
বৈশাখ মাস আমাদের বাংলা নতুন বছরের প্রথম মাস। পহেলা বৈশাখ সেই নতুন বছরের প্রথম দিন। ১৪৩১ পার করে এবার আমরা ১৪৩২-এ পা দিচ্ছি। বাংলা নববর্ষকে আমরা যে কত আদরে-সোহাগে বরণ করে নিই, তার কোনো সীমা নেই। ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। ছয় ঋতুর ছয় রূপ। সব রূপেই মুগ্ধ হতে হয়। কালবৈশাখী কখনো কখনো মানুষের সব সম্ভাবনা, স্বপ্ন উড়িয়ে নিয়ে গেলেও বোনে নতুন স্বপ্ন, বুনে দেয় নতুন প্রত্যাশার বীজ। তাই মানুষ ঝড়ে ভেঙে পড়লেও নতুন তেজে বলীয়ান হয়ে সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ায়। ছয় ঋতু মানে গ্রীষ্ম দিয়ে শুরু। এরপর বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত।
আজকের যে মাস এবং দিনগণনার বাংলা ক্যালেন্ডার, একসময় তা ছিল না। তখন ফসলি মৌসুম ধরে হতো বর্ষপঞ্জি। এতে কৃষকের পক্ষে খাজনা দেওয়া সহজ হয়। মোগল সম্রাট আকবর এই বর্ষপঞ্জিকা প্রবর্তন করেন। এতে কৃষকেরা খাজনা দিয়েও নবান্নের উৎসবে মাততে পারে। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাদের পুরোনো হিসাব মিটিয়ে হালখাতা খোলেন। হালখাতা মানে নতুন হিসাবের খাতা। শৈশবে সবাই হালখাতার মানে বুঝত, বাবার পরিচিত দোকানগুলোতে বাবার সঙ্গে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি খাওয়া। এখন হালখাতার মানে সবাই বুঝি, নতুন বছরের হিসাব নতুন করে শুরু করা।
আসলে নতুন বর্ষবরণের মূল লক্ষ্য এক বছরের হিসাব মিলিয়ে নেওয়া। কী পেলাম, কী পেলাম না এর যোগ-বিয়োগ। আমরা যে নতুন বছরে পা রাখলাম, বিগত বছরের না-পাওয়ার হাহাকার, নতুন বছরে তার পূর্ণতা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় বুক বাঁধা, সে কারণেই আমরা নববর্ষের শুভ সকালকে আবাহন করি, ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...’। কিংবা বলি জীর্ণ-পুরাতন ধুয়ে মুছে যাক নতুন বছরের নতুন সূর্যোদয়ে সবকিছু নতুন করে শুরু হোক। পুরোনো বছরের বড় বড় ঘটনাও আমাদের জীবনে অনেক সময় বড় প্রভাব ফেলে। যেমন ১৪৩১ সনের দুটি ঘটনা ছিল নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড। একটি আমেরিকার নির্বাচন এবং অন্যটি বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছরের নির্মম শাসনের পতন। তীব্র জনরোষের মুখে তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশ পরিচালনার জন্য নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে দেশমাতৃকার একমাত্র নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণ। আর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার বিজয়ী হয়েছেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি দুনিয়াজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন ইমিগ্রেশন এবং শুল্ক বৃদ্ধি করে। সারা বিশ্বে এ দুটি বিষয় এখন মুখ্য আলোচনায়।
দেশে খুন, জখম, রাহাজানি, দুর্নীতি ও ধর্ষণ, বিশেষ করে শিশু ধর্ষণের মতো নির্মম ঘটনা ঘটলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রবাসীদের মনেও স্বাভাবিক কারণেই অস্থিরতা সৃষ্টি করে। কেননা প্রবাসী জনগোষ্ঠী দেশে বসবাস না করলেও দেশে সংঘটিত ভালো-মন্দ সব ঘটনাই তাদের মনকে উদ্বিগ্ন, উতলা করে তোলে। প্রবাসীরা অনেক সংকট, অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়েও গভীরভাবে হৃদয়জমিনে স্বদেশকে লালন করেন। বুকে জড়িয়ে রাখা দেশের মানচিত্রকে কখনোই তারা মলিন হতে দেন না। দেশের শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি তারা নিয়মিত উদ্্যাপন এবং চর্চার মধ্য দিয়ে ধরে রাখেন এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে বহমান রাখেন।
