কণা, লাবণ্য  ও সে

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৫, ০৪:১৪ , অনলাইন ভার্সন
-স্যার, আরেকটু পিছনে আসেন, তারপর বাঁয়ে কেটে সামনে আগান।
-আরে পেছনে যাওয়ার জায়গা কই? কোথাও কেউ কোনো আইন মানতে চায় না, এভাবে কি গাড়ি পার্ক করা যায়? গাড়িগুলো সোজা করে রাখতে বলেননি কেন?
সিকিউরিটির সঙ্গে রাগ হয় সোহেল।
ভয়ানক বিরক্তি নিয়েই গাড়ি ড্রাইভ করছে সে। সচরাচর নিজে চালায় না। কিন্তু আজ নিজেই চালিয়ে এসেছে, সব সময় ড্রাইভার নিয়ে ঘুরতে ভালো লাগে না তার। নিজেদের কোনো প্রাইভেসি থাকে না। ড্রাইভারদের চোখ দুটো সামনে থাকলেও কান দুটো পেছনে দিয়ে রাখে সব সময়। সংসারের, অফিসের এমন কোনো বিষয় নেই, যেটা তাদের অজানা। তাই পারিবারিক কোনো ঘোরাফেরা থাকলে মাঝেমধ্যেই সোহেল এই কাজটা করে। যদিও ড্রাইভার খুবই মন খারাপ করেছে, বসুন্ধরা কনভেনশন হলের একটা অনুষ্ঠান, ভালো-মন্দ খাওয়াদাওয়া ছিল।
লাবণ্য খুবই ঘরকোনা একটা মানুষ, তার কোথাও যেতে ভালো লাগে না। তার ওপর সোহেল আজ গাড়ি নিজে চালাচ্ছে, পুরোটা রাস্তা বকবক করে মাথা ধরিয়ে ফেলেছে। গাড়ি চালাবে সে আর গুগল ম্যাপ দেখতে হবে লাবণ্যর। এটা লাবণ্যর একদম পছন্দ না। সোহেল আর তার মেয়ে ঘোরাঘুরি দারুণ পছন্দ করে। কিন্তু লাবণ্য তার উল্টো। তার এত প্যারা নিতে ভালো লাগে না। লাবণ্যর কাছে বাসাই তার স্বর্গ, শান্তির জায়গা। ওরা দুজন দুই মেরুর বাসিন্দা। দুটো মানুষ একসঙ্গে দিন কাটায় বছরের পর বছর কিন্তু চাওয়া-পাওয়া, আনন্দ-খুশি সবই আলাদা তাদের।
বিয়েবাড়িতে ঢুকেই চোখ ঝলসে যাওয়ার মতো অবস্থা। এত জৌলুশ চারপাশে, লাখ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায় একটা বিয়েতে। এত বাড়াবাড়ি হয় আজকাল। একটা সময় ছিল যখন বিয়ে-শাদিতে আনন্দ হতো বেশি, খরচ হতো কম। আর এখন খরচ হয় অনেক বেশি কিন্তু প্রাণখোলা আনন্দ আর আগের মতো হয় না।
অনেক বছর পর হঠাৎ করেই কলিগের ভাইয়ের বিয়েতে এসে কণার সঙ্গে দেখা সোহেলের। বিয়েবাড়িতে যে কয়েকজন চোখে পড়ার মতো সুন্দরী ছিল, তাদের মধ্যে কণা একজন। জ্বলজ্বল করছিল মেয়েটা। সৌন্দর্য একরত্তিও কমেনি তার।
এই পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সেও তিরিশ বছর আগের মোহনীয়তা ধরে রেখেছে সে। ওকে দেখামাত্রই বুকের ভেতরটা কেমন করে উঠল সোহেলের। এ কেমন ভালোবাসা! এ কেমন মোহমায়া! তিরিশ বছরেও আবেদন কমেনি একটুও!
