
* বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্ত করা নিয়ে আমি কেন মাথা ঘামাব : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
‘অর্থ সহায়তা বন্ধের প্রভাব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দুইভাবেই পড়েছে। অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এটি অর্থনীতিকে সংকটে ফেলতে পারে।’
-অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, চেয়ারম্যান, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ
বিগত সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক প্রকল্পে অর্থায়ন করে আসছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থায়নের রাশ টানতে গিয়ে রাজনৈতিক-সামাজিক প্রকল্পগুলো বাতিল করেছে। বাইডেন প্রশাসনের আমলে গ্রহণ করা ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট শক্তিশালীকরণ’ কর্মসূচিতে যে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেওয়া হতো, তা ওই বাতিলের তালিকায় এসেছে। ভারতের ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো-সংক্রান্ত কর্মসূচিতে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং নেপালের আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণসহ একাধিক কর্মসূচির ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, কম্বোডিয়া, চেক রিপাবলিক, সার্বিয়া, মলদোভা, লাইবেরিয়া, মালি, কসোভো ও মিশরের বিভিন্ন কর্মসূচির অর্থায়নও বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের এই অর্থ সহায়তা বাতিলে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে গণতন্ত্রের উন্নয়নের পথে হাঁটা উন্নয়নশীল দেশগুলো। হুট করেই অর্থ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশসহ ইউএসএআইডি সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক এনজিও কর্মী। এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুইভাবেই বাংলাদেশকে সংকটে ফেলতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের চেয়ারে পুনর্বার বসার পর ট্রাম্প ‘ডিপ স্টেটকে’ ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে শুরুতেই ইউএসএআইডির ওপর খড়গহস্ত হন। তিনি সংস্থাটিকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ইউএসএআইডি সংক্রান্ত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ট্রাম্প দিয়েছেন বিলিওনিয়ার ইলন মাস্ককে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার ছোট করার উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা- ইউএসএআইডি এবং যুক্তরাজ্যের সহায়তা সংস্থা- ডিএফআইডির অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিল ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ প্রোগ্রাম (এসপিএল) বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি। এটি বাস্তবায়ন করছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি বিশ্বে নির্বাচনী গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশে এসপিএল কর্মসূচির আওতায় রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমানোর পাশাপাশি দল ও নির্বাচনী এলাকার মধ্যে সংযোগ জোরদার করার জন্য কাজ করা হতো।
এসপিএলের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিকদের সমর্থন অব্যাহত রাখা; যাতে তারা কার্যকর নেতা হওয়ার জন্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির পক্ষে সমর্থন করার জন্য এবং সংঘাত প্রশমনের জন্য একে অপরের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে জড়িত হওয়ার প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে। এসপিএলের অধীনে গ্রামীণ, বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারী, যুব ও তৃণমূল স্তরের কর্মীদের অন্তর্ভুক্তিকে আরও ভালোভাবে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে সাতটি বিভাগীয় অফিস পরিচালনা করা হতো। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে স্বাধীনভাবে দলীয় সম্মেলন করার জন্য দলগুলোর ক্ষমতা তৈরিতেও কাজ করেছে এসপিএল।
এদিকে, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো (পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ) শক্তিশালী করতে দেওয়া ২৯ মিলিয়ন ডলারের তহবিলের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি কেন বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামাবেন! ২৯ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে দেওয়া হয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে, যার নাম কেউ শোনেইনি। ২৯ মিলিয়ন ডলার! তারা চেক পেয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুজন লোক কাজ করে। ২৯ মিলিয়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু “রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করা” বলতে তারা কী বোঝায়? ২০ মিলিয়ন ডলার “রাজস্ব ফেডারেলিজম”-এর জন্য, ১৯ মিলিয়ন ডলার নেপালের “জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ”-এর জন্য, ৪৭ মিলিয়ন ডলার “এশিয়ায় শিক্ষার মান উন্নয়নের” জন্য! এসব নিয়ে আমি মাথা ঘামাব কেন?’
