এনসিপি ঘুরেছে 💣 আ.লীগ পুড়েছে

ফিরছে বঙ্গবন্ধুর ‘বাকশাল’

প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৫, ১৭:০৬ , অনলাইন ভার্সন
রহস্যজনকভাবে বাংলাদেশ থেকে ব্যাংকক অভিযাত্রা। দিল্লি পর্যন্ত টিকেট করা। ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ জাদু দেখালেন। একটি হত্যা মামলার আসামী তিনি। কিন্তু ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে পাড়ি দিলেন বিদেশে। হাতে লাল (কূটনৈতিক) পাসপোর্ট। হাসিনা    
সরকারের সবার লাল পাসপোর্টই বাতিল। কিন্তু ২০৩০-এর পয়লা জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ। পৃথিবীর সব দেশেই ওনার যাতায়াত অবাধ। 
৮১ বছর বয়স্ক, ক্যানসারের রোগী। হাসিনা সরকারে স্পিকার থেকে দু’বারের রাষ্ট্রপতি। বঙ্গবন্ধু-কন্যার বশংবদ হিসেবে আলোচিত, সমালোচিত। ১৭তম রাষ্ট্রপতিরূপে সর্বাধিক ফাঁসির হুকুম মওকুফকারী। দু’সন্তানকে কিশোরগঞ্জের এমপি বানিয়েছেন। এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডও ব্যাপক। ‘ভাতের হোটেল’-খ্যাত ডিবি হারুনের উত্থান-সহায়ক। ১৯৭০ থেকে সংসদে সাতবারের এমপি। কৌতুক রসে পরিপূর্ণ ছিলো ব্যক্তিজীবন। 
পৃথিবীব্যাপী চলছিলো পাক-ভারত যুদ্ধের ডামাডোল। সর্বনিকট প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান স্পর্শকাতর। ততোধিক স্পর্শকাতরতা ‘হামিদ ইস্যুতে’। গত ৮ মে, বুধবার, শেষরাতে তিনি জানালেন গুডবাই। বোর্ডিং, চেকিং, ইমিগ্রশন, ভিআইপি লাউঞ্জ। ডিবি, এনএসআই, ডিজিডিএফআই- সবাই ছিলেন সদয়। উর্ধ্বতনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অদৃশ্য অনুমতি মেলে। শুধু কি ডি ০০০১০০১৫ নম্বরের কূটনৈতিক পাসপোর্টধারী। জনাব হামিদের দু’জন সফর সঙ্গীও অনুমতি পান। দু’জনেরই বাংলাদেশী পাসপোর্ট। প্রথমজন সন্তান রিয়াদ আহমেদ তুষার। দ্বিতীয়জন শ্যালক ডা. নওশাদ খান। 
থাই এয়ারওয়েজের প্লেনে ব্যাংকক অভিযাত্রা। সূর্য ওঠার আগেই ছড়িয়ে পড়লো সংবাদ। বিকেলবেলা সূর্যের তালে তালে ফুটতে থাকে প্রতিবাদের রোদ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বাসা ঘেরাও। সন্ধ্যেবেলা প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে টার্গেট। বাসভবন ‘যমুনা’র সামনে অবস্থান গ্রহণ। প্রতিবাদের ভাষায় নতুন বিশ্লেষণ। সরকারের ভেতর ‘আওয়ামী ভূত’ বসে আছে। তাদের সহায়তায় আব্দুল হামিদ পালিয়েছেন। অতএব আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে। 

