
বাংলাদেশ রেমিট্যান্স ফেয়ার অনুষ্ঠিত হলো ১৯-২০ এপ্রিল শনিবার ও রোববার। ওই মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের যোগ দেওয়ার কথা ছিল। মেলার সময়টায় তিনি নিউইয়র্কে অবস্থান করলেও নানা বিতর্কের কারণে মেলায় যোগ দেননি। মেলায় গভর্নরের অংশগ্রহণ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি গ্রুপ, ব্যবসায়ী ও বিএনপির একটি অংশ বিরোধিতা করে। তারা এই মেলার আয়োজনের পেছনে আয়োজকদের ভিন্ন উদ্দেশ্য আছে বলে গভর্নর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ধারণা দেন। এ কারণেই গভর্নর নিউইয়র্কে থাকলেও মেলায় যোগ দেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ড. মো. হাবিবুর রহমানেরও মেলায় যোগ দেওয়ার কথা ছিল। গভর্নর না যাওয়ায় তিনিও যাননি।
মেলায় না যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঠিকানাকে বলেন, ‘আমি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এটা নিয়ে ভীষণ কন্ট্রোভার্সি আছে শুনেছি। এই কন্ট্রোভার্সিয়াল কোনো কিছুইতেই আমি যোগ দিতে চাইনি। এ কারণে ১৮ এপ্রিল লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়টে ওয়েলকাম ডিনার হলেও সেখানে যোগ দিইনি। মেলায়ও যাইনি।’ গভর্নর ১৯ ও ২০ এপ্রিল নিউইয়র্কে ছিলেন। এরপর তিনি ওয়াশিংটনে চলে যান।
এ ব্যাপারে রেমিট্যান্স ফেয়ারের অন্যতম আয়োজক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, মেলায় গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর আসেননি। তবে মেলার প্রথম দিন ১৮ এপ্রিলের ডিনার প্রোগ্রামে গভর্নরের পিএ, রেমিট্যান্স বিভাগের প্রধান উপস্থিত ছিলেন। গভর্নরের সঙ্গে পাঁচটি ব্যাংকের সিইওর যে বৈঠক ছিল, সেটি হয়েছে কনস্যুলেটে। এ ছাড়া প্রবাসীদের মতবিনিময় হয়েছে কনস্যুলেটে। এ কারণে আমরা অনুষ্ঠানের সময়সূচি পরিবর্তন করেছি। কনস্যুলেট থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছিল, গভর্নরের প্রোগ্রামের সঙ্গে যাতে আমাদের প্রোগ্রাম কনফ্লিক্ট না করে। সে জন্য আমরা প্রোগ্রাম রিসিডিউল করেছি।
এদিকে কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকর গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর যোগ না দেওয়ায় আরও অনেকেই মেলায় যোগ দেননি। তবু শেষ পর্যন্ত ভালোভাবেই মেলাটি সম্পন্ন করেছেন বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, আমরা ভালোভাবেই মেলাটি করেছি। ১৮, ১৯ ও ২০ এপ্রিল- তিন দিনে মেলার তিনটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল রাতে প্রথম দিনে পাঁচতারকা হোটেল ওয়েলকাম ডিনার ও পরিচয় পর্বের অনুষ্ঠান হয়েছে। এটি হয় লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে। সেখানে বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রবাসী বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা যোগ দেন। এরপর দুটি পর্ব হয় জ্যাকসন হাইটসের সানাই রেস্টুরেন্টের পার্টি হলে। ‘বৈধ রেমিট্যান্স, উন্নত বাংলাদেশ’ শিরোনোমে এবারের এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে যাতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ করে, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়। মেলায় প্রবেশ মূল্য ছিল না। বাংলাদেশ থেকে একাধিক ব্যাংক মেলায় স্টল নেয়। এর মধ্যে ছিল ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক এবং এনসিএল ব্যাংক। প্রবাসীদের অনেকেই বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় রেমিট্যান্স ফেয়ারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট ও পুরস্কার। এর মধ্যে প্রথম পুরস্কার পায় সোনালী ব্যাংক, দ্বিতীয় পুরস্কার জনতা ব্যাংক এবং তৃতীয় পুরস্কার পায় ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এই পুরস্কার দেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সময় ধরা হয়েছে। এই সময়ে যেসব প্রতিষ্ঠান বেশি রেমিট্যান্স প্রেরণ করে, তাদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়। ব্যাংক ছাড়াও একাধিক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করতে ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে প্রথম পুরস্কার লাভ করে মাস্টার কার্ড, দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করে মানিগ্রাম ও তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে রিয়া ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস। রিয়া মানি এক্সচেঞ্জের ট্রান্সফারের পক্ষে পুরস্কার নেন কার্লোস, আকাশ ও মিন্টো সাহা, মাস্টার কার্ডের পক্ষ থেকে পুরস্কার নেন এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রতীক খোয়ালা, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মালিক ধানী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক কোরিটোরি এবং ট্রেজারির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্দ্রনীল গাঙুলি। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মানুষকে রেমিট্যান্স প্রেরণে সহায়তা দেওয়ার জন্য সেরা সেবাদাতা বিবেচনায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সোনালী এক্সচেঞ্জ, বিএ এক্সপ্রেস, স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেস। মেলায় প্রবাসীরা ছাড়াও বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন গণমান্য ব্যক্তি যোগ দেন। এর মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, সিটিজেন্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী, এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান, মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ হাউস (ইউকে) লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আমানউল্লাহ, এনসিসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালামসহ বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বক্তারা বাংলাদেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধ করেন।
মেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ। মেলার আকর্ষণ হিসেবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মানিট্রান্সফার কোম্পানি ছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ, রেমিট্যান্স অফশোর ব্যাংকিং ও প্রবাসী ব্যবসা-সংক্রান্ত সেমিনার, আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল। মেলায় অংশ নেয় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মানিট্রান্সফার অপারেশন, রেমিট্যান্স চ্যানেল পার্টনার, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, অফশোর ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী, মানি ট্রান্সফার এবং রেমিট্যান্স অ্যাপ, প্রবাসী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাবৃন্দ।
মেলা পরিদর্শন করেন রেমিট্যান্স প্রেরণকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি প্রবাসী, পেশাজীবী সম্প্রদায় ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সদস্য, প্রবাসী ফোরাম ও সমিতির সদস্য ও প্রবাসী উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী প্রমুখ। তবে মেলায় দর্শনার্থী গত বছরের তুলনায় কম ছিল। নেতিবাচক প্রচারণার কারণে অনেকেই যাননি।
