ফাটল ধরেছে সর্বত্র

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫, ১২:১১ , অনলাইন ভার্সন
কিসের আধুনিক যুগে আমরা বাস করছি? মানুষের মধ্যে নৈতিকতার ধূলিসাৎ হয়েছে, ভালোবাসা মরে গেছে, মিল-মহব্বত উঠে গেছে আর হিংসা-বিদ্বেষ ভরে গেছে, দলাদলি ও রেষারেষি এ যুগে সর্বত্র। ভাইয়ে ভাইয়ে নেই মিল-মহব্বত, এক ভাই আরেক ভাইয়ের মাথায় বাড়ি মেরে মাথা ফাটায়, ভাই ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে না, এক ভাই ফাঁকি দেয় আরেক ভাইকে। স্বার্থের রোষানলে পড়ে ভাই হয় ভাইয়ের শত্রু। একে অপরের দোষ কষ্টিপাথর দিয়ে যাচাই করে। এ যুগে ডিভোর্সের ছড়াছড়ি। মুই কী হলাম রে, সে কথা কার্যকর হয় এ যুগে। আমি চাকরি করি, আমার বাবা ধনী, সাবধানে কথা বলো, এই রওনা দিলাম, ডিভোর্স লেটার পাঠায়া দিব। মামার বল, টাকার বল, ক্ষমতার বল-আরও কত কিছুর বল। আমি কম কিসে? কোনো আপস নেই, তোর মতো মেয়ের অভাব নাই, কালকেই একটা বিয়ে করে আনব, অযোগ্য, অপদার্থ, ছোটলোক, নীচ জাতের বংশ-আরও কত রকমের কথা, ছিঃ ছিঃ ছিঃ। কেউ শোনে না কারও কথা, একে অপরের কথা শুনলে শুরু হয়ে যায় মাথাব্যথা। অমুক গেলে আমি যাব না, আমার কথা না মানলে খবর আছে, সবকিছু যাবে তছনছ হয়ে। বিচার মানি, তালগাছটা আমার। তুই টাকিটা নে, আমারে শোলটা দে। ওরে বাবা এ কী যুগ!

সবাই পিরদান, সবাই মাতব্বর, ছোটরা কথা বলে বড়দের আগে, মান-সম্মান গেছে ওঠে। জ্ঞানী-গুণীরা থাকে লুকিয়ে আর লম্পট, অযোগ্যরা লাফালাফি করে সামনে। সমাজটা আজ ভেঙে যাচ্ছে এবং গরিব-ধনী বিভাজন হচ্ছে। এ যুগে টাকা কথা বলে। যার টাকা আছে তার কাছে আইন-আদালত বন্দী। সবকিছু তার পক্ষেই কথা বলে। মার্ডার করেও খালাস পেয়ে যাচ্ছে। আগে দেখতাম ছেলে বিয়ে করত বাবা-মায়ের পছন্দমতো। এখন নিজের মতকে প্রাধান্য দেয় বেশি। বিয়ে করার আগে করে প্রেম। ফোনে কল দেয় আর ফিসফিস করে গল্প করে। কত রাত জেগে গল্প করে। কত ডেটিং, কত চ্যাটিং, কত বিডি কলে কথা বলে। বিয়ে আমি তোমাকেই করব, না পেলে মরে যাব। একাধিক প্রেম, একাধিক ভালোবাসা। কী করবে আর কী করবে না, পায় না কোনো দিকনির্দেশনা। হয়ে যায় ভবঘুরে। অনেকে পড়ালেখা তেমন করে না। পড়ালেখার জন্য বাবা যে টাকা পাঠায়, তা খরচ করে প্রেমিকার পেছনে। আবার অনেক সময় কাউকে না জানিয়ে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলে। হঠাৎ বউ নিয়ে বাড়িতে উঠে পড়ে। চারদিকে শুরু হয় হুলুস্থুল আর কানাঘুষা। ঘটনা ঘটে গেছে একটা। ওমা! তোরা কেডা কোথায় আছিস দেখে যায়। লোক আসে দলে দলে ছুটে নতুন বউয়ের মুখ দেখতে। কেউ হাসে, কেউ বলে লজ্জা-শরম খেয়েছে বেচে, আরও কত কী যে বলে। করতে যায় হানিমুন, কত আনন্দ, কত হাসি। কিছুদিন ভালোবাসা থাকলেও একসময় শুরু হয়ে যায় ঝগড়াঝাঁটি। সব আনন্দ যায় মলিন হয়ে। কোনো একসময় শোনা যায় তারা আলাদা জীবন বেছে নিয়েছে। কী যে ফাটল সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে।

দিন যত যাচ্ছে মানবসভ্যতা তত উন্নত হচ্ছে কিন্তু মানুষ কেমন যেন মেশিন হয়ে যাচ্ছে। কাজ আর কাজ নিয়ে থাকে পড়ে। কত টাকা যে চায় নিজেরাও জানে না। যত পায় তত চায়। কতক মানুষ কী অস্থির জীবন যাপন যে করে। রাতে ঘুমায় না, শরীরের প্রতি নিয়মিত যত্ন নেয় না। কী যে এক মরীচিকার পেছনে ঘুরছে মানুষ। অপরের খোঁজখবর নেওয়ার মতো সময় থাকে না, আপনজনকেও অনেক সময় যায় ভুলে। কই যাচ্ছি আমরা, আমাদের শেষ প্রস্থান কোথায়? উচিত-অনুচিত নিয়ে ভাবার সময় কারও নেই। হঠাৎ করে কেউ হয় আঙুল ফুলে কলাগাছ। কী যে পরিবর্তন চারদিকে পরিলক্ষিত হচ্ছে, ভাবতে অবাক লাগে।
এ যুগে চাকরি পাওয়া মানে সোনার হরিণ পাওয়া। আগে একটা ছেলে বা মেয়ে মাস্টার্স পাস করলে এলাকার লোকেরা দেখতে আসত আর এ যুগে মাস্টার্স পাস করলে বলে একটা বেকার বাড়ল। শুধু কম্পিটিশন আর কম্পিটিশন চারদিকে। ছোট একটা বাচ্চা যে জানেই না কম্পিটিশন কী, তাকেও ভর্তিযুদ্ধ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। ছেলেটা অনেক সময় লেখা বাদ দিয়ে কলম নিয়ে খেলা করে আর পাশ থেকে মা বলে, বাবা তুমি ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছ, তোমাকে লিখতে হবে। মানুষের রুচি, আচার-আচরণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হচ্ছে। আগে একটা গ্রাম ধরে খুঁজেও একটা মোবাইল পাওয়া যেত না আর এ যুগে ঘরে ঘরে মোবাইল। আগে দুজন লোক একসঙ্গে হলে গল্প করত আর এ যুগে দুজন লোক একসঙ্গে হলে ফোন টিপে, কারও সঙ্গে তেমন কথা বলে না।

আগে মেয়েরা কী সুন্দর শালীন পোশাক পরিধান করত আর এ যুগে মেয়েরা কত রকমের টাইট ড্রেস যে পরিধান করে। কী যুগে আমরা বাস করছিÑযেদিকে তাকাই সেদিকেই পরিবর্তন। এ যুগে বাঁচতে হলে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খেয়েই চলতে হবে।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078