শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলা

মাত্র ১৪ কর্ম দিবসে বিচার সম্পন্ন, বাংলাদেশে নতুন নজির

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ১৩:২৫ , অনলাইন ভার্সন
মাগুরার আট বছরের শিশুর ধর্ষণ ও হত্যার আলোচিত মামলার বিচার ১৪ কর্ম দিবসে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম মুকুল। এতে বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থায় নতুন নজির সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেছেন, “আমাদের মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে নির্দেশনা ছিল- মামলা এফআইআর করা থেকে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার কার্য সম্পন্ন করা। এবং আইন মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা উনি ঘোষণা করেছিলেন- ৩০ কার্যদিবসে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে।

“…আমরা এই নির্ধারিত সময়ের পূর্বে এই মোকাদ্দমার বিচার কার্য সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা ১৪ কর্ম দিবসে এই মোকদ্দমার সকল প্রসেস মেইনটেন্স করে আজকে আদালত রায় দিয়েছে।”

আজ ১৭ মে (শনিবার) সকালে রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে এ কথা বলেন পিপি মুকুল। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টায় মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে মূল আসামি হিটু শেখকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, খালাস পেয়েছে বাকি তিনজন।

মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, প্রধান আসামি হিটুর প্রাণদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত। বাকি তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তারা খালাস পেয়েছে।

“আমরা রাষ্ট্রপক্ষ, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পরে আলোচনা করে খালাসকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করব, পরবর্তীতে আমরা সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।”

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় মামলার বিশেষ কৌঁসুলি এহসানুল হক সমাজী বলেন, “হিটু শেখকে বিচারক সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছেন এবং অপরাপর আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দিয়েছেন।

“সুতরাং, এই রায়ের মাধ্যমে আরেকটি জিনিস প্রমাণিত হলো যে- বিজ্ঞ বিচারিক আদালত স্বাধীনভাবে তার জুডিশিয়াল মাইন্ড অ্যাপ্লাই করে তিনি জাজমেন্ট প্রদান করেছেন।”

অ্যাটর্নি জেনারেলের সমমর্যাদাপ্রাপ্ত এই আইনজীবী বলেন, “এই মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আসামিদেরকে যখন পরীক্ষা করা হয়, বিজ্ঞ বিচারিক আদালত পরিষ্কারভাবে তাদেরকে বলেছেন- ‘পরীক্ষাকালে যে আপনাদের জবানবন্দি এবং যে সাক্ষ্য আপনারা শুনেছেন, আপনাদের কোনো বক্তব্য আছে কি না?’।
“আসামিরা বলেছে, ‘আমাদের কোনো বক্তব্য নাই’। (বিচারক জানতে চেয়েছেন) ‘কোনো লিখিত বক্তব্য দেবেন?’, উনারা বলেছেন, ‘না; ‘কোনো সাফাই সাক্ষী দেবেন?’-উনারা বলেছেন, ‘না’।

“সুতরাং প্রসিকিউশন এভিডেন্স ক্লোজ হওয়ার পরে আইনের বিধান অনুযায়ী, সেকশন ৩৪২ অব দি কোড অফ ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের যে ম্যান্ডেটরি প্রভিশনস- সেটাকে যথাযথভাবে বিজ্ঞ বিচারিক আদালত কমপ্লাই করেছেন।
“আসামি সেটাকে সুযোগ না নেওয়ায় পরবর্তীতে বিজ্ঞ বিচারিক আদালত আর্গুমেন্ট এবং আর্গুমেন্টের পরবর্তীতে আজকের রায় প্রদান।”
মামলার বাদী রায়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে বলে এক সাংবাদিক বিশেষ কৌঁসুলির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

জবাবে সমাজী বলেন, দেখুন প্রথমত আমরা আমরা রিপ্রেজেন্ট করি স্টেটকে। কাজেই স্টেটকে যারা রিপ্রেজেন্ট করি, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে- স্টেটের ইন্টারেস্টকে প্রটেক্ট করা। আমি বলেছি, যেই আসামিদেরকে বিজ্ঞ বিচারিক আদালত একুইট করেছেন বা খালাস করেছেন; সেই একুইটাল অর্ডারে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমরা সেই রায়ের কপি সংগ্রহ করে সেটাকে পর্যালোচনা করে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথানিয়মে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উপদিষ্ট হলে বা ইনস্ট্রাক্টেড হলে উচ্চ আদালতে আপিল দায়ের করার সুযোগ রয়েছে।

গত ৬ মার্চ মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় বোনের বাড়ি বেড়াতে এসে ওই শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। সাত দিন চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১৩ মার্চ সে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যায়।

ঘটনাপ্রবাহ
১ মার্চ: রোজার ছুটিতে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আট বছরের শিশুটি তার বোনের বাড়ি বেড়াতে আসে।
৬ মার্চ: সকালে শিশুটি তার বোনের বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয়।

ওইদিনই শিশুটিকে মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

৭ মার্চ: শিশুটির চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
৮ মার্চ: পরে তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এদিন শিশুটির মা চারজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাগুরা সদর থানায় একটি মামলা করেন। শুরু থেকেই চার আসামি পুলিশ হেফাজতে ছিলেন।

৯ মার্চ: শিশুটির ধর্ষণের বিচারের দাবিতে ছাত্র-জনতার অব্যাহত বিক্ষোভ।
১০ মার্চ: নিরাপত্তার কারণে রাতে শুনানি করে চার আসামিকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।
১২ মার্চ: তিন পুরুষ আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ।
১৩ মার্চ: শিশুটি চিকিৎসাধীন অবস্থায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা যায়। আসামিদের গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ জনতা।

ওইদিনই বিমান বাহিনীর একটি উড়োজাহাজে শিশুটির মরদেহ মাগুরায় নিয়ে যাওয়া হয়। দুই দফা জানাজা শেষে তাকে রাতে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়।

১৪ মার্চ: পুলিশ জানায়, শিশুটি মারা যাওয়ায় আগের ধর্ষণ মামলার পাশাপাশি হত্যা মামলাও হয়েছে।
১৫ মার্চ: ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হিটু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
৮ এপ্রিল: মাগুরার পুলিশ সুপার জানান, হিটু শেখের ডিএনএ প্রতিবেদনে শিশুটিকে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
১৩ এপ্রিল: মাগুরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলাউদ্দিন।
২০ এপ্রিল: শুনানি শেষে আদালত অভিযোগ গঠনের জন্য ২৩ এপ্রিল দিন রাখেন।
২৩ এপ্রিল: অভিযোগ গঠনে শেষে মামলার বিচারকাজ শুরু হয়।
২৭ এপ্রিল: শিশুটির মা ও মামলার বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
৮ মে: মামলার মোট ২৯ জনের সাক্ষ্যপ্রদান শেষ হয়।
১৩ মে: দুই দিনের যুক্তিতর্ক শেষে মাগুরা জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান আলোচিত এই মামলার রায়ের জন্য ১৭ মে দিন রাখেন।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041