ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ

প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৫, ১১:৪৯ , অনলাইন ভার্সন
সংবাদপত্র মানেই খবর। কয়েক পাতার বিজ্ঞাপন ছাড়া সবই খবর। প্রথম থেকে শেষ পৃষ্ঠা-নানা রূপ-রঙের খবর। রিপোর্ট, বিনোদন, খেলাধুলা। গ্রামের খবর, শহরের খবর। ঘটনা-দুর্ঘটনা, মিলন-বিচ্ছেদ, জন্ম-মৃত্যু, কী নেই খবরে। সব খবর নিয়েই দু-চার কলম লেখা যায়। এই যে ঠিকানার ৩০ এপ্রিল সংখ্যার পত্রিকা। প্রথম পৃষ্ঠা থেকে ৭২ পৃষ্ঠা। শুধু প্রথম পৃষ্ঠার খবরগুলোর কথাই যদি বলা যায়, কত যে খবর। বাংলাদেশের রাজনীতির নানামুখী সংবাদ। বিদেশের খবর। বাংলাদেশে ‘র’ এর তৎপরতা। বিদেশের কাছে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেওয়ার সংবাদ। বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা ৮ জানুয়ারি লন্ডনে যান। সেখানে তিনি বড় ছেলে তারেক রহমানের কাছে অবস্থান করেন। চিকিৎসা শেষে তার অবস্থা স্থিতিশীল হওয়ায় সর্বশেষ খবর অনুযায়ী তিনি দেশে ফিরে গেছেন ৬ মে ২০২৫ তারিখে।

তবে সব খবর ছাপিয়ে যুদ্ধের খবরই এ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ বলে বিবেচিত হচ্ছে বিশ্বময়। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। যুদ্ধ যে মানবসভ্যতার জন্য ভয়ংকর, তা ওই দুই অঞ্চলে যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত মানুষ সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারছে। যুদ্ধ যে কী ভয়ংকর, কী ধ্বংসাত্মক, তা যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রনায়ক বা যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব যারা পালন করেন, তারা অনুভব করতে না পারলেও ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারছেন ঠিকই। ইউক্রেনে যারা যুদ্ধের কারণে আশ্রয়হীন, খাদ্যহীন, চিকিৎসাহীন; যারা বোমার আঘাতে মারা যাচ্ছে, তারা তো ভাগ্যবান, মরে বেঁচে গেছে। কিন্তু সেই যারা বেঁচে থেকেও মৃত, তাদের অবস্থা কি আমরা অনুমান করতে পারি?

আমরা শুধু ইতিহাসের পাতা পাঠ করেই জানি যুদ্ধের ধ্বংসক্ষমতা। ইতিহাস পড়ে জানতে পারি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রথম অ্যাটম বোমার ব্যবহার কী ভয়ংকর পরিণতি মানবসভ্যতার জন্য বয়ে আনতে পারে? জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি অ্যাটম বোমায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অনেক অনেক দিন পরেও হিরোশিমায়, নাগাসাকিতে বিকলাঙ্গ সন্তানের জন্ম হতে থাকে বলে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। গাজায় হাজার হাজার শিশু, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মৃত্যুবরণ করছে। শত শত শিশু অপুষ্টিতে ভুগে ভুগে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। খাবার নেই, ওষুধ নেই। সব হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মানবতার কোনো মূল্যই নেই যুদ্ধবাজদের কাছে। শান্তি, সভ্যতা, কৃষ্টি, কালচার সব তুচ্ছ। শত্রু নিধন আর শান্তি-সভ্যতা ধ্বংসের মরণখেলা।

বর্তমান সময়টা যেন সেই ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ থেকে যুদ্ধের তাপ এখন নিজেদের ঘরে এসেই লাগছে। সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অবস্থা এমন যে যুদ্ধ যেকোনো মুহূর্তে লেগে যাবে। দু’দেশের মধ্যে কেবল উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় নয়-কোনো কোনো সীমান্তে দু’দেশের সীমান্ত প্রহরীদের মধ্যে রাতভর গোলাগুলি বিনিময়ও চলছে। বিশ্বব্যাপী আশঙ্কা, যেকোনো মুহূর্তে চিরশত্রু দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে গোলাগুলি বিনিময় হয়। কিন্তু এবার ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল ভারতের কাশ্মীরের পহেলগামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলিতে ২৬ জন পর্যটকের প্রাণহানি ঘটলে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিদেশ সফরে ছিলেন। তিনি দেশে ফিরে শীর্ষ জেনারেলদের নিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পাকিস্তানকে এই হামলার জন্য দায়ী করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদি এরই মধ্যে তার জেনারেলদের পাকিস্তানকে যেকোনো পরিস্থিতির জবাব দেওয়ার জন্য অনুমতি দিয়ে রেখেছেন। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়-সেটা দেখার অপেক্ষায় বিশ্ব।

তবে মানবিক বিশ্ব প্রত্যাশা করে, দুই দেশই অবশেষে যুদ্ধের পথ পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের পথ বেছে নেবে। যুদ্ধের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, যুদ্ধ রক্তক্ষয়, সভ্যতা ও শান্তি বিনষ্ট, প্রাণনাশ ছাড়া কোনো শুভ ফল বয়ে আনে না। আমাদের প্রার্থনা, বিশ্বে চলমান যুদ্ধ এবং যুদ্ধের আশঙ্কা থেকে আমরা যেন বের হয়ে এসে সবাই সংযুক্তভাবে বিশ্ব শান্তি ও সভ্যতার পক্ষে কাজ করি। আমরা যদি সবাই মিলে একটি যুদ্ধমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি, তবে পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য দূর করে একটি শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হব। তাহলে আর কেউ ক্ষুধায় মৃত্যুমুখে পতিত হবে না। কাউকে সেবাবঞ্চিত, আশ্রয়হীন, বস্ত্রহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে না।

আর বনে বাঘ আসার গল্পে সেই রাখাল বালকের যে পরিণতি হয়েছিল, সে রকম তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি লেগেই যায়, তবে পৃথিবী নামক গ্রহটির কী হবে কে জানে! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে বোমা নাগাসাকি, হিরোশিমাতে পড়েছিল, তার ধ্বংসক্ষমতা আরও কত শত গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তা আমাদের ধারণার বাইরে। সেই সঙ্গে পৃথিবীর মানুষ ও সভ্যতা ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য আরও কত রকমের অস্ত্র যে ক্ষমতাবান দেশগুলোর অস্ত্রভান্ডারে জমা আছে কারও বলার সাধ্য নেই। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদি লেগেই যায়, তবে সেসব মারণাস্ত্রের ধ্বংসক্ষমতা দেখার সুযোগও হয়তো আমরা পাব না। এটুকু লেখা হয়েছিল ৬ মে রাতে। তখন পর্যন্ত যুদ্ধ শুরু হয়নি। অবশেষে আশংকা সত্য হল। নিউইয়র্ক সময় ৭ মে মঙ্গলবার পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দু’পক্ষই ক্ষতির শিকার হয়েছে। সম্পাদকীয় যখন পাঠকের হাতে পৌঁছবে, তখন পর্যন্ত যুদ্ধের আরও খবর জানা যাবে। তবে আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078