নিরাপত্তা বিবেচনায় কর্মসূচি  স্থগিত বাম সংগঠনগুলোর

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৪:৪৩ , অনলাইন ভার্সন
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা এবং দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা বিবেচনায় পূর্ব-ঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি স্থগিত করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। আজ ১৫ মার্চ (শনিবার) দুপুরে শহীদ মিনারের পাদদেশে আয়োজিত একটি সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। 
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দীন শুভ বলেন, পূর্ব-ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এলেও আমাদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা বিবেচনায় আজকের গণমিছিল কর্মসূচিটি স্থগিত ঘোষণা করছি। নিশ্চয়ই আমরা শঙ্কিত নই; নারীদের নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের এ লড়াই আমরা চালিয়ে যাব।
 
বাম ঘরানার আটটি সংগঠনের পক্ষ থেকে সারা দেশে হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের প্রতিবাদে ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে আজ বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে গণ মিছিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে শহীদ মিনার থেকে তাদের সরে যেতে আল্টিমেটাম দিয়েছিল ইনকিলাব মঞ্চ। ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধায় শহীদ মিনারের দিকে যেতে না পারলেও নিজেদের কর্মসূচি স্থগিত করে বাম সংগঠনগুলো। 
 
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, আমাদের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করা হচ্ছে। গতকাল থেকে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে বলা হয়েছে, আমরা যেন এই কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত করি, পালন না করি।মামলার ভয় দেখিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখা যাবে না। আমাদের আজকের সমাবেশ থেকে দাবি জানাই, অবিলম্বে জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ আমল থেকে এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পর্যন্ত যতগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। আমরা আগামী দিনে আমাদের লড়াই-সংগ্রাম আরো দুর্বার গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাব।

তিনি বলেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল শহীদ মিনার থেকে টিএসসি পর্যন্ত। সেই গণ মিছিল স্থগিত করে এখানেই সমাপ্ত ঘোষণা করছি।

সমাবেশের শুরুতে অবশ্য সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রায়হান উদ্দিন বলেছিলেন, তারা গণ মিছিল করবেন। তিনি বলেন, সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, আছিয়াসহ সকল হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে আজ আমরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে গণ মিছিল করছি।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন জুলাই-আগষ্ট মাসজুড়ে এক রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে বিতাড়ন করা হয়েছে। বৈষম্যহীন সমাজের আকাঙ্ক্ষায় লাখো মানুষ এই গণ আন্দোলনে সামিল হয়েছিল। মানুষ আশা করেছিল হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে মানুষ একটা নিরাপদ সমাজ পাবে, পাবে স্বস্তির জীবন। কিন্তু গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা হওয়ার প্রত্যাশা থাকলেও বারবার আমাদের আশাভঙ্গ ঘটেছে। সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। অভ্যুত্থানের পরপরই বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। মব সন্ত্রাসের নামে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা, পাওনা টাকার দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের হত্যা, রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা, চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী হত্যাসহ কোনো অপরাধের বিচার করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমর্থ হয় নাই। সরকারের ব্যর্থতা এবং বিচারহীনতার দীর্ঘ ইতিহাস অপরাধীদের অপরাধ সংঘটিত করতে উৎসাহ যুগিয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ, নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড বন্ধে সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। উল্টো স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নারী নিপীড়নকারী মব সন্ত্রাসীদের পরোক্ষ সমর্থন অপরাধীদের মনোবল দৃঢ় করেছে।

সমাবেশে বলা হয়, আছিয়ার মৃত্যুতে সারা দেশ শোকাহত। কিন্তু আছিয়ার মতো ঘটনা বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। বরগুনায় কিশোরী ধর্ষণের পর বিচার চাওয়ায় কিশোরীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। সরকার ধর্ষকদের বিচার করতে না পারলেও, ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীদের উপর খড়্‌গহস্ত হয়েছে। পুলিশ দিয়ে হামলা করে পরবর্তীতে তাদের নামেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্রমাগত অভ্যুত্থানের চেতনা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। সকল নাগরিকের জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।

সমাবেশে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করেন রায়হান উদ্দিন। দাবিগুলো হচ্ছে— 
• আছিয়াসহ সকল হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার করতে হবে।
• ‘ব্যর্থ’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে অপসারণ করতে হবে।
• জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।
• মসজিদ, মন্দির, মাজারে হামলাকারী মব সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে।
• চট্টগ্রাম কোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ, যৌথ বাহিনী দ্বারা শ্রমিক হত্যার বিচার করতে হবে।
• সাগর-রুনি, তনু, আফসানা, মুনিয়াসহ পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ আমলে সংগঠিত হত্যার বিচার করতে হবে।
• হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা, লুটপাটের বিচার করতে হবে।

সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (বিসিএল), পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম, বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতি, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (টিইউসি) প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078