তুলসীতে তুলকালাম

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২৫, ১৪:২৭ , অনলাইন ভার্সন
ঢাকা-দিল্লি দুইখানেই অনেকটা আকস্মিক প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড। বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতন ও হত্যা এবং দেশে ইসলামি সন্ত্রাসীদের হুমকি রয়েছে বলে অভিযোগ করে পরিস্থিতি গোলমেলে করে দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সাড়া জাগানো সফর, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসকে নিয়ে কক্সবাজারে লাখো রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার, ইউনূসের চীন সফরের সময় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে আসন্ন বিশেষ বৈঠক, ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ ইত্যাদি মিলিয়ে গোলমেলে অবস্থার মাঝে ভারত হালে কিছুটা পানি পেয়েছে তুলসীর ভাষা ও মতিগতিতে।
মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা তুলসী গ্যাবার্ড ২০২৫ সালের শুরু থেকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের অষ্টম পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একসময় হাওয়াই রাজ্যে সর্বকনিষ্ঠ আইনপ্রণেতা ছিলেন। ডেমোক্র্যাট দলে ২০০২ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ২০২২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিনি স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে কাজ করেছেন। পরে রিপাবলিকান পার্টিতে যোগ দেন ২০২৪ সালে। তিন দিনের ভারত সফরে এসে গ্যাবার্ড সে দেশের চ্যানেল এনডিটিভিকে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন, যা ১৭ মার্চ ২০২৫-এ প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ‘গভীর উদ্বিগ্ন’ বলে গ্যাবার্ড সাক্ষাৎকারটিতে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদী’রা নানা দেশে ‘ইসলামি খেলাফতে’র আদর্শে শাসনক্ষমতা হাতে নিতে চায় কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার প্রশাসন এই আদর্শকে পরাস্ত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। পাশাপাশি বার্তা সংস্থা এএনআইকে দেওয়া দ্বিতীয় আরেকটি সাক্ষাৎকারেও তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, ইসলামি সন্ত্রাসবাদের বিপদ বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করছে।
তাৎক্ষণিক তুলসীর এসব কথার কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বাংলাদেশ। তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনো প্রমাণ বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে নয় বলে বিবৃতি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ঝাঁজালো ভাষায় বলা হয়েছে, তুলসীর বিবৃতি বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস। এটি একটি দেশকে অন্যায় ও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বরাবরই অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণভাবে ধর্ম পালনের ঐতিহ্যের জন্য সুপরিচিত। বাংলাদেশ বিশ্বের আরও অন্যান্য দেশের মতো চরমপন্থার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিবৃতিতে বলা হয়, রাজনৈতিক নেতা ও সুপরিচিত ব্যক্তিদের সংবেদনশীল বিষয়গুলো সম্পর্কে বক্তব্য দেওয়ার আগে প্রকৃত তথ্য যাচাই করা উচিত। তাদের এমন কোনো বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়, যা ক্ষতিকর ধারণাকে শক্তিশালী করে, ভয় উসকে দেয় এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়ায়।
কাকতালীয়ভাবে তুলসী গ্যাবার্ডের ভারতে অবস্থানকালেই দেশটিতে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের বর্বরতার নতুন নজির। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মাজার অপসারণের দাবিতে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়েছে। জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা। আওরঙ্গজেবকে দাসত্বের প্রতীক অত্যাচারী শাসক উল্লেখ করে অবিলম্বে মাজার অপসারণের দাবিতে সোমবার বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল। নাগপুরের খুলদাবাদে স্থানীয় মুসলিমরা মাজার ঘিরে অবস্থান নিলে আওরঙ্গজেবের প্রতীকী কবর আগুনে পোড়ায় কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। এতে উত্তেজক পরিস্থিতি তৈরি হলে পুলিশ টিয়ারগ্যাস আর ফাঁকা গুলি ছুড়লে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আর যানবাহনে লাগানো আগুন নেভাতে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের সাতটি গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
প্রয়োজনে বাবরি মসজিদের মতো মাজার গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন দল দুটির শীর্ষ নেতারা। এদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তোলা মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান তুলসী দিল্লিতে বৈঠক করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। কথা হয়েছে সীমান্ত নিরাপত্তা সন্ত্রাস দমন, সাইবার নিরাপত্তা, নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সুরক্ষা অংশীদারি নিয়ে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ছাড়াও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল আর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন তুলসী। বাংলাদেশে জাতিসংঘ মহাসচিবের হাই-প্রোফাইল সফরের পর প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের চীন সফরের প্রস্তুতিকালে শুরু হলো এ ক্যারিকেচার। এ অঞ্চলের অনেক কিছু নির্ভর করছে তার এ চীন সফরের ওপর।
চীন সফর অনেক সমীকরণ বদলে দিতে পারে বলে নানা তথ্য ও ধারণা নিয়ে কথা চাউর হয়েছে। ড. ইউনূসের গত সাত মাসের মধ্যে সবচেয়ে ভাইটাল অ্যাসাইনমেন্ট মনে করা হচ্ছে চীন সফরকে। অ্যারেঞ্জমেন্টও বিশাল। কেবল তাকে নেওয়ার জন্য ২৬ মার্চ চীন স্পেশাল বিমান পাঠাবে, যা চীন কেবল গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের জন্যই পাঠায়। তারপর চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেওয়া হবে ইউনূসকে। সেখানে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে ভাষণও রাখবেন তিনি। চীন সফরে মাঝামাঝি ফলাফলের রেকর্ড নেই। হয় ভালো, নয় মন্দ। এর তাজা উদাহরণ বিতাড়িত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফর। ভেতরের ঘটনা বুঝতে পেরে চার দিনের নির্ধারিত সফরের এক দিন আগেই প্রাণে বাঁচার মতো দ্রুত তিনি ছুটে আসেন বাংলাদেশে। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি। ক্ষমতা ছেড়ে দ্রুত তাকে পালাতে হয় ভারতে।
২০০৫ সালে কাছাকাছি ঝামেলায় পড়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়াও। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’সহ একাধিক পক্ষের আয়োজনে ওই সময় সারা দেশে একই সময়ে চালানো হয়েছিল সিরিজ বোমা হামলা। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। গোটা বিশ্বের গণমাধ্যমে শিরোনাম হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। এর ফের বুঝে খালেদা জিয়া চীন সফর অসমাপ্ত রেখে দ্রুত দেশে ফিরতে বাধ্য হন। এবারের প্রেক্ষিত ভিন্ন। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস যেন চীন সফরেই না যান, সেই ছক ও ঘুঁটি চলছে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে গ্রুপিং, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকারের সঙ্গে সরকারপ্রধান ইউনূসের বিরোধ ইত্যাদি গুজব ছড়ানোর পেছনে রয়েছে নানা হাতের কারসাজি। কারণ, তার চীন সফর সফল হলে অপূরণীয় সর্বনাশের শঙ্কায় ভুগছে ভারতসহ দেশি-বিদেশি কয়েকটি শক্তি। ড. ইউনূসের চার দিনের সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ হাই-প্রোফাইলদের সঙ্গে বৈঠকই নয়, এ অঞ্চলের অর্থনীতিসহ ভূ-রাজনীতির এত দিনের হাল বদলে যাওয়ার গোড়াপত্তন হবে। নোবেল লরিয়েট ড. ইউনূস পৌঁছে যাবেন গ্লোবাল প্লেয়ারে। ক্রিয়াশীল রয়েছে এর বিপরীত কিছু ঘটানোর ঘটক-অনুঘটকও।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078