
জীবন সম্পর্কে যদি একটি অনুভূতিশীল প্রত্যয় থাকে, তবে সেটি খুব দ্রুত আমার কাছে চলে আসে। যেখানে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমি অনেক কিছু অনুভব করতে পারি, যার মধ্যে রয়েছে সমস্ত ভালো লাগা, কিছু গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং জীবনবোধ, যা আমাদের ভাবনাকে শক্তিশালী করে তোলে। এটা জেনে আমি স্বস্তিদায়ক বোধ করতে পারি যে আমি এই জীবনে একা হাঁটছি না। এমনকি আমি এটি প্রমাণ করার জন্য সেরা কিছু উপলব্ধির একটি তালিকা তৈরি করেছি! কারণ আমি অনেক দূরে যেতে পারব বলে মনে করি। অন্যরাও একই জিনিস অনুভব করতে পারে আমার অনুভব জেনে। তাই আপনাদের জন্য আজকে আমার এই আয়োজন।
আমি মনে করি, অন্যের জন্য বেঁচে থাকা জীবনই সার্থক ও সফল জীবন। জীবন যা দেয় তার জন্য আপত্তি করি না; জীবনকে আরও উন্নত করতে চেষ্টা করি এবং কিছু তৈরি করতেও অধীর আগ্রহে থাকি আর উপভোগ করি। আমি যত বেশি সময় বাঁচি, জীবন তত সুন্দর হয় বলে মনে করি। আমি আমার জীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েছি এবং সে কারণেই আমি সফল হয়েছি বলে মনে করি। ব্যর্থতার পরিমাণ যতটা বড়, সফলতাও তত বেশি। জীবন চলার পথে বাধা আসতেই পারে, তাই বলে থেমে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যেখানে বাধা আসবে, সেখান থেকেই আবার শুরু করতে হবে। কখনো জীবন কঠিন, আমি যখন বোকা হই বা অবহেলা করি, তখন তা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। কখনো মুহূর্তের জন্য আনন্দিত হই আর সেই মুহূর্তটিই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
নিজেকে দমন করতে যদি না পারি, তবে নিজের জন্যও বিপজ্জনক এবং অন্যদের জন্য তো বটেই। জীবন মজার না হলে করুণ হয়ে উঠত। আমি যেখানেই থাকি, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করি। অন্যথায় আমি আমার জীবনকে হারিয়ে ফেলতাম। জীবনে একবারই বাঁচতে চাই, তবে যদি ঠিকভাবে বাঁচা যায়, আর তা একবারই যথেষ্ট। জীবনে যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছি, তা দিয়ে কয়েক হাজার বছর বেঁচে থাকা সম্ভব কিন্তু জীবনে গুটি কয়েকজন মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণ অবহেলা পেয়েছি, তা দিয়ে এক দিনও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
আমি যদি ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করে আমার পুরো জীবন ব্যয় করি, তবে আমি কখনোই রোদ উপভোগ করতে পারব না। আমি যদি জীবনকে ভালোবাসি, তবে সময় নষ্ট করব কেন? আমি জানি, সময়ই জীবন দিয়ে সৃষ্টি। আবার প্রতিদিন আমার এমনভাবে কাটানো উচিত, যেন আজই জীবনের শেষ দিন। সুখ হলো সেই অনুভূতি, যা জীবনের শক্তি বৃদ্ধি করে, আর সকল প্রতিরোধকে পরাস্ত করে। যদি মানুষ জানত যে আমি আমার আয়ত্ত পাওয়ার জন্য কতটা পরিশ্রম করেছি, তবে এটি এতটা দুর্দান্ত বলে মনে হতো না। মানুষের মন যেদিন ক্লান্ত হয়, সেদিনই তার মৃত্যু হয়। স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়, তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়, তাকে সঙ্গে নিয়েই চলি, স্বপ্ন ছাড়া জীবনটাই অর্থহীন।
