ডিম আগে, না মুরগি আগে?-এ বিতর্কের ফয়সালা আজতক হয়নি। হবেও না। নতুন প্রশ্ন যোগ হয়েছে- ডিম দামি, না মুরগি দামি? মুরগির চেয়ে ডিমের দাম বেশি কেন? আণ্ডা কোন মিনিস্ট্রির আন্ডারে- তা নিয়ে ঝগড়াও শেষ হয়নি। বাণিজ্যমন্ত্রী মুনশিজি বলেই আসছেন ডিমের বাড়তি দামের দায় তার নয়। ডিমও তার মন্ত্রণালয়ের অধীন নয়। আবার এ হুমকিও দিয়েছেন- ডিম সিণ্ডিকেট বাড়াবাড়ি করলে আবার আমদানির সিদ্ধান্ত নাজিল করবেন। মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী স.ম রেজাউল এখন আর আণ্ডার অধীনস্ততা নিয়ে ঝগড়ায় যান না। পর্যাপ্ত ডিম আছে দাবি করে তিনি বলেছেন, আমদানির দরকার নেই। এ সবের অর্থ কী দাঁড়ালো?
দাঁড়িয়েছে কিছু একটা। না, দাঁড়ানোর অবস্থা এখনো হয়নি। ঝগড়াঝাটিতে বাংলাদেশে ডিমের দামে একটু একটু কমতির দিকে। বাংলাদেশের বাজার অর্থনীতির এটাই বৈশিষ্ট্য। কয়েকদিনের মাতামাতিতে একটা সময় বাজার ঠিক হয়ে যায়। মানুষও অভ্যস্ত হয়ে যায়। দাম একটু কমলে প্রচার হয় ‘দাম কমে গেছে’। তা যে আর আগের জায়গায় নামে না, তা আমলে আসে না। বিতর্কও থমকে যায়। সেই কয়দিনে যে যা পারে হাতিয়ে নেয়। বাণিজ্য বা মৎস্য সম্পদের ঝগড়া থামিয়ে আণ্ডাকে আপাতত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে ভাবতেও সমস্যা হচ্ছে না। পুলিশ-ডিবিতে গরম ডিমের অনেক ব্যবহার আছে বিধায়, একে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ভাবতে আপত্তিই বা কার?
বাঙালির অভ্যস্ততা এমনই। সব খায়, সবই হজম করে। মেনে নেয়। আবার বমিও করে দেয়। এক ডজন ডিমের দাম এখন এক কেজি ব্রয়লার মুরগির সমান কেন? ঝগড়াটির ফয়সালা হয়ে গেছে সাম্যবাদের মধ্য দিয়ে। গান-কবিতাতেই আছে : চিরদিন কাহারো দিন সমানো নাহি যায়। এ গান বুঝি ডিম-মুরগিকে নিয়েই লেখা? ডিম-মুরগিরা কি জানে- তাদের এ ভ্যালুর কথা? মুরগি তা জানলে দেমাগে মাটিতেই তার পা পড়তো না। ডিমও কি জড় পদার্থের মতো পড়ে থাকতো? নিজের দাম নিজেই হাঁকাতো কিনা, কে জানে?
এদিকে, নানা ব্যতি-ব্যস্ততায় এবার ডিমের বিকল্প আবিস্কার হয়নি। এর আগে পেঁয়াজ-বেগুন-কাঁচা মরিচসহ আরো কতো কিছুর বিকল্প বাতলানো হয়েছে। ডিমের বিকল্প আবিস্কারের যথেষ্ট চান্স ছিল। ভেরি সিম্পল সেটা। ডিমের বদলে মুরগি খাওয়ার উপদেশ তো নগদেই দেয়া যায়। মুরগি ডিম না পারলে ঘোড়ার ডিম খাওয়ার অভ্যাস করার রেসিপি দিলেও কেউ বাধ সাধবে না। বড় জোর ট্রল করবে। তাতে কার কী আসে যায়?
