সৃষ্টিশীল প্রজ্ঞায় ‘নীরবতা’

প্রকাশ : ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২২:৪৪ , অনলাইন ভার্সন
পৃথিবীতে মনের ভাব প্রকাশের জন্য যতগুলো ভাষা রয়েছে, সব ভাষার উপরেই হলো নীরবতার ভাষা। নীরবতা ক্ষেত্রবিশেষে আলাদা আলাদা ভূমিকা পালন করে। কখনো দারুণ প্রতিবাদ, কখনো সম্মতি, কখনো উপেক্ষাÑআরও কত কী! এ রকম নানা অর্থবোধক অর্থকে প্রকাশ করে নীরবতা। কাজেই শাব্দিক শিল্প, চিত্র, সংগীত কিংবা মিশ্র শিল্পমাধ্যমগুলো এই নীরবতাকে শিল্পের মর্যাদা দিয়েছে। আসুন আজ জেনে নিই নীরবতা নিয়ে কিছু আলোচনা, যাহা কেবল আমাদেরকে নীরবতা পালন করতে শিখিয়ে দেবে আর নীরবতার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে সুযোগ করে দেবে।
নীরবতা হলো এক মহাশক্তির আধার। যখন সত্য নীরবতা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়, তখন সেই নীরবতা হলো একটি মিথ্যার সমান। নীরবতা হলো ক্ষমতার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। নীরবতা হলো একজন প্রকৃত জ্ঞানীর প্রত্যুত্তর। ভাষা আপনার মনকে সন্তুষ্ট করতে পারে, তবে নীরবতা আপনার আত্মাকে প্রশান্ত করবে। আপনার নীরবতা কখনোই আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না। নীরবতা তখনই কথা বলে, যখন ভাষা কথা বলতে পারে না।
একজন ভালো শ্রোতা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই নীরবতা কাকে বলে শিখতে হবে। কখনো কখনো আপনাকে কিছুই বলতে হয় না, নীরবতাই পুরোটা বলে দেয়। যে নীরবতাকে বুঝতে পারে না, সে আপনার মনের গভীরের ভাষা তো দূরের কথা, চিৎকার করা শব্দকেও খুব একটা বুঝতে পারবে না। নীরবতা যখন মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তখন নীরব থাকা সহজ হয় না। সবচেয়ে বাজে মিথ্যাগুলো সব সময় নীরবতার দ্বারাই সাধিত নয়। মিথ্যা শুধু কথার দ্বারাই নয় বরং নীরবতার দ্বারাও তা করা যায়।
নীরবতা একজন ব্যক্তির সত্যিকারের বন্ধু, যে তাকে তার সমস্ত অবাঞ্ছিত কষ্ট থেকে রক্ষা করে। নীরবতা একজন ব্যক্তির দুর্বলতা নয়, এটি তার আভিজাত্য। অর্থহীন কথা বলার চেয়ে নীরবতা ভালো। নীরবতা কথোপকথনের একটি মহান শিল্প। নীরবতা হলো শেষ জিনিস, যা বিশ্ব আমার কাছ থেকে শুনতে পাবে। নীরবতা আত্মার সতেজতা। শেষ পর্যন্ত আমরা আমাদের শত্রুদের কথা নয়, আমাদের বন্ধুদের নীরবতা মনে রাখি। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই নীরবতা বিরাজ করছে। মহাবিশ্বের মতো বিশাল নীরবতা এবং যখন আমরা সেই নীরবতা অনুভব করি, তখন আমরা মনে করি আমরা কে। নীরবতা সত্যের জননী। নীরবতা কখনো কখনো সেরা উত্তর। আপনি যা বলতে যাচ্ছেন, তা নীরবতার চেয়ে সুন্দর হলেই মুখ খুলুন। নীরবতাও একটি কথোপকথন। যখন শব্দগুলো অস্পষ্ট হয়ে যায়, আমি ফটোগ্রাফের সঙ্গে ফোকাস করব। যখন ছবিগুলো অপর্যাপ্ত হয়ে যায়, আমি নীরবতায় সন্তুষ্ট থাকব। যা কিছু তৈরি হয়েছে, তা নীরবতা থেকে বেরিয়ে আসে। নীরবতার শূন্যতা থেকে চিন্তার উদ্ভব হয়। শব্দ শূন্যতা থেকে বেরিয়ে আসে। শূন্যতা থেকে আপনার নির্যাস ফুটে উঠেছে। সমস্ত কাজের সৃজনশীলতার জন্য কিছু স্থিরতা প্রয়োজন। নীরবতা সুবর্ণ হয়, যখন আপনি একটি ভালো উত্তর মনে করতে পারেন না। কথা বলার চেয়ে নীরবতা নিরাপদ। নীরবতা অনন্তকালের মতো গভীর, বক্তৃতা সময়ের মতো অগভীর। যে তোমার ভাষার প্রাধান্য দিতে পারে না, নীরবতাই তার প্রতি সর্বোত্তম উত্তর। নীরবতাকে নিজের দুর্বলতা নয়, নিজের শক্তি বানিয়ে ফেলুন। নীরবতার ভাষা সম্মতির লক্ষণ।
