যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দিয়েছেন তার মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠান হবে। এ অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে সংলাপের একটি প্ল্যাটফর্ম। এরই মধ্যে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট আয়োজক ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি এবং সাউথ ক্যারোলিনার গভর্নর ডেভিড বিসলির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিনিধি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে যোগ দিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এসে পৌঁছেছেন। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। বাবার প্রতিনিধিত্ব করতে তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য নাতনি জাইমা রহমান তার বাবার প্রতিনিধিত্ব করতে এলেও অনেকে মনে করছেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোনো অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে জাইমা রহমানের রাজনীতিতে অভিষেক ঘটছে যাচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছেন তিনি। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাক্তার জোবায়দা রহমানের বড় মেয়ে জাইমা রহমান।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে বসবাস করলেও বেগম খালেদা জিয়ার বড় নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। ২০১৯ সালে বার অ্যাট ল’ পাশ করার পর থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক পরিবেশে এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যা জাইমা রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে নজর আরও বাড়িয়েছে।
এই আলোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই, জাইমা রহমান এখন তারেক রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে যোগ দিচ্ছেন। বিশ্লেষকরা একে জিয়া পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের রাজনীতিতে প্রবেশ হিসেবে দেখছেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা, ব্যবসায়ী এবং পেশাজীবীরা। এমন একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে জাইমা রহমান রাজনীতির মঞ্চে তার পদচারণা শুরু করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে অংশ নেওয়ার কথা ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর। তবে বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকায় তারেক রহমান এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছেন না। তার পরিবর্তে বিএনপি তার প্রতিনিধি হিসেবে জাইমা রহমানকে পাঠিয়েছে।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়াও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের নেতারা অংশ নেবেন। জাইমা রহমান এই সুযোগে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন, যা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
জাইমা রহমানের এই অংশগ্রহণকে অনেকেই তার আনুষ্ঠানিক রাজনীতিতে প্রবেশের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়ায় রাজনীতিতে তার আসার সম্ভাবনা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রে মূলধারার রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ মনে করেন, দলের ঐক্যবদ্ধতায় জাইমা রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’-এ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করবেন জাইমা, যা তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভূমিকার দিকেও ইঙ্গিত দিতে পারে।
গিয়াস আহমেদ বলেন, জাইমা রহমান শহীদ জিয়া পরিবারের সন্তান। তার ক্যারিয়ার ভালো। ব্যার অ্যাট ল সম্পন্ন করেছেন। আগামী দিনে তিনি যোগ্য নেতৃত্ব দেবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনিয়মে ভরে গেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে। আমলাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। দেশে ভাঙাগড়ার খেলা চলছে। পুরো দেশটা মনে হয় একটা জেলখানা।
গিয়াস আহমেদ বলেন, যারা বিদেশে আছেন তাদের চিন্তাভাবনা আধুনিক। তাদের দেশে ফিরে দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের আধুনিক চিন্তানির্ভর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। জাইমা রহমান একসময় বাংলাদেশে যাবেন। রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন। একসময় দেশেরও দায়িত্ব নেবেন। আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি।
শান্তি ও ঐক্যের এক অনন্য মঞ্চ ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট : বিশ্ব যখন নানা রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক বিভেদের মধ্যে বিভক্ত, তখন কিছু অনুষ্ঠান মানুষকে একত্রিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ এমন একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ, যা প্রতি বছর ওয়াশিংটনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ধর্মের নেতাদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসে।
এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা শুধু নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রার্থনা করেন না, বরং তারা পৃথিবীজুড়ে শান্তি, ঐক্য এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রিত হন। ১৯৫৩ সালে এর সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত এটি হয়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী বার্তা, যা সবার মধ্যে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং মানবতার প্রতি শ্রদ্ধার এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয় একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান, ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট। এর আয়োজনের পেছনে ছিলেন উইলিয়াম সিবরি, যিনি ১৯৫৩ সালে এই অনুষ্ঠানের ধারণা নিয়ে আসেন। এর পর থেকে এটি একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান হিসেবে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস সদস্য, বিশ্ব নেতারা, ধর্মীয় প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত অংশগ্রহণ করেন।
