প্রবাসীদের ভোটাধিকার

প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৪ , অনলাইন ভার্সন
ঠিকানার গত ২৯ মার্চ সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠায় একেবারে নিচের দিকে এক কলামে একটি সংবাদ অনেকেরই হয়তো দৃষ্টি এড়িয়ে যাবে। কিন্তু প্রবাসীদের দৃষ্টি নিশ্চয় এড়িয়ে যাওয়ার কথা নয়। সংবাদটির শিরোনাম ‘ভোটাধিকারের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন প্রবাসীরা’। এ কথা মনে করার কোনো কারণ নেই, সোচ্চার হলেই প্রবাসীদের সব দাবি পূরণ হয়ে যাবে। কথায় বলে, ‘ছেলে না কাঁদলে নাকি মায়েও দুধ দেয় না।’ কিন্তু ‘প্রবাসীদের কান্নায়ও মায়ের দুধ পাওয়া যায় না।’

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাঙালিরা যখন স্বাধীনতার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিল, তখন পাকিস্তান কীভাবে শোষণ করছিল, তার প্রামাণ্যচিত্র তুলে ধরে একটি পোস্টার ছাপিয়ে গ্রামে-গঞ্জে, নগরে-শহরে, প্রত্যন্ত জনপদে প্রচার করা হয়। প্রচারপত্রের শিরোনাম ছিল ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন?’ সেই প্রচারপত্রে একটি চিত্র ছিল এমন, যেখানে ছিল একটি গাভিন গরুÑতার মুখটা ছিল পূর্ব পাকিস্তানের দিকে আর দুধের বাঁট ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের দিকে। বাঙালিরা গাভিকে খাওয়াত আর পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকেরা দুধ দুইয়ে নিত। এমন কথাও প্রচারিত ছিল, পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ দিয়ে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদকে তিলোত্তমা করে গড়ে তুলেছিল পাঞ্জাব প্রভাবিত শাসককুল।

সে তো ছিল উপনিবেশের নিপীড়ক শাসকদের শোষণ-নিপীড়নের ইতিহাস। পূর্ব পাকিস্তানের সেই বঞ্চনার শিকার এখন একই দেশমাতৃকা বাংলাদেশের বাংলাভাষী প্রবাসীরা। প্রবাসীরা তাদের সর্বোচ্চ সাধ্যে বাংলাদেশের বিপদ-আপদ, ঝড়-বৃষ্টি, জলোচ্ছ্বাস, খরা, দুর্ভিক্ষে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স দেশে পাঠান, দেশের মানুষ তার বিপুল প্রশংসা করে এ কথা বলতে একটুও কার্পণ্য না করে বলেন, রেমিট্যান্সের সেই অর্থে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। রেমিট্যান্স-প্রবাহ কমে গেলে যে দেশের অর্থনীতি রুগ্ণতায় আক্রান্ত হয়, সে সত্যও কেউ অস্বীকার করতে পারে না।

যেটা নিয়ে মূল কথা, সেটা হচ্ছে প্রবাসীরা সোচ্চার হচ্ছেন ভোটাধিকার লাভের অধিকার নিয়ে। খবরটিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ বাংলাদেশি, যারা প্রবাসে থাকেন, রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখেন। ভোটাধিকারের মতো মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার থেকে সব সময় তাদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা ভোটাধিকার লাভের আশায় বুক বেঁধেছেন।’ তাদের মনে এই আশা জমাট বেঁধেছে, এই অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে যদি প্রবাসীরা ভোটাধিকার না পান, তবে আর কোনো আমলেই এই অধিকার পাওয়া যাবে না। কেননা অতীত সরকারগুলোও ভোটের অধিকার প্রবাসীদের দেবে বলে অনেক আশা দিয়েছে। কিন্তু কেউ সেই অধিকার শেষ পর্যন্ত প্রবাসীদের দেয়নি। এ এক বিশাল বঞ্চনা প্রবাসীদের জন্য।

কেবলই কি ভোট-বঞ্চনা। বলতে গেলে সর্বক্ষেত্রেই প্রবাসীরা বঞ্চিত। একসময় বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চালু ছিল ঢাকা-নিউইয়র্ক-ঢাকা রুটে। বিমানের সেই ফ্লাইটে বিশেষ করে বয়স্ক বাঙালি নারী-পুরুষ চলাচলে স্বস্তি পেতেন। তাদের সেই স্বস্তি উবে গেল সেই ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায়। আসবে-আসছে কতবার যে এ রকম আশ্বাস প্রবাসীরা পেয়েছেন; কিন্তু সেই ফ্লাইট আর চালু হলো না। প্রবাসীদের জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত কিছু আসনের দাবি আজও পূরণ হয়নি। অষ্টম সংসদে কুলাউড়া থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন সংসদে অনেকবার প্রবাসীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের দাবি তুলেছেন। কিন্তু কিছুই আজ পর্যন্ত হয়নি। জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়া হবে হবে করে আজও সে এনআইডি প্রবাসীরা পাননি। এখন শোনা যাচ্ছে, সেই এনআইডি থেকেও প্রবাসীরা বঞ্চিত হতে চলেছেন।

সব মিলিয়ে প্রবাসীদের মনে ক্ষোভ জমলে অন্যায় কিছু হবে না। প্রবাসীরা যদি তাদের কণ্ঠ সোচ্চার করেন, তা ন্যায়সংগত বলেই গণ্য হবে। এরপর যদি প্রবাসীরা কঠিন কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করেন, সেটাও ন্যায়সংগত বলেই বিবেচিত হবে। সময় থাকতে তাই প্রবাসীদের ন্যায়সংগত দাবির প্রতি কর্তৃপক্ষের সুনজর আশা করছি।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078