এই মেয়েটার জন্য একটা সময় কতই-না অপমানিত হতে হয়েছিল তাকে। বাবা-মা, ভাইবোন, এলাকার লোকজন সবাই তাকে ভুল বুঝেছিল। ভালো ছাত্র হিসেবে এলাকায় সব সময়ই নামডাক ছিল সোহেলের। কিন্তু এই কণার জন্য কী পরিমাণ অপদস্থ হতে হয়েছে তাকে। কিন্তু এখনো এই মেয়েটার জন্য তার বুকের মধ্যে কেমন করে ওঠে। এটা কি আদৌ ভালোবাসা, নাকি মোহমায়া কে জানে, এত বছরেও কাটেনি কেন!
লাবণ্য তখনো খাচ্ছিল, সোহেল গিয়ে কণার সামনে দাঁড়ায়। কণা হঠাৎ অপ্রস্তুত হয়ে যায়, ভূত দেখার মতো লাফিয়ে ওঠে। সোহেল খুব শান্ত স্বরে বলে, কেমন আছ কণা, চিনতে পেরেছ?
-হ্যাঁ পেরেছি, আপনি কেমন আছেন?
কণাকে দেখে মনে হলো, ও অনেক কিছু বলতে চায়, ওর দুই ঠোঁটভর্তি অনেক কথা আর চোখভর্তি আকুলতা। এর মধ্যে লাবণ্য এসে ডাক দিলে সোহেল কণার কাছ থেকে চলে আসে। আসার আগে কণাকে নাম্বারটা দিয়ে আসে।
লাবণ্যর সঙ্গে সোহেলের প্রেমের বিয়ে। প্রেম বলতে একতরফা প্রেম, লাবণ্যই সোহেলকে পছন্দ করেছে দারুণভাবে। সোহেল ছিল লাবণ্যর টিচার। লাবণ্যর বড় বোন সোহেলের ক্লাসমেট ছিল। সেই সুবাদেই সোহেলকে পড়ানোর জন্য রাজি হতে হয়েছে। তখন সে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে মেয়েদের আবেদনের সার্কুলার হয়েছে মাত্র, লাবণ্যর বোনের জোরাজুরিতেই ওকে বিভিন্ন রকমের ট্রেনিং দিচ্ছিল সোহেল। সোহেলের মা অবশ্য ভিন্নমত পোষণ করেন, ওনার ভাষ্যমতো লাবণ্যকে সোহেলের সঙ্গে বিয়ের প্ল্যানের কারণেই এই ট্রেনিংয়ের আয়োজন। এটা নিয়ে অবশ্য প্রথম প্রথম মায়ের সঙ্গে খুব ঝামেলা হতো সোহেলের। একদিন ক্যান্টনমেন্টের ভেতর দিয়ে রিকশা করে যাচ্ছিল দুজন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল তাদের মধ্যে। সোহেল লাবণ্যকে যতই মনোযোগী হতে বলছিল, লাবণ্য ততই হেঁয়ালি করছিল। একপর্যায়ে লাবণ্য বলেই বসল, ‘একজন মেধাবী আর্মি অফিসারের বউ হলে তো আর এত ট্রেনিং দরকারই নাই।’
সোহেল রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বিদায় দিয়ে রিকশা থেকে নেমে লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে বলল, ‘আসলে কী বলতে চাও তুমি লাবণ্য? খুলে বলো তো।’
লাবণ্য সামনে থেকে পেছনে গিয়ে দাঁড়ায় আর ঘাড়ের কাছে মুখ নিয়ে বলতে থাকে, ‘স্যার, আপনি কি কিছুই বোঝেন না, নাকি বুঝতে চান না।’
