
আগামী ২৪ জুন মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সিটি প্রাইমারি নির্বাচন। মেয়র, পাবলিক অ্যাডভোকেট, কম্পট্রোলারসহ ডেমোক্রেটিক এই প্রাইমারিতে লড়ছেন বহু প্রার্থী। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস আবারো প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। নিউইয়র্ক
স্টেটের সাবেক গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন এরিক অ্যাডামস।
অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে এরিক অ্যাডামসকে মোকাবেলা করতে হবে আরেক জনপ্রিয় প্রার্থী ও নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোহরান মামদানি। বর্তমান কম্প্রট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডারও প্রাইমারিতে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। তালিকায় আরো আছেন সিটি কাউন্সিলের বর্তমান স্পিকার আদ্রিয়েন অ্যাডামস।
এদিকে নিউইয়র্ক সিটি প্রাইমারিতে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে বাংলাদেশিরা সরব থাকলেও তাদের অনেকেরই ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহা রয়েছে। এ বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট এবং প্রার্থীরাও অবগত।
বাংলাদেশি আমেরিকা অ্যাডভোকেসি গ্রুপের (বাগ) প্রেসিডেন্ট ২ জুন সোমবার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশি অনেকেই সরব। একই পরিবারে অনেকেই আমেরিকান সিটিজেন। কিন্তু ওই পরিবারে রেজিস্ট্রার্ড ভোটার দু-একজন। তিনি বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভোটার হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ১৪ জুনের মধ্যে ভোটার হওয়া যাবে। যারা রেজিস্ট্রেশন করবেন তারা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
এখানে উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটি প্রাইমারি নির্বাচন ২৪ জুন হলেও আগাম ভোট শুরু হবে ১৪ জুন শনিবার থেকে এবং তা চলবে ২২ জুন পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে র্যাঙ্ক চয়েজের সুযোগ রয়েছে। ভোটাররা একাধিক প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রাইমারিতে চূড়ান্ত বিজয়ীরা আগামী ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাবেন।
সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রখ্যাত ইংরেজি অনুবাদক আনোয়ার হোসাইন মঞ্জু নিউইয়র্ক সিটি প্রাইমারি নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, নিউইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারি নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের তৎপরতা জোরদার হয়েছে। প্রধান প্রধান মেয়র প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচার চলছে সিটির প্রতিটি এলাকায়। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির যারা আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় ও সচেতন, তারাও মেয়র নির্বাচনে তাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য ভূমিকা রাখছেন।
এবারের সিটি মেয়র প্রাইমারিতে প্রধান তিন প্রার্থীর মধ্যে কোনো কোনো জরিপে এগিয়ে আছেন উগান্ডায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান জোহরান মামদানি। সিটির শীর্ষপদে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ তিনিই প্রথম মুসলিম। সিটির বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি অধ্যুষিত এলাকাগুলো মামদানির প্রচারণায় মুখর।
বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস পুনঃনির্বাচনের জন্য প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। সিটির ৩৬০ বছরের মেয়রের তালিকায় এরিক অ্যাডামস দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র, যিনি ২০২১ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র ছিলেন ডেভিড নরম্যান ডিনকিনস, যিনি সিটির ১০৬তম মেয়র হিসাবে ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ, নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনায় বিদেশি নাগরিকের কাছে অবৈধভাবে তহবিল সংগ্রহসহ পাঁচটি ফৌজদারি অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় এফবিআই’র তদন্তের মুখোমুখি হন। তার কয়েকজন সহকারীর ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়। সিটি প্রশাসনের একজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং সিটির পুলিশপ্রধানসহ কয়েকজন