অতিদ্রুত খাবার খেয়ে বিপদ টানছেন নাতো?

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০১ , অনলাইন ভার্সন
আপনি কি প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিটের কম সময়ে আপনার সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার কিংবা রাতের খাবার খেয়ে নিচ্ছেন? তাহলে সাবধান! আপনি যদি অতিদ্রুত খাবার গ্রহণ করেন—তাহলে বিপদ জেঁকে বসতে পারে আপনার শরীরে।
একজন মানুষের জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া যতটা প্রয়োজন, ধীরে ধীরে খাওয়া ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রচুর শাকসবজি-ফলমূল খাওয়ার পাশাপাশি সময় নিয়ে চিবিয়ে-চিবিয়ে খাওয়াটাও স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে উল্লেখ করেছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দ্রুত খাবার খেলে সেটি গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। পাশাপাশি কতটুকু খাবার গ্রহণ করা হবে, সে বিষয়ে মস্তিষ্ক মানুষকে সঠিক সময়ে সতর্ক করতে পারে না। ফলে বেশি খেয়ে শরীরের মেদ বাড়ানোর কাজ সহজ হয়।
শুধু কি তাই, রাঁধুনীর কয়েকঘণ্টা ধরে রান্না করা খাবার সামান্য কয়েক মিনিটের মধ্যেই যদি শেষ করে দেওয়া হয়, তিনি মনে কষ্টও পেতে পারেন। আবার ধীরে ধীরে খাবার খান—এমন কোনো ব্যক্তির সঙ্গে খেতে বসে যদি আরেকজন নিমিষেই তার খাবার শেষ করে ফেলেন—সেটিও দৃষ্টিকটু।

তবে কারও ভালো লাগলো কি খারাপ সেই পরোয়া না করলেও নিজের সুস্বাস্থ্যের স্বার্থে প্রতিটি মানুষকে এই বিষয়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের কিছু পরামর্শ জেনে নেওয়া যাক। ২০ থেকে ৩০ মিনিটের কম সময়ে যদি কোনো ব্যক্তি তার সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার কিংবা রাতের খাবার খেয়ে নেন—তাহলে ওই ব্যক্তি অতিদ্রুত খাবার গ্রহণ করছেন—এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের।

ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সেন্টার ফর বিহেভিয়রাল হেলথের বিশেষজ্ঞ লেসলি হেইনবার্গ বলেন, ‘পেট ভরে গেছে’ পাকস্থলী থেকে হরমোনের মাধ্যমে মস্তিষ্কে —এমন সংকেত পৌঁছাতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লাগে।’ তাই যারা দ্রুত খাবার খান, তাদের এই সংকেত না পাওয়ার সম্ভাবনাই থাকে। ফলে পেট ভরে যাওয়ার পরও অনেকে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করেন বলে মত দেন তিনি।

অতিরিক্ত খাবার খেয়ে নিলে ক্ষতি কী?
অনেকেরই মনে প্রশ্ন আসতে পারে, দু‘মুঠো ভাত না হয় বেশিই খেয়েছেন কিংবা দুটো বেশি রুটি; তাতে কি এমন হয়েছে? এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অবশ্যই এতে সমস্যা আছে।

লেসলি বলেন, ‘দ্রুত খাবার খাওয়ার ফলে অতিরিক্ত বাতাস গিলে ফেলতে পারে মানুষ। এতে পেট ফাঁপ দিতে পারে কিংবা বদহজম হতে পারে। আবার সময় নিয়ে ঠিকমতো খাবার চিবিয়ে না খেলে হজমেও সমস্যা হতে পারে। এতে খাবারের পুষ্টি ঠিকমতো শোষিত হয় না—এমনকি খাবারের অপর্যাপ্ত টুকরোগুলো খাদ্যনালীতে আটকেও যেতে পারে।’

বিগত সময়ে পরিচালিত কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মানুষ দ্রুত খাবার খান, তাদের মুটিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অন্যদিকে যারা ধীরে খাদ্য গ্রহণ করেন, তাদের এই ঝুকিঁ কম।