কথা বললেই মিথ্যা বলার সুযোগ থাকে বেশি। অথচ নীরব থাকলে অপ্রত্যাশিতভাবে সত্যি ফুটে ওঠে। জীবনের গভীরতম অনুভূতিগুলো প্রায়ই নীরবে প্রকাশ করা হয়। এমন নয় যে জ্ঞানী ব্যক্তি কথা বলতে জানেন না, তিনি নীরব থাকেন, কারণ তিনি জানেন কোথায় কথা বলতে হবে। যদি বলার মতো সুন্দর কিছু না থাকে, তাহলে চুপ থাকাই সবচেয়ে ভালো বিকল্প। নীরবতা অনেক কথাই বলে, সেই কথা কান দিয়ে নয়, মন দিয়ে শুনতে হয়। সব কথার জবাব দিতে নেই। সম্মান বাঁচাতে কখনো কখনো নীরবও থাকতে হয়।
আপনি নীরব মানে এই নয় যে আপনি নিষ্ক্রিয়। ঝড়ের আগে নিস্তব্ধতা ঝড়ের পূর্বাভাস দেয়। ছবি যেমন নীরব কবিতা, তেমনি নীরবতাও মুখর কবিতার জন্ম দিতে পারে। আপনি মেঘের কাছে নীরবতা আশা করবেন, সে আপনাকে কান্না উপহার দেবে। আর যদি গর্জন-মুখরতা চান, সে আপনাকে বজ্র-বিদ্যুৎ দেবে। তাই মুখরতা বা নীরবতা অন্যের কাছে চাইবেন না, নিজের কাজে লাগাবেন। একদিন সব মুখরতাই নীরব হয়ে যাবে। তাই নীরবতাগুলোকে না জমিয়ে মুখর করে রেখে যাবেন আপনার কর্মের মাধ্যমে।
যখন আমরা নীরব থাকি, আমাদের মস্তিষ্ক একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি পায়, যা সৃষ্টিশীলতাকে উদ্দীপ্ত করে। এই মানসিক প্রশান্তি শুধু আমাদের ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি আমাদের সম্পর্কগুলোর গভীরতাকেও বাড়িয়ে তোলে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে নীরবতার  ওপর স্ট্যাটাস পোস্ট করলে সেই পোস্টটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কারণ এটি একটি সচেতনতার প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
রাতের আকাশটা দেখলেই বোঝা যায়, নীরবতা কতটা অসাধারণ। নীরবতা মানেই সবকিছু মেনে নেওয়া নয়, কিছু নীরবতা নিজের শান্তির জন্যও হয়। অপ্রকাশিত কষ্টের একমাত্র প্রকাশ নীরবতা। যে তোমার নীরবতা দেখে মন খারাপ বুঝতে পারে না, তাকে গল্প লিখে দিলেও সে বুঝবে না। মানুষ নীরবতা আর অভিমান বোঝে না বলেই পৃথিবীতে এত বিচ্ছেদ! জ্ঞানীদের সমাবেশে নীরবতা হলো অজ্ঞদের অলংকার। জীবনে যত বড় হবে, ততই বুঝতে পারবে কোনো বিষয়ে তর্ক করার চেয়ে নীরব থাকাই শ্রেয়। আপনি যত বেশি স্মার্ট হবেন, তত কম কথা বলবেন। একজন মূর্খকে তার কথায় চেনা যায়, আর একজন জ্ঞানীকে তার নীরবতায়। জীবনের গভীরতম অনুভূতিগুলো প্রায়ই নীরবতার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। সুন্দর জিনিস সম্পর্কে কথা বলা অবশ্যই সুন্দর, তবে নীরবে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকা আরও বেশি সুন্দর। আপনার