পদত্যাগে বাধ্য হন। স্থানীয় সরকার কাঠামোর নির্বাচিত প্রতিনিধির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠলে স্টেট গভর্নর তার ক্ষমতাবলে অভিযুক্তকে ৩০ দিনের জন্য সাসপেন্ড করতে পারেন। কিন্তু মেয়র এরিকের বিরুদ্ধে স্টেট গভর্নর তা না করলেও প্রশাসন থেকেই মেয়রের পদত্যাগের দাবি ওঠে। ডেমোক্রেট হওয়া সত্ত্বেও মেয়র অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নমনীয় ইমিগ্রেশন নীতির কঠোর সমালোচনা করে ডেমোক্রেটদের বিরাগভাজন হন। ২০২৪-এর সেপ্টেম্বরে মেয়রের বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়। বেশ বেকায়দায় পড়েন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র অ্যাডামস তার সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অয জাস্টিস তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। এরিক অ্যাডামস ডেমোক্রেটিক পার্টির আস্থা হারিয়েছেন। পুনঃনির্বাচনের জন্য তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক জনপ্রিয় ডেমোক্রেট গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো, যিনি যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০২১ সালে তার পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে তারই অফিসের এগারো জন নারী সহকারী যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন। যদিও তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন, তবুও তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। তার পিতা মারিও ক্যুমোও এক সময় নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অ্যান্ড্রু ক্যুমো এখন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। ক্যুমো তার প্রার্থিতা ঘোষণা করায় মেয়র এরিকের পুনঃনির্বাচিত হওয়ার সুযোগ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কারণ চলমান জরিপগুলোতে ক্যুমোর অবস্থান এরিকের ওপরে।
প্রাইমারি নির্বাচনের এক মাস আগে অর্থাৎ মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পরিচালিত একটি সংস্থার জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সিটির ভোটারদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানির পক্ষে সমর্থন ছিল ৪৪ শতাংশ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোর পক্ষে সমর্থন ৪২ শতাংশ এবং মেয়র পদে পুনঃনির্বাচিত হতে প্রত্যাশী বর্তমান ডেমোক্রেট মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী এরিক অ্যাডামসের পক্ষে সমর্থন মাত্র ১৪ শতাংশ। কিন্তু এর আগের মাসে ‘এমারসন কলেজ পোলিং পিক্স১১ ও দ্য হিল’-এর জরিপে সিটি মেয়র পদে অ্যান্ড্রু ক্যুমো ছিলেন ভোটারদের সবচেয়ে পছন্দের প্রার্থী। তার পক্ষে জরিপে অংশগ্রহণকারী ভোটারদের ৩৫ শতাংশের সমর্থন ছিল। দ্বিতীয় পছন্দে ছিলেন জোহরান মামদানি, তার পক্ষে ২৩ শতাংশ ভোটারের সমর্থন ছিল। অন্যান্য ডেমোক্রেট প্রার্থীর মধ্যে নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডারও একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী, যিনি জরিপে ১১ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।
এদিকে ২০২১ সালে সিটিতে চালুকৃত ‘র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’ (আরসিভি) ব্যবস্থায় ক্যুমোর ভোট ৫৪ শতাংশ এবং মামদানির ৪৬ শতাংশ। ধরেই নেওয়া যায়, এ দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর মধ্যেই প্রাইমারি নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকবে, এবং তাদের মধ্যেই একজন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন লাভ করবেন।
২০২৪ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী- নিউইয়র্ক সিটির বর্তমান জনসংখ্যা ৮০ লাখ ৯৭ হাজার। এর মধ্যে শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যা সিটির মোট জনসংখ্যার ৩৭.৪৭ শতাংশ; কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রিকান আমেরিকান জনসংখ্যা ২৩.১ শতাংশ; অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ১৫.৩৮ শতাংশ; এশিয়ান ১৪.৪৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ৯.৫৭ শতাংশ। সিটি অধিবাসীদের মধ্যে ৬৩.৬৬ শতাংশের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। ন্যাচারালাইজড সিটিজেন, যারা ভোটার, তাদের সবচেয়ে বড় অংশ ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলো থেকে আগত। নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশির মধ্যে ন্যাচারালাইজড আমেরিকান সিটিজেন সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও কোনো নির্বাচনী প্রচারণা অভিযানে বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে সব বাংলাদেশি আগ্রহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।
