আল-জাজিরার বিশ্লেষণ

‘ভারত শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে দুর্বলতা দেখিয়েছে’

প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ১০:৩২ , অনলাইন ভার্সন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গত ১০ মে (শুক্রবার) ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ‘পূর্ণ ও তাৎক্ষণিক’ যুদ্ধবিরতি  ঘোষণা করা হয়। এরপরই, আন্তর্জাতিক মহলে বিশ্লেষকরা ভারতের সাম্প্রতিক সামরিক পদক্ষেপ ও কৌশল নিয়ে কঠোর সমালোচনা করছেন।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার আশঙ্কায় মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং হোয়াইট হাউসের চিফ অফ স্টাফ সুসি ওয়াইলসের জরুরি মধ্যস্থতার আহ্বান জানানোর প্রেক্ষাপটে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ভ্যান্স ব্যক্তিগতভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সম্ভাব্য ভয়াবহ ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেন এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি আলোচনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

যদিও এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী শান্তির নিশ্বাস অনুভূত হয়েছে, তবে ভারতের অভ্যন্তরে এর ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। 
দেশটির প্রাক্তন ভারতীয় সেনাপ্রধান বেদ প্রকাশ মালিক ‘এক্স’-এ মন্তব্য করেছেন, ‘১০ মে-র যুদ্ধবিরতি ভারতের সামরিক পদক্ষেপের পর অর্জিত রাজনৈতিক বা কৌশলগত সুবিধা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার জন্য ভারতের ভবিষ্যৎ ইতিহাসই যথেষ্ট।’ 

সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসিও একই প্ল্যাটফর্মে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের দীর্ঘদিনের বিরোধিতা স্মরণ করে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কেন আমরা এখন কোনো বিদেশি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা মেনে নিচ্ছি? কাশ্মীর আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এর আন্তর্জাতিকীকরণ আমরা কখনোই চাইনি।’

অনেকের মতে, ট্রাম্পের কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতার প্রস্তাব ভারতের দীর্ঘস্থায়ী নীতি-তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ প্রত্যাখ্যান-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি, মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে ওয়াশিংটনের চাপের কাছে মোদি সরকারের নতি স্বীকার হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে প্রায়শই ধারণা বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে যায়। ভারত দীর্ঘদিন ধরে তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পারমাণবিক সক্ষমতার ভিত্তিতে আঞ্চলিক আধিপত্যের স্বপ্ন দেখে আসছে। তবে, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলার পর দেশটির গৃহীত পদক্ষেপগুলো সেই দুর্বলতাকেই উন্মোচিত করেছে। শক্তি প্রদর্শনের আপাত উদ্দেশ্য থাকলেও, ভারতের প্রতিক্রিয়া শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের আঞ্চলিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং মোদি সরকারকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে দুর্বল করে ফেলেছে।

গত ৭ মে, ভারত পাকিস্তান-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর ঘাঁটি ধ্বংসের অজুহাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে। ফরাসি রাফায়েল যুদ্ধবিমানের সমর্থন সত্ত্বেও এই অভিযান অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ প্রশমনের পাশাপাশি মোদির কঠোর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা হিসেবে দেখা হয়। তবে, এই অভিযানের প্রকৃত সাফল্য প্রশ্নবিদ্ধ। পাকিস্তান শিশুসহ বেসামরিক হতাহতের খবর জানায়, যেখানে ভারত কেবল সন্ত্রাসী আস্তানাগুলোতে আঘাত হানার দাবি করে।

হামলার জবাবে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী নিজস্ব জেট ব্যবহার করে এবং তিনটি রাফায়েলসহ পাঁচটি ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করার দাবি করে। 

রয়টার্সের দুই মার্কিন কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন যে, চীনা গোয়েন্দা, নজরদারি ও পুনরুদ্ধার (আইএসআর) সহায়তায় পরিচালিত চীনা জে-১০ জেট অন্তত দুটি ভারতীয় বিমানকে ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে ভারত এই ক্ষয়ক্ষতির কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি।

