
সংবাদটি বড়ই উদ্বেগের। নানা ফুল দিয়েই একটি বাগানের সৌন্দর্য। সেখানে যদি গোলাপ বা বকুলের মতো কোনো ফুল ঝরে যায়, তবে সেই বাগানের সৌন্দর্য বিঘ্নিত হয়। তেমনি একটি সমাজের সৌন্দর্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ধনী, গরিব, মধ্যবিত্ত সবাই সমাজে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করবে। কেউ কারও দ্বারা বঞ্চিত হবে না, ঠকবে না, অত্যাচারিত হবে না। যেকোনো একটি শ্রেণি না থাকলে সেই সমাজ বা রাষ্ট্রের সৌন্দর্য এবং শক্তি দুটোই নষ্ট হয়।
খবরটির শিরোনাম, ‘অধিকাংশের গন্তব্য ইউরোপ/বাংলাদেশির নাগরিকত্ব পরিত্যাগ বেড়েছে’। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সংখ্যা ঠিকানায় সংবাদটি প্রকাশ পেয়েছে। এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অনেকেই দেশে বসবাস করার মতো পরিস্থিতি-পরিবেশ আছে বলে মনে করতে পারছেন না। তাই তারা দেশ ছেড়ে, দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে বিদেশে চলে যেতে শুরু করেছেন এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা দেশে নিরাপত্তাবোধ করছেন না এবং এ-ও স্বাভাবিক যে, তারা দেশ ত্যাগ করে ভিন দেশে চলে যেতে চাচ্ছে। তারা বিত্তশালী, প্রভাবশালী শ্রেণিরই হবে। তাদের পক্ষেই বৈধ পথে সবকিছু ঠিক করে বিদেশে বাস গড়ে নেওয়া সহজ হবে, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের চেয়ে অনেক বেশি।
এখানে প্রকাশিত সংবাদটির কিছু অংশ তুলে দিলে পাঠকের পক্ষে সংবাদের প্রেক্ষাপট জানা অনেকটা সহজ হবে। খবরটির শুরু : ‘গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের প্রবণতা বেড়েছে অভিজাত ধনীদের। সরকারি হিসাবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী চার মাসে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের সংখ্যা বেড়েছে আগের চার মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত নাগরিকত্ব পরিত্যাগকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগের বছরে এ সংখ্যা ছিল ৯৯ জন। অভ্যুত্থানের পর প্রথম মাস আগস্টেই নাগরিকত্ব ত্যাগের সংখ্যা ছিল ৩৬ জন।’ খবরটিতে আরও বলা হয়, সবচেয়ে বেশি নাগরিকত্ব নেওয়া হয়েছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে। নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদন করতে হয় দেশে থেকেই অথবা যে দেশের নাগরিকত্ব নেবেন, সে দেশের নিজ নিজ দূতাবাসের মাধ্যমে।
আমরা সব সময় জেনে এসেছি, ভাগ্য গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় কিছু যুবক। দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থানের অভাবহেতু তারা তাদের স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশা নিয়ে দেশ ত্যাগ করে। এদের মধ্যে অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়। অনেকে আবার জঙ্গলে, পাহাড়ে এবং সাগর ও নদীতে ডুবে মারা যায়। কিন্তু এখন যারা দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করছে, তারা স্বাবলম্বী, বিত্তশালী। তদের অর্থ-সম্পদ, সামাজিক মর্যাদা, অবস্থান, শিক্ষা-দীক্ষা সবই আছে। শুধু নেই সামাজিক সুরক্ষা আর কর্মস্থান। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। রাস্তাঘাট, এমনকি ঘরেও নিরাপত্তা বোধ করছে না দেশের নাগরিক সমাজ। দিন নেই, রাত নেই যেকোনো সময় মানুষ ছিনতাইকারী, খুনি, ডাকাতদের কবলে পড়ে নাজেহাল হচ্ছে। রাস্তাঘাটে, বাসে, লঞ্চে ডাকাতি, ছিনতাই হচ্ছে। সেই সঙ্গে হচ্ছে খুন ও ধর্ষণ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির এমন পরিস্থিতিতে মানুষ দেশের মায়া ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার নেই। রাজপথে প্রতিদিন এসব অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রী, দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ, মিটিং-মিছিল করে এসবের অবসানে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করছে। কোনো উন্নতি নেই। নাগরিকত্ব ত্যাগের এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। বিদেশি কোনো বিনিয়োগ আসবে না। উচ্চবিত্ত শ্রেণি শূন্য হলে দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সংকট প্রবল হবে। রাজনীতি নিয়ে আমরা যদি তর্কে-বিতর্কে কাল কাটাই, তবে শত বিপ্লব আর অভ্যুত্থানেও বাঙালির দুঃখ মোচন হবে না।
