আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে চলা কর্মসূচিতে ‘গোলাম আজমের বাংলায়’ স্লোগান বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেউ দেয়নি, এমন দাবি করছেন সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন টকশোতে এসে তিনি আরো বলেছেন, কোনো ব্যক্তিবিশেষের নামে স্লোগান শিবির দেয় না। তবে সেই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনেকেই ছিলেন। তাদের কেউ ‘আবেগের বশর্বর্তী’ হয়ে সেই স্লোগান দিয়ে থাকতে পারেন। কারণ প্রয়াত গোলাম আজম জামায়াতের আমীর ছিলেন। তবে কে বা কারা সেদিন স্লোগান দিয়েছে, এমন নির্দিষ্ট করে কারো নাম এখনো বের করতে পারেননি, বলেন নূরুল ইসলাম সাদ্দাম।
১৩ মে মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সময় বেলা ১১টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা) সরাসরি সম্প্রচারিত এই আলোচনা অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো ছিলেন মতামতের পত্রিকা জবান-এর সম্পাদক ও চিন্তক রেজাউল করিম রনি। ঠিকানা টিভির প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীনের সঞ্চালনায় দেশের রাজনীতির সমসাময়িক নানা বিষয়ে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন দুই অতিথি।
সদ্যই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরমধ্যে আবার তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. মাহফুজ আলম ফেসবুকে লিখেছেন, যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে পাকিস্তানপন্থা বাদ দিতে হবে। সরকারের একজন উপদেষ্টার এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে জবান সম্পাদক রেজাউল করিম রনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। দেশ থেকে ভারতপন্থার রাজনীতি দূর হয়েছে। এখন পাকিস্তানপন্থার রাজনীতি করবেন, এটা তো হতে পারে না। অবশ্যই বাংলাদেশপন্থার রাজনীতি করতে হবে। মধ্যপন্থার রাজনীতির বিকাশের জন্য কাজ করতে হবে। মাহফুজ আলম সেটাই চাইছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যদি দল হিসেবে দাঁড়াতে চায়, তবে মাহফুজের এই চিন্তা নিয়ে তাদের রাজনীতিটা করতে হবে। নইলে তাদের কোনো ভবিষ্যত নাই- মন্তব্য করেন জবান সম্পাদক।
তিনি আরো যোগ করেন, “এনসিপিতে মাহফুজের অনুসারী যারা তারা রাজনীতিতে থাকতে চায়। আবার যারা ছলেবলে ক্ষমতায় থাকতে চায়, অন্তর্বর্তী সরকারকে দীর্ঘদিন চায়, এনসিপির সেই অংশটি মধ্যপন্থার রাজনীতির বিরোধিতা করছে।’
এদিকে মধ্যপন্থার রাজনীতি, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো; মাহফুজ আলমের এসব লেখালেখি জামায়াত-শিবিরও ভালোভাবে নিচ্ছে না। তাদের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তথ্য উপদেষ্টার তুমুল সমালোচনা করছেন। এ প্রসঙ্গে চিন্তক রেজাউল করিম রনি বলেন, ইসলামপন্থী রাজনীতি করার কারণে জামায়াত মধ্যপন্থায় যেতে পারছে না। আর একাত্তরের ভূমিকা নিয়েও তারা স্পষ্ট কোনো কিছু বলতে পারে না।
তবে জামায়াত ও শিবির বরাবরই বাংলাদেশপন্থার রাজনীতি করে, এই দাবি তুলে ধরে ছাত্রশিবির সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম বলেন, ‘এক ধরনের ন্যারেটিভ তৈরি করা হয় যে, জামায়াত-শিবির পাকিস্তানপন্থার রাজনীতি করে। এটা কখনোই ঠিক নয়। যখনি সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের পক্ষে রাজনীতি করেছে জামায়াত। শিবিরও দেশের সার্বভৌমত্বের সংকটের সময় আন্দোলন-সংগ্রামে সামনেই থেকেছে।’
এদিকে চব্বিশের অভ্যুত্থানকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বড় করার যে প্রবণতা ছিল জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে, তা ‘ব্যাক ফায়ার’ করেছে বলে মনে করেন জবান সম্পাদক রেজাউল করিম রনি। তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী লীগের বয়ান ভুল হতে পারে। এই চেতনার নাম দিয়েই তারা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। কিন্তু তার মানে মুক্তিযুদ্ধই ভুল এটা তো হতে পারে না। চব্বিশ একটা অভ্যুত্থান, কিন্তু একাত্তরের মাধ্যমে আমরা দেশটা পেয়েছি। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে।’