নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরীরের তৎপরতা বৃদ্ধি

প্রকাশ : ২৪ মার্চ ২০২৫, ১২:৩০ , অনলাইন ভার্সন
‘নিষিদ্ধ এ সংগঠনের কার্যক্রম দেশ-জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ হলে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাউন্সেলিং করা দরকার। এছাড়া তাদের গতিবিধি ও কার্যকলাপের ওপরও নজরদারি বাড়ানো জরুরি’ 
- এবিএম নাজমুস সাকিব, সহকারী অধ্যাপক, ক্রিমিনোলজি বিভাগ, ঢাবি


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনরোষের ভয়ে আত্মগোপনে চলে যান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অধিকাংশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মাঠপর্যায়ের সদস্যরা। এরপর টানা তিন দিনে ভেঙে পড়ে পুলিশের চেইন অব কমান্ড। অবনতি ঘটে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির। এর মধ্যেই সারা দেশে চলে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ। একই সঙ্গে দেশের অধিকাংশ কারাগারে বিদ্রোহের ঘটনাও ঘটে। কারারক্ষীদের অনেকটা জিম্মি করে কারাগার থেকে বেরিয়ে যান শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের শাষনামলে বের হওয়ার পাশাপাশি, মুক্তি পান নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও। যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ইস্যুতে প্রকাশ্যে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। একই সঙ্গে অনলাইন প্লাটফর্মেও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের তৎপরতা কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে রীতিমতো অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাদের এ ধরনের কার্যক্রম ও দৈনন্দিন পোস্টার সাঁটিয়ে এবং শোডাউন করে নিজিদের অস্তিত্বের জানান দেওয়ায় আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও আসন্ন ঈদুল ফিতরের নিরাপত্তা নিয়েও অজানা শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ৭ মার্চ হিজবুত তাহরীরের প্রকাশ্য শোডাউনে জনমনে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক। পুলিশের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ এ সংগঠনের কার্যক্রম দমাতে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হলেও সংগঠনটি নানা কৌশলে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এ সংগঠনের অন্তত ৩০ জন সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছেন। এদের অনেকেই আবার আদালতের নির্দেশে নতুন করে কারাবন্দি হয়েছেন। এছাড়া ৭ সদস্যকে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন। ঢাবি’র অপরাধ বিশ্লেষক সহকারী অধ্যাপক এবিএম নাজমুস সাকিবের মতে, নিষিদ্ধ এ সংগঠনের কার্যক্রম দেশ-জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ হলে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাউন্সেলিং করা দরকার। এছাড়া তাদের গতিবিধি ও কার্যকলাপের ওপরও নজরদারি বাড়ানো জরুরি। তবে পুলিশ বলছে, নিষিদ্ধ এ সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রম গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রয়েছে। কেউ কোথাও আইনের ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টা করলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 
জানা যায়, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দিরা বিদ্রোহ করেন। তখন বিভিন্ন কারাগার থেকে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের কর্মীরা বাইরে বেরিয়ে পালিয়ে যান। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রকাশ্যে রাস্তায় নেমে আসার সুযোগে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের নেতাকর্মীরাও রাস্তা নেমে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। ক্ষমতার পালাবদলের পর নতুন করে তৎপর নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীর। ৭ আগস্ট সংসদ ভবনের সামনে প্রকাশ্যে সভা করতে দেখা যায় সংগঠনটির কর্মীদের। এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ডেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবিও জানায় তারা।
সবশেষ ৭ মার্চ বায়তুল মোকাররম এলাকায় শোডাউন করে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়, হিজবুত তাহরীর। যাদের ছত্রভঙ্গ করতে বেগ পেতে হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আটক করা হয় ২১ জনকে। এদের মধ্যে ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপরও নিষিদ্ধ এ সংগঠনের সাংগঠনিক কার্যক্রম থামেনি। 
গত ২১ মার্চ বেলা ২টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির বায়তুল আমান জামে মসজিদের সামনে পাকা রাস্তার ওপর ১৪০/১৫০ জন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সদস্য বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড নিয়ে আকস্মিক মিছিল বের। তারা করে সরকারবিরোধী-সহ বিভিন্ন ধরনের সেøাগান দেন। এ সময় পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা মিরপুর রোড হয়ে মিছিল নিয়ে ধানমন্ডি ক্লাব মাঠের দিকে অগ্রসর হন। এর ফলে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট এবং পথচারীদের মধ্যে ব্যাপক ভয়ভীতির সৃষ্টি হয়। এরপর মিছিলকারীদেরকে ছত্রভঙ্গের চেষ্টা করলে তারা অতর্কিতভাবে পুলিশ ওপর হামলা করেন। এ সময় পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করে। আসামিরা হলেন- মো. আরাফ ইব্রাহীম, মো. জুবায়ের, নিশান, সাকিব হাসান, জাবেদ, আবরার ও মাহফুজুল হাসান। পরে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় গত ২২ মার্চ তাদের আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন সিটিটিসি’র উপপরিদর্শক মো. শাহীনুর রহমান। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট এম. এ আজহারুল ইসলাম তাদের প্রত্যেকের ৪ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তির পাশাপাশি নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর প্রকাশ্যে আসা নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকেই। এ প্রসঙ্গে একজন নারী বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো যখন প্রকাশ্যে আসবে আমাদের জন্য অবশ্যই হুমকি স্বরূপ হবে। তাই আমরা চাই না এমন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন প্রকাশ্যে আসুক। 
ঢাবির ক্রিমিনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবিএম নাজমুস সাকিব বলেন, এই গ্রুপের সদস্যের সঙ্গে বসে আলোচনা করা। তারা কতটুকু করতে পারবে কতটুকু করতে পারবে না। সেটা সমাজে কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে কিনা, এ বিষয়গুলো নিয়ে কিন্তু আলোচনার দরজার বাইরে জোর জবরদস্তি করে পুলিশ আসলে কারো বিশ্বাসকে দমাতে পারবে না। তিনি বলেন, নিষিদ্ধ এ সংগঠনের কার্যক্রম দেশ-জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ হলে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাউন্সেলিং করা দরকার। এছাড়া তাদের গতিবিধি ও কার্যকলাপের ওপরও নজরদারি বাড়ানো জরুরি।  
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাম্প্রতিক সময়ের এক অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ২০০৯ সালের ২২ অক্টোবর এক প্রেসনোটের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় হিজবুত তাহরীরকে। নিষিদ্ধ সংগঠনের কোনো তৎপরতা মেনে নেয়া হবে না। নিষিদ্ধ এ সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রম গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রয়েছে। কেই কোথাও আইনের ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টা করলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রস্তুত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। 

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078