সবুজ ছায়ায় ঘেরা ছোট্ট আমাদের ঘর, ভালোবাসা ছিল মোদের, জুড়াত অন্তর। মায়ের স্নেহ, বাবার আদর থাকত ঘিরে, নির্ভাবনায় কাটত জীবন সুখেই। ১২ মাস অভাব ছিল, কষ্ট ছিল, তবু ছিল সুখ। পেতাম তাতে প্রাণের পরশ।
বাবা তুমি আমার পৃথিবী, পৃথিবীজুড়ে আছ। আজ আমি মহাশূন্যতায়, তাই তোমাকে খুঁজি রাতদিন। তোমার কাছে প্রথম পড়তে শেখা, পৃথিবীকে বুঝতে শেখা, মা ডাকতে শেখা। তুমি আছ ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভয়ে ভয়ে মুখ লুকাতাম তোমার বুকে। সেই বুকটা তো আর নাই। কেউ বলবে না আরÑভয় পাস না, আমি তো আছি। মায়ের বকুনি ছিল নিত্যদিনের শাসন। তোমার শাসন ছিল না, ছিল মধুমাখা শ্রবণ। রোদবৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে এলে কেউ বলে নাÑধর গামছাটা, মাথাটা মুছে ফেল, শরীর খারাপ হবে। সেই তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে।
রোদে তেতে পুড়ে বাড়ি এলে বলতে-ছাতাটা নিই নাই, বড় তেষ্টা পেয়েছে। দৌড়ে এক গ্লাস পানি এনে দিতাম, পানি পান করে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলতেÑপ্রাণটা জুড়াল, তুই বড় হয়েছিস। হ্যাঁ, বড় হয়েছি সত্যিই, বড় হয়েছি, অনেক বড়। তবু তোমার পরশ পেতে চাই। সূর্য যেমন অনন্তকাল পৃথিবীতে আলো ছড়ায়, মায়ের ও বাবার মমতায় ছেয়ে থাকে বিশ্বময়, বাবা-মায়ের শূন্যতা কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়।
বাবা, তুমি ছিলে জ্ঞানের আধার, ক্ষণজন্মা অসাধারণ পাণ্ডিত্যের আদালত। তুমি তোমার ছেলেদের বলতে, এই সভ্য পৃথিবী যার যার, জীবন তার তার, বাবা-মায়ের বংশ-পরিচয়Ñএসব কিছুই নয়। প্রত্যেক মানুষকে তার পরিচয়ে মানুষ হয়ে উঠতে হয়। নিজের পরিচয়ে তৈরি করে নিতে হয়, নিজের কর্ম পথে ঠেলে দেয় মানুষকে। বাস্তব বড় কঠোর, বড় নির্মম। কল্পনার সঙ্গে কোনো দিন মেলে না। তোরা ভালো হোস, নিজেদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলিস, এই সমাজ স্বার্থপর। আমি তোদের অনেক ভালোবাসি, অনেক কিছু করার ছিল, করতে পারি নাই। প্রার্থনা করি, তোরা ভালো হোস, সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত সুনাগরিক হবি। বাবা, তুমি তারা হয়ে ফেরো সকাল সাঁঝে, অ্যালবামে হাত দিয়ে দেখি ঝাঁপসা তোমার ছবি। আর ভাবি তোমার কথা, বলেছিলেÑতুই বড় হয়েছিস, তোকে নিয়ে ভাবতে হবে, একটা সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলের হাতে তুলে দিতে হবে। তাই তো দিলে আর বললে, মা, তুমি সম্মান রেখো; স্বামীর ঘর সেটাই তোমার। সংসার আসল ঠিকানা তোমার। এই বাড়িতে আমি বড় হলাম, আমার শৈশব কাটল আর তুমি বাবা বলো আমার ঠিকানা স্বামীর বাড়ি-বাস্তব সেটাই।
বাবা, তুমি মাকে কম ভালোবাসোনি। তুমি বলেছিলে, তোর মাকে কিছুই দিতে পারি নাই, শূন্য থেকে আনি নক্ষত্রকে, ধন নয় মান নয়, দিয়েছিলাম ছোট্ট এতটুকু ঘর, সেই ঘরখানা করেছিল স্বপ্নপুরী। সুখ-শান্তিতে ভরা ছিল আমার আঙিনা, জ্যোৎস্না রাতে ভরে যেত জুঁই-চামেলির গন্ধে, জোনাকির গুনগুন গানে। সেই ঘরখানা হারিয়ে গেল কোথায়? বাবা আমাকে বিয়ে দিলেন, শ্বশুরবাড়ি ছিল কাছেই। মা ভাইদের বলে দিলেন, ওটা তোদের বোনের শ্বশুরবাড়ি, যেতে হয় না। ওরা মায়ের কথা মন দিয়ে শোনে। ছোট ভাইটা সাত বছরের, আমার ন্যাওটা। একদিন মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে জানালায় এসে ডেকে ওঠে, আপা, তুই এখানে থাকস কেন, আমাদের বাড়ি যাবি না, ওরা যেতে দেয় না, তুই চল, আমি জানালা ভেঙে নিয়ে যাব! ওর কথায় ভালোবাসার আবেগ ছিল, মনের কুঠুরিতে লুকানো আছে। বাবা, তোমার ছেলেরা আঙিনায় দাঁড়িয়ে ডেকে বলে, ধ্রুবতারাটি মিটমিট করে জ্বলছে, জ্যোৎস্নার পূর্ণিমা রাতে বাবা আমাদের দেখছেন, তারাটির দিকে তাকিয়ে দুই চোখের অশ্রুধারা বয়ে যাচ্ছে। ওটাই আমাদের বাবা, বুকের মাঝে তোমার স্মৃতি বয়ে বেড়ায়। সময় সবকিছু বদলে যায়, বদলাতে পারে না স্মৃতি। বাবা, তোমাকে খুঁজি সন্ধ্যাতারায়, তুমি আমাদের বাবা, যেখানে থাকো ভালো থেকো।
মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকে না, মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে নিতে হবে। তুমিও মৃত্যুর স্বাদ নিয়ে চলে গেলে, রেখে গেলে আমাদের, একবার তাকালে না। আমরা তোমার সাথে জড়িয়ে ছিলাম, কিছু করতে পারলাম না, দুই ফোঁটা চোখের পানি ফেলে বিদায় জানানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। তোমার জানাজা শেষে তোমাকে শুইয়ে এলাম অনন্ত আবাসে। তুমি ছাড়া আমরা শূন্য।
দুই দিন আগে যাকে নিয়ে কত স্বপ্নকল্পনা ছিল, সে কোথায় হারিয়ে গেল? রেখে গেলে আপনজন-স্ত্রী-পুত্র-কন্যা। কীভাবে গ্রহণ করলে মৃত্যুকে।
তুমি যখন আমাদের ছেড়ে চলে গেলে, তোমার বড় ছেলের কী-ইবা বয়স ছিল। তোমার কথা রেখেছে, মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে, ছোট ভাইদের বুকে নিয়ে গড়ে তুলে আপন বলয়ে, তোমার কথা স্মরণ করে লাগামহীন ঘোড়ার মতো চলতে থাকে নিজের পায়ে দাঁড়ায়, ভাইদেরকেও দাঁড় করিয়েছে, সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত তারা। তবু অসহায়, চারদিকে শূন্যতা। বাবা, তুমি থাকলে মাথায় হাত দিয়ে বলতে, তোর সাথে আমি আছি, ভাবনা কী?
বাবা তুমি আমার পৃথিবী, পৃথিবীজুড়ে আছ। আজ আমি মহাশূন্যতায়, তাই তোমাকে খুঁজি রাতদিন। তোমার কাছে প্রথম পড়তে শেখা, পৃথিবীকে বুঝতে শেখা, মা ডাকতে শেখা। তুমি আছ ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভয়ে ভয়ে মুখ লুকাতাম তোমার বুকে। সেই বুকটা তো আর নাই। কেউ বলবে না আরÑভয় পাস না, আমি তো আছি। মায়ের বকুনি ছিল নিত্যদিনের শাসন। তোমার শাসন ছিল না, ছিল মধুমাখা শ্রবণ। রোদবৃষ্টিতে ভিজে বাড়িতে এলে কেউ বলে নাÑধর গামছাটা, মাথাটা মুছে ফেল, শরীর খারাপ হবে। সেই তুমি কোথায় হারিয়ে গেলে।
রোদে তেতে পুড়ে বাড়ি এলে বলতে-ছাতাটা নিই নাই, বড় তেষ্টা পেয়েছে। দৌড়ে এক গ্লাস পানি এনে দিতাম, পানি পান করে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলতেÑপ্রাণটা জুড়াল, তুই বড় হয়েছিস। হ্যাঁ, বড় হয়েছি সত্যিই, বড় হয়েছি, অনেক বড়। তবু তোমার পরশ পেতে চাই। সূর্য যেমন অনন্তকাল পৃথিবীতে আলো ছড়ায়, মায়ের ও বাবার মমতায় ছেয়ে থাকে বিশ্বময়, বাবা-মায়ের শূন্যতা কিছুতেই পূরণ হওয়ার নয়।
