
সুখ ও আনন্দ নিয়ে কিছু মনোমুগ্ধকর কথা ও আলোচনা তুলে ধরা হলো এই নিশীথ সন্ধ্যাবেলা, যা আপনার জীবনে সুখের গুরুত্ব এবং উপলব্ধিকে তুলে ধরতে সাহায্য করবে বলে আশা রাখি। প্রকৃত সুখ বলতে বোঝায় নিজেকে খুঁজে পাওয়া, নিজের ও অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তৃপ্ত থাকা। আমার আজকের চেষ্টা, সুখের কথাগুলো পড়ে আপনারা আনন্দ, সুখ উপভোগ করবেন বলে আশা রাখছি। তো বন্ধুরা চলুন আজকের সুখের কথাগুলো পড়ে নেওয়া যাক।
দুঃখের মতোই আমাদের জীবনে মাঝে মাঝে সুখের মুহূর্তও আসে, যা মনকে প্রশান্তি ও আনন্দে ভরিয়ে দেয়। এমন আনন্দের সময়ে অনেকেই তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে সুখের আবেশ খোঁজেন। তাদের জন্যই এই আলোচনায় থাকছে কিছু অসাধারণ সুখ ও আনন্দের উপায়। আপনার এই মুহূর্তগুলোকে আরও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে সাহায্য করবে। সুখ হচ্ছে ভেতর থেকে অনুভব করার বিষয়, যারা ভেতর থেকে সুখ অনুভব করা শিখে যায়, প্রকৃতপক্ষে তারাই সুখী মানুষ হন।
দুঃখ না থাকলে সুখ কি আসলে বোঝা যায় না, আবার দুঃখ না থাকলে সুখের কদরই থাকত না। জীবনে সুখ হলো সেই গহিন বনের পাখি, যে পাখিকে চাইলেই ধরা যায় না। আমরা যে সুখের পেছনে ঘুরি সুখ সুখ বলে, একসময় সেটা আমাদের হাতে আসার পর মনে হয়, এটা জীবনের আসল সুখ নয়। আপনি যদি অন্যের সুখের কারণ হতে পারেন, তাহলে আপনাকে সুখী হতে কোনো বাধা অতিক্রম করা লাগবে না। সুখ ভবিষ্যতের জন্য জমা করার বিষয় নয়, সুখ সর্বক্ষণ উপভোগ করার বিষয়।
পৃথিবীতে সুখী হতে হলে আপনাকে প্রচণ্ড রকম স্বার্থপর হতে হবে। আর এটাই বাস্তব। সুখ কোটি টাকা দিয়ে কেনা যায় না, না কারও কাছ থেকে একবিন্দু সুখ ধার নেওয়া যায়। পারফেক্ট জীবন বলতে আসলে সুখকে বোঝায় না, বরং অসম্পূর্ণতার মাঝেও তৃপ্তি খুঁজে পাওয়াই আসল সুখ। আবার অন্যের জন্য হিতকর কোনো কাজ কিংবা পরিবেশের জন্য ভালো কোনো কাজ করলে মনের ভেতর উপলব্ধিপূর্ণ এক অনাবিল পরম শান্তি অনুভূত হয়, যা সুখের চেয়েও অনেক বড় আর দেহ-মনকে প্রশমিত করে।
তোমার বয়স বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মাপো, সংখ্যা দিয়ে নয়। তোমার জীবন মাপো সুখ-শান্তি ও হাসির সাথে, কান্নার সাথে নয়। তারা বলে, সত্যিকারের সুখী হতে একজন মানুষের দরকার তিনটি জিনিস : কাউকে ভালোবাসা, কিছু করার মতো কাজ এবং ভবিষ্যতের জন্য কিছু আশা। সুখ মানে হলোÑতুমি যা ভাবো, যা বলো আর যা করো, তা যখন একসঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। যে নিজে সুখী, সে অন্যদেরও সুখী করে তোলে। তুমি কখনোই প্রকৃত সুখ অনুভব করতে পারবে না, যদি বারবার খুঁজতে থাকোÑসুখ আসলে কীভাবে আসে। আর জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যও কখনো পাবে না, যদি সারাক্ষণ সেটি খুঁজতে থাকো।