সেদিনই সোহেল সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে ওর বড় বোনকে দেখা করার জন্য আসতে বলে। তারপর সুখে-দুখে একসঙ্গে পেরিয়ে যায় তাদের এতগুলো বছর। কণার কাছ থেকে কষ্ট পাওয়ার পর থেকে সোহেল আর কখনোই কারও দিকে ফিরে তাকায়নি। সমাজে নিজেকে যতটুকু যোগ্য করে তোলা যায়, তার চেয়েও বেশি করেছে সে। খুব অল্প বয়সে সেনাবাহিনীর বড় কর্মকর্তা হয়েছে। বাড়ি-গাড়ি প্রভাব-প্রতিপত্তি কোনো কিছুরই কমতি নেই এখন তার।
লাবণ্য খুব ডমিনেটিং স্বভাবের মেয়ে। সবকিছুই তার মনমতো হতে হবে। সংসারে আর কারও মতের কোনো দাম নেই। সোহেল প্রথম প্রথম দ্বিমত করলেও এখন আর কিছুই বলে না। অহেতুক ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ কী। ও যে রকম হইহুল্লোড় জীবন চেয়েছিল, সে রকম কিছুই হয়নি তার। সোহেল প্রচণ্ড আমুদে একজন মানুষ। অন্যদিকে লাবণ্য চায় সব সময় নিরিবিলি আর একা থাকতে। তবে মেয়েটা হয়েছে বাপের মতো, সেটা নিয়েও ঝামেলা। লাবণ্য মেয়ের পেছনেও লেগে থাকে খুব, সারা দিন পড় পড়। মেয়েটাও হাঁপিয়ে উঠেছে। মাঝেমধ্যে দূরে পোস্টিং হলে লাবণ্যকে ছাড়াই সেখানে যায় সোহেল। সবকিছুতে এত নাক গলানো ভালো লাগে না তার। সব সময় নিজেকে বন্দী মনে হয়। একে তো নিয়মের চাকরি, তার ওপর যদি বাসায়ও এত নিয়ম মানতে হয়, তাহলে তো ঝামেলা। ওদেরকে ছেড়ে থাকলে একাকিত্ব পেয়ে বসে তাকে, যা অনেক কষ্টের, আর সঙ্গে নিয়ে থাকলে ঝগড়াঝাঁটি, কী করা উচিত, তা-ই বুঝতে পারে না। যদিও লাবণ্য পছন্দ করে সোহেলকে বিয়ে করেছে, তার পরও এই চাকরির সুযোগ-সুবিধা কোনোটাই সে নিতে চায় না বা জানেও না। এটা নিয়ে খুব আক্ষেপ সোহেলের মনে, কিন্তু কখনো সাহস করে কিছু বলে না। লাবণ্য কখনো সোহেলের পরিবারের সবার সঙ্গে খুব মিলেমিশেও থাকতে চায় না। কেমন যেন আলাদা আর একা থাকতে পছন্দ করে মেয়েটা।
সোহেল ভাবে জীবন এত অদ্ভুত হবে কেন, মানুষ যা চায় তা পায় না আর যা পায় তা ভুল করে পায়। সুখী হওয়াটা মনে হয় খুব কঠিন। এরই মধ্যে একদিন মোবাইলে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। নতুন জায়গায় পোস্টিংয়ে যাওয়ার দিন। সোহেল ফোন ধরেনি। তারপর থিতু হয়ে কল ব্যাক করে। সেদিন একা একা নদীর ধারে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিল।
ফোনটা ধরে হ্যালো বলতেই আওয়াজটা শুনে বুকের মধ্যে কেমন একটা ছ্যাত করে উঠল। এত পরিচিত আওয়াজ, কণা বলে উঠল :
-সোহেল ভাই, আমি কণা, চিনতে পারেননি?
-ও হ্যাঁ, কেমন আছ বলো? কত বছর পরে দেখা হলো সেদিন।
-ওটা আমার মামাতো ননদের বিয়ে ছিল।
-তোমার কয় ছেলেমেয়ে, বর কী করে?