আমেরিকান নির্বাচনগুলোর নেতিবাচক দিক হচ্ছে, ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ভোট প্রদানে অনীহা। শুধু তাই নয়, জন্মসূত্রে হোক বা ন্যাচারালাইজড সিটিজেন হোক, তাদের একটি বড় অংশ ভোটার হতেও আগ্রহ পোষণ করেন না। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটিতে বর্তমানে সক্রিয় ভোটার সংখ্যা ৪৭ লাখ। মোট ভোটারের মধ্যে ৩১ লাখ রেজিস্ট্রার্ড ডেমোক্র্যাট ভোটার। নিউইয়র্ক প্রচলিতভাবেই একটি ডেমোক্র্যাট স্টেট এবং নিউইয়র্ক সিটিও একইভাবে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত। সে জন্য নিউইয়র্ক সিটিতে রেজিস্ট্রার্ড রিপাবলিকান ভোটার সংখ্যা মাত্র ৫ লাখ ২৩ হাজার। কোনো দলের রেজিস্ট্রার্ড ভোটার নয় এমন ভোটার সংখ্যা আনুমানিক ১০ লাখ। অর্থাৎ সিটির ভোটারদের দুই-তৃতীয়াংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার, প্রায় ১১ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার এবং প্রায় ২১ শতাংশ স্বতন্ত্র ভোটার। প্রাইমারি নির্বাচনে কোনো ভোটারকে তিনি যে দলের রেজিস্ট্রার্ড ভোটার, সেই দলের প্রার্থীকেই তাকে ভোট প্রদান করতে হবে। কোনো রেজিস্ট্রার্ড ডেমোক্রেট ভোটার প্রাইমারিতে কোনো রিপাবিলিকান প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন না। তাহলে তার ভোট কোনো প্রার্থীর পক্ষে গণনা করা হবে না। তবে যেদিন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অর্থাৎ এবার মেয়র নির্বাচনের দিন আগামী ৪ নভেম্বর তারিখে যে কোনো দলের রেজিস্ট্রার্ড ভোটার অন্য দলের প্রার্থীকেও ভোট দিতে পারবেন।
নিউইয়র্ক বোর্ড অব ইলেকশনসের চিত্র অনুযায়ী, সিটিতে নিকট অতীতে অনুষ্ঠিত যে কোনো নির্বাচন, তা সাধারণ নির্বাচন বা ভোট প্রদানের দিবসে হোক, অথবা আগাম ভোট ও ডাকযোগে প্রেরিত ভোট হোক, যে কোনো নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের চূড়ান্ত গণনা অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের কমসংখ্যক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। সে হিসাবে যারা মেয়র, পাবলিক অ্যাডভোকেট, কম্পট্রোলার, বরো প্রেসিডেন্ট অথবা সিটি কাউন্সিল সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন, তারা মূলত সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন।
এখন পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির ভোটের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো এবং অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানির মধ্যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ দুই শক্তিশালী প্রার্থীরই তাদের নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। ক্যুমো শ্বেতাঙ্গ হলেও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। একটি হিসাবে দেখানো হয়েছে, পঞ্চাশোর্ধ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে ক্যুমোর জনপ্রিয়তা অধিক। তাদের ৭৪ শতাংশ ক্যুমোর সমর্থক। অন্যদিকে পঞ্চাশ বছর বয়সের নিচে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ৬১ শতাংশ জোহরান মামদানির সমর্থক এবং লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, কলেজ শিক্ষিত কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মামদানির সমর্থক। দুই প্রার্থীর বয়সও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
নিউইয়র্কের রাজনীতির বিশ্লেষকরা ক্যুমোর সিদ্ধান্তকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। তবে ক্যুমোর অভিজ্ঞতা ও কৌশলগত চিন্তা তাকে এই নির্বাচনী লড়াইয়ে এগিয়ে রাখতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
প্রচারে এগিয়ে জোহরান মামদানি ও জুমানি উইলিয়ামস : নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জোরদার হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা। এবারের নির্বাচনে ব্যতিক্রমী আলোচনায় রয়েছেন মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি এবং পাবলিক অ্যাডভোকেট পদপ্রার্থী জুমানি উইলিয়ামস।
নির্বাচনে তরুণদের উপস্থিতি এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছেন জোহরান মামদানি।
