
সংবাদপত্র একটি চ্যালেঞ্জিং শিল্প, যা অন্য আর দশটি শিল্পের মতো শুধু উৎপাদন ও লভ্যাংশ-নির্ভর নয়, বরং এর সাফল্য নির্ভর করে বিপুল জনগোষ্ঠীর আস্থা, ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতার ওপর। একটি শিল্প যেমন বেঁচে থাকে তার উৎপাদিত পণ্য সফল বিপণনের মাধ্যমে উপার্জিত লভ্যাংশ মালিক ও শ্রমিকদের জীবন-জীবিকায় ভূমিকা রাখার মধ্য দিয়ে কিন্তু সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ ও অপরাপর তথ্যকে পণ্য বিবেচনা করা হলে তা তেমনি একপক্ষীয় নয়, দ্বিপক্ষীয়। আবার কোনো কোনোটি বহুপক্ষীয়। যেমন অনুসন্ধানী অনেক সংবাদ হয় বহুপক্ষীয়, যার তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে অনিবার্য কারণে সংশ্লিষ্ট থাকতে হয় রাষ্ট্র, সরকার, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সংস্থা, পক্ষ-বিপক্ষ অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এবং সংবাদের অন্তর্নিহিত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা ও তার নিরপেক্ষতা নিরূপণের জন্য ওয়াজডকের ভূমিকায় থাকতে হয় অনেক দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাকে। তবেই সংবাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও যথার্থতা প্রতিফলিত হয়।
একসময় সংবাদপত্র একচ্ছত্র শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে সর্বত্র জোরালো ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে সংবাদপত্রের সে অবদান অনেকটা কমে এসেছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে, বিশেষ করে অন্তর্জালের সহজলভ্যতার কারণে আকাশ সংস্কৃতি এমনভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে যে মানুষ এখন সংবাদপত্র পাঠের চেয়ে ইউটিউবে অন্যের পাঠ করা সংবাদ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে ও শুনতেই বেশি আগ্রহী। এ কারণে সংবাদপত্রের পাশাপাশি মালিকপক্ষ ইউটিউব চ্যানেলও চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যথায় শুধু সংবাদপত্রের মাধ্যমে পাঠক-চাহিদা ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ কারণে ঠিকানাও অতি সম্প্রতি একই নামে ইউটিউব চ্যানেল চালু করেছে এবং এই অনুষ্ঠানও অল্প দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তা সত্ত্বেও আকাশ সংস্কৃতি কখনো সংবাদপত্রের বিকল্প হতে পারে না- এ বাস্তবতা মাথায় রেখেই ঠিকানার প্রিন্ট মিডিয়া সগৌরবে অব্যাহত আছে। পাঠক ও ঠিকানার শুভাকাক্সক্ষী মহল ঠিকানার এ অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানায় এবং ভবিষ্যতেও ঠিকানা তার যাত্রা অব্যাহত রাখবে বলে মনেপ্রাণে আশাবাদ ব্যক্ত করে।
গত পাঁচ দশক সাহিত্যচর্চা ও সংবাদপত্রের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত থাকার সুবাদে খুব কাছ থেকে দেখা এ শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা অনুধাবনের যে বিরল অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে, তারই আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায়, নিউইয়র্কে বাংলা পত্রিকা প্রকাশ ও মান বিবেচনার ক্ষেত্রে নবীন-প্রবীণ প্রায় দুই ডজন পত্রিকা প্রকাশের তথ্য বিশ্লেষণ ও বয়স বিবেচনায় সাপ্তাহিক ঠিকানার ৩৫ বছর পেরিয়ে ৩৬ বছরে পদার্পণ অতি পুরোনো একটি পত্রিকার গৌরব ও আভিজাত্য বহন করে প্রশ্নাতীতভাবে। পত্রিকাটির প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে, যা একটি প্রণিধানযোগ্য বিষয়। নিয়মিত ৭২ পৃষ্ঠা-সংবলিত সংখ্যাগরিষ্ঠ ইংরেজি ভাষাপ্রধান অঞ্চলে স্বল্পসংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী লোকদের চাহিদা মেটাতে ধারাবাহিকভাবে একটি বাংলা পত্রিকার ৩৫ বছর পেরিয়ে ৩৬ বছরে পদার্পণ খুব সহজ কথা নয়। ঠিকানা পত্রিকা পাঠক-চাহিদা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিষয়-বৈচিত্র্য সংবাদ ও অন্যান্য বিভাগের লেখার ও ছাপার মান ও তৎসংশ্লিষ্ট ফটোগ্রাফ অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য উপায়ে পরিবেশন করে পত্রিকা হিসেবে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে অনন্য বিবেচিত হয়েছে।