এদিকে সম্প্রতি মার্কিন ব্যবসায়ী ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) ঘোষণা দিয়েছে, তারা মার্কিন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ব্যয় পর্যালোচনা করছে। ডিওজিইর দাবি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘কনসোর্টিয়াম ফর ইলেকশনস অ্যান্ড পলিটিক্যাল প্রসেস স্ট্রেনদেনিং’-এর জন্য ৪৮৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। যার মধ্যে ২১ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ছিল ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য। ডিওজিইর এ তথ্য প্রকাশের পরই ভারতের পুরোনো বিতর্কটি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এবং ক্ষমতাসীন বিজেপি দুই দলই এটিকে ‘ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করছে। তবে বিজেপি দাবি করছে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ সরকার বিদেশি শক্তিকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রবেশাধিকার সহজ করে দিয়েছিল।
এদিক, ট্রাম্প প্রশাসনের হুট করে এই সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় অনেকটা সংকটে পড়েছে সহায়তা পেয়ে আসা দেশগুলো। এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশও। হুট করে অর্থ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই অর্থ দিয়ে চলা এনজিওগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক এনজিও কর্মী। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবেও বেকায়দায় পড়েছে দেশগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সংকটে পড়তে পারে। অতীতে এই অর্থ কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গণতান্ত্রিক উন্নয়নে এই অর্থ ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তা কতোটা কার্যকর হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মাঝপথে এই অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গণতন্ত্রের পথে হাঁটা উন্নয়নশীল বাংলাদেশসহ অনান্য দেশের ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলছেন তারা। এছাড়াও এই অর্থ কিভাবে ব্যয় হয়েছে তা খতিয়ে দেখে বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি রয়েছে। এদিকে অর্থায়ন পুনরায় চালু করতে সরকারকে তৎপর হওয়ারও পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতো সহজেই তা সম্ভব নয়। ট্রাম্প প্রশাসন অগণতান্ত্রিক কোনো সরকারের সঙ্গে তা সহজেই পুনরায় চালু করবেন না। ড. ইউনূসের সঙ্গে আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের বৈরিতা থাকায় তা আর সম্ভব নয় বলছেন তারা। গণতান্ত্রিক সরকার আসলে তখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তদবিরে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, অর্থ সহায়তা বন্ধের প্রভাব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দুইভাবেই পড়েছে। অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এটি অর্থনীতিকে সংকটে ফেলতে পারে। ট্রাম্পের যে মনোভাব নিজের দেশের অর্থ নিজেদের জনগণের জন্য ব্যয় করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তিনি বাইরের কোনো দেশে অর্থায়ন দিতে চান না, যেখান থেকে তার দেশের কোনো লাভ আসবে না। ড. ইউনূসের সঙ্গে ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানদের যে একটা বৈরিতা আগে থেকেই ছিল, সেটা অর্থ সহায়তা বন্ধের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই কাজ করেছে। অতীতের সম্পর্কের প্রভাব এখানে পড়েছে। এখন যে সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান, এখানে সহায়তা পুনরায় ট্রাম্প প্রশাসন চালু করবে বলে মনে হয় না। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সেটা তারা ভেবে দেখতে পারে।
‘অর্থ সহায়তা বন্ধের প্রভাব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দুইভাবেই পড়েছে। অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এটি অর্থনীতিকে সংকটে ফেলতে পারে।’
-অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ, চেয়ারম্যান, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ
বিগত সময়ে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক প্রকল্পে অর্থায়ন করে আসছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন বৈশ্বিক পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্থায়নের রাশ টানতে গিয়ে রাজনৈতিক-সামাজিক প্রকল্পগুলো বাতিল করেছে। বাইডেন প্রশাসনের আমলে গ্রহণ করা ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট শক্তিশালীকরণ’ কর্মসূচিতে যে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলার দেওয়া হতো, তা ওই বাতিলের তালিকায় এসেছে। ভারতের ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো-সংক্রান্ত কর্মসূচিতে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং নেপালের আর্থিক বিকেন্দ্রীকরণসহ একাধিক কর্মসূচির ৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, মোজাম্বিক, কম্বোডিয়া, চেক রিপাবলিক, সার্বিয়া, মলদোভা, লাইবেরিয়া, মালি, কসোভো ও মিশরের বিভিন্ন কর্মসূচির অর্থায়নও বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে ট্রাম্প প্রশাসনের এই অর্থ সহায়তা বাতিলে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে গণতন্ত্রের উন্নয়নের পথে হাঁটা উন্নয়নশীল দেশগুলো। হুট করেই অর্থ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশসহ ইউএসএআইডি সংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বেকার হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক এনজিও কর্মী। এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুইভাবেই বাংলাদেশকে সংকটে ফেলতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, গত ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের চেয়ারে পুনর্বার বসার পর ট্রাম্প ‘ডিপ স্টেটকে’ ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে শুরুতেই ইউএসএআইডির ওপর খড়গহস্ত হন। তিনি সংস্থাটিকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একীভূত করার ঘোষণা দিয়েছেন। ইউএসএআইডি সংক্রান্ত এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব ট্রাম্প দিয়েছেন বিলিওনিয়ার ইলন মাস্ককে, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকার ছোট করার উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা সংস্থা- ইউএসএআইডি এবং যুক্তরাজ্যের সহায়তা সংস্থা- ডিএফআইডির অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছিল ‘স্ট্রেংদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ প্রোগ্রাম (এসপিএল) বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট শক্তিশালীকরণ কর্মসূচি। এটি বাস্তবায়ন করছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি বিশ্বে নির্বাচনী গণতন্ত্র শক্তিশালী করতে, সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষে কাজ করে আসছে। বাংলাদেশে এসপিএল কর্মসূচির আওতায় রাজনৈতিক দলের সক্ষমতা বাড়ানো এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমানোর পাশাপাশি দল ও নির্বাচনী এলাকার মধ্যে সংযোগ জোরদার করার জন্য কাজ করা হতো।