জীবনের ট্র্যাজেডি হলো আমরা খুব তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাই এবং জ্ঞানী হই খুব দেরিতে। সমস্ত জীবন একটি পরীক্ষা, আরও বেশি পরীক্ষায় আমি নিজেকে সর্বোত্তম করে তুলতে চাই। জীবনে কোনো অনুশোচনা করি না, কেবল তা পাঠ করে যাই। তাই জীবন হলো ফুলের মতো আর তার মধুই হলো মানুষের ভালোবাসা। জীবন হলো সাইকেল চালানোর মতো। আমার ভারসাম্য বজায় রেখে আমাকে অবশ্যই চলতে হবে। আমার সময় সীমিত, সুতরাং অন্য কারও জীবনযাপন করাতে গিয়ে ওটাকে ব্যয় করতে চাই না। আমার জীবন খুবই আকর্ষণীয়, হয়তো শেষ অবধি এমনটাই থাকবে। আমরা সবচেয়ে বড় যন্ত্রণার মধ্যেও সবচেয়ে বড় শক্তিশালী হয়ে উঠি।
আমি তো সুখে থাকতে চাই সব সময় কিন্তু কিছু মানুষের কারণেই জীবনে সুখে থাকতে চাওয়াটাই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেই মুহূর্তের জন্য খুশি হই, সেই মুহূর্তটিকেই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে করি। আমি একজন পেশাদারের মতোই নিয়মগুলো শিখি, যাতে শিল্পীর মতো সেগুলো ভাঙতে বা গড়তে পারি। যদি জীবনকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাই, তবে সেটি জীবন থেকে সময় নষ্ট করা হবে এবং জীবন স্বাদহীন হয়ে উঠবে। আমার কাছে জীবন একটি পর্বত। আমার লক্ষ্য আমার পথটি সন্ধান করা, শীর্ষে পৌঁছানো নয়। আমার জীবনে দুইটা সময় থাকে, একটা হচ্ছে মূল্যবান আরেকটা হচ্ছে মূল্যহীন। তবে আমার জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সুখী হওয়া।
আমার জীবনের দশ শতাংশ যা আমার সাথে ঘটে আর নব্বই শতাংশই নির্ভর করে যা আমি করি তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। আমি চেষ্টা করি আমার ক্ষতগুলোকে জ্ঞানে পরিণত করতে। আমি যখন কিছু নিয়ে পরিকল্পনা করতে ব্যস্ত থাকি, তখনই জীবন সার্থক হয়ে ওঠে। আমার জীবন আমার সাহসের অনুপাতে সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। আমার শুরু করার উপায় হলো কথা বলা ছেড়ে দেওয়া এবং কাজ শুরু করা। যারা আমাকে সাহায্য করতে মানা করে দিয়েছিল, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ তাদের ‘না’ এর জন্যই আজ আমি নিজের কাজ নিজে করতে শিখেছি। আমি যখন একটি সুখী জীবনযাপন করতে চাই, তখন এটিকে একটি লক্ষ্যের সঙ্গে বেঁধে রাখি, মানুষ কিংবা কোনো জিনিসের সঙ্গে নয়। তবে সাময়িক প্রয়োজন কখনো কখনো দীর্ঘ সময়ের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কখনো কেউ কোনো আঘাত করার ভয়ে আমি জীবনের খেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে দিই না। আমি মনে করি, মানুষের পুরো জীবনটা হচ্ছে একটা সরল অঙ্ক, যতই দিন যাচ্ছে ততই আমরা তার সমাধানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। অর্থ ও সাফল্য মানুষকে বাহ্যিক পরিবর্তন করে; তারা কেবল সেখানে যা আছে তা বৃদ্ধি করে। বাস্তবতার জগতের সীমা আছে; কল্পনার জগৎ সীমাহীন। আমি চেষ্টা করি যতটা পারি, সমস্ত লোকের জন্য যতটা পারি, যতক্ষণ পারি ততটা ভালো কিছু করতে। কত দিন বেঁচে থাকব তা নয়, তবে আমি কতটা ভালোভাবে মানুষের মাঝে বেঁচে আছি, সেটাই মূল বিষয়। সেই সঙ্গে আমি সমালোচনা পছন্দ করি। এটি আমাকে শক্তিশালী করে তোলে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি হলো একটি অভিশাপের নাম, জন্ম থেকেই যাদের জীবন কাটে মানিয়ে নেওয়া আর মেনে নেওয়ার মাধ্যমে। আমি বৃষ্টিতে হাঁটতে ভালোবাসি, কারণ তাতে চোখের জল বোঝা যায় না।