সম্প্রতি ডিএইচ কেয়ার জ্যামাইকা সিনিয়র সেন্টারে মুসলিম ইউনাইটেড সলিডারিটি ও সামাজিক সংগঠন ভালো’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত কমিউনিটি চা চক্রে কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের সাথে আলোচনায় অংশ নেন জোহরান মামদানি ও জুমানি উইলিয়ামস। অনুষ্ঠানে তারা তাদের ক্যাম্পেইন ও ভবিষ্যত নির্বাচন পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন এবং একই সাথে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বিশেষ করে, জ্যামাইকার স্মল বিজনেস ওনার্সদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার নিশ্চয়তা, জননিরাপত্তা এবং সাশ্রয়ী আবাসন নিয়ে তাদের সুচিন্তিত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় চা চক্রের এই আলোচনায়।
মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেন, এই শহর সব মানুষের। একজন অভিবাসীর সন্তান হিসেবে আমি জানি, আমাদের সকলের কণ্ঠস্বরই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পরিবর্তন আনতে চাই। নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোহরান মামদানি এবার লড়ছেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদের জন্য। নিউইয়র্কের প্রগ্রেসিভ ভোটারদের কাছে তিনি ইতিমধ্যেই একটি পরিচিত মুখ। গৃহায়ন, ট্রান্সপোর্ট রিফর্ম, মানসিক স্বাস্থ্য, হেইট ক্রাইম প্রতিরোধ এবং অভিবাসন ইস্যুতে তিনি বরাবরই যথেষ্ট সোচ্চার।
অন্যদিকে, পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়ছেন জুমানি উইলিয়ামস। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ সংস্কার, সাশ্রয়ী আবাসন এবং শিক্ষা ইস্যুতে কাজ করে আসছেন। তিনি বলেন, আমি কেবল একজন রাজনীতিবিদ নই, আমি এই শহরের একজন অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের লড়াই হলো সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের পক্ষে। নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচন ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে, এবং নিউইয়র্কবাসী প্রস্তুত তাদের পরবর্তী নেতৃত্ব বেছে নিতে। কে হবেন নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র এবং পাবলিক অ্যাডভোকেট সেটা নির্ধারণ করবেন নিউইয়র্ক শহরের মানুষ।
স্টেটের সাবেক গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন এরিক অ্যাডামস।
অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে এরিক অ্যাডামসকে মোকাবেলা করতে হবে আরেক জনপ্রিয় প্রার্থী ও নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোহরান মামদানি। বর্তমান কম্প্রট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডারও প্রাইমারিতে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। তালিকায় আরো আছেন সিটি কাউন্সিলের বর্তমান স্পিকার আদ্রিয়েন অ্যাডামস।
এদিকে নিউইয়র্ক সিটি প্রাইমারিতে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে বাংলাদেশিরা সরব থাকলেও তাদের অনেকেরই ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে যেতে অনীহা রয়েছে। এ বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট এবং প্রার্থীরাও অবগত।
বাংলাদেশি আমেরিকা অ্যাডভোকেসি গ্রুপের (বাগ) প্রেসিডেন্ট ২ জুন সোমবার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশি অনেকেই সরব। একই পরিবারে অনেকেই আমেরিকান সিটিজেন। কিন্তু ওই পরিবারে রেজিস্ট্রার্ড ভোটার দু-একজন। তিনি বাংলাদেশি আমেরিকানদের ভোটার হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ১৪ জুনের মধ্যে ভোটার হওয়া যাবে। যারা রেজিস্ট্রেশন করবেন তারা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ জানান।
এখানে উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটি প্রাইমারি নির্বাচন ২৪ জুন হলেও আগাম ভোট শুরু হবে ১৪ জুন শনিবার থেকে এবং তা চলবে ২২ জুন পর্যন্ত। এবারের নির্বাচনে র্যাঙ্ক চয়েজের সুযোগ রয়েছে। ভোটাররা একাধিক প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রাইমারিতে চূড়ান্ত বিজয়ীরা আগামী ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাবেন।