স্বদেশে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হলেও সংবাদমাধ্যমে কাজের শুরু হয় এসএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার পর। অবশ্য এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক পরই নিজ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মুনসুর আলী খলিফা ও মৃণ্ময় চন্দ স্যারের আহ্বানে অবৈতনিক খণ্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করি, যা সরকারি চাকরি গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। বলে রাখা ভালো, এ সময় কলেজে অধ্যয়নও চলতে থাকে এবং কলেজের পড়ালেখার পাশাপাশি পড়ানো এবং কিষাণ পত্রিকায় মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত থাকে। সরকারি চাকরিতে যোগদানের কারণে নিয়মিত সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করা সম্ভব না হলেও জাতীয় পত্রিকাসহ যেসব জেলায় চাকরির সুবাদে অবস্থান করেছি, সেখানকার স্থানীয় পত্রিকায় সাহিত্য বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করা ছাড়াও দীর্ঘদিন একটি জেলা শহরে চাকরির সুবাদে সেখান থেকে প্রকাশিত চারটি সাপ্তাহিক পত্রিকার দুটির সাহিত্য পাতা সম্পাদনা ও অন্য দুটিতে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লেখা প্রকাশ ছিল নিয়মিত। যার মধ্যে একটি সাপ্তাহিকের সম্পাদকীয় লেখা ছিল প্রায় নিয়মিত। যার কিছু সম্পাদকীয় বিশিষ্টজনদের বিবেচনায় ওই পত্রিকার বিগত কয়েক বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্পাদকীয়র মর্যাদা লাভ করে। তখনকার সাধারণ পাঠকেরা না জানলেও পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং ঘনিষ্ঠ লোকজন ঠিকই জানতেন। বিষয়টি প্রচারের জন্য নয়, বরং পত্রিকার নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আলোচনা পর্বটি সামনে আসার পরিপ্রেক্ষিতে অভিজ্ঞতালব্ধ কথাগুলো উল্লেখ করা হলো মাত্র।
এলজিইডির বিভাগীয় রংপুর জেলা শহর থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় চাকরিরত জেলার জেলা সংবাদদাতা হিসেবে উন্নয়ন-বিষয়ক খবর পরিবেশন ছিল বাধ্যতামূলক। নিউইয়র্কে আসার পর পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশের ব্যাপারে কিছুটা ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করি। এখান থেকে প্রকাশিত পত্রিকাসমূহের লেখার মান ও সম্পাদকীয় নীতি-আদর্শ অনুধাবনের পরে দীর্ঘ ছয় বছর যাবৎ নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা, গল্প, নিবন্ধ, সমসাময়িক বিষয় ও মৌলিক প্রবন্ধ লেখা অব্যাহত রাখি। তা ছাড়া এ পর্যন্ত আমার চারখানা কাব্যগ্রন্থ ও এবারের একুশে বইমেলায় ‘উন্নয়নের মৌলিক ভাবনা’ শিরোনামের একটি মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে প্রকাশের মতো দুটি চতুর্দশপদী কবিতাগ্রন্থ, দুটি মৌলিক প্রবন্ধের গ্রন্থ এবং একটি ছড়া ও সাধারণ কবিতাগ্রন্থ প্রকাশযোগ্য, যা হয়তো পরবর্তী দু-এক বছরের মধ্যে প্রকাশ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও ফিচার প্রকাশিত হচ্ছে। এর মধ্যে ঠিকানা অন্যতম।