কয়েকটি কোম্পানি যে কাউকে তোয়াক্কা না করে রাতারাতি দামি বাড়িয়ে শতকোটি টাকা লোপাট করে নিলো- এর কি বিহিত হবে? বা এ ধরনের আরো অন্যান্য ঘটনার বিহিত হয়েছে কখনো? ডিমের দাম বেড়েছে কেনো- এই প্রশ্নের আগে কেউ প্রশ্ন করেনি দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ কেনো? থাবা বাবা বা সিন্ডি বাবাদের এতো কদরই বা কেন?
এ প্রশ্নের জবাব আছে একটা পুরনো গল্পে।... এক গরিব কৃষকের পোষা মুরগিটা হঠাৎ তার উঠান ছেড়ে কোথায় যেনো ডিম দিতে থাকে। ডিমটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকের বাড়ির পাশেই এক ধনীর খামার। কৃষক মুরগিটাকে চোখে চোখে রাখল। দেখল ভোরের আলো ফুটতেই মুরগিটা বেড়া টপকে ওই খামারে গিয়ে রিলাক্সে ডিম পেড়ে চলে এলো। খামারের মালিককে কৃষক বলল, ডিমটা তার মুরগির দেয়া। খামার মালিকের সাফকথা- মুরগি কার, তা জানার দরকার নেই। তার খামারে ডিম পেড়েছে, এই ডিমের মালিক কি অন্য কেউ হতে পারে? বাড়াবাড়ি করলে কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দেন তিনি। নিরুপায় কৃষক বলল, মামলা চালানোর সামার্থ্য তার নেই। তার চেয়ে গ্রামের নিয়মে দু’জন মিলে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়। সেটা কেমন?
সেটা অণ্ডনীতি। পরস্পরের অণ্ড টিপে দেয়া বা লাথি মেরে বিরোধ নিষ্পত্তি। লাথি খেয়ে যে জলদি উঠে দাঁড়াবে, সেই হবে ডিমের হকদার। খামারির মনে ধরে নীতিটা। দেরি না করে তিনি শক্ত বুটের লাথিতে কৃষকের অণ্ড থেকে কোষ বের করে ফেলেন। এবার কৃষকের লাথি দেয়ার পালা। চরম যন্ত্রণায় কৃষকের নরম জবাব, এই সাম্যবাদ কি কুলায়? আপনার লাথির কাছে আমার লাথি কুলায়?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।
দাঁড়িয়েছে কিছু একটা। না, দাঁড়ানোর অবস্থা এখনো হয়নি। ঝগড়াঝাটিতে বাংলাদেশে ডিমের দামে একটু একটু কমতির দিকে। বাংলাদেশের বাজার অর্থনীতির এটাই বৈশিষ্ট্য। কয়েকদিনের মাতামাতিতে একটা সময় বাজার ঠিক হয়ে যায়। মানুষও অভ্যস্ত হয়ে যায়। দাম একটু কমলে প্রচার হয় ‘দাম কমে গেছে’। তা যে আর আগের জায়গায় নামে না, তা আমলে আসে না। বিতর্কও থমকে যায়। সেই কয়দিনে যে যা পারে হাতিয়ে নেয়। বাণিজ্য বা মৎস্য সম্পদের ঝগড়া থামিয়ে আণ্ডাকে আপাতত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডারে ভাবতেও সমস্যা হচ্ছে না। পুলিশ-ডিবিতে গরম ডিমের অনেক ব্যবহার আছে বিধায়, একে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ভাবতে আপত্তিই বা কার?