সুখ খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো অন্যের জন্য সুখ খোঁজা। সুখ হলো একটি সিদ্ধান্ত, মাঝে মাঝে সেটি পেতে হলে একটু চেষ্টা করা লাগে। এই মুহূর্তেই খুশি হও। এই মুহূর্তটাই তোমার জীবন। সুখ আসলে নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়, সুখ বাইরে নয়, সুখ আমাদের প্রত্যেকের ভেতরেই থাকে। যা শুধু আমাদের খুঁজে নিতে হয়। সুখের চাবি সব সময় নিজের কাছে রাখতে হয়, অন্যথায় যে কেউ আপনার সুখের ভাগ নিয়ে চলে যেতে পারে, তার সুখ ভেবে। মানুষ মন থেকে যতটা সুখী হতে চায়, সে মানুষ ততটাই সুখী হতে পারে।
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর, মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর। কারও কাছে এক টুকরো সুখ স্বর্গীয় সুখের চেয়ে বেশি সুখের। দুনিয়ার সুখের পেছনে সবাই ছোটে, কিন্তু পরকালের সুখ যে আসল সুখ, তা কজনে বোঝে। নিজেকে খুশি রাখার শক্তি যেই সময় আপনার মাঝে চলে আসবে, সেই সময় থেকে আপনি সুখী মানুষ হতে পারবেন। যেমনটা যুদ্ধ জয় করলেই সবকিছু শেষ হয়ে যায় না; বরং তার চেয়েও জরুরি শান্তি সুশৃঙ্খলা বিন্যাস। শান্তি আসে, পরিস্থিতি বদলে নয়, বরং নিজেকে গভীরভাবে চিনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে।
শান্তি শুধু প্রার্থনার বিষয় নয়, এটি সৃষ্টি করতে হয়, অনুভব করতে হয় এবং আমাদের আচরণে প্রতিফলিত করতে হয়, তবে প্রকৃত শান্তি তখনই আসে, যখন আমরা তা অন্যদের সাথে ভাগ করে নিতে পারি। তুমি তখনই শান্তিতে থাকবে, যখন নিজের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারবে। শান্তি আসে ভেতর থেকে, বাইরে তা খোঁজার কিছু নেই। বিশ্ব শান্তি সম্ভব, যদি আমরা আগে নিজের মধ্যে শান্তি স্থাপন করতে পারি। শান্তি শুধু সহিংসতার অনুপস্থিতি নয়, এটি মানবিক সহানুভূতির প্রকাশ। যতক্ষণ না মানুষ তার সহানুভূতির পরিধি সব জীবন্ত প্রাণীর প্রতি বিস্তার করে, ততক্ষণ তার নিজের শান্তিও অসম্ভব। সুখী হওয়ার জন্য প্রাচুর্য নয়, বরং আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের ওপর সন্তুষ্ট থাকা জরুরি।
বাহ্যিক অর্জন সাময়িক আনন্দ দিতে পারে, কিন্তু মনের সুখ সবকিছুর ঊর্ধ্বে। নিজের মতো করে বাঁচা শিখে গেলে মনের সুখ খুঁজে পাওয়া ব্যাপার নয়। মনের সুখ কেবল বাইরের প্রাপ্তিতে নয়, ভেতরেও মনের সুখ প্রাপ্তি ঘটায়। বাইরের জগতে যতই ঝড় উঠুক না কেন, মনের ভেতরে সুখ থাকলে সবকিছু সহজ মনে হয়। মনের সুখ পাওয়া মানে নিজেকে ভালোবাসা এবং নিজের জীবনের প্রতি তৃপ্ত থাকা। বাহ্যিক চাওয়াগুলো যত কমবে, ততই মনের শান্তি বাড়বে।
হ্যাপিনেস ফিল : হ্যাপিনেস বলতে শুধু বড় বড় সুখ নয়, হ্যাপিনেস হলো ছোট ছোট সুখগুলোকে বড় হিসেবে উপভোগ করা। হ্যাপিনেস হলো প্রত্যাশা কমিয়ে নিজের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা ছোট ছোট খুশিকে একান্তভাবে উপভোগ করা। যদি নিজের জীবনকে সহজভাবে নিতে পারেন, তবেই সত্যিকারের সুখের সন্ধান খুঁজে পাবেন। হ্যাপিনেসগুলো আপনার জীবনে বাধ্য হয়ে ধরা দেবে। হ্যাপিনেস খুব ছোট একটি বিষয়। কিন্তু আমরা বড় সুখের আশায় ছোট সুখগুলোকে উপভোগ করতে ভুলে যাই। যখন তুমি নিজের হৃদয়ের পথ অনুসরণ করে চলা শিখে যাবে, তখনই তোমার জন্য সত্যিকারের হ্যাপিনেস পাওয়া সম্ভব। হ্যাপিনেস আসে স্বাধীনতা থেকে আর স্বাধীনতা আসে সাহসিকতা থেকে। নিজের প্রতি আস্থা রেখে চললেই সুখ আসে।