-এক ছেলে এক মেয়ে আর বর ডাক্তার।
-তাহলে ভালোই আছ।
-হ্যাঁ, বেঁচে আছি।
-কণা, লাবণ্য ফোন দিয়েছে, পরে আবার তোমার সঙ্গে কথা বলব। লাবণ্যর সঙ্গে কথা শেষ করে সোহেল একা একা নদীর ধারে হাঁটে আর ভাবে, কণার জন্য কী অপমানিত হয়েই না তাকে এলাকা ছাড়তে হয়েছিল। কণার বাবা-ভাইয়েরা এলাকায় খুব দাপুটে ছিল। আর কণা ছিল এলাকায় নামকরা সুন্দরী। কণা স্কুল থেকে যাওয়া-আসার পথে দাঁড়িয়ে থাকত সোহেল তাকে একপলক দেখার জন্য। প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখে কণার হাতে দিত সোহেল। কণাও বিষয়টাতে খুব আনন্দ পেত। এভাবেই দিন যাচ্ছিল তাদের, দুজনের যোগাযোগ ক্রমশ বাড়ছিল।
সবই ঠিকঠক চলছিল, কিন্তু একদিন সোহেলের কয়েকজন বন্ধু মিলে কণার বান্ধবীকে ক্ষেপাচ্ছিল :
-রিতা ও রিতা, তুমি আমার মিতা।
ওর বান্ধবীর নাম ছিল রিতা। ওই রিতাই সব প্যাঁচ লাগিয়ে দেয়। ও কণার বাসায় গিয়ে বলার পরই থলের বিড়াল সব বেরিয়ে পড়ে।
একদিন বাসায় ফিরে দেখে বেশ কয়েকজন লোক বাইরের ঘরে বসা। পরে জানতে পারল, ওনারা সোহেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে এসেছিলেন। সোহেলের বাবা খুব খেপে গিয়ে সোহেলের গায়ে হাতও তুলেছিলেন সেদিন। সোহেলের গুডবয়, ভালো ছাত্র ইমেজ সেদিন ধুলোয় মিশে গিয়েছিল।
এইচএসসি পরীক্ষার পর সোহেল বাড়ি ছেড়ে আসে, তার পর থেকে বাড়িতে তার যোগাযোগও কমিয়ে দিয়েছিল সে। সোহেলের মনে কষ্ট ছিল, কণা তো কখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি সোহেলের জন্য। তাহলে তার কেন এত মন পোড়ে! তারপর লাবণ্য তার জীবনে আসার আগ পর্যন্ত আর কারও দিকে মুখ তুলেও তাকায়নি কোনো দিন। যাকে চেয়েছিল তাকে পাওয়া হয়নি, যে জীবনে এসেছে, সে তার মতো আসেনি। কেমন যেন অদ্ভুত অতৃপ্ত এক জীবন।
সোহেল লাবণ্যকে প্রতিদিন একটা কিছু লিখে এসএমএস করে।
‘ওহে অপ্সরী, তুমি বিনে কাটে না জীবন কতকাল তোমাতে আমার হয়নি অবগাহন।’
একদিন ভুলেভালে সেটা কণার কাছে চলে যায়, কণা ভীষণ আহ্লাদিত হয়ে এসএমএস করে :
‘ওহে দেবদূত, আমি চাতকের ন্যায় অপেক্ষমাণ খুব শিগগিরই একান্তে হবে তোমার আমার মিলন।’
সোহেল কণার এসএমএস পড়ে ঘাবড়ে যায়, পরে দেখে ওরই দোষ। ও-ই ভুল করে পাঠিয়ে ঝামেলাটা বাধিয়েছে। কণাকে সে যতই বোঝাতে চায়, কণা আরও উতলা হয়ে ওঠে, যা তার হওয়ার দরকার ছিল আজ থেকে তিরিশ বছর আগে।
তখন ছিল নির্বাক, কোনো উদ্যোগই নেয়নি সে সোহেলের ব্যাপারে।
প্রায়ই কণা ফোন দেয় সোহেলকে, কথা হয় দুজনের। এর মধ্যেই একদিন বাধে বিপত্তি, কণা না জানিয়ে চলে আসে সোহেলের কর্মস্থলের শহরে।
