সেকেন্ডে ফার্স্টের ভর►থার্ডের চক্কর►আ.লীগের অপেক্ষা

বিএনপির ঘাড়ে এনসিপির নিঃশ্বাস

প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২৫, ১৭:৪২ , অনলাইন ভার্সন
শত চেষ্টায় চাইলেও পরিশুদ্ধ হয়ে সুস্থ রাজনীতিতে ফিরে আসার ন্যূনতম সম্ভাবনা আপাতত নেই আওয়ামী লীগের। ক্ষমতাকালের উন্মাদনা এবং পলায়ন-পরবর্তী বাচন-বচন ও আচরণে নিজের এবং দলের সর্বনাশ নিজেই করেছেন শেখ হাসিনা। প্রতিশোধপরায়ণ হাসিনার হাতে আওয়ামী লীগের দূষণের মধ্য দিয়ে বিএনপির জন্য পরম আশীর্বাদ। কেবলই এগিয়ে যাওয়ার সোপান দলটির। কিন্তু ঘটনার পরম্পরায় বিএনপির সেই অভিযাত্রায় মহাছেদ। দিন যত গড়াচ্ছে, বিএনপির যন্ত্রণার বোঝা তত বাড়ছে। ধারণাতীত ও অবিশ্বাস্যভাবে তাদের শক্ত প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে চব্বিশের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের ফ্রন্টলাইনারদের গড়া দল সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে চলা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ব্যতিক্রমী আয়োজনে আত্মপ্রকাশ ঘোষণার পর সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ও রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেও সেকেন্ড রিপাবলিক প্রতিষ্ঠায় অটল থাকার কথা জানিয়েছেন দলটির নেতারা। রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নতুন এ দলের আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপির প্রথম কাজ হবে তৃণমূলে দলীয় কার্যক্রম বিস্তৃত করা। পুরোনো সংবিধান রেখে নতুন দেশ গড়া সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন প্রজাতন্ত্র গড়তে প্রয়োজন নতুন সংবিধান ও গণপরিষদ নির্বাচন। শর্ত পূরণ করে নিবন্ধনের জন্য শিগগিরই নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করবেন তারা। জুলাই গণহত্যার বিচারের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ফয়সালা করার সিদ্ধান্ত তাদের।
এত দিন থার্ড ফোর্স ভাবা হলেও ক্রমেই এই সেকেন্ড রিপাবলিকের অঙ্গীকার ঘোষণাকারীরা ফার্স্ট ফোর্স হতে বসেছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসসহ কয়েকজন উপদেষ্টার সরাসরি আশীর্বাদ তাদের দিকে। তবে ফাউ বা মাগনায় নয়; এনজিও স্টাইলে তাদেরকে কঠোর শ্রমে-ঘামে তৃণমূল থেকে শক্তিমান হওয়ার পথ বাতলে দেওয়া হয়েছে। এর ফাঁকে থার্ড ফোর্সও ঘুরছে। তবে কারা সেই থার্ড বা তৃতীয় শক্তি? নিশানা স্পষ্ট নয়। থার্ড ঘুরছে সবার ওপর, সবার সঙ্গে। তারা নিশ্চিত একদিন এ দেশের সব অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ কুশাসনের ফয়সালা হবে, দায়িত্বহীনতার বিচার হবে, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে, দুর্নীতিবাজ এবং অন্যান্য গণশত্রু ও সামাজিক অপরাধীদের শাস্তি হবে। কারণ এ ছাড়া ফার্স্ট-সেকেন্ড বা থার্ড কারও পক্ষেই এ দেশকে সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। সেখানে অঘোষিতভাবে একটি সংস্কার আরোপ হবে। ‘সংস্কার তো এখনো শুরুই হয়নি’-ড. ইউনূসের এমন একটি ইনডোর এক্সক্লুসিভ মন্তব্য বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব জেনেছে। যা ভয় না জাগিয়ে পারে না নিশ্চিত ক্ষমতামুখী কোনো দলকে।
দেশের রাজনীতি যে ক্রমশ একটা নতুন স্ল্যাবের দিকে যাচ্ছে, তা অনেকে টেরই পাচ্ছেন না, মেনে নেওয়া তো পরের ব্যাপার। সবকিছুকে বাইনারি হিসেবে মাপজোক করা হচ্ছে। হয় আপনি ইউনূস, নয় আপনি হাসিনা; মাঝামাঝি কিছু রাখা হচ্ছে না। জুলাইয়ের রক্তস্নাত আন্দোলন দুমড়ে-মুচড়ে অনেক কিছুকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে, তা বুঝতে চতুর রাজনীতিকদের অনেকেরও দেরি হয়ে গেছে। বিএনপির চেয়ে জামায়াত তা আগে বুঝেছে। তরুণতুর্কি ছাত্রদের তা আরও আগেই বুঝিয়ে-পড়িয়ে রাস্তায় নামানো হয়েছে। সেই পথরেখাতেই চলছে এনসিপি। জান বাজি রেখে এগোচ্ছে তারা। চেষ্টা করছে নতুনত্ব আনতে। আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে বক্তারা বক্তব্যের সময় সভাপতি, প্রধান অতিথি ও মঞ্চে বসা একঝাঁক নেতার নাম জনে জনে সম্বোধন করে সময় নষ্ট করেননি। অ্যাড্রেস করেছেন ছাত্রজনতা ও অতিথিদের। বক্তার বক্তব্যের ডায়াসে এক ঝাঁক লাউডস্পিকার ও বিভিন্ন চ্যানেলের ট্যাপস্পিকার ছিল না, যা গতানুগতিক পলিটিক্যাল ভিভিআইপি এরোস্ট্রোক্রেসিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিমিপ্লসিটির নিউ ডাইমেনশন এনেছে। হাইফাই চেয়ারে স্টেজ সাজায়নি। মঞ্চে বসে মওলানা ভাসানীর ঐতিহ্য জানান দিয়েছে।
সুন্দর, সুবর্ণ, লাবণ্যে অপূর্বতে অনন্য দেখানো তারুণ্যের স্পষ্ট বার্তা শেখ হাসিনাসহ ফ্যাসিস্টদের বিচারের আগে যেন কেউ নির্বাচনের কথা মুখে না আনে। সেই সঙ্গে সেকেন্ড রিপাবলিক, গণপরিষদ, সংবিধান সংশোধনে কোনো ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা। এখন নানা কথা বললেও দিন শেষে ডিসেম্বরে বা দু-তিন মাস পর সবারই টার্গেট নির্বাচন। কিন্তু এর আগ পর্যন্ত সময়টায় কি না হবে, এ নিয়ে নানা ভাবনা রাজনৈতিক মহলে। বিএনপির প্রতিক্রিয়া মারাত্মক ঝাঁজালো। তারুণ্যের জাতীয় নাগরিক পার্টিÑএনসিপির সেকেন্ড রিপাবলিকের ধারণা নিয়ে তীব্র সমালোচনা বিএনপি নেতাদের। সঙ্গে তাচ্ছিল্যও। এটা (সেকেন্ড রিপাবলিক) কীÑএমন প্রশ্ন ছুড়ে তারা বলেছেন, আলেম-ওলামা ধরনের কিছু লোক নাহিদ-হাসনাত-সারজিসদের বাতাস দিচ্ছেন। প্রথম রিপাবলিক কি অসুস্থ হয়ে গেছে যে আমাদের সেকেন্ড রিপাবলিক দরকার? -এমন প্রশ্নও বিএনপি নেতাদের। সেকেন্ড রিপাবলিকের দাবিকে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার অপকৌশল হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা।
এমন মানসিকতা ও মনোজাগতিক চিন্তায় বাহাত্তরের সংবিধান রক্ষার দাবিতে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী মহল ভেতরে ভেতরে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে। জুলাই ঘোষণাপত্র বাদ দিয়ে ৩১ দফা নিয়ে বিএনপি এগোতে চায়, এই ৩১ দফা জুলাই বিপ্লবের আগে দেওয়ার ফলে তাতে জুলাই বিপ্লবের গণ-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হওয়ার সুযোগই কম। বিএনপির ৩১ দফায় রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মাঝে পাওয়ার শেয়ারের প্রস্তাব থাকলেও সংবিধানের মেইন পাওয়ার ডায়নামিক্স এবং ভাবাদর্শ একই রেখে দায়সারাভাবে সংস্কারের কথা বলা আছে। ২৪ এর জুলাই বিপ্লব হয়েছে সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদ ও কলোনিয়াল আধিপত্যের বিরুদ্ধে। ৩১ দফায় সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদ এবং ইন্ডিয়ার হেজেমনিক আগ্রাসন দূর করার স্পষ্টতা নেই। বিএনপির ৩১ দফা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আগে দেওয়ায় এটা গণ-অভ্যুত্থানের সব পক্ষের দফা নয়। ২০২৪ এর জানুয়ারির ইলেকশনের আগে আন্দোলন করার সময় ২০২৩ এর জুলাইয়ের ১৩ তারিখে যেই ৩১ দফা দেওয়া হয়, তা ছিল পুরোনো রাজনৈতিক কাঠামোর ভেতর কিছু সংস্কার করে দায় সারার দাবি। এসব নিয়ে ভেতরে ভেতরে তুষের আগুন জ্বলছে। তরুণদের মধ্যে সেকেন্ড রিপাবলিক প্রশ্নে ফ্রান্সের দৃষ্টান্ত ঘুরছে। ফ্রান্সে এখন চলছে পঞ্চম রিপাবলিক।
জার্মানির থার্ড রাইখ বা ভলমার রিপাবলিকও ইতিহাসের অংশ। ফ্রান্সে ১৮৪৮ সালের ৪ নভেম্বর একটি ‘গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র’ সৃষ্টি হয়। জনগণের সরাসরি ভোটে সংসদ এবং ক্ষমতার পৃথককরণ ঘোষণা করে নতুন সংবিধান জারি করা হয়। নতুন সংবিধানের অধীনে কার্যনির্বাহী ক্ষমতা রাষ্ট্রপতিকে অর্পণ করা হয়, যিনি সরাসরি জনগণের ভোটে চার বছরের জন্য নির্বাচিত হন। তিনি পুনর্নির্বাচনের যোগ্য ছিলেন না। তিনি তার মন্ত্রীদের বেছে নেবেন, যারা তার মতো বিধানসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। এনসিপি সেই তথ্য দিতে গিয়ে টেনে আনছে আরও নানা কথা। সেকেন্ড রিপাবলিক বলতে তারা বোঝাতে চায় যেখানে কেউ চাঁদাবাজি করতে পারবে না, চাইলেও স্বৈরাচার হতে পারবে না, চাইলেও কমিশন খেতে পারবে না, পরিবারতন্ত্র চর্চা করবে না। এসব কথা সহ্য করা বিএনপির জন্য কঠিন। জামায়াতের জন্য তৃপ্তির। আর বিতাড়িত আওয়ামী লীগের জন্য ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার। বিএনপির গত কয়েক মাসের নীরব প্রাপ্তি এনসিপি, জামায়াত, আওয়ামী লীগ সবার জন্যই হিংসার। তারা মনে করে, ড. ইউনূস সরকার থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক জিয়ার বিভিন্ন মামলা থেকে অব্যাহতি, শীর্ষ থেকে তৃণমূলে বহু নেতার কারামুক্তি, সালাহউদ্দিন আহমেদের দেশে ফিরতি, চট্টগ্রামের মেয়র, অ্যাটর্নি জেনারেল, বেশির ভাগ সরকারি প্রসিকিউটর, সচিব, সিনিয়র সচিব অর্থাৎ আমলাদের প্রায় ৮০% এখন বিএনপির। এই সরকার আসার পরে এসব নিয়োগ হয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতের নিবন্ধন, প্রতীক সবকিছু এখনো ঝুলে আছে, এমনকি তাদের এক নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো জেলখানায়। ছাত্ররা দৃশ্যত ফ্রন্টে বা আলোচনায় থাকলেও তাদের মৌলিক দাবিগুলো পূরণ হয়নি। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা আদায় করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার চাতুরীর সহযোগী জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করার দাবি মার খাইয়ে দিয়েছে বিএনপি। ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিয়োগকৃত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বরখাস্ত করার দাবিও ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব যন্ত্রণায় ভুগতে ভুগতে চব্বিশ বিপ্লবের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে সমূহ বিপদ আঁচ করছেন। তাই নিজেদের শক্ত অবস্থান নিশ্চিতে অবিরাম সচেষ্ট তারা। মধ্যপন্থায় মধ্যবিত্তের দল হয়ে প্রথাগত রাজনীতির পরিবর্তন আনতে না পারলে নির্ঘাত পতিত আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার মন্ত্রে উজ্জীবিত বিএনপি উভয় দলের কমন শত্রু হবে তারা।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078