বিজ্ঞাপন পত্রিকার একটি ভিন্ন ও বিশেষ ধরনের খবর, যা প্রকাশের মাধ্যমে দুটি বিপরীত চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হয়। এর মাধ্যমে উভয় পক্ষই উপকৃত হয়। অপরপক্ষে এ খবর প্রকাশের মাধ্যমে পত্রিকারও বিজ্ঞাপন প্রচারের মাশুল হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থপ্রাপ্তি ঘটে, যা পত্রিকার আয়ের একটি প্রধান উৎস। এ কারণে বিজ্ঞাপন শুধু পত্রিকার আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত না হয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত অন্যান্য সকল বিষয়ের মতো একটি মূল্যবান সংবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রাপ্ত কথ্য থেকে যারা অন্তত জীবনে একবারও উপকৃত হয়েছেন, তাদের নিকট বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব অপরিসীম এবং সারা জীবন তারা তথ্যের জন্য সংবাদপত্রের ওপর আস্থাবান ও নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সংবাদপত্রে খবরের যেসব বিভাগ রয়েছে, এর মধ্যে কূটনৈতিক প্রতিরক্ষা ক্রাইম অন্যতম, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও জনজীবনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অন্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। তবে বিষয়টি নির্ভর করে সংবাদের গুরুত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্র কর্তৃক তা আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও জাতীয় জীবনে ছোট-বড় অনেক আনন্দ-উৎসবের উপলক্ষ থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এরূপ অনেক উৎসব আয়োজন করে থাকে। সংবাদপত্রশিল্প প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা get-together হিসেবে তাদের অনুষ্ঠানের যে আয়োজন করে, সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার অনুরূপ বার্ষিক আনন্দ আয়োজন get-together dinner হিসেবে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়ে আসছে। ঠিকানায় কবি, লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক হিসেবে যারা সারা বছর নিঃস্বার্থভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লিখে পত্রিকার কলেবর ও পাঠকদের মনোজগৎ সমৃদ্ধ করে থাকেন, বার্ষিক আনন্দ আয়োজনে পত্রিকার পক্ষ থেকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো ও তাদের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক সময় সম্মাননা প্রদান করা হয়। প্রতিবছর এটি অব্যাহত রেখে তাদের উৎসাহিত ও সম্মানিত করা যায় কি না ভেবে দেখা যেতে পারে। সকল বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে পত্রিকাটির মসৃণ পথচলা ও প্রকাশনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধশালী হয়ে সবার ভরসাস্থলে পরিণত হবে বলে কামনা করছি।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও গবেষক।
একসময় সংবাদপত্র একচ্ছত্র শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে সর্বত্র জোরালো ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে সংবাদপত্রের সে অবদান অনেকটা কমে এসেছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার ফলে, বিশেষ করে অন্তর্জালের সহজলভ্যতার কারণে আকাশ সংস্কৃতি এমনভাবে বিস্তৃতি লাভ করেছে যে মানুষ এখন সংবাদপত্র পাঠের চেয়ে ইউটিউবে অন্যের পাঠ করা সংবাদ ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে ও শুনতেই বেশি আগ্রহী। এ কারণে সংবাদপত্রের পাশাপাশি মালিকপক্ষ ইউটিউব চ্যানেলও চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যথায় শুধু সংবাদপত্রের মাধ্যমে পাঠক-চাহিদা ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থরক্ষা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এ কারণে ঠিকানাও অতি সম্প্রতি একই নামে ইউটিউব চ্যানেল চালু করেছে এবং এই অনুষ্ঠানও অল্প দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তা সত্ত্বেও আকাশ সংস্কৃতি কখনো সংবাদপত্রের বিকল্প হতে পারে না- এ বাস্তবতা মাথায় রেখেই ঠিকানার প্রিন্ট মিডিয়া সগৌরবে অব্যাহত আছে। পাঠক ও ঠিকানার শুভাকাক্সক্ষী মহল ঠিকানার এ অগ্রযাত্রাকে সাধুবাদ জানায় এবং ভবিষ্যতেও ঠিকানা তার যাত্রা অব্যাহত রাখবে বলে মনেপ্রাণে আশাবাদ ব্যক্ত করে।