জীবন সম্পর্কে লিখতে হলে প্রথমে আপনাকে আমাকে বাঁচতে হবে। আমি জিততে পারি এবং আমি হারতে পারি, কিন্তু আমি কখনোই পরাজিত হব না। শিখেছি একটি সফল জীবনের সম্পূর্ণ রহস্য হলো একজনের ভাগ্য কী তা খুঁজে বের করা এবং তারপর তা-ই করা। জীবন কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি নয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো অনুভব করে বুঝতে হবে কীভাবে তা সমাধান করা যায়। মনে রাখি, অপরীক্ষিত জীবন বেঁচে থাকার যোগ্য নয়। অনেকে বিখ্যাত হতে চায়, কিন্তু কেউ কাজ করতে চায় না। আমি জানি, কঠোর পরিশ্রমে জীবনের সফলতা হবেই একদিন। কারও ভুল হয়তো সংশোধন করা যায় কিন্তু কারও স্বভাব পরিবর্তন করা যায় না। তাই কারও স্বভাব পরিবর্তন করতে গিয়ে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন না দিয়ে বরং সেখান থেকে সরে আসাটাই হলো প্রকৃত ব্যক্তিত্বের পরিচয়।
এটা সত্য, নিরানব্বই শতাংশ ব্যর্থতা আসে যারা অজুহাত তৈরি করে তাদের জন্য। নেতিবাচক সবকিছুÑচাপ, চ্যালেঞ্জÑসবই আমার জন্য উত্থানের সুযোগ। আমি আমার চিন্তা দেখি; তারা শব্দ হয়ে ওঠে। আর যখন শব্দ দেখি; তারা তখন কাজ হয়ে যায়। আর যখন আমার কর্ম দেখি; সেগুলো অভ্যাস হয়ে যায়। আর যখন অভ্যাস দেখি; তারা চরিত্র হয়ে ওঠে। আর যখন চরিত্র দেখি; সেটি আমার ভাগ্য হয়ে ওঠে। একটি খ্যাতি তৈরি করতে ২০ বছর সময় লাগে এবং এটি নষ্ট করতে পাঁচ মিনিট সময় লাগে। আমি যদি এটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে চিন্তা করি, তবে আমি জিনিসটিকে ভিন্নভাবে দেখি। জীবন আমার ওপর এমন কিছু চাপিয়ে দেয়, যা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না হয়তো, তবে আমি কীভাবে এটির মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করি, জীবন কখনো সহজ, তবে কাজ করতে হবে এবং বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবেÑসত্য, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতার বাধ্যবাধকতা মেনে নিতে হবে। জীবন সত্যিই সহজ, তাই এটিকে জটিল করার জন্য কখনো জোর দিই না। এটাও বুঝি, জীবন হলো পাঠের ধারাবাহিকতা, যা বোঝার জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা থাকতে হবে। মনে রাখি, স্বাস্থ্যই সবচেয়ে বড় উপহার আর তৃপ্তিই হলো সবচেয়ে বড় সম্পদ, সেই সঙ্গে বিশ্বস্ততা সবচেয়ে মূল্যবান। একজন ভালো মানুষের জীবনের সেরা অংশ হলো তার সামান্য নামহীন, দয়া এবং ভালোবাসার কার্যকর কাজ। আমি যদি মনে করি যে আমি নেতৃত্ব দিচ্ছি এবং কেউ তা অনুসরণ করছে না, শুধু দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে, তাহলে আমি বুঝতে পারি আমি কেবলই সফলতার দিকে হাঁটছি। তাতে জীবনে একটি প্রবহমান প্রভাব তৈরি করা হয়।