মেলার প্রথম দিন ১৮ এপ্রিল ন্যাশনাল ক্রেডিট এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক পিএলসি এর সৌজনে ডিনার অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যা সাতটায়। সেখানে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশীদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছেন। সেই সাথে তারা রেমিটেন্স প্রেরণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে পেরেছেন। এনসিসি ব্যাংকের সাথে এই অনুষ্ঠানটি সফল করতে সার্বিকভাবে ছিল মেলার আয়োজক সংগঠক বিইউসিসিআই। মেলার আয়োজক সংগঠক বিইউসিসিআইএর প্রেসিডেন্ট ও আহ্বায়ক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বিউসিসিআই এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মেলার জয়েন্ট কনভেনর রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিইউসিসিআইএর সিইও ও মেলার প্রধান সমন্বয়কারী বিশ্বজিৎ সাহা।
আয়োজকদের লক্ষ্য ছিল যাতে প্রবাসীরা মেলায় আসেন ও বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণের বিষয়টিতে আরো বেশি উৎসাহিত হন। যত বেশি রেমিটেন্স দেশে প্রেরণ করা হবে। দেশ তত বেশি উন্নত হবে। সেই লক্ষ্য তারা পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। মেলায় প্রবাসীরা রেমিটেন্স প্রেরণে সমস্যা, এবং এই সব ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হয় সেগুলোর সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন। কারণ প্রবাসীরা কোন ধরণের ঝামলো ও ভোগান্তি ছাড়াই বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরণ করতে চান, সেই সাথে তারা যাকে অর্থ পাঠাচ্ছেন তিনি যাতে কোন ঝামেলা ছাড়া অর্থ দেশে থেকে গ্রহণ করতে পারেন সেই বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রবাসীদের বাংলাদেশে যাতে আরো গুরুত্ব দেয়া হয় সেই বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
মেলার প্রথম দিনে ওয়েলকাম, অতিথি পরিচয় পর্ব ও ওয়েলকাম ডিনার লাগোয়ের্ডিয়া মেরিয়ট হোটেলে। এটি সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলছে। পরদিন ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় শুরু হয়। কম খরচে ও সহজে নিরাপদে আইনীভবে রেমিটেন্স প্রেরণ ও এর অভিজ্ঞতা নিয়ে অলোচনা, প্যানেল ডিসকাশন, চ্যানেল পার্টনারদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময়, রেমিটার্সদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময়, প্রশ্নের উত্তর পর্ব।
এআই-পাওয়ার্ড ফাইন্সেসিয়াল ইন্ড্রাজট্রি এ্যান্ড রেমিটেন্স সার্ভিসস:- প্রাসপেক্টেভি বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা, ছিল পুরস্কার প্রদান পর্ব। শীর্ষ তিন রেমেটন্স রিসিভার ব্যাংক, শীর্ষ তিন রেমিটেন্স ভেন্ডার চ্যানেল পার্টনার ও এবং শীর্ষ দশজন এনআরবি নির্বাচন ও পুরস্কার প্রদান। রাতে ছিল রেমিটার নেটওয়াকিং ডিনার। তারপরও আয়োজকরা চেষ্টা করেছেন সবগুলো অনুষ্ঠান করার। মেলার শেষ দিনে-২০ এপ্রিল সানাই পার্টি হলে মেলার তৃতীয় সেশন ছিল দ্য রোল অব দ্য মিডিয়া ইন প্রোমোটিং রেমটেন্স টু বিডি:অবস্কেলস এ্যান্ড রিকমান্ডেশনস, এরপর সেশন ফোর এক্সপ্লোরিং অফসোর ব্যাংকিং টু বুস্ট ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভস: অপরচ্যূনিটি এ্যান্ড চ্যালেঞ্জস এবং পঞ্চম সেশনে ছিল বিল্ডিং ব্রিজেজ, ব্রেকিং ব্যারিয়ার্স: এনআরবি’স কনট্রিবিউশন টু স্টাসটেইনাবল ডেভলপমেন্ট, এখানে ছিল প্যানেল ডিসকাশন, শেয়ারিং এক্সপিরিয়েন্স বাই এনআরবি ,এাছাড়ও ছিল প্রশ্ন উত্তর পর্ব। সব শেষে মেলার ক্লোজিং সিরোমনি। সবার শেষে ডিনার। এই সব পর্বই তারা করেছেন তবে তা তাদের সময় ও সাধ্যের মধ্যে যতখানি সম্ভব হয়েছে।