প্রাথমিকভাবে ভারতীয় গণমাধ্যম করাচি বন্দরে বিধ্বংসী হামলার মিথ্যা খবর প্রচার করে, যা স্পষ্টতই একটি পরিকল্পিত প্রচারণা ছিল।

৯ মে, পাকিস্তান দাবি করে যে, ভারত ইসলামাবাদের কাছে তাদের ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী উধমপুর, পাঠানকোট, আদমপুর ও ভূজে ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। 
ভারতীয় বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা ব্যোমিকা সিং জানান, পাকিস্তানি ড্রোন ও গোলাবারুদ বেসামরিক ও সামরিক উভয় লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এই ধারাবাহিক ঘটনাপ্রবাহ আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারকারী হিসেবে ভারতের ভাবমূর্তিকে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ভারত সরকার স্পষ্টতই তাদের রাফায়েল জেটগুলোর ক্ষমতাকে অতিরিক্ত মূল্যায়ন করেছে এবং পাকিস্তানের চীন-সমর্থিত অত্যাধুনিক আইএসআর সিস্টেমের সক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করেছে, যা যুদ্ধক্ষেত্রের নির্ভুলতা বৃদ্ধি করেছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের প্রতি চীনের সামরিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সাল থেকে ইসলামাবাদের সামরিক আমদানির ৮১ শতাংশই এসেছে চীন থেকে।

দীর্ঘদিন ধরে কিছু ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সতর্ক করেছিলেন যে, উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ কাশ্মীর নীতির জন্য সীমিত মার্কিন বা রাশিয়ার সমর্থন থাকায়, ভারত চীন-সমর্থিত পাকিস্তানের মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত নয়। এমনকি কেউ কেউ চীন-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতাকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারের পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনাও করেছিলেন। কিন্তু নয়াদিল্লিতে তাদের সেই সতর্কবার্তা উপেক্ষা করা হয়েছিল।

গত কয়েকদিনের ঘটনাবলি ভারতের কৌশলগত সীমাবদ্ধতাগুলোকে সুস্পষ্টভাবে উন্মোচন করেছে এবং বিশ্বব্যাপী আলোচনার জন্ম দিয়েছে। নয়াদিল্লির প্রতিক্রিয়া সম্ভবত প্রতিরক্ষা বাজেট বৃদ্ধি এবং কাশ্মীরের সামরিকীকরণ আরও জোরদার করার দিকে ধাবিত হতে পারে।

ভারত সরকারের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নির্ধারণের সময়, তাদের উপলব্ধি করা উচিত যে, ছায়া যুদ্ধের স্থিতাবস্থা এবং অস্থিরতা সৃষ্টিকারী গোপন আগ্রাসনের চক্র অত্যন্ত বিপজ্জনক। উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে প্রক্সিদের সমর্থন করে আসছে, যা কাশ্মীর থেকে শুরু করে আফগানিস্তান পর্যন্ত অস্থিতিশীলতা ডেকে আনছে।

নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের বিচক্ষণ ও সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের ওপরই এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। বাগাড়ম্বর নয়, সংযমই হওয়া উচিত তাদের পথপ্রদর্শক নীতি। অন্যথায়, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং লাখ লাখ মানুষের অশেষ দুর্ভোগের ঝুঁকি আরও বাড়বে। বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ দরিদ্র মানুষ এবং ৩৫ কোটিরও বেশি নিরক্ষর প্রাপ্তবয়স্কের আবাসস্থল ভারত ও পাকিস্তান দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের বোঝা বহন করতে পারে না। অব্যাহত উত্তেজনা ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে এবং পাকিস্তানের ভঙ্গুর অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিতে পারে, যা যেকোনো কৌশলগত অর্জনকে অর্থহীন করে তুলবে।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078