প্রতিহিংসার রাজনীতি ঐক্য সহায়ক নয়

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২০:৪৬ , অনলাইন ভার্সন
বাংলাদেশ এখন ঘটনার ঘনঘটায় পূর্ণ। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে, বাংলাদেশ যেন গভীর থেকে গভীরতর অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে। মানুষ যত আশায় বুক বাঁধছে, ততই যেন আশা ভঙ্গ হচ্ছে। একি বাংলার মানুষের ললাট লিখন, নাকি যাদের ওপর বিশ্বাস রেখে পথে নেমেছে, রক্ত ও জীবন দিয়েছে, তারা ওয়াদা ভঙ্গ করেছে বারবার। ক্ষমতা পেয়েই তারা সাধারণ মানুষের কথা ভুলে গেছে। ক্ষমতাবানরা লোভের বৃত্তে নিজেদের এতটাই সমর্পণ করেন যে, তারা আর ডানে-বামে কোনো কিছু দেখতে পান না।
শেখ হাসিনার শেষ ১৬ বছরের শাসন এতটাই নিষ্ঠুর ও বর্বরতায় পূর্ণ ছিল যে স্বাধীন বাংলাদেশের লুটপাটের সব ইতিহাসকে মøান করে দেয়। তার দম্ভ, অহংকার ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার মাত্রা এতটাই সীমাহীন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তিনি নিজে, নিজের পিতা, বোন, ছেলেমেয়ে, আত্মীয়স্বজন এবং তার মোসাহেবরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ নিয়ে যার যেমন খুশি লুণ্ঠনে মেতে ওঠেন। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করে বাংলাদেশের ব্যাংক-বিমা ও অন্যান্য আর্থিক খাত ফোকলা করে দেন। এই লুণ্ঠনকারীরা নিজেদের স্বার্থে পতিত প্রধানমন্ত্রীকে এতটাই ভুল পথে টেনে নিয়ে যায় যে শেখ হাসিনার আর ফেরার পথ থাকে না। তিনি এতটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়েন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুুদ্ধ, দেশের সব অর্জন সবকিছু নিজের এবং নিজের পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান বলে ভাবতে থাকেন। দেশের অন্য সব মানুষকে রীতিমতো অবজ্ঞা, অবহেলা এবং অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপের বাইরে আর কিছু ভাবতে পারেন না। এমনকি দেশের অহংকার সামরিক বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি সবাইকে নিজের ব্যক্তিগত বাহিনী বলে ভাবতে শুরু করেন এবং বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সব আন্দোলন ব্যর্থ করে দিয়ে ভাবতে শুরু করেন, আমরণ তার রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত।
কিন্তু কথায় বলে, ‘তোমারে বধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে।’ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। বাঘা বাঘা রাজনৈতিক দলের বড় বড় আন্দোলন সামাল দিয়ে এলেও ভাঙা কাচে পা কাটার মতো ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কাছে হার মেনে অন্য দেশে আশ্রয় নিলেন তিনি। আসলে দুঃশাসন বেশি দিন স্থায়ী হয় নাÑইতিহাসের পাতায় তেমন উদাহরণ মেলে না। সম্ভবত ছাত্র-জনতার ওপর মানুষ আস্থা রেখেছিল। তাই সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়। এমনকি সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীও শেখ হাসিনার শাসন টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা নেয়। ফলে শেখ হাসিনার ১৬ বছরের সাজানো শাসন ভেঙে পড়ে।
মানুষ অতীতের মতো নয়, ছাত্র-জনতার ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রেখে আশায় বুক বাঁধে, এবার ঠিক বৈষম্য দূর হবে। সাধারণ মানুষকে আর কেউ বঞ্চিত করতে পারবে না। এতটা নিশ্চিত হয়ে অতীতে বুঝি আর কখনো এমন স্বপ্ন দেখেনি মানুষ। কিন্তু ‘হা হতোস্মি’। দুঃখে যাদের ললাট লিখন, তাদের দুঃখ বুঝি কারও পক্ষেই মোচন করা সম্ভব হয় না। বাঙালিদের দুঃখ তাই কোনো আমলেই দূর হলো না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফসল হিসেবে যে সরকার শপথ নিল, তারাও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে বৈষম্য থেকে মুক্তি দিতে পারল না। এমনকি কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। উল্টো দেশে যা ঘটছে, তা নিয়ে মানুষের সন্দেহ প্রবল হচ্ছে, এ সরকারও জন-আকাক্সক্ষা পূরণ করতে পারবে কি? নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায়, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের সাফল্য দেখতে না পেয়ে মানুষ হতাশ হয়ে পড়ছে। আইন ও সুবিচার বিধানেও মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য খুব একটা দেখতে পারছে না।
বর্তমান সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েও মানুষের মনে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। মানুষ ক্রমাগতভাবে অনুভব করতে পারছে, তারা বঞ্চিত হবে, তারা জীবন দেবে, মা সন্তানহারা হবে, স্ত্রী স্বামীহারা, সন্তানেরা পিতৃহীন হবে কিন্তু উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবে একদল স্বার্থলোভী মানুষ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন নিয়ে মানুষ এবার খুব বেশি আশাবাদী হয়েছিল। এবার তারা ঠকবে না। এবার ঠিক বৈষম্য ঘুচবে। তারা এবার ঠিক তাদের হিসাব বুঝে পাবে। এক ধর্মের মানুষ হয়েও শান্তি পায়নি বাঙালি মুসলমান। এক ভাষার মানুষ হয়েও স্বস্তি পায়নি বাংলাদেশের মানুষ। বারবার বঞ্চনা। বারবার স্বপ্নভঙ্গ।
অপারেশন ডেভিল হান্ট চালাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখন পর্যন্ত দেড় সহস্রাধিক মানুষকে আটক করেছে তারা। আটক যাদের করেছে, তারা কারা? মানুষ বলাবলি করছে, বিড়াল সাদা-কালো যা-ই হোক, সঠিক শিকার করতে পারবে তো? নাকি যে কদু সেই লাউ। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মনে হয় এখন আল্লাহর ওপর তাদের ভাগ্য সমর্পণ করে দিয়েছে। কত আর জীবন দেবে, কত আর ত্যাগ স্বীকার করবেÑসবকিছুরই তো একটা সীমা আছে। আর কত?
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। বিশ্বের সব মানুষের প্রতি ভালোবাসা দিবসের ভালোবাসা। আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক, প্রার্থনা হোক, বিশ্বের সব মানুষের মন ভালোবাসায় পূর্ণ হোক।
 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078