ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বিরতি এবং পোস্টমোর্টেম

প্রকাশ : ১৫ মে ২০২৫, ১২:০৮ , অনলাইন ভার্সন
উপমহাদেশে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের উন্মাদনা থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফোন ডিপ্লোমেসি করে ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছেন। ৯ মে উভয় দেশই সামরিক স্থাপনাসমূহে ব্যাপক আঘাত হানায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বিধায় মার্কিন কর্মকর্তারা একটু অতিরিক্ত আন্তরিকতায় কাজ করে এই সাফল্য অর্জন করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে এই সাফল্যের কথা জানিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স রিপোর্ট করে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শনিবার বিকেল ৫টা থেকে বিরতি কার্যকর হবে। কতটুকু কার্যকর হয়, তা দেখতে আরও কয়েকটি দিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু ৬৬ জন মানুষের মৃত্যু ও কোটি কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট করে কার কতটুকু লাভ হয়েছে? ২২ এপ্রিল ঘটনার শুরু থেকে ১০ মে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়াÑএই ১৮ দিনের পোস্টমর্টেম করলে তার একটা লাভ-লোকসানের চিত্র পাওয়া যাবে।
ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস
পোস্টমর্টেম : ৬ মে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা করার সময় পাঁচটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করে পাকিস্তান। এই বিমানের মধ্যে তিনটি ফ্রান্সের অত্যাধুনিক রাফায়েল যুদ্ধবিমান। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে বিবিসির এক সাংবাদিক পাঁচটি বিমান ধ্বংসের প্রমাণ চাইলে তিনি দিতে ব্যর্থ হন। জাপানি সংবাদমাধ্যম নিকেই এশিয়ার ইসলামাবাদের প্রতিনিধির বরাতে লিখে তিনটি রাফায়েল বিমান, একটি মিগ-২৯ এবং একটি এসইউ-৩০ বিমানকে ভূপাতিত করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকার হ্যাঁ বা না কোনোটি না বলে নীরবতা পালন করে। প্রথম দিন ভারতীয় কর্মকর্তারা কোনো সাংবাদিককে প্রশ্ন করতে দেননি। দ্বিতীয় দিন পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রিকে বিমান হারানোর বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জবাব দেন, সময়মতো সব জানানো হবে। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিবিসির কাছে তিনটি বিমান হারানোর কথা স্বীকার করেন। নিউইয়র্ক টাইমস কোনো সংখ্যা না বলে ভারতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে রিপোর্ট করে। রয়টার্স একাধিকবার ভারত তিনটি বিমান ও একটি ড্রোন হারিয়েছে বলে রিপোর্ট করে। সিএনএন ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে রিপোর্ট করে, একটি রাফায়েল বিমানকে ভূপাতিত করা হয়েছে। ভারতীয় সকল নিয়মিত ও সোশ্যাল মিডিয়া এই বিমান হারানোর বিষয়টি যখন একেবারেই এড়িয়ে যায়, তখন কিছু কিছু ভিডিও আসতে থাকে। ভারত সরকার কোনো মন্তব্য না করলেও মিডিয়াগুলো ফেইক নিউজ, ফেইক নিউজ বলে চিৎকার করতে থাকে। প্রবীণ সায়ন নামের একজন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক কর্মকর্তা সামাজিক মাধ্যমে ‘ফোর্স ম্যাগাজিন’ নামে বেশ জনপ্রিয় একটি ইউটিউব পরিচালনা করেন। তিনি তার ৭ মে, সিন্দুর শিরোনামে ১১ মিনিটের একটি ভিডিওতে ভারত সরকার কী কী ভুল করেছে, পাকিস্তানিরাই লাভবান হয়েছে এবং তিনি হিন্দুস্থান টাইমসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তিনি চারটি বিমান ধ্বংসের প্রমাণ পেয়েছেন, কিন্তু ভারত সরকার ভিডিওটা ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। (ভিডিওটি এখনো ইউটিউবে পাওয়া যায়)। সুতরাং পাঁচটি না হলেও ভারতের চারটি বিমান হারানো এখন প্রতিষ্ঠিত।
পাকিস্তানের এফ-১৬ ধ্বংস
পোস্টমর্টেম : ভারতের বিমান হারানোর খবরটি চেপে রাখতে চাইলেও আন্তর্জাতিক সকল মিডিয়াতে যখন এ বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়, তখন ভারতীয় মিডিয়া থেকে বলা হয়, ভারতও পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান ভূপাতিত করেছে। বিষয়টি একেবারেই মিথ্যা, কারণ পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে এফ-১৬ বিমান ব্যবহার করার অনুমতি নেই বিধায় তারা সেটা ব্যবহারই করেনি।
৪০ জন ভারতীয় সৈন্যকে হত্যা
