যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে হুঁশিয়ারি 

নিজেদের রক্ষায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রস্তুত ইরান

প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৯ , অনলাইন ভার্সন
ইরানের পারমাণবিক শক্তি অর্জনের প্রচেষ্টা যেন পশ্চিমাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এরপরও যখন ইরানের সামরিক কর্মকর্তারা পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন, তখন পশ্চিমা মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তি করতে আহ্বান জানিয়েছে, নাহলে আক্রমণ চালানো হবে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তি করতে দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে তেহরান। স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ এপ্রিল) ইতালির রাজধানী রোমে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত ১২ এপ্রিল (শনিবার) ওমানের রাজধানী মাস্কাটে প্রথম দফায় বৈঠক করে তেহরান ও যুক্তরাষ্ট্র।

হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নানা পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন ইরানের বিরুদ্ধে। ইরান যাতে পারমাণবিক শক্তি অর্জন করতে না পারে, সে লক্ষ্যে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন তিনি। এমনকি বিভিন্ন সময় ইরানে সামরিক অভিযান চালানোর হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প। এরপরও একটি চুক্তি করা যায় বলে মনে করেছেন ট্রাম্প। এজন্য ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে চিঠিও লিখেছেন তিনি। তবে খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হামলা করলে ইরানও বসে থাকবে না। এমন পরিস্থিতিতে চুক্তি আদৌ হবে কিনা বা কী কী বাধা রয়েছে; দেশদুটির একটি চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার ক্ষেত্রে সে বিষয়ে একটু আলোকপাত করা যাক।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৫ মার্চ ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতাকে আলোচনায় আসার জন্য একটি চিঠি লেখেন। পরদিন টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে এসে নিজেই বলেন, ‘আমি তাদের একটি চিঠি লিখেছি। চিঠিতে বলেছি, আপনারা আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুন, নাহলে আমরা সামরিক হামলা চালাতে বাধ্য হব। সেটি কিন্তু খুব খারাপ হবে।’
 এমন চিঠি ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও লিখেছিলেন। খামেনি বেশ রাগত স্বরেই সেই চিঠির জবাব দিয়েছিলেন। এবারের হুমকিও মুখেও কড়া জবাবই দিয়েছেন তিনি। খামেনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালালে ইরানও পাল্টা হামলা চালাবে।’
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার লক্ষ্যে একটি চিঠি উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উনকেও লিখেছিলেন। চিঠির জবাবে ট্রাম্পের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎও করেছিলেন। তবে পারমাণবিক কোনো চুক্তি কিন্তু হয়নি। এখনও উত্তর কোরিয়া নিজেদের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েই যাচ্ছে।

এদিকে গত সপ্তাহে আরব দেশ ওমানে প্রথম দফায় বৈঠকে বসেছিলেন তেহরান ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। পরে মুখোমুখি আলোচনায় বসেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। এমনকি তারা পরবর্তী ধাপের আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্মতও হন।

বৈঠক শেষে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে উইটকফ জানান, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ উপাদান মজুদ রাখতে পারে। অথচ এই চুক্তি থেকেই ট্রাম্প প্রথম মেয়াদে বের হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘ইরানের সঙ্গে তখনই একটি চুক্তি সম্ভব হবে, যদি সেটি ট্রাম্পের চুক্তি হয়।’
উইটকফের এই বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আসা এক ধরনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দেশটির অন্যান্য নেতারা।

ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমাদের এত চিন্তা কেন?
কয়েক দশক ধরেই ইরান দাবি করে আসছে তারা শান্তিপূর্ণভাবেই পারমাণবিক কর্মসূচি চালাচ্ছে। দেশটি বর্তমানে ৬০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি। পারমাণবিক অস্ত্র নেই এমন আর কোনো দেশের কাছে এই পর্যায়ে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম নেই বলে জানা যায়। ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ ও ৩০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত মজুত রাখার অনুমতি রয়েছে ইরানের। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের কাছে বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার ৩০০ কিলোগ্রামের মতো ইউরেনিয়াম মজুত রয়েছে এবং দেশটি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্যমতে, ইরান এখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি শুরু না করলেও তারা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনির এক উপদেষ্টা আলি লারিজানি বলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা থাকলেও তারা সেটি করছে না। আইএইএর তদন্তেও দেশটির কোনো আপত্তি নেই। তবে এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যদি তাদের ওপর হামলা চালাতে চায়, তাহলে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা ছাড়া তাদেরর উপায় থাকবে না বলেও সতর্ক করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক ইস্যুতে যদি আপনারা ভুল পদক্ষেপ নেন, তাহলে ইরানও সেই পথেই এগোবে। কারণ তাদেরও তো নিজেদের রক্ষা করতে হবে।’
এক সময় ইরান ছিল মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মিত্র। ইরানের তৎকালীন শাসক শাহ মোহাম্মদ পাহলভির আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বর্ণযুগ চলেছিল বলা যায়।

পাহলভি যুক্তরাষ্ট্র থেকে অস্ত্র কিনতেন, এমনকি ইরান থেকে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে নজরদারি করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থাকে (সিআইএ) গোপন তথ্যকেন্দ্র পরিচালনার অনুমতিও দিয়েছিলেন তিনি। সিআইএর সমর্থিত অভ্যুত্থানেই পাহলভির গদি পাকাপোক্ত হয়েছিল বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়।

এরপর ১৯৮৯ সালে গণবিক্ষোভের মুখে ক্যান্সার আক্রান্ত পাহলভি ইরান থেকে পালিয়ে যান। পরে আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির নেতৃত্বে ইসলামিক বিপ্লব সংঘটিত হয় এবং ইরানে ধর্মীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়।
ওই বছরের শেষের দিকে পাহলভিকে ফেরত পাঠানোর জন্য তেহরানের মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালান ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় ৪৪৪ দিনের জিম্মি সংকট তৈরি হয় এবং ওয়াশিংটন-তেহরানের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।

এরপর ১৯৮০ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধে ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সে সময় একদিনের হামলায় ইরানের নৌশক্তি ধ্বংস করেন মার্কিন সেনারা। পরবর্তীতে একটি ইরানি বেসামরিক বিমান ভুলবশত যুদ্ধবিমান ভেবে গুলি করে ভূপাতিত করে যুক্তরাষ্ট্র, এতে ২৯০ জন নিহত হন। এরপরে কয়েক দশক ধরেই দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা চলমান থাকে। এরই মধ্যে ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে বিশ্ব শক্তিগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে ইরান। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও তেহরানের মধ্যকার সম্পর্কের পারদ কিছুটা গলতে শুরু করে। তবে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে সেই চুক্তি থেকে বের করে আনেন ট্রাম্প। এখন আবার তিনিই একটি চুক্তি করতে চাইছেন। বলা চলে জোর করে চুক্তি করাতে চাইছেন, কারণ ইরান চুক্তিতে রাজি না হলে হামলা চালানোর হুঁশিয়ারিও দিয়ে আসছেন ট্রাম্প।

এ অবস্থায় আলোচনার ফলাফল কী হবে সেটিই দেখার অপেক্ষায় অনেকে। কোন কোন শর্তে ট্রাম্প চুক্তি করতে চান আর ইরান সেগুলোর কতটুকু মান্য করে সেটিই এখন দেখার অপেক্ষা।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078