নির্বাচনে তালগোল 💣 সন্দেহের চক্করে বিএনপি

৫ বছরের হাইপে ইউনূস

প্রকাশ : ০২ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:০০ , অনলাইন ভার্সন
ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়- তত্ত্বের হেরফের হয়ে যাচ্ছে ড. ইউনূসকে ঘিরে। প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটি গা জ্বলার বিষয়। তার ওপর ড. ইউনূসকে ১০ বছর না হলেও অন্তত ৫ বছর ক্ষমতায় রাখার 
আওয়াজ চাউর করা হচ্ছে। এ তত্ত্বের উদ্ভাবক এখন পর্যন্ত অজানা-অদেখা। কিন্তু সন্দেহের তীর নানান দিকে। এ নিয়ে অবিশ্বাস-সন্দেহ ব্যাপক। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা সারজিস আলম ড. ইউনূসকে ৫ বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। এ কথাও বলা হয়েছে, পঞ্চগড় আগামী ১০ বছরের মধ্যে একজন প্রধানমন্ত্রী পাবে। আবার কেউ কেউ ইভেন্ট খুলে সরাসরি ড. ইউনূসকে ৫ বছর ক্ষমতায় রাখতে চান। এগুলো একটা সময় পর্যন্ত কথার কথা হলেও এখন ভেতরগত রহস্য দান বাঁধছে।
টুকটাক মন্দ কথা বলা হলেও সংস্কারের বিষয়ে মোটামুটি ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। বছরের শেষ নাগাদ ডিসেম্বর বা সর্বোচ্চ আগামী জুনে নির্বাচন না করার কোনো কারণ নেই। এর মাঝে ইউনূসের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করা, নির্বাচন প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র দেখছে বৃহৎ দল বিএনপি। প্রয়োজনে তারা নির্বাচনের দাবিতে ইউনূসের বিরুদ্ধে রাজপথে নামার হুংকার দিয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের শোরগোলের মাঝে হঠাৎ সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে জুন মাসকে সামনে আনা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা তার শেষ বক্তৃতায়ও তা-ই করেছেন। যদিও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, তারা ডিসেম্বরের টাইমলাইন ধরে এগোচ্ছে। তাহলে অস্পষ্টতা কোথায়? কারণই-বা কী? অস্পষ্টতার মাঝেই ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে ছুটে গেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতা ড. মঈন খান। সেখানে তিনি বলেছেন, নির্বাচন ডিসেম্বরের পর গেলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে। সামনে একটি জটিলতার শঙ্কা আরও অনেকের। ভারত বাংলাদেশে দ্রুত একটি নির্বাচন দেখতে চায়। বিএনপিও তা-ই চায়। এই দুই চাওয়ার মাঝে কোনো সংযোগ রয়েছে কি না, এ নিয়ে সন্দিহান জুলাই বিপ্লবের ফ্রন্টলাইনার ছাত্ররা। এরই মধ্যে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। তবে ড. ইউনূসকে ৫ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়- এমন দাবি তারা করেনি। জাতীয় ঈদগাহে ঈদ জামাতে ইউনূসের সঙ্গে মুসাবিদায় অচেনা একদল লোক তাকে আরও ‘৫ বছর চাই, ৫ বছর চাই’ স্লোগানের পেছনে তাদের ইন্ধন ছিল বলে ধারণা করছে বিএনপি। এমন সন্দেহ-অবিশ্বাসের মাঝেই উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বাবার ওপর হামলা হয়েছে লক্ষ্মীপুরে। কাণ্ডটি ঘটিয়েছে স্থানীয় ছাত্রদলের নেতারা। মাহফুজের বাবা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। এর আগে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা হিসেবে পদত্যাগ করার পর তাকে পাশে বসিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নাহিদকে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার আকাক্সক্ষার কথা বলেছিলেন।
একসময় বিভিন্ন জায়গায় ডিসি, এসপি, ওসিদের আওয়ামী লীগের মিটিংয়ে গিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সঙ্গে এর মিল দেখছে বিএনপিসহ কয়েকটি দল। তাদের চোখে ক্ষমতায় বসে শেখ হাসিনা তার বাবার নামে ২৪টা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ করা যেমনি অনৈতিক ছিল, একইভাবে ডক্টর ইউনূস একের পর এক প্রতিষ্ঠান-ব্যবসার লাইসেন্স নিচ্ছেন, এটাও অনৈতিক। কদিন ধরে বেশ কিছু সরকারি কর্মকর্তাকেও দেখা যাচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিচ্ছেন তারা ডক্টর ইউনূসকে আরও পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চান। এসব শোরগোলের মাঝেই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীনে চার দিনের রাজকীয় সফর করে ফিরেছেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, চীন বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগকে উৎসাহিত করবে এবং চীনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে স্থানান্তরিত করবে। তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের উত্থাপিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে ইতিবাচক বিবেচনা করবে। এর মধ্যে রয়েছে চীনা ঋণের সুদের হার কমানো এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা।
