সিঁদুর ও সোহাগ রাতের গল্প

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫, ২২:২১ , অনলাইন ভার্সন
বিবাহিত হিন্দু নারীর কাছে তার সিঁথির সিঁদুর অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। সিঁদুর তার সোহাগ অর্থাৎ জীবনসঙ্গী স্বামীর প্রতীকস্বরূপ। গত ২২ এপ্রিল ভারতের কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের সবাই ছিলেন হিন্দু। স্বাভাবিকভাবে এটা একরকম ধরে নেওয়া যায়, নিহত সব পুরুষের স্ত্রীও ছিলেন একই ধর্মাবলম্বী। স্বামীদের নিহতের ঘটনায় তারা সিঁদুর-হারা হন, যেটা একজন বিবাহিত হিন্দু নারীর জন্য কতটা মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক, তা কেবল একজন ভুক্তভোগীর পক্ষেই অনুধাবন করা সম্ভব। হিন্দুধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, একজন হিন্দু নারীর স্বামী বিয়োগ হলে তিনি আর তার সিঁথির সিঁদুর পরতে পারেন না, এমনকি সিঁথিতে থাকা সিঁদুরও মুছে ফেলতে হয়। হিন্দুধর্মের এই রীতিকথা মনে রেখে পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে ৭ মে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হামলায় যে কার্যক্রম শুরু করে, তার নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন সিঁদুর’, যেটাকে একশ্রেণির ভারতীয় মিডিয়া পেহেলগামে স্বামী-হারানো নারীদের প্রতি শ্রদ্ধার (Tribute) নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরার প্রয়াস পায়।

বলে রাখা প্রয়োজন, পাকিস্তান পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার ভারতীয় অভিযোগকে অস্বীকার করলেও ভারত তাতে কর্ণপাত না করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চরম প্রতিশোধ নেওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘We will identify, track and Puhish every terrorist and the backers of the armorists’ এবং ভারতীয় মিডিয়ায় সার্বক্ষণিকভাবে প্রচারিত ‘We want revenge’ জাতীয় বক্তব্য-বিবৃতি থেকে এটা সহজেই আন্দাজ করা যায়।

ইতিমধ্যে কাশ্মীরে সংঘটিত সন্ত্রাসী ঘটনা-পরবর্তী সময়ে কেবল সন্দেহভাজন কাশ্মীরি তরুণ-যুবাদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার, সীমান্তে গুলিবিনিময় বা বড়জোর পাকিস্তানের দু-একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর ওপর ভারতের সামরিক তৎপরতা সীমিত থাকলেও এবারের পেহেলগাম ঘটনার পর সেই কার্যক্রম ব্যাপকভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত হয়। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে কাশ্মীরের ফুলওয়ামায় ভারতীয় সেনা কনভয়ের ওপর কাশ্মীরি বিদ্রোহীদের আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন ভারতীয় সেনা নিহত হলে ভারত প্রতিশোধস্বরূপ পাকিস্তানের বালাকোট এলাকায় হামলা চালিয়ে একটি মাদ্রাসা ধ্বংস করার মধ্যে তার অভিযান সীমিত রাখে। এবার ভারত তার ভাষায় সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন ও ভবিষ্যতে পাকিস্তানের কথিত সমর্থনে পেহেলগামের মতো এ সন্ত্রাসী ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হতে পারে, তা নিশ্চিত করতে পাকিস্তানকে কড়া সবক দিতে ব্যাপক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করে। পেহেলগাম ঘটনার দুই সপ্তাহ পর সরকার ফাঁকফোকর ঠিকঠাক করে এমনভাবে হামলা চালানোর গ্রিন সিগন্যাল দেয়, যাতে পাকিস্তানকে সর্বোতভাবে পরাস্ত ও পর্যুদস্ত করা সম্ভব হয়।