এসপিএলের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক দলের কর্মী এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন নাগরিকদের সমর্থন অব্যাহত রাখা; যাতে তারা কার্যকর নেতা হওয়ার জন্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতির পক্ষে সমর্থন করার জন্য এবং সংঘাত প্রশমনের জন্য একে অপরের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে জড়িত হওয়ার প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে। এসপিএলের অধীনে গ্রামীণ, বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নারী, যুব ও তৃণমূল স্তরের কর্মীদের অন্তর্ভুক্তিকে আরও ভালোভাবে সমর্থন করার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে সাতটি বিভাগীয় অফিস পরিচালনা করা হতো। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং স্বচ্ছ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া জোরদার করার জন্য জেলা, বিভাগ এবং জাতীয় পর্যায়ে স্বাধীনভাবে দলীয় সম্মেলন করার জন্য দলগুলোর ক্ষমতা তৈরিতেও কাজ করেছে এসপিএল।
এদিকে, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, মার্কিন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডির বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো (পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ) শক্তিশালী করতে দেওয়া ২৯ মিলিয়ন ডলারের তহবিলের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি কেন বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি নিয়ে মাথা ঘামাবেন! ২৯ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে দেওয়া হয়েছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে, যার নাম কেউ শোনেইনি। ২৯ মিলিয়ন ডলার! তারা চেক পেয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুজন লোক কাজ করে। ২৯ মিলিয়ন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু “রাজনৈতিক পরিকাঠামো শক্তিশালী করা” বলতে তারা কী বোঝায়? ২০ মিলিয়ন ডলার “রাজস্ব ফেডারেলিজম”-এর জন্য, ১৯ মিলিয়ন ডলার নেপালের “জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ”-এর জন্য, ৪৭ মিলিয়ন ডলার “এশিয়ায় শিক্ষার মান উন্নয়নের” জন্য! এসব নিয়ে আমি মাথা ঘামাব কেন?’
এদিকে সম্প্রতি মার্কিন ব্যবসায়ী ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই) ঘোষণা দিয়েছে, তারা মার্কিন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ব্যয় পর্যালোচনা করছে। ডিওজিইর দাবি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ‘কনসোর্টিয়াম ফর ইলেকশনস অ্যান্ড পলিটিক্যাল প্রসেস স্ট্রেনদেনিং’-এর জন্য ৪৮৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে। যার মধ্যে ২১ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ছিল ভারতে ভোটার উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য। ডিওজিইর এ তথ্য প্রকাশের পরই ভারতের পুরোনো বিতর্কটি নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেস এবং ক্ষমতাসীন বিজেপি দুই দলই এটিকে ‘ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বিদেশি হস্তক্ষেপ’ হিসেবে বর্ণনা করছে। তবে বিজেপি দাবি করছে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ সরকার বিদেশি শক্তিকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রবেশাধিকার সহজ করে দিয়েছিল।
এদিক, ট্রাম্প প্রশাসনের হুট করে এই সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় অনেকটা সংকটে পড়েছে সহায়তা পেয়ে আসা দেশগুলো। এর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশও। হুট করে অর্থ সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই অর্থ দিয়ে চলা এনজিওগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরি হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক এনজিও কর্মী। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবেও বেকায়দায় পড়েছে দেশগুলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই সংকটে পড়তে পারে। অতীতে এই অর্থ কিভাবে ব্যবহৃত হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গণতান্ত্রিক উন্নয়নে এই অর্থ ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও তা কতোটা কার্যকর হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মাঝপথে এই অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গণতন্ত্রের পথে হাঁটা উন্নয়নশীল বাংলাদেশসহ অনান্য দেশের ক্ষেত্রেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলছেন তারা। এছাড়াও এই অর্থ কিভাবে ব্যয় হয়েছে তা খতিয়ে দেখে বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি রয়েছে। এদিকে অর্থায়ন পুনরায় চালু করতে সরকারকে তৎপর হওয়ারও পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতো সহজেই তা সম্ভব নয়। ট্রাম্প প্রশাসন অগণতান্ত্রিক কোনো সরকারের সঙ্গে তা সহজেই পুনরায় চালু করবেন না। ড. ইউনূসের সঙ্গে আগে থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকানদের বৈরিতা থাকায় তা আর সম্ভব নয় বলছেন তারা। গণতান্ত্রিক সরকার আসলে তখন ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তদবিরে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহ বলেন, অর্থ সহায়তা বন্ধের প্রভাব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক দুইভাবেই পড়েছে। অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এটি অর্থনীতিকে সংকটে ফেলতে পারে। ট্রাম্পের যে মনোভাব নিজের দেশের অর্থ নিজেদের জনগণের জন্য ব্যয় করার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। তিনি বাইরের কোনো দেশে অর্থায়ন দিতে চান না, যেখান থেকে তার দেশের কোনো লাভ আসবে না। ড. ইউনূসের সঙ্গে ট্রাম্প এবং রিপাবলিকানদের যে একটা বৈরিতা আগে থেকেই ছিল, সেটা অর্থ সহায়তা বন্ধের ক্ষেত্রে নিশ্চিতভাবেই কাজ করেছে। অতীতের সম্পর্কের প্রভাব এখানে পড়েছে। এখন যে সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান, এখানে সহায়তা পুনরায় ট্রাম্প প্রশাসন চালু করবে বলে মনে হয় না। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সেটা তারা ভেবে দেখতে পারে।