-নীচু, রাজা-প্রজার কোনো পার্থক্য থাকে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন :
‘হে মানব, আমি তোমাদেরকে এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিত হও। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক আল্লাহভীরু। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুর খবর রাখেন।’ (সুরা হুজরাত : ১৩)

মুসলিম জাতিকে ঐক্যের আহ্বান জানায় ঈদ : বর্তমান সময়ে মুসলমানদের ঐক্যের খুবই প্রয়োজন। ঈদের সম্মেলন থেকে শিক্ষা নিয়ে মুসলিমগণের পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিরাট এক সুযোগ রয়েছে। দৈনিক জামাতের সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মুসলিমদের একত্রিত হওয়া, সাপ্তাহিক ঈদ জুমার নামাজে তাদের সমবেত হওয়া, বছরে দুটি ঈদের দিনে তাদের মহামিলনে এবং সমগ্র মুসলিম বিশ্ব থেকে হজ পালনের উদ্দেশ্যে আগত হাজিদের আরাফাতের বিশাল মাঠে একত্রিত হওয়ার মধ্য থেকেও আমরা মুসলিম জাতি ঐক্যের শিক্ষা নিতে পারি। যদি আমরা তাতে ব‍্যর্থ হই, তাহলে জাতির মুক্তি ও কল্যাণের আশা কখনো বাস্তবায়ন হওয়ার নয়।

ঈদ মুসলমানদের পারস্পরিক ভালোবাসা ও মহব্বত বৃদ্ধির আহ্বান জানায়। একইভাবে মুসলমানদের ঈদ অন্য ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গেও সৌহার্দ্য, শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দেয়। ঈদের শিক্ষা হলো কাউকে যেন আনন্দ ও খুশি থেকে বঞ্চিত না করা হয়।

ঈদ আমাদেরকে পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে যেতে আহ্বান জানায়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যখন আমরা যেমন এক আল্লাহর সামনে দাঁড়াই, এই চিরসুন্দর দৃশ্য আমাদেরকে পারস্পরিক শত্রুতা, ঘৃণা ও হিংসা-বিদ্বেষ বর্জনের আহ্বান জানায়। ঈদ সকল মানুষের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির দিকে আহ্বান করে।

আর মহান স্রষ্টার প্রতি সঠিক আনুগত্য, তাঁর সন্তুষ্টি ও মানবকল্যাণে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ করাই মূলত ঈদুল আজহার কথা, কোরবানি ঈদের মূল উদ্দেশ্য। এই ঈদের আনন্দ হলো ত্যাগের আনন্দ এবং প্রিয় সম্পদকে অপরের কল্যাণে উৎসর্গের আনন্দ। অপরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারলেই আসল সুখ ও আনন্দ।

ঈদ শুধু ভোগে নয়, ত্যাগের মধ্যেই মূলত ঈদের প্রকৃত আনন্দ ও সুখ। ঈদুল আজহা আমাদের শিক্ষা দেয়, প্রকৃত সুখ আর আনন্দ শুধু সম্পদে নয়, ভোগে নয়, বরং উৎসর্গ ও ত্যাগের মহিমায় ঈদকে সুন্দর ও সফল করে তুলতে হবে। তবেই ঈদ সুন্দর ও সার্থক হবে। সবাইকে ঈদের অফুরন্ত ভালোবাসা ও অনাবিল শুভেচ্ছা।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078