এনসিপি ঘুরছে, গাজীপুরে হাসনাত আব্দুল্লাহ
আক্রান্ত আ.লীগকে নিস্ক্রান্তের ভাবনা

জুলাই’২৪ আন্দোলনের একটাই ভয়। আ.লীগ আবার ক্ষমতাসীন হলে পাল্টা প্রতিশোধ নেবে। যেভাবে হাসিনাবাদীদের নগ্ন পতন, তা এখন জিঘাংসা। মাঝে বিচ্ছিন্নভাবে মিছিল বের হচ্ছিলো আ.লীগের। এছাড়া ভারত থেকে দলনেত্রী শেখ হাসিনার ‘ওরাল হুমকি’।’ ড. ইউনূস সরকার ও ছাত্র শক্তিকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা। 
জুলাই’২৪ আন্দোলনের ওপর জাতিসংঘ রিপোর্ট নিয়েও ভয়। তাতে নিহতের সংখ্যা ১৪০০, তবে নির্বাচনী সুপারিশ রয়েছে। বলা আছে, নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। না হলে, সব ভোটারের অধিকার রক্ষিত হবে না।
এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে আঘাতপ্রাপ্ত হন ছাত্রনেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ। গাজীপুরে আকস্মিক হামলাটি করে আওয়ামীপন্থীরা। গাড়িতে শায়িত অবস্থায় না থাকলে মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিলো। বহুমূল্যের প্রাডো গাড়ির কাঁচ ভাঙা। রক্তমাখা আহত শরীর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া। ‘আওয়ামী লীগ’ নিষিদ্ধের বিষয়টি তখনই আলোচিত হয়। অপরাপর ছাত্রনেতারা আওয়ামী আতংকের সমাধান খোঁজেন। উল্লেখ্য, ৫ আগস্টের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পরও দাবিটি উঠেছিলো। হাইকোর্টে রিটও হয়, তবে বাতিল হয়ে যায়। অন্যদিকে ‘ছাত্রলীগ’কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করা হয়। 
‘যমুনা’ থেকে আন্দোলন নিয়ে যাওয়া হয় শাহবাগে। ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট যেনো ফিরে আসে। পর পর চারদিনের জমায়েতে জামায়াতে ইসলামী সমর্থন জানায়। বিএনপি বাদে অন্যসব ছোট দল সংহতি প্রকাশ করে। সরকারের ওপর প্রবল চাপ তৈরি করা হয়। অবশেষে ১১ মে সরকার পক্ষ সিদ্ধান্ত জানায়। জুলাই’২৪ আন্দোলনের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ। 
আনন্দে উৎফুল্ল সারাদেশের বিপ্লবী ছাত্রশক্তি। শাহবাগে গরু-ছাগল জবাই ও গণভোজ অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সমস্যা বাঁধে জামায়াত-শিবিরের শ্লোগান ও জাতীয় সঙ্গীত বিষয়ে। 

আওয়ামী লীগ পুড়েছে জামায়াতও কবর খুড়েছে
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের গোপন টাগের্ট ছিলো জামায়াতের। কারণ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করেছিলো ‘আওয়ামী জোট’। ২০২৪-এর পয়লা আগস্ট সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দেয়া হয়। নিষিদ্ধ হওয়ার ৫ম দিনে হাসিনা সাম্রাজোর পতন, পলায়ন। ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে জামায়াত-শিবিরের কৌশলী ভূমিকা সহায়ক ছিলো। 
একটি মহলের মতে, ‘হামিদ-প্রকল্পে’ও তাদের ভূমিকা আছে। কিশোরগঞ্জের একজন শীর্ষ জামায়াত নেতা ছিলেন কুশীলব। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের নিকটাত্মীয়। তিনিই নতুন ইস্যু তৈরির ফাঁদ পাতেন। চিকিৎসার নামে প্রবীণ হামিদ সাহেবকে ব্যাংককে নেন। বিমান বন্দরে ওনার নামে নিষেধাজ্ঞা ছিলো না। এছাড়া ৮১ বছর বয়স্ক সাবেক রাষ্ট্রপতি ক্যানসার আক্রান্ত। ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের পূর্বোক্ত রোগী। সেখানে ‘বায়োপসি’ করা জরুরী। এই ইস্যুতে ওপর মহলকে নমনীয় করা হয়। কিন্তু বিদায়ের পর পরই জমে ওঠে আসল খেলা। 
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে যায় জামায়াত। এদিকে নির্বাচনী নিবন্ধন ও প্রতীক প্রাপ্তিও প্রায় নিশ্চিৎ। আপিল বিভাগের শুনানিতে প্রধান বিচারপতির বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ আশাব্যাঞ্জক। ফলে সোনায় সোহাগার পরিস্থিতিতে এই ধর্মভিত্তিক সংগঠনটি। আনন্দের আতিশয্যে তারা নতুন শ্লোগান ধরে। শাহবাগে এনসিপি’র জমায়েতে তাদের শ্লোগান ছিলো-
গোলাম আজমের বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই। 
নিজামীর বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই। 
সাঈদীর বাংলায়, আওয়ামী লীগের ঠাঁই নাই।
একই সময় সংশ্লিষ্টরা জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনে বাঁধা দেয়। ভারতের নাগরিক রবীন্দ্রনাথ রচিত গান বাংলাদেশে চলবে না। এমন দাবি করতে থাকে জামায়াত-শিবিরের একাংশ। একই সময়ে আরেকটি ঘটনা ঘটে। গোলাম আজম-পুত্র পুনরায় বিতর্কিত বিবৃতি দেন। বলেন, একদিকে ‘দিল্লি না ঢাকা’ শ্লোগান চলছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ-বিরোধী লোকের কবিতা/গান পরিবেশন। এই সময়ে এটি কিসের চেতনা? 
জামায়াতপন্থীদের এমন আচরণে বিক্ষুব্ধ এনসিপি নেতারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাহফুজ আলম এখন ‘উপদেষ্টা’। তিনি পোস্ট দেন সাহসের সঙ্গে। বলেন, একাত্তরের খুনিদের সহযোগীদের বিচার করা হবে। এমন পোস্টে তিনি সমানে আক্রান্ত হতে থাকেন। বলা হয়, তুমি কি শেখ হাসিনা? যেভাবে নিজামী, মুজাহিদ, কাদের মোল্লার ফাঁসি দিয়েছিলো। তেমন দিন আর ফিরে আসবে না, সাবধান! 
পরক্ষণেই পোস্টটি প্রত্যাহার করেন উপদেষ্টা মাহফুজ। তবে নতুন বিরোধের সূচনা ঘটে। দলগতভাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা চলছে। জামায়াত-শিবিরের আচরণের প্রতিবাদে এই সঙ্গীতযুদ্ধ। দেশের অসংখ্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এখন জাতীয় সঙ্গীতে মুখর। শ্লোগান উঠেছে- একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার। 