কণ্ঠ হয়তো আপনার পরিচয় প্রকাশ করবে, কিন্তু আপনার নীরবতা আর সংগ্রামই আপনার আসল পরিচয় তৈরি করবে। অতিরিক্ত কথা বললে চিন্তার পরিধি সংকীর্ণ হয়, কিন্তু কম কথা বললে চিন্তার পরিধি আরও প্রসারিত হয়। কথা বলার জন্য যেমন সাহস আর ক্ষমতা লাগে, চুপ থাকার জন্য তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তি আর যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। যেখানে সবাই নিজেকে জ্ঞানী ভাবে, সেখানে নীরব থাকাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। সৃষ্টিকর্তা আমাদের দুটি কান আর একটি মুখ দিয়েছেন, যাতে আমরা বেশি শুনি আর কম বলি। যদি বলার মতো কিছু সুন্দর না থাকে, তাহলে চুপ থাকা সর্বোত্তম বিকল্প। অজ্ঞের জন্য নীরবতা সর্বোত্তম পন্থা, যদি সবাই এটা জানত, তাহলে কেউ কখনো অজ্ঞ থাকত না। কারও কথা শোনার জন্য প্রশ্ন করার চেয়ে চুপ করে তার কথা শোনাই বেশি কার্যকর। নীরবতার মাঝেও অনেক কিছু বলা থাকে। নিঃশব্দের ভাষা সবচেয়ে কার্যকর, তবে খুব কম মানুষই তা ব্যবহার করতে পারে। নীরবতা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চিৎকার, যা বোঝার ক্ষমতা সবার থাকে না। অপরাধ না করেও অপরাধী হলে চুপ থাকাই শ্রেয়, কারণ চিৎকার করে নির্দোষ প্রমাণ করা যায় না। অবিরাম কথা বললে জ্ঞান সীমাবদ্ধ হয়, কিন্তু অবিরাম শোনার মাধ্যমে জ্ঞান বৃদ্ধি পায়। মনের ভাব প্রকাশ করতে সব সময় ভাষার প্রয়োজন হয় না, কিছুক্ষণের নীরবতায় অনেক কিছু বোঝা যায়। সেই ব্যক্তিই সুখী ও সমৃদ্ধ, যে রাগের সময় নিজেকে চুপ রাখতে জানে। যেখানে চিন্তা ও সত্যকে সম্মান করা হয় না, সেখানে নীরব থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন নীরব থাকা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। হাসি এবং নীরবতা দুটোই শক্তিশালী গুণ। হাসি দিয়ে সমস্যার মোকাবিলা করা যায়, আর নীরবতায় সমস্যা এড়ানো যায়। একজন শান্ত মানুষের কথা শুনতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ থাকে সেই ব্যক্তির, যে সর্বাধিক কথা বলে। আপনার কথা বিজয় নিশ্চিত করে না, কিন্তু আপনার কাজ তা করতে পারে। একদিন সেই চঞ্চল মেয়েটাও কোনো এক আঘাতে নীরব হয়ে যায়। নীরবতা হলো ক্ষমতার সবচেয়ে বড় অস্ত্র। নীরবতা হলো একজন প্রকৃত জ্ঞানীর প্রতিবাদের ভাষা। নীরবতা সত্যের জননী। তাই মহান ব্যক্তিগণ ধ্যান, মোরাকাবা বা মেডিটেশন করতেন। আপনার নীরবতা তাৎক্ষণিক রক্ষা করতে পারবে না, তবে ভবিষ্যতের দিকনিদর্শন করতে সক্ষম ওষুধ। নীরবতা আত্মার সতেজতা, কখনো কখনো আপনাকে কিছুই বলতে হয় না, নীরবতাই পুরোটা বলে দেয়। ‘নীরবতাই শ্রেষ্ঠ ইবাদত।’ ইসলামে নীরবতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নীরবতা এমন এক ইবাদত, যার জন্য কোনো কষ্ট করতে হয় না কিন্তু তাৎপর্য অনেক বড়। নীরবতার মাঝে লুকিয়ে থাকে অজানা শক্তি ও প্রশান্তি, যা মনকে মুক্তি দেয় এবং আত্মার গভীরে নতুন পথের সন্ধান এনে দেয়।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078