পোস্টমর্টেম : ৮ মে পাকিস্তান পাল্টা হামলায় ভারতশাসিত কাশ্মীরে ৪০ জন ভারতীয় সৈন্য মারা গেছে বলে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হলেও এর কোনো সত্যতা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সত্যায়ন করা যায়নি, যদিও এ বিষয়ে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে।
ড্রোনের ক্ষয়ক্ষতি
পোস্টমর্টেম : আধুনিক যুদ্ধে মনুষ্যবিহীন ড্রোন খুবই জনপ্রিয় একটি অস্ত্র। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারত কতগুলো ড্রোন আক্রমণ করেছে, তার কোনো তথ্য না পাওয়া গেলেও ৭৭টি ধ্বংসের খবর দিয়েছে পাকিস্তান। ভারতের হিন্দুস্থান টাইমসসহ অসংখ্য গণমাধ্যম রিপোর্ট করেছে, পাকিস্তান তুরস্কের তৈরি ৩০০-৪০০ ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করেছে। ভারত সরকার বলেছে, তাদের রাশিয়ার তৈরি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম এস-৪০০ দিয়ে সব প্রতিহত করা হয়েছে।
লাহোরে কমান্ড সেন্টার ধ্বংস
পোস্টমর্টেম : ভারত দাবি করে, তারা পাকিস্তানের লাহোরে অবস্থিত সামরিক কমান্ড অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টারটি ধ্বংস করে দিয়েছে। পাকিস্তান তা অস্বীকার না করে বলেছে, তারা সেটিকে মেরামত করে আবার ব্যবহারযোগ্য করে নিয়েছে।
মিডিয়া কভারেজ
পোস্টমর্টেম : সব যুদ্ধে তথ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে মিডিয়া কভারেজে ভারত বেশি লাভবান হয়েছে। কোনো মিডিয়া জোরালো প্রশ্ন তোলেনি, কেন ভারত যুদ্ধ শুরুর আগে ২২ এপ্রিল পেহেলগামের ঘটনায় একটি নিরপেক্ষ তদন্তে রাজি হয়নি। মাত্র দেড় মাস আগে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে একদল সন্ত্রাসী শতাধিক লোকসহ একটি চলন্ত ট্রেন দখলে নেয়। তা মুক্ত করতে বহু লোক হতাহত হয়। পাকিস্তানও সে সময় ভারতকে ইন্ধনদাতা বলে অভিযোগ করেছিল। এ ছাড়া পাকিস্তানে বহু সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। গত বছর ভারত কানাডা ও আমেরিকার মাটিতে কিছু শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে টার্গেট করে একজনকে হত্যা করতে সক্ষম হয়। তারা পাকিস্তানের মাটিতে ছয়জনকে হত্যা করে, যা পাকিস্তান সরকার ওয়াশিংটনের সঙ্গে শেয়ার করে। মিডিয়াগুলো ভারতের এসব কাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। উপরন্তু, প্রথম দিনেই ভারতের বিমান হারানোর ঘটনাটি বিশদ কোনো কভারেজ করেনি, কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে হলে ভারতকে ক্রেডিট দিতে কী করত, বলা মুশকিল।
বিস্ময়কর চীন
পোস্টমর্টেম : ভারত-পাকিস্তান মারামারি করলেও পাশে থেকে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে চীন। তাদের তৈরি জে-১০ যুদ্ধবিমানে পিএল-১৫ এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল ব্যবহার করে পাকিস্তানের ফ্রান্সের রাফায়েল যুদ্ধবিমান ধ্বংস করার সক্ষমতা দেখে পশ্চিমা বিশ্ব অবাক হয়ে গিয়েছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স পশ্চিমা গোয়েন্দা ও ডিফেন্স পর্যালোকদের বরাত দিয়ে দুটি রিপোর্টে প্রকাশ করেছে। ব্রিটিশ সিএনএনের এক সাংবাদিক পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, তারা কী ব্যবহার করে রাফায়েল ধ্বংস করেছেন। পাকিস্তানি মন্ত্রী এড়িয়ে যেতে চাইলে সাংবাদিক আবারও ওই প্রশ্ন করেন, চীনের কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমাদের নিজস্ব প্রযুক্তি, কিন্তু সাংবাদিক তা বিশ্বাস না করে আবারও চীনের প্রযুক্তি জানতে চান। তখন মন্ত্রী বলেন, চীনের প্রযুক্তি হলেও ওটা আমরা তৈরি করেছি। এ ঘটনার পরপরই স্টক বাজারে রাফায়েলের প্রস্তুতকারী ডেসাল্ট এভিয়েশনের দরপতন এবং চীনের ওই জে১০ বিমান প্রস্তুতকারক চেংডি এয়ারক্রাপ্ট করপোরেশনের (সিএসি) দাম বেড়ে গিয়েছিল। ছোট্ট এই ঘটনাটি পশ্চিমা সমর বিশেষজ্ঞদের এক নতুন ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। এত দিন পর্যন্ত পশ্চিমারা মনে করত, তথ্য ও প্রযুক্তিতে, বিশেষ করে সমরাস্ত্রে, তারা সর্বসেরা, তাদের ধারেকাছে কেউই নেই। কিন্তু চীন প্রমাণ করে দিয়েছে, তারা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম।
বিজয়ী
ভারত-পাকিস্তানের ১৮ দিনের হানাহানিতে সবচেয়ে বেশি লাভবান চীন। পাকিস্তান ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভারত সবচেয়ে বেশি হারিয়েছে। -নিউইয়র্ক
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078