গত পাঁচ দশক সাহিত্যচর্চা ও সংবাদপত্রের সঙ্গে অতি ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত থাকার সুবাদে খুব কাছ থেকে দেখা এ শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা অনুধাবনের যে বিরল অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়েছে, তারই আলোকে নির্দ্বিধায় বলা যায়, নিউইয়র্কে বাংলা পত্রিকা প্রকাশ ও মান বিবেচনার ক্ষেত্রে নবীন-প্রবীণ প্রায় দুই ডজন পত্রিকা প্রকাশের তথ্য বিশ্লেষণ ও বয়স বিবেচনায় সাপ্তাহিক ঠিকানার ৩৫ বছর পেরিয়ে ৩৬ বছরে পদার্পণ অতি পুরোনো একটি পত্রিকার গৌরব ও আভিজাত্য বহন করে প্রশ্নাতীতভাবে। পত্রিকাটির প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে, যা একটি প্রণিধানযোগ্য বিষয়। নিয়মিত ৭২ পৃষ্ঠা-সংবলিত সংখ্যাগরিষ্ঠ ইংরেজি ভাষাপ্রধান অঞ্চলে স্বল্পসংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী লোকদের চাহিদা মেটাতে ধারাবাহিকভাবে একটি বাংলা পত্রিকার ৩৫ বছর পেরিয়ে ৩৬ বছরে পদার্পণ খুব সহজ কথা নয়। ঠিকানা পত্রিকা পাঠক-চাহিদা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে বিষয়-বৈচিত্র্য সংবাদ ও অন্যান্য বিভাগের লেখার ও ছাপার মান ও তৎসংশ্লিষ্ট ফটোগ্রাফ অত্যন্ত বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য উপায়ে পরিবেশন করে পত্রিকা হিসেবে নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে অনন্য বিবেচিত হয়েছে।
স্বদেশে স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালীন সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত হলেও সংবাদমাধ্যমে কাজের শুরু হয় এসএসসি উত্তীর্ণ হওয়ার পর। অবশ্য এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার সপ্তাহখানেক পরই নিজ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মুনসুর আলী খলিফা ও মৃণ্ময় চন্দ স্যারের আহ্বানে অবৈতনিক খণ্ডকালীন শিক্ষকতা শুরু করি, যা সরকারি চাকরি গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। বলে রাখা ভালো, এ সময় কলেজে অধ্যয়নও চলতে থাকে এবং কলেজের পড়ালেখার পাশাপাশি পড়ানো এবং কিষাণ পত্রিকায় মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত থাকে। সরকারি চাকরিতে যোগদানের কারণে নিয়মিত সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করা সম্ভব না হলেও জাতীয় পত্রিকাসহ যেসব জেলায় চাকরির সুবাদে অবস্থান করেছি, সেখানকার স্থানীয় পত্রিকায় সাহিত্য বিষয়ে নিয়মিত লেখালেখি করা ছাড়াও দীর্ঘদিন একটি জেলা শহরে চাকরির সুবাদে সেখান থেকে প্রকাশিত চারটি সাপ্তাহিক পত্রিকার দুটির সাহিত্য পাতা সম্পাদনা ও অন্য দুটিতে সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় লেখা প্রকাশ ছিল নিয়মিত। যার মধ্যে একটি সাপ্তাহিকের সম্পাদকীয় লেখা ছিল প্রায় নিয়মিত। যার কিছু সম্পাদকীয় বিশিষ্টজনদের বিবেচনায় ওই পত্রিকার বিগত কয়েক বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সম্পাদকীয়র মর্যাদা লাভ করে। তখনকার সাধারণ পাঠকেরা না জানলেও পত্রিকার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং ঘনিষ্ঠ লোকজন ঠিকই জানতেন। বিষয়টি প্রচারের জন্য নয়, বরং পত্রিকার নিয়মিত প্রকাশনা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ শীর্ষক আলোচনা পর্বটি সামনে আসার পরিপ্রেক্ষিতে অভিজ্ঞতালব্ধ কথাগুলো উল্লেখ করা হলো মাত্র।