মেলার আয়োজন করে বিইউসিসিআই ও ইউএসএ-বাংলাদেশ বিজনেস লিঙ্কস, সহযোগিতা করে এফিবিসিসিআই, বিডিপি, মিডিয়া পার্টনার রয়েছে, বণিক বার্তা, দ্য বিজনেস স্ট্যাটান্ডার্ড, একাত্তর টিভি, টিবিএন ২৪ এবং ঠিকানা পত্রিকা।
মেলায় না যাওয়ার কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঠিকানাকে বলেন, ‘আমি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এটা নিয়ে ভীষণ কন্ট্রোভার্সি আছে শুনেছি। এই কন্ট্রোভার্সিয়াল কোনো কিছুইতেই আমি যোগ দিতে চাইনি। এ কারণে ১৮ এপ্রিল লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়টে ওয়েলকাম ডিনার হলেও সেখানে যোগ দিইনি। মেলায়ও যাইনি।’ গভর্নর ১৯ ও ২০ এপ্রিল নিউইয়র্কে ছিলেন। এরপর তিনি ওয়াশিংটনে চলে যান।
এ ব্যাপারে রেমিট্যান্স ফেয়ারের অন্যতম আয়োজক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, মেলায় গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর আসেননি। তবে মেলার প্রথম দিন ১৮ এপ্রিলের ডিনার প্রোগ্রামে গভর্নরের পিএ, রেমিট্যান্স বিভাগের প্রধান উপস্থিত ছিলেন। গভর্নরের সঙ্গে পাঁচটি ব্যাংকের সিইওর যে বৈঠক ছিল, সেটি হয়েছে কনস্যুলেটে। এ ছাড়া প্রবাসীদের মতবিনিময় হয়েছে কনস্যুলেটে। এ কারণে আমরা অনুষ্ঠানের সময়সূচি পরিবর্তন করেছি। কনস্যুলেট থেকে আমাদেরকে বলা হয়েছিল, গভর্নরের প্রোগ্রামের সঙ্গে যাতে আমাদের প্রোগ্রাম কনফ্লিক্ট না করে। সে জন্য আমরা প্রোগ্রাম রিসিডিউল করেছি।
এদিকে কেউ কেউ বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকর গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর যোগ না দেওয়ায় আরও অনেকেই মেলায় যোগ দেননি। তবু শেষ পর্যন্ত ভালোভাবেই মেলাটি সম্পন্ন করেছেন বলে আয়োজকেরা জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, আমরা ভালোভাবেই মেলাটি করেছি। ১৮, ১৯ ও ২০ এপ্রিল- তিন দিনে মেলার তিনটি পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১৮ এপ্রিল রাতে প্রথম দিনে পাঁচতারকা হোটেল ওয়েলকাম ডিনার ও পরিচয় পর্বের অনুষ্ঠান হয়েছে। এটি হয় লাগোর্ডিয়া ম্যারিয়ট হোটেলে। সেখানে বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রবাসী বিভিন্ন ব্যবসায়ীসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা যোগ দেন। এরপর দুটি পর্ব হয় জ্যাকসন হাইটসের সানাই রেস্টুরেন্টের পার্টি হলে। ‘বৈধ রেমিট্যান্স, উন্নত বাংলাদেশ’ শিরোনোমে এবারের এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে আরও বেশি পরিমাণে যাতে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ করে, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়। মেলায় প্রবেশ মূল্য ছিল না। বাংলাদেশ থেকে একাধিক ব্যাংক মেলায় স্টল নেয়। এর মধ্যে ছিল ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক এবং এনসিএল ব্যাংক। প্রবাসীদের অনেকেই বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় রেমিট্যান্স ফেয়ারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট ও পুরস্কার। এর মধ্যে প্রথম পুরস্কার পায় সোনালী ব্যাংক, দ্বিতীয় পুরস্কার জনতা ব্যাংক এবং তৃতীয় পুরস্কার পায় ইসলামী ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী এই পুরস্কার দেওয়ার জন্য ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে ২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সময় ধরা হয়েছে। এই সময়ে যেসব প্রতিষ্ঠান বেশি রেমিট্যান্স প্রেরণ করে, তাদেরকে পুরস্কার দেওয়া হয়। ব্যাংক ছাড়াও একাধিক প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করতে ভূমিকা রাখে। এর মধ্যে প্রথম পুরস্কার লাভ করে মাস্টার কার্ড, দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করে মানিগ্রাম ও তৃতীয় পুরস্কার লাভ করে রিয়া ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস। রিয়া মানি এক্সচেঞ্জের ট্রান্সফারের পক্ষে পুরস্কার নেন কার্লোস, আকাশ ও মিন্টো সাহা, মাস্টার কার্ডের পক্ষ থেকে পুরস্কার নেন এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রতীক খোয়ালা, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মালিক ধানী ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক কোরিটোরি এবং ট্রেজারির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইন্দ্রনীল গাঙুলি। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মানুষকে রেমিট্যান্স প্রেরণে সহায়তা দেওয়ার জন্য সেরা সেবাদাতা বিবেচনায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে সোনালী এক্সচেঞ্জ, বিএ এক্সপ্রেস, স্ট্যান্ডার্ড এক্সপ্রেস। মেলায় প্রবাসীরা ছাড়াও বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন গণমান্য ব্যক্তি যোগ দেন। এর মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, সিটিজেন্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ হানিফ শোয়েব, এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান রোমো রউফ চৌধুরী, এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান, মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জ হাউস (ইউকে) লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম আমানউল্লাহ, এনসিসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালামসহ বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জের শীর্ষ কর্মকর্তারা। বক্তারা বাংলাদেশে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণে উদ্বুদ্ধ করেন।
মেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ। মেলার আকর্ষণ হিসেবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মানিট্রান্সফার কোম্পানি ছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ, রেমিট্যান্স অফশোর ব্যাংকিং ও প্রবাসী ব্যবসা-সংক্রান্ত সেমিনার, আলোচনা ও প্রশ্নোত্তর পর্ব ছিল। মেলায় অংশ নেয় ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, মানিট্রান্সফার অপারেশন, রেমিট্যান্স চ্যানেল পার্টনার, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, অফশোর ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী, মানি ট্রান্সফার এবং রেমিট্যান্স অ্যাপ, প্রবাসী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাবৃন্দ।
মেলা পরিদর্শন করেন রেমিট্যান্স প্রেরণকারী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি প্রবাসী, পেশাজীবী সম্প্রদায় ও সাংস্কৃতিক সংস্থার সদস্য, প্রবাসী ফোরাম ও সমিতির সদস্য ও প্রবাসী উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী প্রমুখ। তবে মেলায় দর্শনার্থী গত বছরের তুলনায় কম ছিল। নেতিবাচক প্রচারণার কারণে অনেকেই যাননি।
