মোহনপুরের দই

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৫, ১৯:০৭ , অনলাইন ভার্সন
দইওয়ালা : দই-দই, মিষ্টি দই-মোহনপুরের দই, ভালো দই।
বড় সাব : মিরা, ডাক তো দইওয়ালাকে।
মিরা : কেন? দই খাবে?
বড় সাব : হ্যাঁ, ডাক।
মিরা : দইওয়ালা, ও দইওয়ালা, এদিকে আসো।
দইওয়ালা : দই কিনবা?
মিরা : হ, এদিকে আসো।
দইওয়ালা : এই দেখেন মোহনপুরের দই, খুব ভালো দই।
বড় সাব : মোহনপুর কোথায়?
দইওয়ালা : টাঙ্গাইলের ভুয়াপুরের একটি গ্রাম।
মিরা : তা সত্যিই ভালো দই? নাকি তোমার কথাবার্তা সব ভুয়া?
দইওয়ালা : সত্যিই ভালো দই, বগুড়ার দইয়ের চেয়েও ভালো।
বড় সাব : বলো কী? তোমার বাড়ি কই?
দইওয়ালা : আমার বাড়ি শিমুলিয়া।
বড় সাব : শিমুলিয়ার মোহনপুরের দই?
দইওয়ালা : হ্যাঁ সাব, মোহনপুর থেকে সাপ্লাই আহে, আমরাও দই পাতি, তয় এই দই সাব অনেক অনেক ভালো।
বড় সাব : আচ্ছা? তাহলে তো এই দই খেয়ে দেখতেই হয়। ভালো কথা, তুমি শিমুলিয়ার, তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার বাবাকে চিনব না। তোমার ঠাকুরদার নাম বলো দেখি।
দইওয়ালা : আমার ঠাকুরদার নাম কেরু গুয়ালা, আমার বাবার নাম নিশি গোয়ালা আর আমার নাম বিনয় গোয়ালা।
বড় সাব : ও তুমি কেরু গোয়ালার নাতি। জানো, তোমার দাদাঠাকুর প্রতিদিন সকালে এই বাড়িতে এসে আমাদের একটা কালো গাভি ছিল, সেটির দুধ পানাত একটা বড় বালতির মধ্যে। দুধে বালতি ভরে যেত, তার ওপর সাদা ফেনা, সে দেখার মতো। তারপর কিছুটা দুধ আমাদের খাওয়ার জন্য রেখে বাকিটা একটা বাঁশের গ্লাস দিয়ে মেপে নিয়ে যেত। প্রতিদিন কয় সের দুধ নেওয়া হলো, তার হিসাব একটা বাঁশের বাত্তির মধ্যে চাকু দিয়ে দাগ কেটে হিসাব রাখত।
বিনয় : কত আগের কথা, তাহলে সাব আপনি আমার ঠাকুরদাকে চিনতেন?
বড় সাব : আরে চিনতাম মানে কী, প্রতিদিন দেখা হতো। আমাদের বাড়িতে যত দই ও দুধের প্রয়োজন হতো, সব দিত তোমার ঠাকুরদা এবং আরও একজন ছিল তার নাম কী জানতাম না, তবে তাকে আমরা পেটকা গোয়াল বলতাম। কারণ তার খুব বড় পেট ছিল। তুমি দেখছি ভ্যানে করে দুই বিক্রি করছ আর তারা তখন কাঁধে বাইকে করে দুধ-দই বিক্রি করত।
বিনয় : এখন তো আর সেই পুরোনো দিন নাই।
বড় সাব : তা তো বুঝতেই পারছি। আচ্ছা বিনয়, তুমি চার পাতিল দই দাও। মিরা, তুই কী বলিস? চার পাতিলে হবে?
মিরা : আহা, চার পাতিল দই দাও বললেই হলো, দাম জানতে হবে না? আর অতগুলো দই কে খাবে?
বড় সাব : কেন? কিছু পাশের বাড়িতে দিবি।
মিরা : সেটা ভালো আইডিয়া। তা-ই হবে।
বড় সাব : তা ছাড়া আরেকটি ব্যাপার আছে, মিরা। দেখেছিস, মাটির পাতিলগুলো ভীষণ সুন্দর। দই খাওয়া হয়ে গেলে এগুলোতে ফুলের গাছ লাগানো যাবে, তারপর ছাদে রাখলে দেখতে খুব সুন্দর লাগবে।
মিরা : ফুলের টব তুমি কিনতে পারো না বুঝি?
বড় সাব : অবশ্যই পারি কিন্তু বাড়তি পেয়ে গেলি, এটা মজার না? যেমন রথ দেখা কলা বেচা। কলা বেচলি রথও দেখলি।
মিরা : দইওয়ালা, তোমার দইয়ের পাতিল কত করে?
বড় সাব : বিনয়, তোমার কপাল খারাপ। ও না থাকলে তুমি যা চাইতে তা-ই পেতে, এখন আর তা হবে না। ওকে কেউ ঠকাতে পারে না, দামাদামি করে তুমি ওর সাথে পারবে না। আমি বরং তোমাকে ২০০ টাকা বকশিশ দেব।
মিরা : আমি বুঝতে পেরেছি, বিনয় নিশ্চয় দাম বেশি চাইবে না। দাও চার পাতিল।
বড় সাব : আচ্ছা বিনয়, তোমাদের সেই কাঁধে নেওয়ার বাইক আর নেই? আমার খুব ইচ্ছা কাঁধে বাইক নিয়ে একটু ঘুরে দেখি।
মিরা : তাই দেখে লোকে যেমন হাসুক।
বড় সাব : তুই ওই মজা বুঝবি না, লোকে হাসে হাসুক, তাতে কী হলো?
বিনয় : ওগুলো অনেক আগে বন্ধ হয়ে গেছে, এখন আর পাওয়াই যাবে না। এখন আপনি শিমুলিয়া গিয়ে দেখেছেন? চিনতেই পারবেন না।
বড় সাব : অবশ্যই শিমুলিয়া গিয়ে দেখেছি। শিমুলিয়া খুব বিখ্যাত জায়গা, তা জানো? ওখানে মাতুতালয়ে জন্মেছিলেন বিখ্যাত রণদা প্রসাদ সাহা। আমার ছোটবেলার হিরো।
বিনয় ও মিরা : উনি কে?
বড় সাব : তোমরা চিনবে না, কারণ ভুয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভিড়ে আসল আত্মত্যাগীরা হারিয়ে গেছে। এখন তারা যে ইতিহাস লেখে, সেখানে রণদা প্রসাদ সাহাকে খুঁজে পাবে না।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078