সিনিয়র সাংবাদিক ও প্রখ্যাত ইংরেজি অনুবাদক আনোয়ার হোসাইন মঞ্জু নিউইয়র্ক সিটি প্রাইমারি নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ একটি প্রতিবেদন লিখেছেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, নিউইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারি নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের তৎপরতা জোরদার হয়েছে। প্রধান প্রধান মেয়র প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচার চলছে সিটির প্রতিটি এলাকায়। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির যারা আমেরিকার মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় ও সচেতন, তারাও মেয়র নির্বাচনে তাদের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য ভূমিকা রাখছেন।
এবারের সিটি মেয়র প্রাইমারিতে প্রধান তিন প্রার্থীর মধ্যে কোনো কোনো জরিপে এগিয়ে আছেন উগান্ডায় জন্মগ্রহণকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকান জোহরান মামদানি। সিটির শীর্ষপদে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন লাভের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ তিনিই প্রথম মুসলিম। সিটির বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি অধ্যুষিত এলাকাগুলো মামদানির প্রচারণায় মুখর।
বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস পুনঃনির্বাচনের জন্য প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। সিটির ৩৬০ বছরের মেয়রের তালিকায় এরিক অ্যাডামস দ্বিতীয় কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র, যিনি ২০২১ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত হন। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ মেয়র ছিলেন ডেভিড নরম্যান ডিনকিনস, যিনি সিটির ১০৬তম মেয়র হিসাবে ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালে অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ গ্রহণ, নির্বাচনী প্রচারণা পরিচালনায় বিদেশি নাগরিকের কাছে অবৈধভাবে তহবিল সংগ্রহসহ পাঁচটি ফৌজদারি অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় এফবিআই’র তদন্তের মুখোমুখি হন। তার কয়েকজন সহকারীর ফোন, ল্যাপটপ ও অন্যান্য আলামত জব্দ করা হয়। সিটি প্রশাসনের একজনকে গ্রেফতার করা হয় এবং সিটির পুলিশপ্রধানসহ কয়েকজন পদত্যাগে বাধ্য হন। স্থানীয় সরকার কাঠামোর নির্বাচিত প্রতিনিধির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠলে স্টেট গভর্নর তার ক্ষমতাবলে অভিযুক্তকে ৩০ দিনের জন্য সাসপেন্ড করতে পারেন। কিন্তু মেয়র এরিকের বিরুদ্ধে স্টেট গভর্নর তা না করলেও প্রশাসন থেকেই মেয়রের পদত্যাগের দাবি ওঠে। ডেমোক্রেট হওয়া সত্ত্বেও মেয়র অ্যাডামস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নমনীয় ইমিগ্রেশন নীতির কঠোর সমালোচনা করে ডেমোক্রেটদের বিরাগভাজন হন। ২০২৪-এর সেপ্টেম্বরে মেয়রের বিরুদ্ধে ফেডারেল আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হয়। বেশ বেকায়দায় পড়েন তিনি। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর মেয়র অ্যাডামস তার সঙ্গে একাধিকবার সাক্ষাৎ করেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফেডারেল ডিপার্টমেন্ট অয জাস্টিস তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়। এরিক অ্যাডামস ডেমোক্রেটিক পার্টির আস্থা হারিয়েছেন। পুনঃনির্বাচনের জন্য তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
নিউইয়র্ক স্টেটের সাবেক জনপ্রিয় ডেমোক্রেট গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো, যিনি যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে ২০২১ সালে তার পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন, তার বিরুদ্ধে তারই অফিসের এগারো জন নারী সহকারী যৌন হয়রানিসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানির অভিযোগ এনেছিলেন। যদিও তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন, তবুও তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। তার পিতা মারিও ক্যুমোও এক সময় নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অ্যান্ড্রু ক্যুমো এখন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র পদে একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসাবে আবির্ভূত হয়েছেন। ক্যুমো তার প্রার্থিতা ঘোষণা করায় মেয়র এরিকের পুনঃনির্বাচিত হওয়ার সুযোগ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। কারণ চলমান জরিপগুলোতে ক্যুমোর অবস্থান এরিকের ওপরে।