পৃথিবীর সব মানুষ নিজের কল্যাণ কামনা করে। সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি চায়। বাংলা সম্পর্কে চিরায়ত বাণী, ‘একদিন বাঙালি ছিলামরে।’ এই গৌরব আমরা ভালো-মন্দ, সুখে-দুঃখে সব সময় অক্ষুণ্ন রাখতে চাই। আমরা সব নববর্ষের নবপ্রাতে এবং সদা-সর্বদা আমরা যে বিশ্বমণ্ডলে বাস করি, সেই বিশ্বমণ্ডলকে সুখময়, শান্তিময় দেখতে চাই। যুদ্ধমুক্ত, মৃত্যু ও রক্তপাতহীন দেখতে চাই। যুদ্ধ যে কারণে সংঘটিত হয়, তার জন্য যারা জীবন দেয়, পঙ্গু হয়ে সারা জীবনের জন্য অচল হয়ে পড়ে, সভ্যতার যে ক্ষতি হয়; ধ্বংস হয়-তার জন্য এই পর্যুদস্ত, দুর্ভোগ এবং অভিশাপের জীবন যারা যাপন করে, তারা একটুও দায়ী নয়। আজ ইসরায়েলের কামানের গোলায়, বোমায় গাজায় যে নিরীহ নারী-শিশু, বৃদ্ধা-বৃদ্ধসহ শিশুরা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যে শিশু-নারী-পুরুষ প্রাণ দিচ্ছে, সভ্যতার সব নিদর্শন ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে, নির্মম সত্য, এর জন্য দায়ী ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা প্রদর্শন, মুনাফার লোভ, শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন।
এর থেকে যুদ্ধবাজ মানব সমাজ যেদিন বের হয়ে এসে শান্তি, সভ্যতা এবং মানবিকতা, মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, সেই দিনই কেবল বিশ্বটা সুন্দর হবে। বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠবে। আমাদের প্রার্থনা হোক এমন একটি বিশ্বের, যেখানে হানাহানি থাকবে না, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকবে না। এই প্রার্থনা যেদিন মঞ্জুর হবে, সেদিন আমরা একটা প্রকৃত নববর্ষ পাব। নতুন প্রভাত, নতুন সূর্য, নতুন আলোয় উদ্ভাসিত নতুন পৃথিবী পাব। নববর্ষের নবপ্রভাতে বিশ্বমানবের এই মানবিক প্রার্থনা বিশ্বপ্রভুর দরবারে কবুল হোক।
নববর্ষে সবার কল্যাণ হোক, মঙ্গল হোক। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এ ঠিকানার সব পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ী, সব প্রবাসী ও স্বদেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আজকের যে মাস এবং দিনগণনার বাংলা ক্যালেন্ডার, একসময় তা ছিল না। তখন ফসলি মৌসুম ধরে হতো বর্ষপঞ্জি। এতে কৃষকের পক্ষে খাজনা দেওয়া সহজ হয়। মোগল সম্রাট আকবর এই বর্ষপঞ্জিকা প্রবর্তন করেন। এতে কৃষকেরা খাজনা দিয়েও নবান্নের উৎসবে মাততে পারে। এ সময় ব্যবসায়ীরা তাদের পুরোনো হিসাব মিটিয়ে হালখাতা খোলেন। হালখাতা মানে নতুন হিসাবের খাতা। শৈশবে সবাই হালখাতার মানে বুঝত, বাবার পরিচিত দোকানগুলোতে বাবার সঙ্গে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি খাওয়া। এখন হালখাতার মানে সবাই বুঝি, নতুন বছরের হিসাব নতুন করে শুরু করা।
আসলে নতুন বর্ষবরণের মূল লক্ষ্য এক বছরের হিসাব মিলিয়ে নেওয়া। কী পেলাম, কী পেলাম না এর যোগ-বিয়োগ। আমরা যে নতুন বছরে পা রাখলাম, বিগত বছরের না-পাওয়ার হাহাকার, নতুন বছরে তার পূর্ণতা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় বুক বাঁধা, সে কারণেই আমরা নববর্ষের শুভ সকালকে আবাহন করি, ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো...’