এসে ফোন দিয়ে জানায়, ‘আমি বাসস্ট্যান্ডে, আমাকে নিয়ে চলেন।’
সাতসকালে এমন ফোন পেয়ে মহা বিরক্ত হয়ে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে ওকে আনতে যায় সে। শহর থেকে একটু দূরে সোহেলের এক বন্ধুর খালি বাড়িতে গিয়ে ওঠে দুজন।
কণা খুব ছেলেমানুষি করতে থাকে সেদিন। কী যেন এক অস্থিরতার মধ্যে মেয়েটা ডুবে ছিল সেদিন। সেই আগের কণা আর এখনকার কণাতে বড়ই অমিল। সোহেল অনুভব করে, যে মেয়েটাকে পাওয়ার জন্য সে সারা জীবন মনের মধ্যে কষ্ট লুকিয়ে রেখেছিল, তার জন্য আগের মতো সেই টান আর অনুভূত হচ্ছে না। কিন্তু কণার মধ্যে ভীষণ বেপরোয়া একটা ভাব ছিল। কেমন যেন কোনো কিছু হারানোর ভয় তার নেই। সারা দিন দুজনে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে, এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করে, নৌকা চড়ে, মফস্বলের মার্কেটে ঘুরে কেনাকাটা করে।
সোহেলের কাছে রেশমি চুড়ি কেনার বায়না ধরলে সোহেল কিনেও দেয়।
ফেরার সময় হয় যার যার জায়গায়। দরজায় টোকা দেয় সোহেল।
-কণা, রেডি হয়েছ, চলো তোমাকে বাসে তুলে দিই, আমাকেও ক্যান্টনমেন্টে ফিরতে হবে।
-হুম আমি রেডি, ভেতরে আসেন।
-দরজা লাগাচ্ছ কেন, কণা?
অস্থির কণাকে সামলাতে গিয়ে যা না ঘটার তা-ই ঘটে যায় দুজনের মাঝে। যা কিছু আরও অনেক বছর আগে পাওয়ার কথা ছিল, তিরিশ বছরের ব্যবধানে তা আর পেতে চায় না সোহেল।
কণার একটাই কথা, আমি আপনার কাছে ফিরে আসতে চাই, আমি আর ওই সংসারে থাকতে চাই না। আমাকে একটা লাল শাড়ি কিনে দেন আপনি, আমি সেটা পরে আপনার কাছে চলে আসি।
কোনোমতে কণাকে বাসে তুলে দিয়ে কর্মস্থলে ফিরে আসে সোহেল। প্রচণ্ড অপরাধবোধে কাটে তার সময়, কী উত্তর দেবে সে লাবণ্যকে! সোহেল বুঝতে পারে, কণা তার সংসারে সুখী বা সন্তুষ্ট ছিল না, জীবনে অনেক অপ্রাপ্তি ছিল তার, জীবনের এই ক্ষণে এসে সম্ভব অসম্ভব সবই পেতে চায় সে সোহেলের কাছ থেকে।
সবকিছু রিপোর্ট হয়ে যায় সোহেলের অফিসে, লাবণ্যও জেনে যায় সবকিছু। সোহেলের সাজানো সহজ সংসার কঠিন হয়ে যায় কণার কারণে।
সোহেল ভাবে, কণা কি তার জীবনে শনির দশা নিয়ে এসেছে? একটা সময় ওকে পেতে গিয়ে বাড়িছাড়া হতে হয়েছিল তার। আর এখন সংসার-চাকরি সব এলোমেলো হতে যাচ্ছে। এর পর থেকে কণার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় সোহেল।
লাবণ্য বেঁকে বসে আছে, ওকে কোনোভাবেই ঠিক করা যাচ্ছে না। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে তার। অযথাই কিছু উটকো জঞ্জাল এসেছে জীবনে। লাবণ্যকে আনতে সোহেল তার বাবার বাড়ি যায়।
-আমাকে ক্ষমা করো লাবণ্য, আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি।
-তুমি এখনো ওই মেয়েকে চাও, সোহেল।
-না, আমি এখন চাই না, আমি চাইতাম সেই সময় সেই কণাকে। সেই কণা আর এই কণা তো এক না লাবণ্য।
-তুমি আমাকে ঠকিয়েছ, সোহেল।
-না, আমি ঠকাইনি, আমি পরিস্থিতির শিকার, আমাকে ক্ষমা করো, লাবণ্য। কণা কিন্তু মানসিকভাবে খুব সুস্থ নয় লাবণ্য। তিরিশ বছর আগের ওই শক সে খুব ভালোভাবে নিতে পারেনি। কিন্তু যেটা ওর পরিবারের কেউ বুঝতেই পারেনি। ওর সঙ্গে দেখা না হলে এগুলো আমি কিছুই বুঝতে পারতাম না, লাবণ্য। আর ওর বিরুদ্ধে আমার অভিযোগও পুষে রাখতাম সারা জীবন।
কণার ফোন নাম্বার ব্লক করে রাখে সোহেল, অন্য নাম্বার থেকে কল করলেও আর ধরে না। এদিক-সেদিক থেকে শুনতে পায়, ও নাকি এখন অস্বাভাবিক আচরণ করে। সারা দিন একা একা সোহেলের সঙ্গে কথা বলে। ওর জন্য অপেক্ষা করে, রেডি হয়ে বসে থাকে সোহেলকে নিয়ে একসঙ্গে বেড়াতে যাবে বলে। ডাক্তার বলেছে, ওর প্রচণ্ড হেলুসিনেশন হচ্ছে, মানসিকভাবে আঘাত পাওয়াতেই এ রকম হয়েছে।
এর মধ্যে একদিন অপরিচিত এক নাম্বার থেকে সোহেল একটা এসএমএস পায়, সেখানে লেখা ছিল :
‘কাল ভোরে আমার সাথে একটু দেখা করতে আসবেন প্লিজ, আমি চলে যাচ্ছি, আর কোনো দিন আপনাকে বিরক্ত করব না।’
ঘুম থেকে উঠেই এ রকম একটা টেক্সট দেখে লাবণ্যকে দেখায় সোহেল, লাবণ্য নিজে থেকে যেতে বলে তাকে। ফজরের নামাজ পড়ে কণার বাসার দিকে রওনা হয় সোহেল। ওরা ডাক্তারদের কোয়ার্টারে থাকে। এত ভোরে কোয়ার্টারের মেইন গেট তো খোলা থাকার কথা নয়। গাড়ি নিয়ে গেট দিয়ে ঢুকতেই দেখে বাসার নিচে অনেক মানুষের জটলা। ভিড় ঠেলে একটু সামনে এগোতেই দেখতে পায়, কণা লাল শাড়ি পরে শুয়ে আছে মাটিতে। সূর্যটা আজ ভীষণ লাল আভা ছড়াচ্ছে চারপাশে, কৃষ্ণচূড়া ফুলে ফুলে ভরে গেছে কোয়ার্টারের পুরো মাঠ। অসহ্য রকমের লাল সবকিছু আজ, মেহেদি রঙে রাঙা দু’হাত ভর্তি করা লাল চুড়ি, রক্তিম হয়ে আছে সবকিছু তার। সোহেল দাঁড়িয়ে থাকে নিরুত্তর, অসাড় হয়ে আছে তার পুরো শরীর। বারবার ভাবছিল, কেন দেখা হয়েছিল কণার সঙ্গে আবার, কী দরকার ছিল দেখা হওয়ার। যা কিছু কৈশোরে পাওয়ার ছিল, তা কৈশোরেই বেশি মানাত, অসময়ে আবার কেন তা সামনে এল।
মনে হচ্ছিল, কণা যেন তাকে বলছে,
‘হায় মাঝে হলো ছাড়াছাড়ি,
গেলেম কে কোথায়
আবার দেখা যদি হলো সখা
প্রাণের মাঝে আয়।’
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078