জীবন আমাকে যা দেয় তার জন্য স্থির থাকি না, জীবনকে আরও ভালো করার এবং ভালো কিছু তৈরি করার চেষ্টা করি। দুর্দান্ত মুহূর্তগুলো দুর্দান্ত সুযোগের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। হাসতে থাকি, কারণ জীবন একটি সুন্দর জিনিস এবং এতে হাসির অনেক কিছু আছে। কেউ সম্পূর্ণ আমার মতো হবে না, একইভাবে আমিও কারও মতো হব না, দুজনের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকবেই আর এই পার্থক্যটুকু মানিয়ে নেওয়ার নামই হলো ধৈর্য। রোদে বাস করি, সমুদ্রে সাঁতার কাটি, বন্য বাতাস পান করি, কারণ প্রকৃতির যতটা কাছে থাকা যায়, ততই মঙ্গল। যখন আমি আমার পক্ষে যথাসাধ্য চেষ্টা করি, তখন আমি কখনোই জানি না যে আমাদের জীবনে বা আমার জীবনে কী অলৌকিক ঘটনা ঘটতে চলেছে তখন আমি শান্ত থাকি এবং কার্যক্রম চালিয়ে যাই। আর সে জন্যই প্রতিটি সেকেন্ডের জন্য বিনা দ্বিধায় বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।
হয়তো এটাই জীবন... চোখের পলক আর তার রূপ, রস ও গন্ধের ঝলক। মানুষ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে সেটা হয়তো ভুলে যায়। আর এরপর যেই ব্যবহারটা করে, সেটাই তার আসল চরিত্র। আমি বই এবং উদাহরণ থেকে শিখি। প্রকৃত শিক্ষার জন্য আমাকে সেই কাজগুলোই করতে হবে। আমার মাথায় মস্তিষ্ক আছে, আমার জুতা পায়ে আছে, আমি আমার পথ আমার পছন্দমতো বেছে নিতেই পারি। আমিও সেটাই করার চেষ্টা করি আর সেভাবেই মানুষের ভালোবাসা কুড়াই। জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দই হলো ভালোবাসা পাওয়ার মাঝে। ভালো বন্ধু, ভালো বই এবং একটি জাগ্রত বিবেক : এটিই আমার জীবনের আদর্শ। আবার জীবন জ্ঞানীদের জন্য একটি স্বপ্ন, বোকাদের জন্য একটি খেলা, ধনীদের জন্য একটি কৌতুক, দরিদ্রদের জন্য একটি ট্র্যাজেডি বলে মনে করি।
‘আমার আমি’ আমার জীবন নিয়ে কিছু কথামালা লেখাটি আপনাদেরকে ব্যথিত বা উদ্ভাসিত করতে পারে কিংবা আঘাতও করতে পারে, আপনার বিবেককে কিংবা আবেগকে। কারণ আমি জানি, জীবন কখনো কখনো চড়াই- উতরাইয়ের মুখোমুখি হয়ে কিছু স্মৃতি বিদূর হয়েই ওঠে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বা বর্তমান পরিস্থিতি নির্বিশেষে, এই জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজের জীবন নিয়ে লেখামালাগুলো সাক্ষ্য রেখে গেলাম। আপনারাও এক বা একাধিক কিংবা অন্য উপায়ে অনুপ্রাণিত হতে পারেন। তবে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করে রাখতে পারাই হলো সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। আর সেটাই নিশ্চিত সত্য বলে আমি মনে করি।
আমি মনে করি, অন্যের জন্য বেঁচে থাকা জীবনই সার্থক ও সফল জীবন। জীবন যা দেয় তার জন্য আপত্তি করি না; জীবনকে আরও উন্নত করতে চেষ্টা করি এবং কিছু তৈরি করতেও অধীর আগ্রহে থাকি আর উপভোগ করি। আমি যত বেশি সময় বাঁচি, জীবন তত সুন্দর হয় বলে মনে করি। আমি আমার জীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েছি এবং সে কারণেই আমি সফল হয়েছি বলে মনে করি। ব্যর্থতার পরিমাণ যতটা বড়, সফলতাও তত বেশি। জীবন চলার পথে বাধা আসতেই পারে, তাই বলে থেমে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। যেখানে বাধা আসবে, সেখান থেকেই আবার শুরু করতে হবে। কখনো জীবন কঠিন, আমি যখন বোকা হই বা অবহেলা করি, তখন তা আরও কঠিন হয়ে ওঠে। কখনো মুহূর্তের জন্য আনন্দিত হই আর সেই মুহূর্তটিই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।