এলজিইডির বিভাগীয় রংপুর জেলা শহর থেকে প্রকাশিত একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায় চাকরিরত জেলার জেলা সংবাদদাতা হিসেবে উন্নয়ন-বিষয়ক খবর পরিবেশন ছিল বাধ্যতামূলক। নিউইয়র্কে আসার পর পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশের ব্যাপারে কিছুটা ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করি। এখান থেকে প্রকাশিত পত্রিকাসমূহের লেখার মান ও সম্পাদকীয় নীতি-আদর্শ অনুধাবনের পরে দীর্ঘ ছয় বছর যাবৎ নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা, গল্প, নিবন্ধ, সমসাময়িক বিষয় ও মৌলিক প্রবন্ধ লেখা অব্যাহত রাখি। তা ছাড়া এ পর্যন্ত আমার চারখানা কাব্যগ্রন্থ ও এবারের একুশে বইমেলায় ‘উন্নয়নের মৌলিক ভাবনা’ শিরোনামের একটি মৌলিক গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে প্রকাশের মতো দুটি চতুর্দশপদী কবিতাগ্রন্থ, দুটি মৌলিক প্রবন্ধের গ্রন্থ এবং একটি ছড়া ও সাধারণ কবিতাগ্রন্থ প্রকাশযোগ্য, যা হয়তো পরবর্তী দু-এক বছরের মধ্যে প্রকাশ করা সম্ভব হবে। বর্তমানে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প ও ফিচার প্রকাশিত হচ্ছে। এর মধ্যে ঠিকানা অন্যতম।
বিজ্ঞাপন পত্রিকার একটি ভিন্ন ও বিশেষ ধরনের খবর, যা প্রকাশের মাধ্যমে দুটি বিপরীত চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হয়। এর মাধ্যমে উভয় পক্ষই উপকৃত হয়। অপরপক্ষে এ খবর প্রকাশের মাধ্যমে পত্রিকারও বিজ্ঞাপন প্রচারের মাশুল হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থপ্রাপ্তি ঘটে, যা পত্রিকার আয়ের একটি প্রধান উৎস। এ কারণে বিজ্ঞাপন শুধু পত্রিকার আয়ের উৎস হিসেবে বিবেচিত না হয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত অন্যান্য সকল বিষয়ের মতো একটি মূল্যবান সংবাদ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রাপ্ত কথ্য থেকে যারা অন্তত জীবনে একবারও উপকৃত হয়েছেন, তাদের নিকট বিজ্ঞাপনের গুরুত্ব অপরিসীম এবং সারা জীবন তারা তথ্যের জন্য সংবাদপত্রের ওপর আস্থাবান ও নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সংবাদপত্রে খবরের যেসব বিভাগ রয়েছে, এর মধ্যে কূটনৈতিক প্রতিরক্ষা ক্রাইম অন্যতম, যা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বৈদেশিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও জনজীবনে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, অন্য দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়। তবে বিষয়টি নির্ভর করে সংবাদের গুরুত্ব অনুযায়ী রাষ্ট্র কর্তৃক তা আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ওপর।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও জাতীয় জীবনে ছোট-বড় অনেক আনন্দ-উৎসবের উপলক্ষ থাকে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এরূপ অনেক উৎসব আয়োজন করে থাকে। সংবাদপত্রশিল্প প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা get-together হিসেবে তাদের অনুষ্ঠানের যে আয়োজন করে, সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার অনুরূপ বার্ষিক আনন্দ আয়োজন get-together dinner হিসেবে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়ে আসছে। ঠিকানায় কবি, লেখক, কলামিস্ট ও গবেষক হিসেবে যারা সারা বছর নিঃস্বার্থভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লিখে পত্রিকার কলেবর ও পাঠকদের মনোজগৎ সমৃদ্ধ করে থাকেন, বার্ষিক আনন্দ আয়োজনে পত্রিকার পক্ষ থেকে তাদের আমন্ত্রণ জানানো ও তাদের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক সময় সম্মাননা প্রদান করা হয়। প্রতিবছর এটি অব্যাহত রেখে তাদের উৎসাহিত ও সম্মানিত করা যায় কি না ভেবে দেখা যেতে পারে। সকল বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে পত্রিকাটির মসৃণ পথচলা ও প্রকাশনার ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধশালী হয়ে সবার ভরসাস্থলে পরিণত হবে বলে কামনা করছি।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট ও গবেষক।