বাবা, তুমি ছিলে জ্ঞানের আধার, ক্ষণজন্মা অসাধারণ পাণ্ডিত্যের আদালত। তুমি তোমার ছেলেদের বলতে, এই সভ্য পৃথিবী যার যার, জীবন তার তার, বাবা-মায়ের বংশ-পরিচয়Ñএসব কিছুই নয়। প্রত্যেক মানুষকে তার পরিচয়ে মানুষ হয়ে উঠতে হয়। নিজের পরিচয়ে তৈরি করে নিতে হয়, নিজের কর্ম পথে ঠেলে দেয় মানুষকে। বাস্তব বড় কঠোর, বড় নির্মম। কল্পনার সঙ্গে কোনো দিন মেলে না। তোরা ভালো হোস, নিজেদের সুন্দরভাবে গড়ে তুলিস, এই সমাজ স্বার্থপর। আমি তোদের অনেক ভালোবাসি, অনেক কিছু করার ছিল, করতে পারি নাই। প্রার্থনা করি, তোরা ভালো হোস, সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত সুনাগরিক হবি। বাবা, তুমি তারা হয়ে ফেরো সকাল সাঁঝে, অ্যালবামে হাত দিয়ে দেখি ঝাঁপসা তোমার ছবি। আর ভাবি তোমার কথা, বলেছিলেÑতুই বড় হয়েছিস, তোকে নিয়ে ভাবতে হবে, একটা সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলের হাতে তুলে দিতে হবে। তাই তো দিলে আর বললে, মা, তুমি সম্মান রেখো; স্বামীর ঘর সেটাই তোমার। সংসার আসল ঠিকানা তোমার। এই বাড়িতে আমি বড় হলাম, আমার শৈশব কাটল আর তুমি বাবা বলো আমার ঠিকানা স্বামীর বাড়ি-বাস্তব সেটাই।
বাবা, তুমি মাকে কম ভালোবাসোনি। তুমি বলেছিলে, তোর মাকে কিছুই দিতে পারি নাই, শূন্য থেকে আনি নক্ষত্রকে, ধন নয় মান নয়, দিয়েছিলাম ছোট্ট এতটুকু ঘর, সেই ঘরখানা করেছিল স্বপ্নপুরী। সুখ-শান্তিতে ভরা ছিল আমার আঙিনা, জ্যোৎস্না রাতে ভরে যেত জুঁই-চামেলির গন্ধে, জোনাকির গুনগুন গানে। সেই ঘরখানা হারিয়ে গেল কোথায়? বাবা আমাকে বিয়ে দিলেন, শ্বশুরবাড়ি ছিল কাছেই। মা ভাইদের বলে দিলেন, ওটা তোদের বোনের শ্বশুরবাড়ি, যেতে হয় না। ওরা মায়ের কথা মন দিয়ে শোনে। ছোট ভাইটা সাত বছরের, আমার ন্যাওটা। একদিন মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে জানালায় এসে ডেকে ওঠে, আপা, তুই এখানে থাকস কেন, আমাদের বাড়ি যাবি না, ওরা যেতে দেয় না, তুই চল, আমি জানালা ভেঙে নিয়ে যাব! ওর কথায় ভালোবাসার আবেগ ছিল, মনের কুঠুরিতে লুকানো আছে। বাবা, তোমার ছেলেরা আঙিনায় দাঁড়িয়ে ডেকে বলে, ধ্রুবতারাটি মিটমিট করে জ্বলছে, জ্যোৎস্নার পূর্ণিমা রাতে বাবা আমাদের দেখছেন, তারাটির দিকে তাকিয়ে দুই চোখের অশ্রুধারা বয়ে যাচ্ছে। ওটাই আমাদের বাবা, বুকের মাঝে তোমার স্মৃতি বয়ে বেড়ায়। সময় সবকিছু বদলে যায়, বদলাতে পারে না স্মৃতি। বাবা, তোমাকে খুঁজি সন্ধ্যাতারায়, তুমি আমাদের বাবা, যেখানে থাকো ভালো থেকো।
মানুষ চিরদিন বেঁচে থাকে না, মৃত্যুর স্বাদ সবাইকে নিতে হবে। তুমিও মৃত্যুর স্বাদ নিয়ে চলে গেলে, রেখে গেলে আমাদের, একবার তাকালে না। আমরা তোমার সাথে জড়িয়ে ছিলাম, কিছু করতে পারলাম না, দুই ফোঁটা চোখের পানি ফেলে বিদায় জানানোর জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ি। তোমার জানাজা শেষে তোমাকে শুইয়ে এলাম অনন্ত আবাসে। তুমি ছাড়া আমরা শূন্য।
দুই দিন আগে যাকে নিয়ে কত স্বপ্নকল্পনা ছিল, সে কোথায় হারিয়ে গেল? রেখে গেলে আপনজন-স্ত্রী-পুত্র-কন্যা। কীভাবে গ্রহণ করলে মৃত্যুকে।
তুমি যখন আমাদের ছেড়ে চলে গেলে, তোমার বড় ছেলের কী-ইবা বয়স ছিল। তোমার কথা রেখেছে, মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে, ছোট ভাইদের বুকে নিয়ে গড়ে তুলে আপন বলয়ে, তোমার কথা স্মরণ করে লাগামহীন ঘোড়ার মতো চলতে থাকে নিজের পায়ে দাঁড়ায়, ভাইদেরকেও দাঁড় করিয়েছে, সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত তারা। তবু অসহায়, চারদিকে শূন্যতা। বাবা, তুমি থাকলে মাথায় হাত দিয়ে বলতে, তোর সাথে আমি আছি, ভাবনা কী?