নিজেকে দমন করতে যদি না পারি, তবে নিজের জন্যও বিপজ্জনক এবং অন্যদের জন্য তো বটেই। জীবন মজার না হলে করুণ হয়ে উঠত। আমি যেখানেই থাকি, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করি। অন্যথায় আমি আমার জীবনকে হারিয়ে ফেলতাম। জীবনে একবারই বাঁচতে চাই, তবে যদি ঠিকভাবে বাঁচা যায়, আর তা একবারই যথেষ্ট। জীবনে যে পরিমাণ ভালোবাসা পেয়েছি, তা দিয়ে কয়েক হাজার বছর বেঁচে থাকা সম্ভব কিন্তু জীবনে গুটি কয়েকজন মানুষের কাছ থেকে যে পরিমাণ অবহেলা পেয়েছি, তা দিয়ে এক দিনও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়।
আমি যদি ঝড়ের জন্য অপেক্ষা করে আমার পুরো জীবন ব্যয় করি, তবে আমি কখনোই রোদ উপভোগ করতে পারব না। আমি যদি জীবনকে ভালোবাসি, তবে সময় নষ্ট করব কেন? আমি জানি, সময়ই জীবন দিয়ে সৃষ্টি। আবার প্রতিদিন আমার এমনভাবে কাটানো উচিত, যেন আজই জীবনের শেষ দিন। সুখ হলো সেই অনুভূতি, যা জীবনের শক্তি বৃদ্ধি করে, আর সকল প্রতিরোধকে পরাস্ত করে। যদি মানুষ জানত যে আমি আমার আয়ত্ত পাওয়ার জন্য কতটা পরিশ্রম করেছি, তবে এটি এতটা দুর্দান্ত বলে মনে হতো না। মানুষের মন যেদিন ক্লান্ত হয়, সেদিনই তার মৃত্যু হয়। স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়, তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়, তাকে সঙ্গে নিয়েই চলি, স্বপ্ন ছাড়া জীবনটাই অর্থহীন।
জীবনের ট্র্যাজেডি হলো আমরা খুব তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যাই এবং জ্ঞানী হই খুব দেরিতে। সমস্ত জীবন একটি পরীক্ষা, আরও বেশি পরীক্ষায় আমি নিজেকে সর্বোত্তম করে তুলতে চাই। জীবনে কোনো অনুশোচনা করি না, কেবল তা পাঠ করে যাই। তাই জীবন হলো ফুলের মতো আর তার মধুই হলো মানুষের ভালোবাসা। জীবন হলো সাইকেল চালানোর মতো। আমার ভারসাম্য বজায় রেখে আমাকে অবশ্যই চলতে হবে। আমার সময় সীমিত, সুতরাং অন্য কারও জীবনযাপন করাতে গিয়ে ওটাকে ব্যয় করতে চাই না। আমার জীবন খুবই আকর্ষণীয়, হয়তো শেষ অবধি এমনটাই থাকবে। আমরা সবচেয়ে বড় যন্ত্রণার মধ্যেও সবচেয়ে বড় শক্তিশালী হয়ে উঠি।
আমি তো সুখে থাকতে চাই সব সময় কিন্তু কিছু মানুষের কারণেই জীবনে সুখে থাকতে চাওয়াটাই দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেই মুহূর্তের জন্য খুশি হই, সেই মুহূর্তটিকেই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে করি। আমি একজন পেশাদারের মতোই নিয়মগুলো শিখি, যাতে শিল্পীর মতো সেগুলো ভাঙতে বা গড়তে পারি। যদি জীবনকে নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাই, তবে সেটি জীবন থেকে সময় নষ্ট করা হবে এবং জীবন স্বাদহীন হয়ে উঠবে। আমার কাছে জীবন একটি পর্বত। আমার লক্ষ্য আমার পথটি সন্ধান করা, শীর্ষে পৌঁছানো নয়। আমার জীবনে দুইটা সময় থাকে, একটা হচ্ছে মূল্যবান আরেকটা হচ্ছে মূল্যহীন। তবে আমার জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সুখী হওয়া।
আমার জীবনের দশ শতাংশ যা আমার সাথে ঘটে আর নব্বই শতাংশই নির্ভর করে যা আমি করি তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে। আমি চেষ্টা করি আমার ক্ষতগুলোকে জ্ঞানে পরিণত করতে। আমি যখন কিছু নিয়ে পরিকল্পনা করতে ব্যস্ত থাকি, তখনই জীবন সার্থক হয়ে ওঠে। আমার জীবন আমার সাহসের অনুপাতে সংকুচিত বা প্রসারিত হয়। আমার শুরু করার উপায় হলো কথা বলা ছেড়ে দেওয়া এবং কাজ শুরু করা। যারা আমাকে সাহায্য করতে মানা করে দিয়েছিল, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ তাদের ‘না’ এর জন্যই আজ আমি নিজের কাজ নিজে করতে শিখেছি। আমি যখন একটি সুখী জীবনযাপন করতে চাই, তখন এটিকে একটি লক্ষ্যের সঙ্গে বেঁধে রাখি, মানুষ কিংবা কোনো জিনিসের সঙ্গে নয়। তবে সাময়িক প্রয়োজন কখনো কখনো দীর্ঘ সময়ের দুঃখের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কখনো কেউ কোনো আঘাত করার ভয়ে আমি জীবনের খেলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে দিই না। আমি মনে করি, মানুষের পুরো জীবনটা হচ্ছে একটা সরল অঙ্ক, যতই দিন যাচ্ছে ততই আমরা তার সমাধানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। অর্থ ও সাফল্য মানুষকে বাহ্যিক পরিবর্তন করে; তারা কেবল সেখানে যা আছে তা বৃদ্ধি করে। বাস্তবতার জগতের সীমা আছে; কল্পনার জগৎ সীমাহীন। আমি চেষ্টা করি যতটা পারি, সমস্ত লোকের জন্য যতটা পারি, যতক্ষণ পারি ততটা ভালো কিছু করতে। কত দিন বেঁচে থাকব তা নয়, তবে আমি কতটা ভালোভাবে মানুষের মাঝে বেঁচে আছি, সেটাই মূল বিষয়। সেই সঙ্গে আমি সমালোচনা পছন্দ করি। এটি আমাকে শক্তিশালী করে তোলে। মধ্যবিত্ত শ্রেণি হলো একটি অভিশাপের নাম, জন্ম থেকেই যাদের জীবন কাটে মানিয়ে নেওয়া আর মেনে নেওয়ার মাধ্যমে। আমি বৃষ্টিতে হাঁটতে ভালোবাসি, কারণ তাতে চোখের জল বোঝা যায় না।
জীবন সম্পর্কে লিখতে হলে প্রথমে আপনাকে আমাকে বাঁচতে হবে। আমি জিততে পারি এবং আমি হারতে পারি, কিন্তু আমি কখনোই পরাজিত হব না। শিখেছি একটি সফল জীবনের সম্পূর্ণ রহস্য হলো একজনের ভাগ্য কী তা খুঁজে বের করা এবং তারপর তা-ই করা। জীবন কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য তৈরি নয়, কিন্তু বাস্তবতা হলো অনুভব করে বুঝতে হবে কীভাবে তা সমাধান করা যায়। মনে রাখি, অপরীক্ষিত জীবন বেঁচে থাকার যোগ্য নয়। অনেকে বিখ্যাত হতে চায়, কিন্তু কেউ কাজ করতে চায় না। আমি জানি, কঠোর পরিশ্রমে জীবনের সফলতা হবেই একদিন। কারও ভুল হয়তো সংশোধন করা যায় কিন্তু কারও স্বভাব পরিবর্তন করা যায় না। তাই কারও স্বভাব পরিবর্তন করতে গিয়ে নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন না দিয়ে বরং সেখান থেকে সরে আসাটাই হলো প্রকৃত ব্যক্তিত্বের পরিচয়।
এটা সত্য, নিরানব্বই শতাংশ ব্যর্থতা আসে যারা অজুহাত তৈরি করে তাদের জন্য। নেতিবাচক সবকিছুÑচাপ, চ্যালেঞ্জÑসবই আমার জন্য উত্থানের সুযোগ। আমি আমার চিন্তা দেখি; তারা শব্দ হয়ে ওঠে। আর যখন শব্দ দেখি; তারা তখন কাজ হয়ে যায়। আর যখন আমার কর্ম দেখি; সেগুলো অভ্যাস হয়ে যায়। আর যখন অভ্যাস দেখি; তারা চরিত্র হয়ে ওঠে। আর যখন চরিত্র দেখি; সেটি আমার ভাগ্য হয়ে ওঠে। একটি খ্যাতি তৈরি করতে ২০ বছর সময় লাগে এবং এটি নষ্ট করতে পাঁচ মিনিট সময় লাগে। আমি যদি এটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে চিন্তা করি, তবে আমি জিনিসটিকে ভিন্নভাবে দেখি। জীবন আমার ওপর এমন কিছু চাপিয়ে দেয়, যা আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না হয়তো, তবে আমি কীভাবে এটির মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করি, জীবন কখনো সহজ, তবে কাজ করতে হবে এবং বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবেÑসত্য, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতার বাধ্যবাধকতা মেনে নিতে হবে। জীবন সত্যিই সহজ, তাই এটিকে জটিল করার জন্য কখনো জোর দিই না। এটাও বুঝি, জীবন হলো পাঠের ধারাবাহিকতা, যা বোঝার জন্য বেঁচে থাকার চেষ্টা থাকতে হবে। মনে রাখি, স্বাস্থ্যই সবচেয়ে বড় উপহার আর তৃপ্তিই হলো সবচেয়ে বড় সম্পদ, সেই সঙ্গে বিশ্বস্ততা সবচেয়ে মূল্যবান। একজন ভালো মানুষের জীবনের সেরা অংশ হলো তার সামান্য নামহীন, দয়া এবং ভালোবাসার কার্যকর কাজ। আমি যদি মনে করি যে আমি নেতৃত্ব দিচ্ছি এবং কেউ তা অনুসরণ করছে না, শুধু দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে, তাহলে আমি বুঝতে পারি আমি কেবলই সফলতার দিকে হাঁটছি। তাতে জীবনে একটি প্রবহমান প্রভাব তৈরি করা হয়।
জীবন আমাকে যা দেয় তার জন্য স্থির থাকি না, জীবনকে আরও ভালো করার এবং ভালো কিছু তৈরি করার চেষ্টা করি। দুর্দান্ত মুহূর্তগুলো দুর্দান্ত সুযোগের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। হাসতে থাকি, কারণ জীবন একটি সুন্দর জিনিস এবং এতে হাসির অনেক কিছু আছে। কেউ সম্পূর্ণ আমার মতো হবে না, একইভাবে আমিও কারও মতো হব না, দুজনের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য থাকবেই আর এই পার্থক্যটুকু মানিয়ে নেওয়ার নামই হলো ধৈর্য। রোদে বাস করি, সমুদ্রে সাঁতার কাটি, বন্য বাতাস পান করি, কারণ প্রকৃতির যতটা কাছে থাকা যায়, ততই মঙ্গল। যখন আমি আমার পক্ষে যথাসাধ্য চেষ্টা করি, তখন আমি কখনোই জানি না যে আমাদের জীবনে বা আমার জীবনে কী অলৌকিক ঘটনা ঘটতে চলেছে তখন আমি শান্ত থাকি এবং কার্যক্রম চালিয়ে যাই। আর সে জন্যই প্রতিটি সেকেন্ডের জন্য বিনা দ্বিধায় বেঁচে থাকার চেষ্টা করি।
হয়তো এটাই জীবন... চোখের পলক আর তার রূপ, রস ও গন্ধের ঝলক। মানুষ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে সেটা হয়তো ভুলে যায়। আর এরপর যেই ব্যবহারটা করে, সেটাই তার আসল চরিত্র। আমি বই এবং উদাহরণ থেকে শিখি। প্রকৃত শিক্ষার জন্য আমাকে সেই কাজগুলোই করতে হবে। আমার মাথায় মস্তিষ্ক আছে, আমার জুতা পায়ে আছে, আমি আমার পথ আমার পছন্দমতো বেছে নিতেই পারি। আমিও সেটাই করার চেষ্টা করি আর সেভাবেই মানুষের ভালোবাসা কুড়াই। জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দই হলো ভালোবাসা পাওয়ার মাঝে। ভালো বন্ধু, ভালো বই এবং একটি জাগ্রত বিবেক : এটিই আমার জীবনের আদর্শ। আবার জীবন জ্ঞানীদের জন্য একটি স্বপ্ন, বোকাদের জন্য একটি খেলা, ধনীদের জন্য একটি কৌতুক, দরিদ্রদের জন্য একটি ট্র্যাজেডি বলে মনে করি।
‘আমার আমি’ আমার জীবন নিয়ে কিছু কথামালা লেখাটি আপনাদেরকে ব্যথিত বা উদ্ভাসিত করতে পারে কিংবা আঘাতও করতে পারে, আপনার বিবেককে কিংবা আবেগকে। কারণ আমি জানি, জীবন কখনো কখনো চড়াই- উতরাইয়ের মুখোমুখি হয়ে কিছু স্মৃতি বিদূর হয়েই ওঠে। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বা বর্তমান পরিস্থিতি নির্বিশেষে, এই জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নিজের জীবন নিয়ে লেখামালাগুলো সাক্ষ্য রেখে গেলাম। আপনারাও এক বা একাধিক কিংবা অন্য উপায়ে অনুপ্রাণিত হতে পারেন। তবে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত করে রাখতে পারাই হলো সবচেয়ে বড় যোগ্যতা। আর সেটাই নিশ্চিত সত্য বলে আমি মনে করি।