
‘মব-ভায়োলেন্সে’ ভরে গিয়েছিলো বাংলাদেশ। চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডারবাজি বেড়েছিলো মাত্রাতিরিক্ত হারে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতির মহোৎসব শুরু হয়েছিলো। জেলা, উপজেলা, গ্রামীণ জনপদ শুধু নয়, শহরতলীতেও ‘জোর যার মুল্লুক তার’ পরিস্থিতি। ঈদ উৎসবকে সামনে রেখে ক্রেতা-বিক্রেতারা ছিলো উদ্বিগ্ন। শান্তিতে নোবেলপ্রাপ্ত ড. ইউনূস হচ্ছিলেন নিন্দিত। অন্তর্বর্তী সরকারের সুকৃতিগুলো মুছে যাচ্ছিলো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবশেষে নামানো হয়েছে সামরিক বাহিনী। তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার হয়েছে বৈঠক। তিনি বলেছেন, ভারত থেকে উস্কানি দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। ‘রংপুর ও কক্সবাজার’ দখলের পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসছেন বিনিয়োগকারীরা। দেশের ‘মব-ভায়োলেন্স’ সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। স্থিতিশীলতা রাখতে না পারলে আমরা সবাই ব্যর্থ হবো। না, বাংলাদেশকে আমরা ব্যর্থ হতে দেবো না। তিনবাহিনী প্রধান বলেন, আপনি ছাত্রশক্তি’র পায়ে একটু লাগাম দিন। আমরা সব ধরণের ‘মব-ভায়োলেন্স’কে কুরবানি দেবো। দেশে ‘মানবিক করিডোর’, বন্দর ‘বিদেশীদের দেওয়া নিয়ে’ উত্তেজনা আছে। আপাতত এসব বিষয়ে ইতি টানুন। রাজনীতিকে নির্বাচনী রেলে উঠিয়ে নিন। জনগণ ভোটমুখী হলে মব-সংস্কৃতি বা ভায়োলেন্স হোঁচট খাবে। তাই নির্বাচনী ইস্যুতে আর কোনো ছাড় নয়।
সরকার-প্রধান মন দিয়ে শোনেন তাবৎ পরামর্শ। তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশনা দেন বিশৃঙ্খলা বন্ধের। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্ণধার হিসেবে আরো সহযোগিতা চান। বলেন, নতুন বাজেটে প্রতিরক্ষা খাত বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। ৪২ হাজার কোটি টাকা এবার ৫৫ হাজার কোটি টাকায়। দেশ ছোট হলেও কারো চোখ রাঙানিতে চলা যাবে না। আপনারা আধুনিক অস্ত্রসম্ভারে দেশকে সাজান। প্রশিক্ষণ আর কৌশল ঠিক থাকলে আমরা হারবো না।
নির্দেশনা পেয়ে তিন বাহিনী প্রধান বসে থাকেননি। জেলায় জেলায় সামরিক কর্মকর্তার পদায়ন পূর্বেই ছিলো। এবার ডিভিশনে-ডিভিশনে ডিভিশন-ডিভিশন সৈন্য। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দুর্নীতি বন্ধে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। জাপা-প্রধান জিএম কাদের-এর রংপুরের বাড়িতে আগুন। ছাত্রদের সংগঠন এনসিপি’র জোরালো আক্রমণ। প্রায় ২৫ জনকে আটক করে সেনাবাহিনী। কেন্দ্রীয় নেতা সারজিস আলম হাজির হলেও থামেনি শাসন। চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন সামরিক কর্মকর্তা।
ঢাকায় সচিবালয়ে আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের ঠেকাতেও ছাত্রশক্তি বেপরোয়া। কিন্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঠেকিয়ে দিয়েছে ‘মব-জাস্টিস’। শুধু জনবহুল এলাকা নয়। ‘কুরবানির হাটে হাটে’ও চলছে টহলদারি। ‘কেনা-বেচায়’ কমিশন খাওয়া দালাল-চাঁদাবাজরাও ‘কট’। কোমরে দড়ি লাগিয়ে সরাসরি চালান। গরু-ছাগল বা দ্রব্যের মূল্যও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। ঈদযাত্রায় ট্রেন, বাস, লঞ্চে