টাকায় কি সুখ হয়? : টাকা দিয়ে যে সুখ পাওয়া যায়, তা শুধু বাহ্যিক হয়ে থাকে। প্রকৃত সুখ মনের শান্তি, শান্তিপূর্ণ জীবন, যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। টাকা দিয়ে অস্থায়ী সুখ কেনা সম্ভব, স্থায়ী সুখ টাকা দিয়ে নয়, বরং আন্তরিকতা, সম্পর্ক ও ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে হয়। টাকা দিয়ে বিলাসিতা হয়, টাকা দিয়ে স্ট্যাটাস দেখানো যায়, কিন্তু টাকা দিয়ে সুখের বিনিময় করা যায় না। জীবনের আসল সুখ কখনোই টাকায় ধরা দেয় না। টাকা দিয়ে মানুষকে কেনা যায়, কিন্তু ভালোবাসা ও সুখ কেনা যায় না। সুখ হলো মনের এক অবস্থা।
আনন্দ : আনন্দ হচ্ছে জীবনের প্রতি একধরনের কৃতজ্ঞতা, যা আমাদের মনের গভীরে নিহিত থাকে। আনন্দ হলো অন্তরের এক শুদ্ধতম অনুভূতি, যা কোটি টাকা দিয়েও কেনা সম্ভব হয় না। জীবনকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারলেই আসল আনন্দ আসে জীবনে। আনন্দ হলো আত্মার পূর্ণতা, যা বাইরের কোনো বস্তুর দ্বারা নির্ধারিত হয় না। যেদিন তুমি তোমার জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি অংশে আনন্দ খুঁজে নিতে শিখে যাবে, সেদিন থেকে আর আনন্দের পেছনে ছুটতে হবে না।
হাসি দিয়ে যদি পৃথিবী বদলানো যায়, তাহলে আনন্দ দিয়ে জীবন বদলানো যাবে না কেন! ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলো মিলিয়ে যে সুখ অনুভব করা হয়, সেটাই আনন্দ। আনন্দের সঠিক মানে হলো, জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে ভালোবাসায় জড়িয়ে উপভোগ করা। জ্ঞানী মানুষেরা জীবনের প্রতিটা সময় আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকাকে উপভোগ করে।
আল্লাহর পথে সুখ : আল্লাহর পথে থেকে সুখ খুঁজে নাও, কারণ প্রকৃত সুখ ও শান্তি আল্লাহর নির্দেশিত পথ থেকেই আসে। আল্লাহর সন্তুষ্টিই প্রকৃত সুখের উৎস, আল্লাহকে রাজি-খুশি করার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সুখ নিহিত। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ধন-সম্পদে সুখ নেই; বরং প্রকৃত সুখ হলো অন্তরের প্রশান্তিতে। আধ্যাত্মিক সুখ এবং মনের শান্তির মাধ্যমেই প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়। সুখ হলো আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। এতে কোনো বিষয়ে আক্ষেপ থাকে না। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের প্রতি তৃপ্ত থাকলে সুখ ও সন্তুষ্টি আসবেই। সুখী জীবন সেটা, যেখানে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধৈর্যের সমন্বয় থাকে। সুখী জীবন অর্জনের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা এবং ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মানুষগুলো তথা পরিবারগুলো জগতের যেখানেই থাকুক, তারাই পৃথিবীর সবচাইতে বেশি সুখী।