তাহলে খাবার খাওয়ার গতি কমাবেন কীভাবে?
দ্রুত খাবার খাওয়া যাদের অভ্যাস, এই সংবাদ পড়ে তাদের কপালে ভাঁজ পড়তে পারে। তবে চিন্তার কারণ নেই, বিশেষজ্ঞরা সমস্যার পাশাপাশি সমাধানও বাতলে দিয়েছেন।  খাওয়ার গতি কম করতে খাবার গ্রহণের সময়ে প্রথমেই টেলিভিশন ও মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ লেসলি।
লেসলি বলেন,‘টিভি দেখতে দেখতে যারা খাবার খান, তারা সাধারণত কোনো একটি বিজ্ঞাপন বা একটি শো শেষ করা পর্যন্ত খেতে থাকেন। ফলে মস্তিষ্ক কখন পেট ভরে যাওয়ার সংকেত দিয়েছে, তা খেয়াল করতে পারেন না অনেকে।’
অন্য কোনো কাজ করতে করতেও যারা খাবার গ্রহণ করেন, তারাও কম মনোযোগ দিয়ে খাবার গ্রহণ করেন। এতে তারাও প্রায়ই বেশি খাবার গ্রহণ করে ফেলেন বলে মনে করেন তিনি। তাছাড়া দ্রুত খাবার খেলে তা ঠিকঠাক উপভোগ করা যায় না বলেও অভিমত এই বিশেষজ্ঞের।
লেসলি বলেন, দ্রুত খাওয়ার মানুষের অভ্যাসটি বহুদিনে গড়ে ওঠে। তাই এই অভ্যাসের পরিবর্তন কিছুটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।

এক্ষেত্রে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। যেমন- সবসময় যে হাতে খাবার খান সেটি পরিবর্তন করে অন্য হাত দিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করা যায়, চপষ্টিক বা এরকম অন্যকিছু যেটাতে ব্যক্তি অভ্যস্ত নন; সেটি দিয়ে খাবার খেতে চেষ্টা করা বা খাওয়ার মাঝে একটু বিরতিও নেওয়া যেতে পারে।

দৈনন্দিন জীবনের নানারকম ব্যস্ততার কারণে সবসময় সম্ভব না হয়ে উঠলেও সুযোগ পেলেই মনোযোগ দিয়ে, উপভোগ করে খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ব্রিটিশ পুষ্টি কোম্পানি জোইয়ের প্রধান গবেষক সারাহ বেরি। এ ছাড়াও প্রতিবার খাবার মুখে নেওয়ার পর বেশি সময় নিয়ে চিবানোর পরামর্শ দিয়ে ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী হেলেন ম্যাকার্থি বলেন, এতে খাবারের গতি স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে।

তাছাড়া ফাস্টফুড জাতীয় খাবারগুলো অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব খাবার তুলনামূলক নরম হয়, ফলে খেতে সময় কম লাগে।’ এ কারণে ফাস্টফুডের পরিবর্তে শাকসবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এসব খাবার চিবাতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগে বলেও জানান তিনি।

তবে প্রথমদিকে আস্তে খাওয়ার ফলে অনেকে কিছু অপ্রত্যাশিত সমস্যার মুখোমুখিও হয়েছেন—এমন ঘটনা যে নেই তা কিন্তু নয়। নিজের এক নারী রোগীর উদাহরণ দিয়ে হেলেন বলেন, ‘ভদ্রমহিলা প্রতিদিন সন্ধ্যায় এক বয়াম আলুর চিপস খেতেন। আমি তাকে একটি করে চিপস খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলাম।’ কিছুদিন পর ওই নারী হেলেনকে জানান, একটি একটি করে খাওয়ার কারণে চিপসগুলোকে এক ধরনের রাসায়নিক আঠার গাদার মতো লেগেছিল তার কাছে।

হেলেন বলেন, ‘এরপরে তিনি আর চিপস খাওয়াকে উপভোগ করতে পারেননি।’

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: +880  1338-950041