বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস আজ

বাংলাদেশে ১০ শতাংশ প্রবীণ পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত

প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৫ , অনলাইন ভার্সন
বাংলাদেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠী বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে পারকিনসন্স রোগী। তবে রোগী বাড়লেও চিকিৎসায় আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। পারকিনসন্স মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ, যা সাধারণত ৫০ থেকে ৬০ বছর পার হলে দেখা দেয়। প্রথম দিকে রোগীর হাত-পা কাঁপে, হাঁটতে সমস্যা হয়। খাওয়ার সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়, বিভিন্ন ঘটনা ও স্মৃতি ভুলে যাওয়াসহ আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আজ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব পারকিনসন্স দিবস’। ১৮১৭ সালে জেমস পারকিনসন্স নামের ইংরেজ শল্যচিকিৎসক রচিত ‘শেকিং পালসি’ নামে পারকিনসন্স রোগ নিয়ে প্রথম প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

তাঁর জন্মদিন ১১ এপ্রিল পারকিনসন্স দিবস পালিত হয়। তাঁরই নামানুসারে এই রোগের নামকরণ হয়েছে। দিবসটির এবারের প্রতিপ্রাদ্য বিষয় ‘বিজ্ঞানী ও চিকিৎসকদের ক্ষমতায়ন : আবিষ্কার এবং যত্ন উদ্ভাবন ত্বরান্বিত করুন’।

পারকিনসন্স রোগের লক্ষণ : সাধারণত হাতের কাঁপুনির মাধ্যমে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ধীরে ধীরে তা বাড়তে থাকে। হাঁটাচলা করতে সমস্যা দেখা দেয়। রোগী সামনের দিকে ঝুঁকে ছোট ছোট পায়ে হাঁটতে থাকে। মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। এ রোগে আক্রান্তদের চেহারা দেখে মনে হবে তাদের কোনো আবেগানুভূতি নেই।

গলার স্বর ভারী ও একঘেয়ে হয়ে থাকে। কথায় জড়তা আসে। হাঁটার সময় হাত শরীরের সঙ্গে লেগে থাকে। বিষণ্নতায় বেশি ভোগে। রাতে ঘুমের ঘোরে হাত-পা ছোড়া, ঘুমের ব্যাঘাত ঘটা, কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া, ঘ্রাণশক্তি কমে যাওয়া এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে।

রোগটি হওয়ার কারণ : স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পারকিনসন্স রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে বংশপরম্পরা, দীর্ঘকাল ধরে সার ও কীটনাশকের মতো রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে থাকা, মস্তিষ্কে জড় পদার্থের কণা জমা হওয়া ইত্যাদি কারণে পারকিনসন্স হতে পারে।

স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে পারকিনসন্স রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে কোনো গবেষণা কখনও হয়নি। এতে রোগটির সব তথ্য নিয়ে সঠিক পরিসংখ্যান কারো জানা নেই। তবে ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে হাসপাতাল ও চেম্বারে যারা আসছেন, তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশ পারকিনসন্স রোগী পাওয়া যাচ্ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তবে রোগটি কম বয়সেও হতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা বাড়লেও তাঁদের যত্ন ও সহায়তার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা এবং বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা যথেষ্ট নয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ যথাযথ যত্ন দ্রুত নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যতে সংকট তৈরি হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে এখনই জাতীয় পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

দিবসটি উপলক্ষে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু সাংবাদিকদের জানান, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই রোগের সঙ্গে দেশের অনেকে পরিচিত নন। বার্ধক্যজনিত সমস্যা মনে করে বেশিরভাগ মানুষ চিকিৎসার জন্য আসেন না। ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা হাসপাতালে বা চেম্বারে চিকিৎসার জন্য আসেন, তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশ পারকিনসন্স রোগী পাচ্ছি। ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের প্রায় অর্ধেক এ রোগে আক্রান্ত। 

ডা. হুমায়ুন কবীর হিমু বলেন, বিশ্বে পারকিনসন্স রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। কারণ প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়লেও তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জাতীয় পর্যায়ে এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

বিশেষজ্ঞদের তথ্য মতে, মস্তিষ্কের ছোট একটি অংশ, যেটিকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘সাবস্ট্যানশিয়া নাইগ্রা’ বলা হয়, এই অংশের স্নায়ুকোষ বা নিউরন শুকিয়ে যাওয়ার কারণে ডোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার (এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ) নষ্ট হয়ে যায় অথবা এর ঘাটতি দেখা দেয়। ডোপামিন যেহেতু একটি প্রোটিন, তাই রক্তে এর কার্যকর শোষণ নিশ্চিত করতেও বিভিন্ন ওষুধ দরকার হয়। তবে একসময় এই ডোপামিন প্রয়োগেও কোনো কাজ হয় না। তখন প্রয়োজন হতে পারে অস্ত্রোপচারের।

বিরল এ রোগের বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সুমন রানা জানান, পারকিনসন্স আসলে একটি মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ। সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের এই রোগ হয়ে থাকে এবং এর লক্ষণ খুব ধীরে ধীরে কয়েক মাস বা কয়েক বছর ধরে প্রকাশিত হয়। মস্তিষ্কের এই ক্ষয়ের কারণে ডোপামিন ধরনের নিউরোট্রান্সমিটারের অভাব হলেই এই রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। এ রোগের লক্ষণ শুরু হয় ট্রেমর বা কম্পন দিয়ে। দেহের একদিকে, যেমন হাত–পা কাঁপে এমনটা হয়ে থাকে। মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়, যাকে রিজিডিটি বলা হয়। এরপরই দেখা দেয় ব্রেডিকাইনেশিয়া বা হাঁটার গতি অত্যন্ত কমে যাওয়া। কথা জড়িয়ে যাওয়া বা ভারসাম্যহীনতাও হতে পারে। ভাবলেশহীন মুখভঙ্গি, নাম সই করতে বা লিখতে সমস্যা, রুচিহীনতা, অনিদ্রা, বিষণ্নতা এই ব্যাপারগুলো অবশ্য প্রকৃত লক্ষণগুলো প্রকাশ পাওয়ার আগেই দেখা দেয়।

মস্তিষ্কের কোষগুলো নষ্ট হতে থাকলেই সাধারণত ষাটোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগ দেখা দেয়। খুব নির্দিষ্ট করে এখনও কেউ বলতে পারে না এই রোগ কেন হয়। তবে বংশগত ধারাবাহিকতা, দীর্ঘকাল ধরে রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ (সার, কীটনাশক), মস্তিষ্কে জড় পদার্থের কণা জমা হওয়া ইত্যাদি কারণে পারকিনসন্স হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সাধারণত পশ্চিমা দেশগুলোতে পারকিনসন্স রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হলেও গড় আয়ু বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেশেও এখন পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে বলে জানান।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078