প্রাইমারি নির্বাচনের এক মাস আগে অর্থাৎ মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে পরিচালিত একটি সংস্থার জরিপ রিপোর্ট অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সিটির ভোটারদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানির পক্ষে সমর্থন ছিল ৪৪ শতাংশ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমোর পক্ষে সমর্থন ৪২ শতাংশ এবং মেয়র পদে পুনঃনির্বাচিত হতে প্রত্যাশী বর্তমান ডেমোক্রেট মেয়র স্বতন্ত্র প্রার্থী এরিক অ্যাডামসের পক্ষে সমর্থন মাত্র ১৪ শতাংশ। কিন্তু এর আগের মাসে ‘এমারসন কলেজ পোলিং পিক্স১১ ও দ্য হিল’-এর জরিপে সিটি মেয়র পদে অ্যান্ড্রু ক্যুমো ছিলেন ভোটারদের সবচেয়ে পছন্দের প্রার্থী। তার পক্ষে জরিপে অংশগ্রহণকারী ভোটারদের ৩৫ শতাংশের সমর্থন ছিল। দ্বিতীয় পছন্দে ছিলেন জোহরান মামদানি, তার পক্ষে ২৩ শতাংশ ভোটারের সমর্থন ছিল। অন্যান্য ডেমোক্রেট প্রার্থীর মধ্যে নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডারও একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী, যিনি জরিপে ১১ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন।
এদিকে ২০২১ সালে সিটিতে চালুকৃত ‘র্যাঙ্কড চয়েস ভোটিং’ (আরসিভি) ব্যবস্থায় ক্যুমোর ভোট ৫৪ শতাংশ এবং মামদানির ৪৬ শতাংশ। ধরেই নেওয়া যায়, এ দুই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর মধ্যেই প্রাইমারি নির্বাচনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকবে, এবং তাদের মধ্যেই একজন মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন লাভ করবেন।
২০২৪ সালের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী- নিউইয়র্ক সিটির বর্তমান জনসংখ্যা ৮০ লাখ ৯৭ হাজার। এর মধ্যে শ্বেতাঙ্গ জনসংখ্যা সিটির মোট জনসংখ্যার ৩৭.৪৭ শতাংশ; কৃষ্ণাঙ্গ বা আফ্রিকান আমেরিকান জনসংখ্যা ২৩.১ শতাংশ; অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর জনসংখ্যা ১৫.৩৮ শতাংশ; এশিয়ান ১৪.৪৭ শতাংশ এবং অন্যান্য ৯.৫৭ শতাংশ। সিটি অধিবাসীদের মধ্যে ৬৩.৬৬ শতাংশের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। ন্যাচারালাইজড সিটিজেন, যারা ভোটার, তাদের সবচেয়ে বড় অংশ ল্যাটিন আমেরিকান দেশগুলো থেকে আগত। নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশির মধ্যে ন্যাচারালাইজড আমেরিকান সিটিজেন সংখ্যা সম্পর্কে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও কোনো নির্বাচনী প্রচারণা অভিযানে বৈধ-অবৈধ নির্বিশেষে সব বাংলাদেশি আগ্রহের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।
আমেরিকান নির্বাচনগুলোর নেতিবাচক দিক হচ্ছে, ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ভোট প্রদানে অনীহা। শুধু তাই নয়, জন্মসূত্রে হোক বা ন্যাচারালাইজড সিটিজেন হোক, তাদের একটি বড় অংশ ভোটার হতেও আগ্রহ পোষণ করেন না। এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিউইয়র্ক সিটিতে বর্তমানে সক্রিয় ভোটার সংখ্যা ৪৭ লাখ। মোট ভোটারের মধ্যে ৩১ লাখ রেজিস্ট্রার্ড ডেমোক্র্যাট ভোটার। নিউইয়র্ক প্রচলিতভাবেই একটি ডেমোক্র্যাট স্টেট এবং নিউইয়র্ক সিটিও একইভাবে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত। সে জন্য নিউইয়র্ক সিটিতে রেজিস্ট্রার্ড রিপাবলিকান ভোটার সংখ্যা মাত্র ৫ লাখ ২৩ হাজার। কোনো দলের রেজিস্ট্রার্ড ভোটার নয় এমন ভোটার সংখ্যা আনুমানিক ১০ লাখ। অর্থাৎ সিটির ভোটারদের দুই-তৃতীয়াংশ ডেমোক্র্যাট ভোটার, প্রায় ১১ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার এবং প্রায় ২১ শতাংশ স্বতন্ত্র ভোটার। প্রাইমারি নির্বাচনে কোনো ভোটারকে তিনি যে দলের রেজিস্ট্রার্ড ভোটার, সেই দলের প্রার্থীকেই তাকে ভোট প্রদান করতে হবে। কোনো রেজিস্ট্রার্ড ডেমোক্রেট ভোটার প্রাইমারিতে কোনো রিপাবিলিকান প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন না। তাহলে তার ভোট কোনো প্রার্থীর পক্ষে গণনা করা হবে না। তবে যেদিন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অর্থাৎ এবার মেয়র নির্বাচনের দিন আগামী ৪ নভেম্বর তারিখে যে কোনো দলের রেজিস্ট্রার্ড ভোটার অন্য দলের প্রার্থীকেও ভোট দিতে পারবেন।
নিউইয়র্ক বোর্ড অব ইলেকশনসের চিত্র অনুযায়ী, সিটিতে নিকট অতীতে অনুষ্ঠিত যে কোনো নির্বাচন, তা সাধারণ নির্বাচন বা ভোট প্রদানের দিবসে হোক, অথবা আগাম ভোট ও ডাকযোগে প্রেরিত ভোট হোক, যে কোনো নির্বাচনে প্রদত্ত ভোটের চূড়ান্ত গণনা অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের কমসংখ্যক ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। সে হিসাবে যারা মেয়র, পাবলিক অ্যাডভোকেট, কম্পট্রোলার, বরো প্রেসিডেন্ট অথবা সিটি কাউন্সিল সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন, তারা মূলত সংখ্যালঘু ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন।