বাঙালির অভ্যস্ততা এমনই। সব খায়, সবই হজম করে। মেনে নেয়। আবার বমিও করে দেয়। এক ডজন ডিমের দাম এখন এক কেজি ব্রয়লার মুরগির সমান কেন? ঝগড়াটির ফয়সালা হয়ে গেছে সাম্যবাদের মধ্য দিয়ে। গান-কবিতাতেই আছে : চিরদিন কাহারো দিন সমানো নাহি যায়। এ গান বুঝি ডিম-মুরগিকে নিয়েই লেখা? ডিম-মুরগিরা কি জানে- তাদের এ ভ্যালুর কথা? মুরগি তা জানলে দেমাগে মাটিতেই তার পা পড়তো না। ডিমও কি জড় পদার্থের মতো পড়ে থাকতো? নিজের দাম নিজেই হাঁকাতো কিনা, কে জানে?
এদিকে, নানা ব্যতি-ব্যস্ততায় এবার ডিমের বিকল্প আবিস্কার হয়নি। এর আগে পেঁয়াজ-বেগুন-কাঁচা মরিচসহ আরো কতো কিছুর বিকল্প বাতলানো হয়েছে। ডিমের বিকল্প আবিস্কারের যথেষ্ট চান্স ছিল। ভেরি সিম্পল সেটা। ডিমের বদলে মুরগি খাওয়ার উপদেশ তো নগদেই দেয়া যায়। মুরগি ডিম না পারলে ঘোড়ার ডিম খাওয়ার অভ্যাস করার রেসিপি দিলেও কেউ বাধ সাধবে না। বড় জোর ট্রল করবে। তাতে কার কী আসে যায়?
কয়েকটি কোম্পানি যে কাউকে তোয়াক্কা না করে রাতারাতি দামি বাড়িয়ে শতকোটি টাকা লোপাট করে নিলো- এর কি বিহিত হবে? বা এ ধরনের আরো অন্যান্য ঘটনার বিহিত হয়েছে কখনো? ডিমের দাম বেড়েছে কেনো- এই প্রশ্নের আগে কেউ প্রশ্ন করেনি দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশে ডিমের উৎপাদন খরচ সর্বোচ্চ কেনো? থাবা বাবা বা সিন্ডি বাবাদের এতো কদরই বা কেন?
এ প্রশ্নের জবাব আছে একটা পুরনো গল্পে।... এক গরিব কৃষকের পোষা মুরগিটা হঠাৎ তার উঠান ছেড়ে কোথায় যেনো ডিম দিতে থাকে। ডিমটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকের বাড়ির পাশেই এক ধনীর খামার। কৃষক মুরগিটাকে চোখে চোখে রাখল। দেখল ভোরের আলো ফুটতেই মুরগিটা বেড়া টপকে ওই খামারে গিয়ে রিলাক্সে ডিম পেড়ে চলে এলো। খামারের মালিককে কৃষক বলল, ডিমটা তার মুরগির দেয়া। খামার মালিকের সাফকথা- মুরগি কার, তা জানার দরকার নেই। তার খামারে ডিম পেড়েছে, এই ডিমের মালিক কি অন্য কেউ হতে পারে? বাড়াবাড়ি করলে কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকিও দেন তিনি। নিরুপায় কৃষক বলল, মামলা চালানোর সামার্থ্য তার নেই। তার চেয়ে গ্রামের নিয়মে দু’জন মিলে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়। সেটা কেমন?
সেটা অণ্ডনীতি। পরস্পরের অণ্ড টিপে দেয়া বা লাথি মেরে বিরোধ নিষ্পত্তি। লাথি খেয়ে যে জলদি উঠে দাঁড়াবে, সেই হবে ডিমের হকদার। খামারির মনে ধরে নীতিটা। দেরি না করে তিনি শক্ত বুটের লাথিতে কৃষকের অণ্ড থেকে কোষ বের করে ফেলেন। এবার কৃষকের লাথি দেয়ার পালা। চরম যন্ত্রণায় কৃষকের নরম জবাব, এই সাম্যবাদ কি কুলায়? আপনার লাথির কাছে আমার লাথি কুলায়?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন, ঢাকা।