তাই অভ্যুত্থান-উত্তরকালে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন, তারা সতর্ক হোন এসব সামাজিক অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে। নইলে অভিজ্ঞজনের শঙ্কা, দেশ ডুবুক, না ডুবুক, আপনারা ঠিকই ডুববেন। তাই সাধু সাবধান।
খবরটির শিরোনাম, ‘অধিকাংশের গন্তব্য ইউরোপ/বাংলাদেশির নাগরিকত্ব পরিত্যাগ বেড়েছে’। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সংখ্যা ঠিকানায় সংবাদটি প্রকাশ পেয়েছে। এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, দেশের চলমান পরিস্থিতিতে অনেকেই দেশে বসবাস করার মতো পরিস্থিতি-পরিবেশ আছে বলে মনে করতে পারছেন না। তাই তারা দেশ ছেড়ে, দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে বিদেশে চলে যেতে শুরু করেছেন এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই তারা দেশে নিরাপত্তাবোধ করছেন না এবং এ-ও স্বাভাবিক যে, তারা দেশ ত্যাগ করে ভিন দেশে চলে যেতে চাচ্ছে। তারা বিত্তশালী, প্রভাবশালী শ্রেণিরই হবে। তাদের পক্ষেই বৈধ পথে সবকিছু ঠিক করে বিদেশে বাস গড়ে নেওয়া সহজ হবে, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের চেয়ে অনেক বেশি।
এখানে প্রকাশিত সংবাদটির কিছু অংশ তুলে দিলে পাঠকের পক্ষে সংবাদের প্রেক্ষাপট জানা অনেকটা সহজ হবে। খবরটির শুরু : ‘গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের প্রবণতা বেড়েছে অভিজাত ধনীদের। সরকারি হিসাবে অভ্যুত্থান-পরবর্তী চার মাসে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগের সংখ্যা বেড়েছে আগের চার মাসের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি। গত বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত নাগরিকত্ব পরিত্যাগকারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগের বছরে এ সংখ্যা ছিল ৯৯ জন। অভ্যুত্থানের পর প্রথম মাস আগস্টেই নাগরিকত্ব ত্যাগের সংখ্যা ছিল ৩৬ জন।’ খবরটিতে আরও বলা হয়, সবচেয়ে বেশি নাগরিকত্ব নেওয়া হয়েছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ জার্মানিতে। নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদন করতে হয় দেশে থেকেই অথবা যে দেশের নাগরিকত্ব নেবেন, সে দেশের নিজ নিজ দূতাবাসের মাধ্যমে।
আমরা সব সময় জেনে এসেছি, ভাগ্য গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয় কিছু যুবক। দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থানের অভাবহেতু তারা তাদের স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশা নিয়ে দেশ ত্যাগ করে। এদের মধ্যে অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়। অনেকে আবার জঙ্গলে, পাহাড়ে এবং সাগর ও নদীতে ডুবে মারা যায়। কিন্তু এখন যারা দেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করছে, তারা স্বাবলম্বী, বিত্তশালী। তদের অর্থ-সম্পদ, সামাজিক মর্যাদা, অবস্থান, শিক্ষা-দীক্ষা সবই আছে। শুধু নেই সামাজিক সুরক্ষা আর কর্মস্থান। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। রাস্তাঘাট, এমনকি ঘরেও নিরাপত্তা বোধ করছে না দেশের নাগরিক সমাজ। দিন নেই, রাত নেই যেকোনো সময় মানুষ ছিনতাইকারী, খুনি, ডাকাতদের কবলে পড়ে নাজেহাল হচ্ছে। রাস্তাঘাটে, বাসে, লঞ্চে ডাকাতি, ছিনতাই হচ্ছে। সেই সঙ্গে হচ্ছে খুন ও ধর্ষণ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির এমন পরিস্থিতিতে মানুষ দেশের মায়া ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার নেই। রাজপথে প্রতিদিন এসব অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রী, দেশের সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ, মিটিং-মিছিল করে এসবের অবসানে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ পর্যন্ত দাবি করছে। কোনো উন্নতি নেই। নাগরিকত্ব ত্যাগের এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে। বিদেশি কোনো বিনিয়োগ আসবে না। উচ্চবিত্ত শ্রেণি শূন্য হলে দেশের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সংকট প্রবল হবে। রাজনীতি নিয়ে আমরা যদি তর্কে-বিতর্কে কাল কাটাই, তবে শত বিপ্লব আর অভ্যুত্থানেও বাঙালির দুঃখ মোচন হবে না।
তাই অভ্যুত্থান-উত্তরকালে যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন, তারা সতর্ক হোন এসব সামাজিক অপরাধকর্মের বিরুদ্ধে। নইলে অভিজ্ঞজনের শঙ্কা, দেশ ডুবুক, না ডুবুক, আপনারা ঠিকই ডুববেন। তাই সাধু সাবধান।