এই সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা তাদের ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন, শান্তি ও সহনশীলতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন। ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট একটি সম্মিলিত প্রার্থনা ও আলোচনার সময় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সারাবিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে নিজেদের ভিন্ন ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পরিচয় ছাপিয়ে মানবতার জন্য কাজ করার প্রেরণা লাভ করেন।
রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সবাই একত্র হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রার্থনা করেন এবং একে অপরকে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বের বার্তা দেন। এর গুরুত্ব শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দুনিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশও বিভিন্ন সময়ে এই প্রার্থনা সভায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে ছিল। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যার একটি বড় অংশ রয়েছে।
এই প্রার্থনা সভায় সব ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে যে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেন, তা বাংলাদেশের জন্যও এক দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ এই সভার মাধ্যমে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক দৃঢ় করার সুযোগ পায়। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সভায় অংশ নিয়ে ধর্মীয় সহনশীলতা, মানবাধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ে তাদের ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে এবং ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টের মতো আয়োজনগুলো বাংলাদেশের মতো দেশে শান্তি, ঐক্য ও মানবিক মূল্যবোধের প্রচার করতে সহায়তা করে। এটি একটি বৃহৎ আধ্যাত্মিক সমাবেশ হলেও এর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বও অপরিসীম। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা এবং ধর্মীয় গুরুরা একত্র হয়ে একে অপরের সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও দর্শন সম্পর্কে জানার সুযোগ পান।
এই সভার মাধ্যমে তারা পৃথিবীজুড়ে মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং সেই বার্তা তুলে ধরেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশই যদি এই জাতীয় আধ্যাত্মিক সমাবেশ থেকে শিক্ষা নেয় এবং সহনশীলতা, শান্তি ও সমঝোতার মূল্যে কাজ করে, তবে এটি পৃথিবীকে আরো ভালো ও শান্তিপূর্ণ জায়গা করে তুলতে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট আয়োজক ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি এবং সাউথ ক্যারোলিনার গভর্নর ডেভিড বিসলি রিপাবলিকান গভর্নরস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রেসিডেন্ট এবং ২০২০ সালে সিরিয়া, ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য তার নেতৃত্বের স্বীকৃতিতে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী। রোহিঙ্গা সংকটের সময় তিনি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে যোগ দিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে এসে পৌঁছেছেন। তবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। বাবার প্রতিনিধিত্ব করতে তিনি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য নাতনি জাইমা রহমান তার বাবার প্রতিনিধিত্ব করতে এলেও অনেকে মনে করছেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কোনো অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে জাইমা রহমানের রাজনীতিতে অভিষেক ঘটছে যাচ্ছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে সপরিবারে লন্ডনে বসবাস করছেন তিনি। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডাক্তার জোবায়দা রহমানের বড় মেয়ে জাইমা রহমান।
দীর্ঘদিন ধরে দেশের বাইরে বসবাস করলেও বেগম খালেদা জিয়ার বড় নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের আগ্রহের কোনো কমতি নেই। ২০১৯ সালে বার অ্যাট ল’ পাশ করার পর থেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে রাজনীতিতে আসার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। গেল ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে দেশে রাজনৈতিক পরিবেশে এক ধরনের পরিবর্তন এসেছে, যা জাইমা রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের দিকে নজর আরও বাড়িয়েছে।
এই আলোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই, জাইমা রহমান এখন তারেক রহমানের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে যোগ দিচ্ছেন। বিশ্লেষকরা একে জিয়া পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের রাজনীতিতে প্রবেশ হিসেবে দেখছেন। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা, ব্যবসায়ী এবং পেশাজীবীরা। এমন একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে জাইমা রহমান রাজনীতির মঞ্চে তার পদচারণা শুরু করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে অংশ নেওয়ার কথা ছিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর। তবে বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে থাকায় তারেক রহমান এই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারছেন না। তার পরিবর্তে বিএনপি তার প্রতিনিধি হিসেবে জাইমা রহমানকে পাঠিয়েছে।
অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়াও বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের নেতারা অংশ নেবেন। জাইমা রহমান এই সুযোগে বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক ও পেশাজীবী নেতাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন, যা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
জাইমা রহমানের এই অংশগ্রহণকে অনেকেই তার আনুষ্ঠানিক রাজনীতিতে প্রবেশের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি একটি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়ায় রাজনীতিতে তার আসার সম্ভাবনা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যুক্তরাষ্ট্রে মূলধারার রাজনীতিক গিয়াস আহমেদ মনে করেন, দলের ঐক্যবদ্ধতায় জাইমা রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’-এ অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপির প্রতিনিধিত্ব করবেন জাইমা, যা তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভূমিকার দিকেও ইঙ্গিত দিতে পারে।
