বাংলাদেশ : রাজনীতি ও গুজবের উর্বর ভূমি

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৫, ২২:০৮ , অনলাইন ভার্সন
বাংলাদেশের আয়তন ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মতো। জনসংখ্যা ১৭-১৮ কোটি। আয়তনে অনেক দেশই বাংলাদেশের চেয়ে বড়। জনসংখ্যার দিক থেকেও বাংলাদেশের স্থান অনেক দেশের পেছনেই হবে। কিন্তু রাজনীতি এবং সেই সঙ্গে গুজবের জন্য বাংলাদেশ বিশ্বের এক-দুই নম্বর দেশ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিশেষ করে, গুজব যদি সংবাদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে ১ নম্বর দেশের খেতাব লাভ, বাংলাদেশের সমূহ সম্ভাবনা। এর পেছনে গূঢ় কোনো কারণ নেই বা আবিষ্কার করতে শরীরের ঘাম নির্গত হওয়ার মতো দুঃসাধ্য কোনো কাজ নয়।

রাজনীতিসচেতন মানুষ বলে থাকেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। বিশ্বের যত মোড়ল দেশ আছে, তাদের কাছে বাংলাদেশ নাকি খুবই গুরুত্ব বহন করে। তারা সবাই, বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনীতি সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাÑমেজর থেকে জেনারেল, সবার সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে উদগ্রীব থাকে। কারণ তারা বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র যদি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তবে বঙ্গোপসাগরে তারা প্রভুত্ব করতে পারবে। পাশাপাশি চীন-ভারতকে সহজেই সময়কালে পরাভূত করার মওকা পাবে।

চীনও ঠিক যুক্তরাষ্ট্রের মতোই স্বপ্ন দেখে। বঙ্গোপাগরে যুক্তরাষ্ট্র যাতে ঘাঁটি গাড়তে না পারে, সে কথা বিবেচনায় রেখে চীন বাংলাদেশকে পাশে চায়। এ ছাড়া চীনও বাংলাদেশের একটি প্রতিবেশী। যদিও বঙ্গোপসাগর চীন-বাংলাদেশকে পৃথক করে রেখেছে। তবে আমেরিকার মতো অত দূরবর্তী দেশ নয়, বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশ নিয়ে ত্রিদেশীয় এই রশি টানাটানি বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় হওয়ার কারণেই। এর সুযোগ ও সুবিধা ভোগ করা নির্ভর করবে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা এবং কূটনৈতিক ভূমিকার ওপর। তাদের দক্ষতা-প্রাজ্ঞতা নিয়ে দেশের মানুষের খুব একটা আস্থা লক্ষ করা যায় না। তারা তাদের প্রাজ্ঞতা প্রদর্শনের সাফল্য দেখাতে পারেনি। সে কারণে বাংলাদেশ তৃতীয় পক্ষের আগমন লক্ষ করেছে। একই কারণে বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়েও পড়েছে।

শাসককুল এবং রাজনীতির ফাঁকফোকর দিয়ে পাখা মেলে নানা খবরাখবর। আর এ কথাও ঠিক, যিনি যেভাবে খবর পান, সে খবরের তথ্যের যাচাই-বাছাই, চেক-ক্রসচেক, রিপোর্টারকে কোনো প্রশ্ন না করেই সে রিপোর্ট প্রকাশ করা একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। যে সংস্কৃতি সংবাদপত্রশিল্পের জন্য সুখবর নয়। সেই সংস্কৃতি সংবাদপত্রের নীতি-নৈতিকতা, নিয়ম-কানুন কোনো কিছুর মধ্যেই পড়ে না। এর ফলে সংবাদপত্রশিল্পের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হয়, তা হলো গুজব। এসব দুর্বলতার ছিদ্র দিয়ে গুজবও খবরের মর্যাদা পেয়ে যায়। গুজবের নমুনা তুলে ধরা খুব কঠিন না হলেও, গুজবের দৃষ্টান্ত আরেকটা গুজবই হবে। এককথায় অতিসংক্ষেপে বলা যায়, যা খবর নয়, অথচ খবর বলে চালিয়ে দেওয়া হয়, তাকেই গুজব বলা যেতে পারে।

তবে বর্তমান সময়ে মূল মিডিয়া ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত অনেক খবরই গুজবের প্রকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। গত জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতন হলেও তার তিন দিন পর অর্থাৎ ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। এর পর থেকে বাংলাদেশে কোনটা খবর, কোনটা গুজব বেছে বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে।

খবরকে বাংলাদেশে বর্তমান ভাষান্তরে বয়ান বলা হচ্ছে। সেই বয়ানেও কোনটা আসল বয়ান, আর কোনটা আসল নয়, তা নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে। তাতে নকল আসল হয়ে যাবে না। গুজবের ভালো কোনো দিক আছে কি না, তা কেউ বলতে পারবে, কারও জানা নেই। তবে নেগেটিভ অনেক দিক নিয়ে অনেক পক্ষেই কথা বলা সম্ভব। এখানে খুব মেধা বা প্রজ্ঞার প্রয়োজন পড়ে না। সচেতনভাবে একটু পর্যবেক্ষণ করলেই সঠিক আর গুজব ধরতে পারা যাবে। গুজবের আঁতুরঘর বঙ্গভবন থেকে শুরু করে যমুনা, রাজপথ থেকে বাজার-ঘাট, চায়ের দোকান, সামাজিক অনুষ্ঠান, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি ইত্যাদি। ‘পিউর’ এবং ভেজাল খবরও আছে বলে ইদানীং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ব্যক্তির বয়ান থেকে জানা যায়। গুজব মানুষকে সত্য বা সঠিক খবর জানার পথ থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। সত্য যেমন মানুষকে সঠিক তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক, গুজব ঠিক তার বিপরীত। গুজব মনুষকে বিভ্রান্ত করে। ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণে এবং ভুল সিদ্ধান্ত পথে পরিচালিত করে। গুজব ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করে, ভুল গ্রহণের সহায়ক হয়। যা একটা জাতি বা রাষ্ট্রকেই বিপর্যয়ের পথে ঠেলে দিতে পারে। গুজব সাংবাদিকতাকেই ইংরেজিতে ‘ইয়েলো’ বা হলুদ সাংবাদিকতা বলা হয়। এ ক্ষেত্রে ইয়েলো সম্ভবত জন্ডিস রোগ থেকেই গ্রহণ করা হয়ে থাকবে। যে রোগ হলে মানুষ সবকিছু ‘হলুদ’ দেখে, আসল রং চোখে পড়ে না।
বাংলাদেশ এখন সেই জন্ডিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আসল-নকল বুঝতে পারা কঠিন। ফলে দেশ যে কোন পথে চলেছে-সেটা মনে হয় কারও চোখে পড়ছে না।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078