অন্যদিকে পাকিস্তানও ভারতের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে ভারতের সম্ভাব্য হামলাকে বানচাল ও ব্যর্থ করে ভারতকে সমুচিত জবাব দিতে পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়। ভারতকে তার হামলার সমুচিত জবাব দিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় জীবনে নতুন অধ্যায় রচনার জন্য ভারতীয় হামলা পণ্ড করার কার্যক্রমকে পাকিস্তান ‘অপারেশন সোহাগ রাত’, পরে অপারেশন ‘বানিয়ান জন মারসুম’ (শক্তিশালী কাঠামো) নাম দেয়। নবদম্পতি বিয়ের প্রথম রাত অতিবাহিত করে যেভাবে নতুন জীবনের যাত্রা শুরু করে, তেমনিভাবে পাকিস্তানও এ অঞ্চলে ভারতের দাদাগিরি চিরতরে থামিয়ে দিয়ে নতুন অধ্যায় সূচনার সংকল্প ব্যক্ত করে।

৭ মে ভারত পাকিস্তানের কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের বাহোয়ালপুর ও শিয়ালকোট এলাকায় মিসাইল হামলা চালিয়ে যুদ্ধের সূচনা করে। হামলায় সেসব এলাকায় একাধিক মসজিদ, মাদ্রাসা ও বেশ কিছুসংখ্যক বসতবাড়ি ধ্বংস হয়। ভারত ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদ ও মাদ্রাসাকে কথিত জঙ্গি সংগঠন লস্করে তৈয়্যবা ও জয়শে মোহাম্মদের আস্তানা বলে দাবি করে। পাকিস্তান পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতের কাশ্মীর ও অন্য কয়েকটি শহরে বোমা ও গোলাবর্ষণ করে। ভারত ও পাকিস্তানের হামলায় উভয় দেশে শতাধিক বেসামরিক নাগরিক হতাহত হওয়া ছাড়াও বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
রণাঙ্গনে যুদ্ধের পাশাপাশি উভয় দেশ মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা ওয়ারে লিপ্ত হয়ে যুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের বিজয় ও সাফল্যের গল্প প্রচার করতে থাকে। ভারত পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস, করাচি বন্দরে হামলা ও সন্ত্রাসীদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়ার এবং পাকিস্তান ভারতের বেশ কয়েকটি যুদ্ধবিমান ও একটি সামরিক পদাতিক ব্রিগেড সদর দপ্তর ও চৌকি ধ্বংসের দাবি করে। ভারতীয় মিডিয়ায় কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল (জেরি বকশি, কে কে সিনহা, বিসম্বর দয়াল প্রমুখ) ভারতের কাছে পাকিস্তানের পূর্ণ পরাজয় অত্যাসন্ন বলে প্রতিনিয়ত চিৎকার-চেঁচামেচি করে বক্তব্য দান অব্যাহত রাখেন।

সামরিক শক্তিতে ভারত পাকিস্তানের চেয়ে সৈন্যসংখ্যা ও অস্ত্রভান্ডারের (Arms and Ammo) বিশালত্বের দিক দিয়ে বেশ এগিয়ে থাকলেও সামরিক শক্তিতে পাকিস্তান একেবারে দুর্বল, সেটা বলা যাবে না। যুদ্ধক্ষেত্রে পাকিস্তানের শৌর্য ও বীরত্বগাথা সর্বজনবিদিত। এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক এক আকাশযুদ্ধে পাকিস্তানি নারী ফাইটার পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার আয়েশা ফারুকের বীরত্বের কথা উল্লেখ করা যায়, যিনি ওই আকাশযুদ্ধে একটি ভারতীয় রাফাল যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করতে সক্ষম হন বলে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয় হামলাকে ‘Its a Shame’ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স পাক-ভারত যুদ্ধকে None of our business বলে উল্লেখ করলেও যুদ্ধ বিস্তারের আশঙ্কা করে ট্রাম্প জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে কথা বলতে পরামর্শ দেন। তারা ৯ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত করান, যা ১০ মে থেকে কার্যকর হয়। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় ট্রাম্প ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের কমনসেন্স ও শুভবুদ্ধির প্রশংসা করেন। যুদ্ধ বন্ধে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব যথাযথভাবে প্রতিপালিত হবেÑসেটাই এখন সব মহলের প্রত্যাশা।

যুদ্ধের ফল কখনোই শুভ হয় না। এটা পরিবার, নগর, অর্থনীতি, দেশ সব ধ্বংস করে দেয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির একটি উক্তি দিয়ে লেখার ইতি টানছি। তিনি বলেছেন, ‘Mankind must pat an end to war before war pats an end to mankind.’ যুদ্ধ বন্ধে মি. ট্রাম্পের প্রচেষ্টার জন্য তাকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।
লেখক : কলামিস্ট
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078