গিয়াস আহমেদ বলেন, জাইমা রহমান শহীদ জিয়া পরিবারের সন্তান। তার ক্যারিয়ার ভালো। ব্যার অ্যাট ল সম্পন্ন করেছেন। আগামী দিনে তিনি যোগ্য নেতৃত্ব দেবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনিয়মে ভরে গেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে। আমলাদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। দেশে ভাঙাগড়ার খেলা চলছে। পুরো দেশটা মনে হয় একটা জেলখানা।
গিয়াস আহমেদ বলেন, যারা বিদেশে আছেন তাদের চিন্তাভাবনা আধুনিক। তাদের দেশে ফিরে দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের আধুনিক চিন্তানির্ভর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। জাইমা রহমান একসময় বাংলাদেশে যাবেন। রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন। একসময় দেশেরও দায়িত্ব নেবেন। আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবেন। আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি।
শান্তি ও ঐক্যের এক অনন্য মঞ্চ ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট : বিশ্ব যখন নানা রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক বিভেদের মধ্যে বিভক্ত, তখন কিছু অনুষ্ঠান মানুষকে একত্রিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ এমন একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ, যা প্রতি বছর ওয়াশিংটনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ধর্মের নেতাদের এক ছাতার নিচে নিয়ে আসে।
এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা শুধু নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রার্থনা করেন না, বরং তারা পৃথিবীজুড়ে শান্তি, ঐক্য এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য একত্রিত হন। ১৯৫৩ সালে এর সূচনা থেকে আজ পর্যন্ত এটি হয়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী বার্তা, যা সবার মধ্যে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং মানবতার প্রতি শ্রদ্ধার এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার, যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয় একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান, ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট। এর আয়োজনের পেছনে ছিলেন উইলিয়াম সিবরি, যিনি ১৯৫৩ সালে এই অনুষ্ঠানের ধারণা নিয়ে আসেন। এর পর থেকে এটি একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান হিসেবে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট, কংগ্রেস সদস্য, বিশ্ব নেতারা, ধর্মীয় প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত অংশগ্রহণ করেন।
এই সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা তাদের ব্যক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাস এবং জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে একে অপরের সঙ্গে কথা বলেন, শান্তি ও সহনশীলতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন। ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট একটি সম্মিলিত প্রার্থনা ও আলোচনার সময় হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সারাবিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে নিজেদের ভিন্ন ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক পরিচয় ছাপিয়ে মানবতার জন্য কাজ করার প্রেরণা লাভ করেন।
রাজনৈতিক বা ধর্মীয় বিভেদ ভুলে সবাই একত্র হয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রার্থনা করেন এবং একে অপরকে সুসম্পর্ক ও বন্ধুত্বের বার্তা দেন। এর গুরুত্ব শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা দুনিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং এর প্রভাব বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশও বিভিন্ন সময়ে এই প্রার্থনা সভায় অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে ছিল। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা, যেখানে মুসলিম জনসংখ্যার একটি বড় অংশ রয়েছে।
এই প্রার্থনা সভায় সব ধর্মের মানুষ একত্রিত হয়ে যে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেন, তা বাংলাদেশের জন্যও এক দৃষ্টান্ত। বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ এই সভার মাধ্যমে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার সম্পর্ক দৃঢ় করার সুযোগ পায়। বাংলাদেশের প্রতিনিধিরাও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই সভায় অংশ নিয়ে ধর্মীয় সহনশীলতা, মানবাধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ে তাদের ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করেছেন।
বাংলাদেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে এবং ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টের মতো আয়োজনগুলো বাংলাদেশের মতো দেশে শান্তি, ঐক্য ও মানবিক মূল্যবোধের প্রচার করতে সহায়তা করে। এটি একটি বৃহৎ আধ্যাত্মিক সমাবেশ হলেও এর সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্বও অপরিসীম। এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা এবং ধর্মীয় গুরুরা একত্র হয়ে একে অপরের সংস্কৃতি, বিশ্বাস ও দর্শন সম্পর্কে জানার সুযোগ পান।
এই সভার মাধ্যমে তারা পৃথিবীজুড়ে মানবিক মূল্যবোধের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন এবং সেই বার্তা তুলে ধরেন। বিশ্বের প্রতিটি দেশই যদি এই জাতীয় আধ্যাত্মিক সমাবেশ থেকে শিক্ষা নেয় এবং সহনশীলতা, শান্তি ও সমঝোতার মূল্যে কাজ করে, তবে এটি পৃথিবীকে আরো ভালো ও শান্তিপূর্ণ জায়গা করে তুলতে সহায়তা করবে।
উল্লেখ্য, ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট আয়োজক ফাউন্ডেশনের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি এবং সাউথ ক্যারোলিনার গভর্নর ডেভিড বিসলি রিপাবলিকান গভর্নরস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি। জাতিসংঘের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের প্রেসিডেন্ট এবং ২০২০ সালে সিরিয়া, ইয়েমেন ও আফগানিস্তানে মানবিক সাহায্য দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য তার নেতৃত্বের স্বীকৃতিতে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী। রোহিঙ্গা সংকটের সময় তিনি বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ব ব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম।