
পূর্বের খেতাবপ্রাপ্ত মসজিদের শহর ঢাকা ইদানীং বিভিন্ন সংগঠন ও কলকারখানার শ্রমিক-কর্মচারী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনবরত আন্দোলন ও বিক্ষোভের শহরে পরিণত হয়েছে। কথায় কথায় যৌক্তিক-অযৌক্তিক নানান ইস্যু ও দাবিদাওয়া নিয়ে লাঠিবাজি করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠন আন্দোলন ও বিক্ষোভে রাজধানী ঢাকার রাজপথ অবরোধের মাধ্যমে পথযাত্রী ও যানবাহন চলাচল বিঘ্ন ঘটিয়ে জনদুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে এবং সরকারপ্রধানের অফিস ও সচিবালয় অবরোধ করে নৈরাজ্য সৃষ্টি ও সরকারি কাজকর্ম সুষ্ঠু পরিচালনায় অসুবিধার সৃষ্টি করছে। অনেক সময় শান্তিপূর্ণ সমাবেশের পরিবর্তে বিশৃঙ্খলার আশ্রয় নিয়ে যানবাহন ভাঙচুর ও সরকারি সম্পদ বিনষ্ট করে ক্ষতি সাধন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। দাবিদাওয়ার আন্দোলন মানে কি জনদুর্ভোগ ও সরকারি সম্পদ বিনষ্ট করা? চাকরির বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে জনগণের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা দেশকে দুঃশাসনমুক্ত, স্বৈরাচারমুক্ত করেছে। দেশবাসী এ জন্য তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এখন স্বৈরাচারমুক্ত গণতান্ত্রিক সরকারের শাসনের সময় শিক্ষার্থীদের প্রধান কাজ পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে ছোটখাটো ইস্যু নিয়ে অনবরত আন্দোলন গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। রাজপথ অবরোধ না করে এবং পথচারী ও যানবহন চলাচলের সুবিধা রেখে প্ল্যাকার্ডে লিখিত দাবিদাওয়া শো করে সুশৃঙ্খলভাবে নীরবে পথ চলে আন্দোলন করা যায়, যা অন্যান্য সভ্য দেশে করা হয়ে থাকে।
বিগত স্বৈরাচারী সরকারের ১৫ বছরের অধিককাল দুঃশাসন ও অপকর্মে রাষ্ট্রের কাঠামোর আর্থিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ক্ষয়ক্ষতি ও দুরবস্থা, এসবের যথাসম্ভব সংস্কার সাধন ও দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকার যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন রাজধানী ঢাকার রাজপথে এ ধরনের আন্দোলন কাম্য হতে পারে না। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের অপকর্মে বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনে ধৈর্য ও সহিংসতা অবলম্বনে সবার সহযোগিতাই এখন অতীব জরুরি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশবাসী সবার এই মন-মানসিকতা ও সচেতনতা এ সময়ের দাবি। দাবিদাওয়ার আন্দোলন গণতান্ত্রিক অধিকার স্বীকার করেই একজন দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, কোনো দাবি দেওয়ার ব্যাপারে তড়িৎ আন্দোলনে না গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে স্মারকলিপির মাধ্যমে সরকারের কাছে আরজি পেশ করা উচিত। যৌক্তিক দাবি হলে সরকার অবশ্যই সমাধান করে দেবে। বিভিন্ন চাকরিদাতা কর্তৃপক্ষ শ্রমিক কর্মচারীর বেতন-ভাতা এবং চাকরির প্রাপ্য সুবিধাদি নিয়মিত প্রদান করলে আন্দোলন হওয়ার কথা নয়। অপরদিকে সরকারেরও দায়ভার ভিত্তিতে লক্ষ রাখা উচিত, যাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি যথাসম্ভব সর্বাঙ্গীণ উন্নত মানসম্পন্নে গড়ে ওঠে, কোনোরূপ ঘাটতি না থাকে এবং কোনোরূপ দাবিদাওয়ার আন্দোলনের তেমন সুযোগ না থাকে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, জুলাই অভ্যুত্থানের আহতদের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ছেড়ে রাজপথে আন্দোলনে আসতে হলো সম্ভবত প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় অন্তর্বর্তী সরকারের কারও দায়িত্ব পালনে মনোযোগিতার অভাবে। যথাযথ চিকিৎসার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সচেতন হলে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা হয়তো ঘটত না। এ প্রসঙ্গে বলতে হবে, দেশ পরিচালনায় শুধু গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হলে চলবে না, সুশাসিতও হতে হবে। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত সুশাসন। এমনভাবে দেশ পরিচালিত হতে হবে, যাতে সর্বক্ষেত্রে জনআকাক্সক্ষার সর্বোতভাবে নিখুঁত প্রতিফলন ঘটে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের যারা জনগণের সরকার হিসেবে ক্ষমতায় থাকেন, তারা জবাবদিহি স্মরণে সন্তোষজনকভাবে দেশ পরিচালনা করবেন, যাতে জনগণের মধ্যে কোনোরূপ ক্ষোভ সৃষ্টিজনিত দাবিদাওয়ার সুযোগ না হয়।
আরেকটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো কোনো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটি হলে নতুন প্রজন্মের তাৎক্ষণিক হানাহানি, মারামারি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, মালামাল, সম্পদের ক্ষতিসাধন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দলের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই হানাহানি চলছে। এক কলেজের শিক্ষার্থী আরেক কলেজের শিক্ষার্থীর সঙ্গে মারামারি এবং সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য তো রয়েছেই। এসব কর্মকাণ্ডে অনেক সময় হত্যাকাণ্ডও ঘটতে দেখা যায়। আন্দোলন, বিক্ষোভ, অবরোধের সঙ্গে এসব দুর্নীতি দুষ্কর্ম, দুষ্কৃতী দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সুনামে, বিদেশি বিনিয়োগে, আর্থিক সহায়তায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে এবং দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। সভ্য সমাজ, সভ্য দেশের ব্যতিক্রমী এসব অনাকাক্সিক্ষত কর্মকাণ্ড দমনে নৈতিক শিক্ষা প্রদান এবং দেশের সচেতন নাগরিকদের সহায়তায় দেশের স্বার্থে সব ধরনের সম্ভাব্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ নীতিগতভাবে সরকারের দায়িত্ব। দেশে যেভাবে অরাজকতা ও নৈরাজ্য চলছে, তা দেশের স্বার্থে সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। রাজনৈতিক চিন্তাবিদ হিসেবে আমি মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে, তা যতদূর যথাসম্ভব দ্রুত সম্পাদন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার তথা জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর জরুরি। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং রাজনৈতিক সরকারকেও গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে। রাজনৈতিক সরকার সম্পর্কে আরেকটা প্রাসঙ্গিক বিষয় হলো জনগণ আশা করছে, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, দুষ্কর্ম ও দুর্নীতি থেকে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের পরিশুদ্ধ ও কলুষমুক্ত করেছে, যাতে ক্ষমতালোভী না হয়ে নিজেদেরকে জনগণের স্বার্থ ঊর্ধ্বে রেখে জবাবদিহির সঙ্গে দেশ পরিচালনা করার মনোবৃত্তি হয়। প্রকৃতপক্ষে এরূপ মনোবৃত্তি, সৎসাহস ও দেশের মঙ্গল চিন্তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে প্রতিযোগিতায় আসা উচিত। প্রসঙ্গত আরও একটা বিষয় উল্লেখের প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনদের অনেকের ‘কথা বেশি কাজ কম’। মুখে যা বলেন, বাস্তব কাজে তার প্রতিফলন কম। তা ছাড়া বক্তৃতামঞ্চে এসে কোনো ইস্যু নিয়ে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে উত্তেজিত হয়ে উচ্চ গলায় আঙুল উঁচিয়ে আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে বক্তব্য পেশ করেন, যা শিষ্টাচার-বহির্ভূত। মৃদু স্বরে শ্রুতিমধুরভাবে প্রকাশ করলে যা শোভনীয় ও হৃদয়গ্রাহী হতো, কর্কশতার আশ্রয় নিয়ে তা কদর্য করে তোলা হয়। যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে বক্তৃতামঞ্চে যেকোনো ইস্যুতে উচ্চকণ্ঠে আঙুল উঁচিয়ে বলাটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। কোনো সভ্য দেশে এই কুধারা নেই। এ ধরনের গর্হিত আচরণ পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়।
লেখক : ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকপ্রাপ্ত, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ও কলাম লেখক
বিগত স্বৈরাচারী সরকারের ১৫ বছরের অধিককাল দুঃশাসন ও অপকর্মে রাষ্ট্রের কাঠামোর আর্থিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে ক্ষয়ক্ষতি ও দুরবস্থা, এসবের যথাসম্ভব সংস্কার সাধন ও দেশ পরিচালনায় অন্তর্বর্তী সরকার যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন রাজধানী ঢাকার রাজপথে এ ধরনের আন্দোলন কাম্য হতে পারে না। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের অপকর্মে বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠনে ধৈর্য ও সহিংসতা অবলম্বনে সবার সহযোগিতাই এখন অতীব জরুরি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশবাসী সবার এই মন-মানসিকতা ও সচেতনতা এ সময়ের দাবি। দাবিদাওয়ার আন্দোলন গণতান্ত্রিক অধিকার স্বীকার করেই একজন দেশপ্রেমিক সচেতন নাগরিক হিসেবে আমি মনে করি, কোনো দাবি দেওয়ার ব্যাপারে তড়িৎ আন্দোলনে না গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে স্মারকলিপির মাধ্যমে সরকারের কাছে আরজি পেশ করা উচিত। যৌক্তিক দাবি হলে সরকার অবশ্যই সমাধান করে দেবে। বিভিন্ন চাকরিদাতা কর্তৃপক্ষ শ্রমিক কর্মচারীর বেতন-ভাতা এবং চাকরির প্রাপ্য সুবিধাদি নিয়মিত প্রদান করলে আন্দোলন হওয়ার কথা নয়। অপরদিকে সরকারেরও দায়ভার ভিত্তিতে লক্ষ রাখা উচিত, যাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি যথাসম্ভব সর্বাঙ্গীণ উন্নত মানসম্পন্নে গড়ে ওঠে, কোনোরূপ ঘাটতি না থাকে এবং কোনোরূপ দাবিদাওয়ার আন্দোলনের তেমন সুযোগ না থাকে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, জুলাই অভ্যুত্থানের আহতদের সুচিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ছেড়ে রাজপথে আন্দোলনে আসতে হলো সম্ভবত প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় অন্তর্বর্তী সরকারের কারও দায়িত্ব পালনে মনোযোগিতার অভাবে। যথাযথ চিকিৎসার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সচেতন হলে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা হয়তো ঘটত না। এ প্রসঙ্গে বলতে হবে, দেশ পরিচালনায় শুধু গণতন্ত্র নিয়ন্ত্রিত হলে চলবে না, সুশাসিতও হতে হবে। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত সুশাসন। এমনভাবে দেশ পরিচালিত হতে হবে, যাতে সর্বক্ষেত্রে জনআকাক্সক্ষার সর্বোতভাবে নিখুঁত প্রতিফলন ঘটে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের যারা জনগণের সরকার হিসেবে ক্ষমতায় থাকেন, তারা জবাবদিহি স্মরণে সন্তোষজনকভাবে দেশ পরিচালনা করবেন, যাতে জনগণের মধ্যে কোনোরূপ ক্ষোভ সৃষ্টিজনিত দাবিদাওয়ার সুযোগ না হয়।
আরেকটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো কোনো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটি হলে নতুন প্রজন্মের তাৎক্ষণিক হানাহানি, মারামারি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, মালামাল, সম্পদের ক্ষতিসাধন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দলের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই হানাহানি চলছে। এক কলেজের শিক্ষার্থী আরেক কলেজের শিক্ষার্থীর সঙ্গে মারামারি এবং সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য তো রয়েছেই। এসব কর্মকাণ্ডে অনেক সময় হত্যাকাণ্ডও ঘটতে দেখা যায়। আন্দোলন, বিক্ষোভ, অবরোধের সঙ্গে এসব দুর্নীতি দুষ্কর্ম, দুষ্কৃতী দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে, যা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের সুনামে, বিদেশি বিনিয়োগে, আর্থিক সহায়তায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে এবং দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। সভ্য সমাজ, সভ্য দেশের ব্যতিক্রমী এসব অনাকাক্সিক্ষত কর্মকাণ্ড দমনে নৈতিক শিক্ষা প্রদান এবং দেশের সচেতন নাগরিকদের সহায়তায় দেশের স্বার্থে সব ধরনের সম্ভাব্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ নীতিগতভাবে সরকারের দায়িত্ব। দেশে যেভাবে অরাজকতা ও নৈরাজ্য চলছে, তা দেশের স্বার্থে সরকারিভাবে নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। রাজনৈতিক চিন্তাবিদ হিসেবে আমি মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে, তা যতদূর যথাসম্ভব দ্রুত সম্পাদন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকার তথা জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর জরুরি। সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া। সুতরাং রাজনৈতিক সরকারকেও গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার চালিয়ে যেতে হবে। রাজনৈতিক সরকার সম্পর্কে আরেকটা প্রাসঙ্গিক বিষয় হলো জনগণ আশা করছে, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, দুষ্কর্ম ও দুর্নীতি থেকে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের পরিশুদ্ধ ও কলুষমুক্ত করেছে, যাতে ক্ষমতালোভী না হয়ে নিজেদেরকে জনগণের স্বার্থ ঊর্ধ্বে রেখে জবাবদিহির সঙ্গে দেশ পরিচালনা করার মনোবৃত্তি হয়। প্রকৃতপক্ষে এরূপ মনোবৃত্তি, সৎসাহস ও দেশের মঙ্গল চিন্তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনে প্রতিযোগিতায় আসা উচিত। প্রসঙ্গত আরও একটা বিষয় উল্লেখের প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি। আমাদের দেশের রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনদের অনেকের ‘কথা বেশি কাজ কম’। মুখে যা বলেন, বাস্তব কাজে তার প্রতিফলন কম। তা ছাড়া বক্তৃতামঞ্চে এসে কোনো ইস্যু নিয়ে প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে উত্তেজিত হয়ে উচ্চ গলায় আঙুল উঁচিয়ে আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে বক্তব্য পেশ করেন, যা শিষ্টাচার-বহির্ভূত। মৃদু স্বরে শ্রুতিমধুরভাবে প্রকাশ করলে যা শোভনীয় ও হৃদয়গ্রাহী হতো, কর্কশতার আশ্রয় নিয়ে তা কদর্য করে তোলা হয়। যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে বক্তৃতামঞ্চে যেকোনো ইস্যুতে উচ্চকণ্ঠে আঙুল উঁচিয়ে বলাটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। কোনো সভ্য দেশে এই কুধারা নেই। এ ধরনের গর্হিত আচরণ পরিত্যাগ করা বাঞ্ছনীয়।
লেখক : ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, একুশে পদকপ্রাপ্ত ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদকপ্রাপ্ত, রাজনৈতিক চিন্তাবিদ ও কলাম লেখক