এখন পর্যন্ত ডেমোক্রেটিক প্রাইমারির ভোটের গতিপ্রকৃতি অনুযায়ী, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো এবং অ্যাসেম্বলিম্যান জোহরান মামদানির মধ্যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এ দুই শক্তিশালী প্রার্থীরই তাদের নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে। ক্যুমো শ্বেতাঙ্গ হলেও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। একটি হিসাবে দেখানো হয়েছে, পঞ্চাশোর্ধ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে ক্যুমোর জনপ্রিয়তা অধিক। তাদের ৭৪ শতাংশ ক্যুমোর সমর্থক। অন্যদিকে পঞ্চাশ বছর বয়সের নিচে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ৬১ শতাংশ জোহরান মামদানির সমর্থক এবং লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, কলেজ শিক্ষিত কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ মামদানির সমর্থক। দুই প্রার্থীর বয়সও একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর।
নিউইয়র্কের রাজনীতির বিশ্লেষকরা ক্যুমোর সিদ্ধান্তকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন। তবে ক্যুমোর অভিজ্ঞতা ও কৌশলগত চিন্তা তাকে এই নির্বাচনী লড়াইয়ে এগিয়ে রাখতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
প্রচারে এগিয়ে জোহরান মামদানি ও জুমানি উইলিয়ামস : নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই জোরদার হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা। এবারের নির্বাচনে ব্যতিক্রমী আলোচনায় রয়েছেন মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানি এবং পাবলিক অ্যাডভোকেট পদপ্রার্থী জুমানি উইলিয়ামস।
নির্বাচনে তরুণদের উপস্থিতি এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশি ও দক্ষিণ এশিয়ান কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছেন জোহরান মামদানি।
সম্প্রতি ডিএইচ কেয়ার জ্যামাইকা সিনিয়র সেন্টারে মুসলিম ইউনাইটেড সলিডারিটি ও সামাজিক সংগঠন ভালো’র উদ্যোগে অনুষ্ঠিত কমিউনিটি চা চক্রে কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের সাথে আলোচনায় অংশ নেন জোহরান মামদানি ও জুমানি উইলিয়ামস। অনুষ্ঠানে তারা তাদের ক্যাম্পেইন ও ভবিষ্যত নির্বাচন পরিকল্পনা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন এবং একই সাথে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বিশেষ করে, জ্যামাইকার স্মল বিজনেস ওনার্সদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার নিশ্চয়তা, জননিরাপত্তা এবং সাশ্রয়ী আবাসন নিয়ে তাদের সুচিন্তিত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় চা চক্রের এই আলোচনায়।
মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি বলেন, এই শহর সব মানুষের। একজন অভিবাসীর সন্তান হিসেবে আমি জানি, আমাদের সকলের কণ্ঠস্বরই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা পরিবর্তন আনতে চাই। নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জোহরান মামদানি এবার লড়ছেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদের জন্য। নিউইয়র্কের প্রগ্রেসিভ ভোটারদের কাছে তিনি ইতিমধ্যেই একটি পরিচিত মুখ। গৃহায়ন, ট্রান্সপোর্ট রিফর্ম, মানসিক স্বাস্থ্য, হেইট ক্রাইম প্রতিরোধ এবং অভিবাসন ইস্যুতে তিনি বরাবরই যথেষ্ট সোচ্চার।
অন্যদিকে, পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়ছেন জুমানি উইলিয়ামস। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ সংস্কার, সাশ্রয়ী আবাসন এবং শিক্ষা ইস্যুতে কাজ করে আসছেন। তিনি বলেন, আমি কেবল একজন রাজনীতিবিদ নই, আমি এই শহরের একজন অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের লড়াই হলো সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের পক্ষে। নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচন ক্রমশ ঘনিয়ে আসছে, এবং নিউইয়র্কবাসী প্রস্তুত তাদের পরবর্তী নেতৃত্ব বেছে নিতে। কে হবেন নিউইয়র্ক সিটির পরবর্তী মেয়র এবং পাবলিক অ্যাডভোকেট সেটা নির্ধারণ করবেন নিউইয়র্ক শহরের মানুষ।