চলছিলো টিকেটের কালোবাজারি। সেখানেও সামরিক বাহিনীর সযত্ন খবরদারি। অপরাধ দমনে চলছে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিমালা। যাত্রী পরিবহনে ‘মলম পার্টি’র দৌরাত্ম হঠাৎ কমে গেছে। সরকারি-বেসরকারি পরিবহন যথাসময়ে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে। ধনীর দুলালদের কার বিলাসিতাও চ্যালেঞ্জের মুখে। নেশাদ্রব্যসমেত কাগজপত্রহীন গাড়ি আটকের ঘটনাও ঘটছে। ফলে, দেশের ‘টক অব দ্য টাউন’ একটাই। তা হলো- ‘মব-ভায়োলেন্সের সেনা-কুরবানি’।
নির্বাচনী নিবন্ধন পেলেও দাঁড়িপাল্লা নিয়ে
সংশয় জামায়াতের ॥ রংপুর’কে গিলতে
যুদ্ধের উস্কানি ভারতের
পবিত্র ঈদুল আজহায় ৯ দিনের সরকারি ছুটি। আড়াই কোটি গরুর দেশে ব্যাপকসংখ্যক কুরবানির কথা। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি-বন্যায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকায় আহাজারি। অন্যদিকে রাজনীতির ‘ঈদ ভ্যাকেশন’ও আর থাকছে না। শহর থেকে পল্লী- প্রধানত নির্বাচনী আলোচনায় মুখর। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় এলাকায় সুযোগ নিচ্ছেন। আওয়ামী শক্তিকে পাশে নিয়ে জাপার লড়াই। মব-বিশৃঙ্খলার কুরবানি ঘটাচ্ছে সামরিক বাহিনী। বিএনপি-ভারত-সেনাপ্রধান চান ডিসেম্বরেই নির্বাচন। ফাঁসির আসামী এটিএম আজাহরুল খালাস পাওয়ায় জামায়াত প্রফুল্লচিত্তে। একাত্তরের দালালের মুক্তিতে বামপন্থী-স্বাধীনতাকামীদের আগুন জ্বলছে চিত্তে। রাজধানীতে মিনি আন্দোলন, রাজশাহীতে মশাল মিছিল।
২০১৩ থেকে ঝুলে ছিলো নির্বাচনী নিবন্ধন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে তা ফিরে পেয়েছে জামায়াত। তবে নির্বাচনী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ বিষয়ে বিতর্ক বিদ্যমান। হাইকোর্টের পূর্বোক্ত নির্দেশনা ছিলো- প্রতীকটি আদালতের। হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট বা আদালতেও ব্যবহৃত হয়। তাহলে, একই প্রতীক কী করে একটি দলের হতে পারে। উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনও প্রতীক-তালিকা হতে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বাদ দেয়।
এদিকে ‘সেভেন সিস্টার্স’কে সুরক্ষা দিতে মরিয়া ভারত। শিলিগুড়ির ‘চিকেন নেক’কে প্রশস্ত করতে চলছে প্রস্তুতি। সামরিক বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন আগ্রাসী পরামর্শ। বাংলাদেশের ‘রংপুর’ বিভাগ দখলের প্রস্তাবনা। ম্যাপ দেখিয়ে বলছেন তিনদিকে ভারত। তিন ডিভিশন সৈন্য নামালেই দখল হয়ে যাবে। রংপুর বিভাগটি পেলে ‘চিকেন নেক’-এর সংশয় কেটে যাবে।
রংপুর দখলের নেপথ্য কারণ ‘লালমনিরহাট বিমান-সেনাঘাঁটি’। সেখানে বাংলাদেশ চীন ও পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতা নিচ্ছে। এছাড়া পাশেই ‘তিস্তা ব্যারেজ’। সেখানে মহাচীনের মহাপরিকল্পনা। রংপুর বিভাগের আরেক জেলা ঠাকুরগাঁও। সেখানকার পরিত্যাক্ত বিমানবন্দরও পাচ্ছে নতুন রূপ। সেটিকেও সামরিকরূপ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে ভারত নিজেদের অনিরাপদ ভাবছে। এজন্যে সীমান্তে সাঁজোয়া বাহিনী ও যুদ্ধবিমানের সমাবেশ ঘটিয়েছে। যুদ্ধবিমান ‘রাফেল’ এখন রংপুরের সন্নিকটেই।
জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। একাত্তরে ‘ইসলামী ছাত্রসেনা’র রংপুরের সম্পাদক ছিলেন। ঘাতক-দালাল হিসেবে আওয়ামী শাসনামলে ফাঁসির আসামিও ছিলেন। সাম্প্রতিককালে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। বৃহত্তর রংপুরে এই রাজনীতিকের পৈতৃকবাস। অনেকের ধারণা এবার তিনি এলাকায় আন্দোলন জমাবেন। ‘জাগো বাহে কোনঠে সবায়’ শ্লোগানে জনগণকে মাতাবেন। ভারতের ‘রংপুর দখল’ প্রক্রিয়াকে ঠেকিয়ে দেবেন। উল্লেখ্য, ‘মব-ভায়োলেন্স’ ঠেকানোর নামে সামরিক বাহিনীও সেখানে সক্রিয়। জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদও বৃহত্তর রংপুরের।
ডিসেম্বরে জেলা-উপজেলায় প্রস্তাবিত
ডেট... ॥ ২০২৫-এর ৫ আগস্ট
এমপি-ভোটের টাগের্ট
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষণীয়। সাম্প্রতিককালে জাপান সফরে ড. ইউনূস এনেছেন নতুন সাফল্য। এক লাখ শ্রমিক নিচ্ছে জাপান। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াও একই খাতে দেখাচ্ছে নবপ্রত্যাশা। রাশিয়া নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দিচ্ছে আলো। স্মারক সাফল্যটি হলো চীনের বাণিজ্যদল বাংলাদেশে। ১৩৭টি কোম্পানির ৩০০ প্রতিনিধি নিয়ে স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায়। গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, পাওয়ার সেক্টরে হৈ হৈ পরিস্থিতি। অর্থাৎ বিনিয়োগ খাতে খুলছে সম্ভাবনার দ্বার। প্রবাসীদের রেমিটেন্সে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের ওপরে। ফলে গ্রামীণ দারিদ্র্য ও গার্মেন্টস বন্ধের হতাশা চাপা পড়ছে।
জুলাই আন্দোলনের হত্যাকান্ডের প্রকাশ্য বিচার শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনার গড়া ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ সক্রিয়। পয়লা জুনের ট্রায়াল প্রথমবারের মতো টিভিতে প্রদর্শিত হয়। প্রধান আসামী শেখ হাসিনাসহ সহযোগীরা বিচারের মুখোমুখি। আগামী ১৬ জুনের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার সময়।
বিনিয়োগ ও বিচারের বিষয়টি সরকারের জন্যে ইতিবাচক। এছাড়া চলছে রাজনৈতিক সংস্কারের কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় করছে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’। সরকার প্রধান ড. ইউনূস এই কমিশনের চেয়ারম্যান। বৈঠকে বিএনপিসহ অধিকাংশ দল ডিসেম্বরে ভোট চেয়েছে। সেনাপ্রধান এবং ভারতও ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট চায়। জামায়াতে ইসলামী ও নাগরিক পার্টির এ বিষয়ে চাপ নেই। ড. ইউনূসের পূর্বঘোষিত ২০২৬-এর জুনকে মেনে নিয়েছে। যদিও মে-জুনে প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে। প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিত করতে জামায়াত সময় দিতে আগ্রহী। এনসিপি‘র বক্তব্য- তিনটি বিষয়ে ‘রোডম্যপ চাই’। জুলাই আন্দোলনের অপরাধীদের বিচার, সাংবিধানিক সংস্কার ও নির্বাচন।মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সরকার শ্রদ্ধাশীল নয় বলে প্রচারণা আছে। সেটি কাটাতে বিজয় মাসে ডিসেম্বরে ভোট চায় পরার্মশকেরা। জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকাগুলো অনেকটা অভিভাবকহীন। জনপ্রতিনিধিদের কল্যাণমূলক সেবা থেকে এলাকাবাসী বঞ্চিত। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদ নিয়ে এখনও চলছে নাটক। আইনী জটিলতায় বিএনপির ইশরাক হোসেন শপথ নিতে পারেননি। এ বিষয়ে সরকার ও বিএনপি অনেকটা মুখোমুখি। এজন্যে সরকারের ভাবনা- অতিদ্রুত নতুন নির্বাচন হোক। একইসূত্রে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ডিসেম্বর নাগাদ হতে পারে। সেনাপ্রধান জে. ওয়াকার উজ্জামানও ডিসেম্বরের কথা বলেছেন। প্রধান দল বিএনপি, প্রতিবেশী দেশ ভারতও এমনটি চাচ্ছে। জনগণ তথা নতুন প্রজন্মও ভোটাধিকার প্রয়োগে এককাট্টা। ২০২৬-এর ২৮ জুন ড. ইউনূসের ৮৫তম জন্মতিথি। জাতীয় নির্বাচন দিয়ে তিনি বিদায় নিতে চান। সে সময়ে সবাই হয়তো গাইতে পারবে সেই কালজয়ী গানটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের- তোমার হলো শুরু আমার হলো সারা,/ তোমার আমার মাঝে/ এমনি বহে ধারা...।
সরকার-প্রধান মন দিয়ে শোনেন তাবৎ পরামর্শ। তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশনা দেন বিশৃঙ্খলা বন্ধের। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্ণধার হিসেবে আরো সহযোগিতা চান। বলেন, নতুন বাজেটে প্রতিরক্ষা খাত বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। ৪২ হাজার কোটি টাকা এবার ৫৫ হাজার কোটি টাকায়। দেশ ছোট হলেও কারো চোখ রাঙানিতে চলা যাবে না। আপনারা আধুনিক অস্ত্রসম্ভারে দেশকে সাজান। প্রশিক্ষণ আর কৌশল ঠিক থাকলে আমরা হারবো না।
নির্দেশনা পেয়ে তিন বাহিনী প্রধান বসে থাকেননি। জেলায় জেলায় সামরিক কর্মকর্তার পদায়ন পূর্বেই ছিলো। এবার ডিভিশনে-ডিভিশনে ডিভিশন-ডিভিশন সৈন্য। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দুর্নীতি বন্ধে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। জাপা-প্রধান জিএম কাদের-এর রংপুরের বাড়িতে আগুন। ছাত্রদের সংগঠন এনসিপি’র জোরালো আক্রমণ। প্রায় ২৫ জনকে আটক করে সেনাবাহিনী। কেন্দ্রীয় নেতা সারজিস আলম হাজির হলেও থামেনি শাসন। চোখে চোখ রেখে কথা বলেছেন সামরিক কর্মকর্তা।
ঢাকায় সচিবালয়ে আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের ঠেকাতেও ছাত্রশক্তি বেপরোয়া। কিন্ত সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঠেকিয়ে দিয়েছে ‘মব-জাস্টিস’। শুধু জনবহুল এলাকা নয়। ‘কুরবানির হাটে হাটে’ও চলছে টহলদারি। ‘কেনা-বেচায়’ কমিশন খাওয়া দালাল-চাঁদাবাজরাও ‘কট’। কোমরে দড়ি লাগিয়ে সরাসরি চালান। গরু-ছাগল বা দ্রব্যের মূল্যও অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। ঈদযাত্রায় ট্রেন, বাস, লঞ্চে চলছিলো টিকেটের কালোবাজারি। সেখানেও সামরিক বাহিনীর সযত্ন খবরদারি। অপরাধ দমনে চলছে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিমালা। যাত্রী পরিবহনে ‘মলম পার্টি’র দৌরাত্ম হঠাৎ কমে গেছে। সরকারি-বেসরকারি পরিবহন যথাসময়ে চলার চেষ্টা চালাচ্ছে। ধনীর দুলালদের কার বিলাসিতাও চ্যালেঞ্জের মুখে। নেশাদ্রব্যসমেত কাগজপত্রহীন গাড়ি আটকের ঘটনাও ঘটছে। ফলে, দেশের ‘টক অব দ্য টাউন’ একটাই। তা হলো- ‘মব-ভায়োলেন্সের সেনা-কুরবানি’।
নির্বাচনী নিবন্ধন পেলেও দাঁড়িপাল্লা নিয়ে
সংশয় জামায়াতের ॥ রংপুর’কে গিলতে
যুদ্ধের উস্কানি ভারতের
পবিত্র ঈদুল আজহায় ৯ দিনের সরকারি ছুটি। আড়াই কোটি গরুর দেশে ব্যাপকসংখ্যক কুরবানির কথা। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি-বন্যায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকায় আহাজারি। অন্যদিকে রাজনীতির ‘ঈদ ভ্যাকেশন’ও আর থাকছে না। শহর থেকে পল্লী- প্রধানত নির্বাচনী আলোচনায় মুখর। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় এলাকায় সুযোগ নিচ্ছেন। আওয়ামী শক্তিকে পাশে নিয়ে জাপার লড়াই। মব-বিশৃঙ্খলার কুরবানি ঘটাচ্ছে সামরিক বাহিনী। বিএনপি-ভারত-সেনাপ্রধান চান ডিসেম্বরেই নির্বাচন। ফাঁসির আসামী এটিএম আজাহরুল খালাস পাওয়ায় জামায়াত প্রফুল্লচিত্তে। একাত্তরের দালালের মুক্তিতে বামপন্থী-স্বাধীনতাকামীদের আগুন জ্বলছে চিত্তে। রাজধানীতে মিনি আন্দোলন, রাজশাহীতে মশাল মিছিল।
২০১৩ থেকে ঝুলে ছিলো নির্বাচনী নিবন্ধন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে তা ফিরে পেয়েছে জামায়াত। তবে নির্বাচনী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ বিষয়ে বিতর্ক বিদ্যমান। হাইকোর্টের পূর্বোক্ত নির্দেশনা ছিলো- প্রতীকটি আদালতের। হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট বা আদালতেও ব্যবহৃত হয়। তাহলে, একই প্রতীক কী করে একটি দলের হতে পারে। উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশনও প্রতীক-তালিকা হতে ‘দাঁড়িপাল্লা’ বাদ দেয়।
এদিকে ‘সেভেন সিস্টার্স’কে সুরক্ষা দিতে মরিয়া ভারত। শিলিগুড়ির ‘চিকেন নেক’কে প্রশস্ত করতে চলছে প্রস্তুতি। সামরিক বিশেষজ্ঞরা দিচ্ছেন আগ্রাসী পরামর্শ। বাংলাদেশের ‘রংপুর’ বিভাগ দখলের প্রস্তাবনা। ম্যাপ দেখিয়ে বলছেন তিনদিকে ভারত। তিন ডিভিশন সৈন্য নামালেই দখল হয়ে যাবে। রংপুর বিভাগটি পেলে ‘চিকেন নেক’-এর সংশয় কেটে যাবে।
রংপুর দখলের নেপথ্য কারণ ‘লালমনিরহাট বিমান-সেনাঘাঁটি’। সেখানে বাংলাদেশ চীন ও পাকিস্তানের সামরিক সহযোগিতা নিচ্ছে। এছাড়া পাশেই ‘তিস্তা ব্যারেজ’। সেখানে মহাচীনের মহাপরিকল্পনা। রংপুর বিভাগের আরেক জেলা ঠাকুরগাঁও। সেখানকার পরিত্যাক্ত বিমানবন্দরও পাচ্ছে নতুন রূপ। সেটিকেও সামরিকরূপ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে ভারত নিজেদের অনিরাপদ ভাবছে। এজন্যে সীমান্তে সাঁজোয়া বাহিনী ও যুদ্ধবিমানের সমাবেশ ঘটিয়েছে। যুদ্ধবিমান ‘রাফেল’ এখন রংপুরের সন্নিকটেই।
জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম। একাত্তরে ‘ইসলামী ছাত্রসেনা’র রংপুরের সম্পাদক ছিলেন। ঘাতক-দালাল হিসেবে আওয়ামী শাসনামলে ফাঁসির আসামিও ছিলেন। সাম্প্রতিককালে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। বৃহত্তর রংপুরে এই রাজনীতিকের পৈতৃকবাস। অনেকের ধারণা এবার তিনি এলাকায় আন্দোলন জমাবেন। ‘জাগো বাহে কোনঠে সবায়’ শ্লোগানে জনগণকে মাতাবেন। ভারতের ‘রংপুর দখল’ প্রক্রিয়াকে ঠেকিয়ে দেবেন। উল্লেখ্য, ‘মব-ভায়োলেন্স’ ঠেকানোর নামে সামরিক বাহিনীও সেখানে সক্রিয়। জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদও বৃহত্তর রংপুরের।
ডিসেম্বরে জেলা-উপজেলায় প্রস্তাবিত
ডেট... ॥ ২০২৫-এর ৫ আগস্ট
এমপি-ভোটের টাগের্ট