প্রেসিডেন্ট শি তার দুই বাংলাদেশ সফরের কথা বলেছেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি যখন ফুজিয়ান প্রদেশের গভর্নর ছিলেন, তখন তিনি ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, তিনি বাংলাদেশি আম ও কাঁঠাল খেয়েছেন। এগুলো সুস্বাদু। আগামী মাসে বাংলাদেশ চীনে ফল দুটি রপ্তানি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান একটি ইউনিয়নভুক্ত হবে। ভারতের সেভেন সিস্টারও পড়বে এ ছাতার নিচে। গোটা নেতৃত্বটা দেবে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রকে না চটিয়ে চীনকে বশে নিয়ে ড. ইউনূসের এ ম্যাজিকেল তত্ত্ব ভারতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে। তার আরেক ম্যাজিক জুলাই আন্দোলনকারী কন্যাদের যুক্তরাষ্ট্রের ‘আন্তর্জাতিক সাহসী নারী’ পুরস্কার পাওয়া, যা জুলাই-আগস্টের আন্তর্জাতিকীকরণ। যার মাঝে প্রকারান্তরে ইউনূসের দলের চেয়ে এমনকি দেশের চেয়েও বড় হয়ে ওঠার প্রবণতা।
চীনে সেটার এক ড্রেস রিহার্সাল হয়ে গেছে। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক, যৌথ ঘোষণা এবং যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিভিন্ন শব্দ ও বাক্যেও এর রেশ রয়েছে। শির পক্ষেও দুই দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি সমর্থনের কথা দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইউনূসের পক্ষে এক চীন নীতির প্রতি সমর্থনের কথা ব্যক্ত করে তাইওয়ানকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ‘তাইওয়ানের স্বাধীনতার’ বিরোধিতা করে। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতার ব্যাপারে চীনের অঙ্গীকারের কথা বলা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের পথচলায় সমর্থনের কথাও ব্যক্ত করা হয় এতে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রকাশের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি স্বাধীন ও উন্মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং স্থিতিস্থাপক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সময়ে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে এ ধরনের অঙ্গীকারবদ্ধ হ‌ওয়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে এল। নির্বাচনের প্রচারে চীনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হুমকি দিয়েছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে চীনা পণ্যে ৬০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করবেন। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আবার বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২০ জানুয়ারি ২০২৫-এ দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়ার পর চীন নিয়ে নীরব রয়েছেন ট্রাম্প।
রিপাবলিকান দল ক্ষমতায় থাকাকালে ১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে, যা এখন পর্যন্ত অটুট আছে। এ অবস্থায় নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার জন্য বেইজিংয়ের কাছ থেকে ৫০ বছরের মহাপরিকল্পনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সমস্যা কেবল একটি নদী নিয়ে নয়, বরং সামগ্রিক নদী ব্যবস্থাপনায়। তিস্তা নদী ব্যবস্থাপনা এবং ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর দূষিত পানি পরিষ্কারকরণের বিষয়টি বিশেষভাবে উল্লেখ করে সহায়তা চান প্রধান উপদেষ্টা। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি এবং আটটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। চীন সরকার এবং সে দেশের বেসরকারি কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, ঋণ এবং অনুদানের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ। চীন-বাংলাদেশের গভীর সম্পর্ককে যারা আড়চোখে দেখেন, অনেক কিছুই এখন তাদের হিসাবে মিলছে না। হিসাবে না মেলায় উচ্চারণ হয়ে যাচ্ছে অম্ল-মধুর-তিক্ত অনেক কথা। কেউ কেউ বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। তাই রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা আর নির্বাচনের জন্য ৫ বছর সময় দেওয়া উচিত। কে দিয়েছে এই ম্যান্ডেট? জবাব নেই।
৫ আগস্ট গণমিছিল করে গণভবনের দখল নিল ছাত্র-জনতা। দুপুরের পর সেই ছাত্র আর জনতাকে থুয়ে ক্যান্টনমেন্টে চলে গেছে আরেক গ্রুপ। এরপর যা কিছু হলো, জনগণের সেখানে কোনো শরিকানা ছিল না। ফয়সালা আসে সেনানিবাস থেকেই। এখনকার রাজনীতি অর্থনীতির পরিপূরক। রাজনীতি আর অর্থনীতি রামকৃষ্ণ মিশনের পথ অনুসরণ করে না। এর পুরোটাই স্বার্থসংশ্লিষ্ট। চীন এবার মোটাদাগে চারটি স্বার্থ জোগান দিয়েছে। ২.১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এবং আর্থিক সহায়তা, ১০০% শুল্কমুক্ত সুবিধা ২০২৮ পর্যন্ত বর্ধিত করা, ঋণের সুদের হার কমানো, তা পরিশোধের সময়সীমা ৩০ বছরে উন্নীত করা এবং মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও পরিচালনায় সহযোগিতা প্রদান। তার ওপর তিস্তার সমস্যা সমাধানে ভূমিকা নেওয়া। বিএনপি ড. ইউনূসের চীন সফরকে ইতিবাচক দেখছে। বলছে, তা জরুরি ছিল। আবার নির্বাচনও জরুরি। ড. ইউনূস বলেই যাচ্ছেন, নির্বাচন ঘোষিত সময়ের মধ্যেই তিনি করে ফেলবেন। এর পরও সংশয় কাটছে না। ড. ইউনূস, মাহফুজ আলম, হান্নান মাসুদে অস্পষ্টতা দেখছেন বিএনপির নেতারা। সংস্কার বাদ দিয়েই এখন নির্বাচনের কথা বলতে শুরু করেছেন। বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেছেন, বর্তমান সরকার সংস্কার করলে তা তারা ক্ষমতায় গেলে বাতিল করবেন।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078