শেষ কথা : আজকের এই সুখ, আনন্দের কথাগুলো আপনাদের জন্যই লেখা হয়েছে, যাতে আপনি আপনার মনের ভেতর সুন্দর উপলব্ধি ও মনোভাব সুন্দরভাবে আয়ত্ত করতে পারেন। এসবের সঠিক ব্যবহার করে আপনি আপনার প্রিয় মুহূর্তগুলোকে আরও প্রাণবন্ত ও স্মরণীয় করে তুলতে পারবেন। নিজের অনুভূতিগুলোকে গুছিয়ে প্রকাশ করার জন্য এই সংগ্রহটি আপনাকে সাহায্য করবে। আশা করি, লেখাটি আপনার কাজে লাগবে।
দুঃখের মতোই আমাদের জীবনে মাঝে মাঝে সুখের মুহূর্তও আসে, যা মনকে প্রশান্তি ও আনন্দে ভরিয়ে দেয়। এমন আনন্দের সময়ে অনেকেই তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতে সুখের আবেশ খোঁজেন। তাদের জন্যই এই আলোচনায় থাকছে কিছু অসাধারণ সুখ ও আনন্দের উপায়। আপনার এই মুহূর্তগুলোকে আরও সুন্দরভাবে উপভোগ করতে সাহায্য করবে। সুখ হচ্ছে ভেতর থেকে অনুভব করার বিষয়, যারা ভেতর থেকে সুখ অনুভব করা শিখে যায়, প্রকৃতপক্ষে তারাই সুখী মানুষ হন।
দুঃখ না থাকলে সুখ কি আসলে বোঝা যায় না, আবার দুঃখ না থাকলে সুখের কদরই থাকত না। জীবনে সুখ হলো সেই গহিন বনের পাখি, যে পাখিকে চাইলেই ধরা যায় না। আমরা যে সুখের পেছনে ঘুরি সুখ সুখ বলে, একসময় সেটা আমাদের হাতে আসার পর মনে হয়, এটা জীবনের আসল সুখ নয়। আপনি যদি অন্যের সুখের কারণ হতে পারেন, তাহলে আপনাকে সুখী হতে কোনো বাধা অতিক্রম করা লাগবে না। সুখ ভবিষ্যতের জন্য জমা করার বিষয় নয়, সুখ সর্বক্ষণ উপভোগ করার বিষয়।
পৃথিবীতে সুখী হতে হলে আপনাকে প্রচণ্ড রকম স্বার্থপর হতে হবে। আর এটাই বাস্তব। সুখ কোটি টাকা দিয়ে কেনা যায় না, না কারও কাছ থেকে একবিন্দু সুখ ধার নেওয়া যায়। পারফেক্ট জীবন বলতে আসলে সুখকে বোঝায় না, বরং অসম্পূর্ণতার মাঝেও তৃপ্তি খুঁজে পাওয়াই আসল সুখ। আবার অন্যের জন্য হিতকর কোনো কাজ কিংবা পরিবেশের জন্য ভালো কোনো কাজ করলে মনের ভেতর উপলব্ধিপূর্ণ এক অনাবিল পরম শান্তি অনুভূত হয়, যা সুখের চেয়েও অনেক বড় আর দেহ-মনকে প্রশমিত করে।
তোমার বয়স বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মাপো, সংখ্যা দিয়ে নয়। তোমার জীবন মাপো সুখ-শান্তি ও হাসির সাথে, কান্নার সাথে নয়। তারা বলে, সত্যিকারের সুখী হতে একজন মানুষের দরকার তিনটি জিনিস : কাউকে ভালোবাসা, কিছু করার মতো কাজ এবং ভবিষ্যতের জন্য কিছু আশা। সুখ মানে হলোÑতুমি যা ভাবো, যা বলো আর যা করো, তা যখন একসঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। যে নিজে সুখী, সে অন্যদেরও সুখী করে তোলে। তুমি কখনোই প্রকৃত সুখ অনুভব করতে পারবে না, যদি বারবার খুঁজতে থাকোÑসুখ আসলে কীভাবে আসে। আর জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্যও কখনো পাবে না, যদি সারাক্ষণ সেটি খুঁজতে থাকো।
সুখ খুঁজে পাওয়ার সবচেয়ে নিশ্চিত উপায় হলো অন্যের জন্য সুখ খোঁজা। সুখ হলো একটি সিদ্ধান্ত, মাঝে মাঝে সেটি পেতে হলে একটু চেষ্টা করা লাগে। এই মুহূর্তেই খুশি হও। এই মুহূর্তটাই তোমার জীবন। সুখ আসলে নিজেকেই খুঁজে নিতে হয়, সুখ বাইরে নয়, সুখ আমাদের প্রত্যেকের ভেতরেই থাকে। যা শুধু আমাদের খুঁজে নিতে হয়। সুখের চাবি সব সময় নিজের কাছে রাখতে হয়, অন্যথায় যে কেউ আপনার সুখের ভাগ নিয়ে চলে যেতে পারে, তার সুখ ভেবে। মানুষ মন থেকে যতটা সুখী হতে চায়, সে মানুষ ততটাই সুখী হতে পারে।
কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর, মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর। কারও কাছে এক টুকরো সুখ স্বর্গীয় সুখের চেয়ে বেশি সুখের। দুনিয়ার সুখের পেছনে সবাই ছোটে, কিন্তু পরকালের সুখ যে আসল সুখ, তা কজনে বোঝে। নিজেকে খুশি রাখার শক্তি যেই সময় আপনার মাঝে চলে আসবে, সেই সময় থেকে আপনি সুখী মানুষ হতে পারবেন। যেমনটা যুদ্ধ জয় করলেই সবকিছু শেষ হয়ে যায় না; বরং তার চেয়েও জরুরি শান্তি সুশৃঙ্খলা বিন্যাস। শান্তি আসে, পরিস্থিতি বদলে নয়, বরং নিজেকে গভীরভাবে চিনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে।
শান্তি শুধু প্রার্থনার বিষয় নয়, এটি সৃষ্টি করতে হয়, অনুভব করতে হয় এবং আমাদের আচরণে প্রতিফলিত করতে হয়, তবে প্রকৃত শান্তি তখনই আসে, যখন আমরা তা অন্যদের সাথে ভাগ করে নিতে পারি। তুমি তখনই শান্তিতে থাকবে, যখন নিজের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারবে। শান্তি আসে ভেতর থেকে, বাইরে তা খোঁজার কিছু নেই। বিশ্ব শান্তি সম্ভব, যদি আমরা আগে নিজের মধ্যে শান্তি স্থাপন করতে পারি। শান্তি শুধু সহিংসতার অনুপস্থিতি নয়, এটি মানবিক সহানুভূতির প্রকাশ। যতক্ষণ না মানুষ তার সহানুভূতির পরিধি সব জীবন্ত প্রাণীর প্রতি বিস্তার করে, ততক্ষণ তার নিজের শান্তিও অসম্ভব। সুখী হওয়ার জন্য প্রাচুর্য নয়, বরং আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের ওপর সন্তুষ্ট থাকা জরুরি।
বাহ্যিক অর্জন সাময়িক আনন্দ দিতে পারে, কিন্তু মনের সুখ সবকিছুর ঊর্ধ্বে। নিজের মতো করে বাঁচা শিখে গেলে মনের সুখ খুঁজে পাওয়া ব্যাপার নয়। মনের সুখ কেবল বাইরের প্রাপ্তিতে নয়, ভেতরেও মনের সুখ প্রাপ্তি ঘটায়। বাইরের জগতে যতই ঝড় উঠুক না কেন, মনের ভেতরে সুখ থাকলে সবকিছু সহজ মনে হয়। মনের সুখ পাওয়া মানে নিজেকে ভালোবাসা এবং নিজের জীবনের প্রতি তৃপ্ত থাকা। বাহ্যিক চাওয়াগুলো যত কমবে, ততই মনের শান্তি বাড়বে।
হ্যাপিনেস ফিল : হ্যাপিনেস বলতে শুধু বড় বড় সুখ নয়, হ্যাপিনেস হলো ছোট ছোট সুখগুলোকে বড় হিসেবে উপভোগ করা। হ্যাপিনেস হলো প্রত্যাশা কমিয়ে নিজের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত, প্রতিটা ছোট ছোট খুশিকে একান্তভাবে উপভোগ করা। যদি নিজের জীবনকে সহজভাবে নিতে পারেন, তবেই সত্যিকারের সুখের সন্ধান খুঁজে পাবেন। হ্যাপিনেসগুলো আপনার জীবনে বাধ্য হয়ে ধরা দেবে। হ্যাপিনেস খুব ছোট একটি বিষয়। কিন্তু আমরা বড় সুখের আশায় ছোট সুখগুলোকে উপভোগ করতে ভুলে যাই। যখন তুমি নিজের হৃদয়ের পথ অনুসরণ করে চলা শিখে যাবে, তখনই তোমার জন্য সত্যিকারের হ্যাপিনেস পাওয়া সম্ভব। হ্যাপিনেস আসে স্বাধীনতা থেকে আর স্বাধীনতা আসে সাহসিকতা থেকে। নিজের প্রতি আস্থা রেখে চললেই সুখ আসে।