। কিংবা বলি জীর্ণ-পুরাতন ধুয়ে মুছে যাক নতুন বছরের নতুন সূর্যোদয়ে সবকিছু নতুন করে শুরু হোক। পুরোনো বছরের বড় বড় ঘটনাও আমাদের জীবনে অনেক সময় বড় প্রভাব ফেলে। যেমন ১৪৩১ সনের দুটি ঘটনা ছিল নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড। একটি আমেরিকার নির্বাচন এবং অন্যটি বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার ১৬-১৭ বছরের নির্মম শাসনের পতন। তীব্র জনরোষের মুখে তিনি দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশ পরিচালনার জন্য নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে দেশমাতৃকার একমাত্র নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণ। আর যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে পরাজিত করে রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার বিজয়ী হয়েছেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি দুনিয়াজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন ইমিগ্রেশন এবং শুল্ক বৃদ্ধি করে। সারা বিশ্বে এ দুটি বিষয় এখন মুখ্য আলোচনায়।
দেশে খুন, জখম, রাহাজানি, দুর্নীতি ও ধর্ষণ, বিশেষ করে শিশু ধর্ষণের মতো নির্মম ঘটনা ঘটলে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ঘটনা প্রবাসীদের মনেও স্বাভাবিক কারণেই অস্থিরতা সৃষ্টি করে। কেননা প্রবাসী জনগোষ্ঠী দেশে বসবাস না করলেও দেশে সংঘটিত ভালো-মন্দ সব ঘটনাই তাদের মনকে উদ্বিগ্ন, উতলা করে তোলে। প্রবাসীরা অনেক সংকট, অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়েও গভীরভাবে হৃদয়জমিনে স্বদেশকে লালন করেন। বুকে জড়িয়ে রাখা দেশের মানচিত্রকে কখনোই তারা মলিন হতে দেন না। দেশের শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতি তারা নিয়মিত উদ্্যাপন এবং চর্চার মধ্য দিয়ে ধরে রাখেন এবং নতুন প্রজন্মের মাঝে বহমান রাখেন।
পৃথিবীর সব মানুষ নিজের কল্যাণ কামনা করে। সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধি চায়। বাংলা সম্পর্কে চিরায়ত বাণী, ‘একদিন বাঙালি ছিলামরে।’ এই গৌরব আমরা ভালো-মন্দ, সুখে-দুঃখে সব সময় অক্ষুণ্ন রাখতে চাই। আমরা সব নববর্ষের নবপ্রাতে এবং সদা-সর্বদা আমরা যে বিশ্বমণ্ডলে বাস করি, সেই বিশ্বমণ্ডলকে সুখময়, শান্তিময় দেখতে চাই। যুদ্ধমুক্ত, মৃত্যু ও রক্তপাতহীন দেখতে চাই। যুদ্ধ যে কারণে সংঘটিত হয়, তার জন্য যারা জীবন দেয়, পঙ্গু হয়ে সারা জীবনের জন্য অচল হয়ে পড়ে, সভ্যতার যে ক্ষতি হয়; ধ্বংস হয়-তার জন্য এই পর্যুদস্ত, দুর্ভোগ এবং অভিশাপের জীবন যারা যাপন করে, তারা একটুও দায়ী নয়। আজ ইসরায়েলের কামানের গোলায়, বোমায় গাজায় যে নিরীহ নারী-শিশু, বৃদ্ধা-বৃদ্ধসহ শিশুরা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যে শিশু-নারী-পুরুষ প্রাণ দিচ্ছে, সভ্যতার সব নিদর্শন ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে, নির্মম সত্য, এর জন্য দায়ী ক্ষমতাবানদের ক্ষমতা প্রদর্শন, মুনাফার লোভ, শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শন।
এর থেকে যুদ্ধবাজ মানব সমাজ যেদিন বের হয়ে এসে শান্তি, সভ্যতা এবং মানবিকতা, মানবপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, সেই দিনই কেবল বিশ্বটা সুন্দর হবে। বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠবে। আমাদের প্রার্থনা হোক এমন একটি বিশ্বের, যেখানে হানাহানি থাকবে না, লোভ-লালসা, হিংসা-বিদ্বেষ, স্বার্থের দ্বন্দ্ব থাকবে না। এই প্রার্থনা যেদিন মঞ্জুর হবে, সেদিন আমরা একটা প্রকৃত নববর্ষ পাব। নতুন প্রভাত, নতুন সূর্য, নতুন আলোয় উদ্ভাসিত নতুন পৃথিবী পাব। নববর্ষের নবপ্রভাতে বিশ্বমানবের এই মানবিক প্রার্থনা বিশ্বপ্রভুর দরবারে কবুল হোক।
নববর্ষে সবার কল্যাণ হোক, মঙ্গল হোক। বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এ ঠিকানার সব পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ী, সব প্রবাসী ও স্বদেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।