ফিরছে বঙ্গবন্ধুর ‘বাকশাল’ আর হাসিনাগিরি নয়
আওয়ামী রাজনীতির বিশাল অঙ্গন হতাশ। তবে প্রবীণ নেতাদের মধ্যে চলছে নতুন প্রস্ততি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শেষজীবনে আওয়ামী লীগ বাতিল করেন। ১৯৭৫-এর ২৫ জানুয়ারি ‘বাকশাল’ সরকারের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রপতি হন নতুন সরকার পদ্ধতিতে। তৎকালীন ৬২ জেলায় গঠিত হয় জেলা সরকার। ৬২ জন জেলা গভর্নরও নির্বাচিত হন, কাজ করেন। এখনও প্রায় ৫ জন গভর্নর জীবিত আছেন। তোফায়েল আহমদ, আমির হোসেন আমু, কাদের সিদ্দিকী, আধ্যাপক আবু সাঈদ, আছেন বিএনপির মোফাজ্জল করিম। তিনি প্রশাসন কোটায় গোপালগঞ্জের গভর্নর হন।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত। প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক অক্টোবরে ঘরোয়া রাজনীতি চালু করেন। এ সময়ে বাকশাল নয়, আওয়ামী লীগের অনুমোদন দেন। ১৯৭৮-এ দল হিসেবে সরকারি অনুমোদন নেয় আওয়ামী লীগ। আহ্বায়ক ছিলেন তাজউদ্দীন-পত্নী জোহরা তাজউদ্দীন। পরবর্তীতে মহিউদ্দিন-রাজ্জাক নেতৃত্ব ‘বাকশাল’ করেছিলেন।
পিতার শেষ রাজনৈতিক দল ‘বাকশাল’ করেননি শেখ হাসিনা। সেটি আবার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জোর প্রচেষ্টা চলছে। ৩০ জুন নির্বাচন কমিশনে আবেদনের নিবন্ধন শেষ তারিখ। জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের আফিসগুলোই ‘বাকশাল’ কার্যালয় হবে। গোপনে চলছে নতুন প্রস্তুতি। তবে উদ্যোক্তাদের কথা- আর ‘হাসিনাগিরি’ নয়!
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078