টাকায় কি সুখ হয়? : টাকা দিয়ে যে সুখ পাওয়া যায়, তা শুধু বাহ্যিক হয়ে থাকে। প্রকৃত সুখ মনের শান্তি, শান্তিপূর্ণ জীবন, যা টাকা দিয়ে কেনা যায় না। টাকা দিয়ে অস্থায়ী সুখ কেনা সম্ভব, স্থায়ী সুখ টাকা দিয়ে নয়, বরং আন্তরিকতা, সম্পর্ক ও ভালোবাসা দিয়ে জয় করতে হয়। টাকা দিয়ে বিলাসিতা হয়, টাকা দিয়ে স্ট্যাটাস দেখানো যায়, কিন্তু টাকা দিয়ে সুখের বিনিময় করা যায় না। জীবনের আসল সুখ কখনোই টাকায় ধরা দেয় না। টাকা দিয়ে মানুষকে কেনা যায়, কিন্তু ভালোবাসা ও সুখ কেনা যায় না। সুখ হলো মনের এক অবস্থা।
আনন্দ : আনন্দ হচ্ছে জীবনের প্রতি একধরনের কৃতজ্ঞতা, যা আমাদের মনের গভীরে নিহিত থাকে। আনন্দ হলো অন্তরের এক শুদ্ধতম অনুভূতি, যা কোটি টাকা দিয়েও কেনা সম্ভব হয় না। জীবনকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারলেই আসল আনন্দ আসে জীবনে। আনন্দ হলো আত্মার পূর্ণতা, যা বাইরের কোনো বস্তুর দ্বারা নির্ধারিত হয় না। যেদিন তুমি তোমার জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি অংশে আনন্দ খুঁজে নিতে শিখে যাবে, সেদিন থেকে আর আনন্দের পেছনে ছুটতে হবে না।
হাসি দিয়ে যদি পৃথিবী বদলানো যায়, তাহলে আনন্দ দিয়ে জীবন বদলানো যাবে না কেন! ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলো মিলিয়ে যে সুখ অনুভব করা হয়, সেটাই আনন্দ। আনন্দের সঠিক মানে হলো, জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে ভালোবাসায় জড়িয়ে উপভোগ করা। জ্ঞানী মানুষেরা জীবনের প্রতিটা সময় আনন্দ নিয়ে বেঁচে থাকাকে উপভোগ করে।
আল্লাহর পথে সুখ : আল্লাহর পথে থেকে সুখ খুঁজে নাও, কারণ প্রকৃত সুখ ও শান্তি আল্লাহর নির্দেশিত পথ থেকেই আসে। আল্লাহর সন্তুষ্টিই প্রকৃত সুখের উৎস, আল্লাহকে রাজি-খুশি করার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সুখ নিহিত। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ধন-সম্পদে সুখ নেই; বরং প্রকৃত সুখ হলো অন্তরের প্রশান্তিতে। আধ্যাত্মিক সুখ এবং মনের শান্তির মাধ্যমেই প্রকৃত সুখ পাওয়া যায়। সুখ হলো আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। এতে কোনো বিষয়ে আক্ষেপ থাকে না। আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের প্রতি তৃপ্ত থাকলে সুখ ও সন্তুষ্টি আসবেই। সুখী জীবন সেটা, যেখানে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং ধৈর্যের সমন্বয় থাকে। সুখী জীবন অর্জনের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা এবং ধৈর্যশীল হওয়া প্রয়োজন। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা মানুষগুলো তথা পরিবারগুলো জগতের যেখানেই থাকুক, তারাই পৃথিবীর সবচাইতে বেশি সুখী।
শেষ কথা : আজকের এই সুখ, আনন্দের কথাগুলো আপনাদের জন্যই লেখা হয়েছে, যাতে আপনি আপনার মনের ভেতর সুন্দর উপলব্ধি ও মনোভাব সুন্দরভাবে আয়ত্ত করতে পারেন। এসবের সঠিক ব্যবহার করে আপনি আপনার প্রিয় মুহূর্তগুলোকে আরও প্রাণবন্ত ও স্মরণীয় করে তুলতে পারবেন। নিজের অনুভূতিগুলোকে গুছিয়ে প্রকাশ করার জন্য এই সংগ্রহটি আপনাকে সাহায্য করবে। আশা করি, লেখাটি আপনার কাজে লাগবে।