মেলার প্রথম দিন ১৮ এপ্রিল ন্যাশনাল ক্রেডিট এ্যান্ড কমার্স ব্যাংক পিএলসি এর সৌজনে ডিনার অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যা সাতটায়। সেখানে প্রবাসীদের সাথে বাংলাদেশীদের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছেন। সেই সাথে তারা রেমিটেন্স প্রেরণের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে পেরেছেন। এনসিসি ব্যাংকের সাথে এই অনুষ্ঠানটি সফল করতে সার্বিকভাবে ছিল মেলার আয়োজক সংগঠক বিইউসিসিআই। মেলার আয়োজক সংগঠক বিইউসিসিআইএর প্রেসিডেন্ট ও আহ্বায়ক ডা. জিয়াউদ্দিন আহমেদ, বিউসিসিআই এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও মেলার জয়েন্ট কনভেনর রায়হানুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিইউসিসিআইএর সিইও ও মেলার প্রধান সমন্বয়কারী বিশ্বজিৎ সাহা।
আয়োজকদের লক্ষ্য ছিল যাতে প্রবাসীরা মেলায় আসেন ও বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণের বিষয়টিতে আরো বেশি উৎসাহিত হন। যত বেশি রেমিটেন্স দেশে প্রেরণ করা হবে। দেশ তত বেশি উন্নত হবে। সেই লক্ষ্য তারা পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। মেলায় প্রবাসীরা রেমিটেন্স প্রেরণে সমস্যা, এবং এই সব ক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হয় সেগুলোর সমাধানের জন্য অনুরোধ করেন। কারণ প্রবাসীরা কোন ধরণের ঝামলো ও ভোগান্তি ছাড়াই বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরণ করতে চান, সেই সাথে তারা যাকে অর্থ পাঠাচ্ছেন তিনি যাতে কোন ঝামেলা ছাড়া অর্থ দেশে থেকে গ্রহণ করতে পারেন সেই বিষয়টি তুলে ধরেন। প্রবাসীদের বাংলাদেশে যাতে আরো গুরুত্ব দেয়া হয় সেই বিষয়টিও তুলে ধরা হয়।
মেলার প্রথম দিনে ওয়েলকাম, অতিথি পরিচয় পর্ব ও ওয়েলকাম ডিনার লাগোয়ের্ডিয়া মেরিয়ট হোটেলে। এটি সাতটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত চলছে। পরদিন ১৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় শুরু হয়। কম খরচে ও সহজে নিরাপদে আইনীভবে রেমিটেন্স প্রেরণ ও এর অভিজ্ঞতা নিয়ে অলোচনা, প্যানেল ডিসকাশন, চ্যানেল পার্টনারদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময়, রেমিটার্সদের সাথে অভিজ্ঞতা বিনিময়, প্রশ্নের উত্তর পর্ব।
এআই-পাওয়ার্ড ফাইন্সেসিয়াল ইন্ড্রাজট্রি এ্যান্ড রেমিটেন্স সার্ভিসস:- প্রাসপেক্টেভি বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা, ছিল পুরস্কার প্রদান পর্ব। শীর্ষ তিন রেমেটন্স রিসিভার ব্যাংক, শীর্ষ তিন রেমিটেন্স ভেন্ডার চ্যানেল পার্টনার ও এবং শীর্ষ দশজন এনআরবি নির্বাচন ও পুরস্কার প্রদান। রাতে ছিল রেমিটার নেটওয়াকিং ডিনার। তারপরও আয়োজকরা চেষ্টা করেছেন সবগুলো অনুষ্ঠান করার। মেলার শেষ দিনে-২০ এপ্রিল সানাই পার্টি হলে মেলার তৃতীয় সেশন ছিল দ্য রোল অব দ্য মিডিয়া ইন প্রোমোটিং রেমটেন্স টু বিডি:অবস্কেলস এ্যান্ড রিকমান্ডেশনস, এরপর সেশন ফোর এক্সপ্লোরিং অফসোর ব্যাংকিং টু বুস্ট ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভস: অপরচ্যূনিটি এ্যান্ড চ্যালেঞ্জস এবং পঞ্চম সেশনে ছিল বিল্ডিং ব্রিজেজ, ব্রেকিং ব্যারিয়ার্স: এনআরবি’স কনট্রিবিউশন টু স্টাসটেইনাবল ডেভলপমেন্ট, এখানে ছিল প্যানেল ডিসকাশন, শেয়ারিং এক্সপিরিয়েন্স বাই এনআরবি ,এাছাড়ও ছিল প্রশ্ন উত্তর পর্ব। সব শেষে মেলার ক্লোজিং সিরোমনি। সবার শেষে ডিনার। এই সব পর্বই তারা করেছেন তবে তা তাদের সময় ও সাধ্যের মধ্যে যতখানি সম্ভব হয়েছে।
মেলার আয়োজন করে বিইউসিসিআই ও ইউএসএ-বাংলাদেশ বিজনেস লিঙ্কস, সহযোগিতা করে এফিবিসিসিআই, বিডিপি, মিডিয়া পার্টনার রয়েছে, বণিক বার্তা, দ্য বিজনেস স্ট্যাটান্ডার্ড, একাত্তর টিভি, টিবিএন ২৪ এবং ঠিকানা পত্রিকা।