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লক্ষণীয়। সাম্প্রতিককালে জাপান সফরে ড. ইউনূস এনেছেন নতুন সাফল্য। এক লাখ শ্রমিক নিচ্ছে জাপান। মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াও একই খাতে দেখাচ্ছে নবপ্রত্যাশা। রাশিয়া নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দিচ্ছে আলো। স্মারক সাফল্যটি হলো চীনের বাণিজ্যদল বাংলাদেশে। ১৩৭টি কোম্পানির ৩০০ প্রতিনিধি নিয়ে স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায়। গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, পাওয়ার সেক্টরে হৈ হৈ পরিস্থিতি। অর্থাৎ বিনিয়োগ খাতে খুলছে সম্ভাবনার দ্বার। প্রবাসীদের রেমিটেন্সে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নের ওপরে। ফলে গ্রামীণ দারিদ্র্য ও গার্মেন্টস বন্ধের হতাশা চাপা পড়ছে।
জুলাই আন্দোলনের হত্যাকান্ডের প্রকাশ্য বিচার শুরু হয়েছে। শেখ হাসিনার গড়া ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল’ সক্রিয়। পয়লা জুনের ট্রায়াল প্রথমবারের মতো টিভিতে প্রদর্শিত হয়। প্রধান আসামী শেখ হাসিনাসহ সহযোগীরা বিচারের মুখোমুখি। আগামী ১৬ জুনের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার সময়।
বিনিয়োগ ও বিচারের বিষয়টি সরকারের জন্যে ইতিবাচক। এছাড়া চলছে রাজনৈতিক সংস্কারের কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মতবিনিময় করছে ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’। সরকার প্রধান ড. ইউনূস এই কমিশনের চেয়ারম্যান। বৈঠকে বিএনপিসহ অধিকাংশ দল ডিসেম্বরে ভোট চেয়েছে। সেনাপ্রধান এবং ভারতও ডিসেম্বরের মধ্যে ভোট চায়। জামায়াতে ইসলামী ও নাগরিক পার্টির এ বিষয়ে চাপ নেই। ড. ইউনূসের পূর্বঘোষিত ২০২৬-এর জুনকে মেনে নিয়েছে। যদিও মে-জুনে প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে। প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিত করতে জামায়াত সময় দিতে আগ্রহী। এনসিপি‘র বক্তব্য- তিনটি বিষয়ে ‘রোডম্যপ চাই’। জুলাই আন্দোলনের অপরাধীদের বিচার, সাংবিধানিক সংস্কার ও নির্বাচন।মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সরকার শ্রদ্ধাশীল নয় বলে প্রচারণা আছে। সেটি কাটাতে বিজয় মাসে ডিসেম্বরে ভোট চায় পরার্মশকেরা। জেলা, উপজেলা ও পৌর এলাকাগুলো অনেকটা অভিভাবকহীন। জনপ্রতিনিধিদের কল্যাণমূলক সেবা থেকে এলাকাবাসী বঞ্চিত। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদ নিয়ে এখনও চলছে নাটক। আইনী জটিলতায় বিএনপির ইশরাক হোসেন শপথ নিতে পারেননি। এ বিষয়ে সরকার ও বিএনপি অনেকটা মুখোমুখি। এজন্যে সরকারের ভাবনা- অতিদ্রুত নতুন নির্বাচন হোক। একইসূত্রে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন ডিসেম্বর নাগাদ হতে পারে। সেনাপ্রধান জে. ওয়াকার উজ্জামানও ডিসেম্বরের কথা বলেছেন। প্রধান দল বিএনপি, প্রতিবেশী দেশ ভারতও এমনটি চাচ্ছে। জনগণ তথা নতুন প্রজন্মও ভোটাধিকার প্রয়োগে এককাট্টা। ২০২৬-এর ২৮ জুন ড. ইউনূসের ৮৫তম জন্মতিথি। জাতীয় নির্বাচন দিয়ে তিনি বিদায় নিতে চান। সে সময়ে সবাই হয়তো গাইতে পারবে সেই কালজয়ী গানটি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের- তোমার হলো শুরু আমার হলো সারা,/ তোমার আমার মাঝে/ এমনি বহে ধারা...।