
‘এ মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়।’ কবির ক্ষোভ-দ্রোহ প্রকাশ করা হলে খুব বেশি আতিশয্য হবে না। একুশের পটভূমিকায় লেখা কবিতা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরপর আরও যেন বাঙময় হয়ে ওঠে। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের ৫৪ বছর পরও আমাদের সেই মৃত্যু উপত্যকায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। ৩০ লাখ মানুষের জীবন দান, দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম এবং বিপুল ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন আমাদের এই স্বাধীনতা। কিন্তু যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে এত এত ত্যাগ যে স্বাধীনতার জন্য, তা আজ এত বছর পরও মানুষের হতাশার সুরে না পাওয়ার বেদনা। শাসক বদল হয়েছে অনেকবার, তাদের মুখে নয়া নয়া আদর্শের কথাও উচ্চারিত হয়েছে। বড় বড় সব বুলি শুনেছে পাবলিক। ভাগ্য বদল হয়নি মানুষের। কিছু মানুষ ফুলে-ফেঁপে কলাগাছ, তালগাছ, বটগাছ হলেও দেশের গরিষ্ঠ মানুষ শুকাতে শুকাতে কঙ্কালে পরিণত হতে থাকল। আজও সে পরিস্থিতি চলমান।
তাই তো ৫৪ বছর পরও প্রচারমাধ্যমে নিউজ হয়, ‘স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণ আজও হলো না’ বা ‘স্বাধীনতা যাদের নেতৃত্বে অর্জিত হলো, তারাও মানুষকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হলো’। সহিংসতা, সংঘাত, সংঘর্ষ এখনো একই ধারায় প্রবাহিত। সমাজ থেকে বৈষম্য, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন দূর হয়নি আজও। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিয়ে নির্যাতনের নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করে। সেটা হচ্ছে সেনাসমর্থিত সরকারপদ্ধতি। সেবার সেই সরকারের প্রধান হন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। সেই সরকারের স্থায়িত্বকাল ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত।
সেই ২০০৮ সালের নির্বাচনই তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে শেষ নির্বাচন। এর বাইরে ৯০, ৯৬ এবং ২০০১ এর নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সম্পন্ন হয়। এরপর আর কোনো নির্বাচনেই জনগণের ভোটের গণনায় সরকার পরিবর্তনের সুযোগ পায়নি স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ। আর সব সরকারের পরিবর্তন ঘটেছে রাষ্ট্রপতিকে হত্যার মাধ্যমে নয়তো গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে। কত প্রত্যাশা আর স্বপ্নের দেশ স্বাধীন বাংলাদেশ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ স্বাধীন ও নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থীদের দল সরকার গঠন করবে। সেই সরকার দেশের মানুষের শাসক না হয়ে সেবক হবে। জনগণের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে কাজ করবে। জনগণ বারবার একেকটা শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের পতন ঘটিয়েছে, আর বারবার ঠকেছে। বারবার বঞ্চিত হয়েছে, তাদের স্বপ্ন লুট করে নিয়েছে যারা ক্ষমতায় বসেছে তারা। তারা যে নামে, যে আদর্শের কথা বলে, যে পোশাকেই ক্ষমতায় বসুক, তারা কখনো জনগণের সরকার হয়নি। জনগণের স্বপ্নও পূরণ হয়নি।
তাই তো গত বছর, ২০২৪ এর ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের সাজানো বাগান ভেঙে পড়ল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অন্দোলনে, সে সময় নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ড. ইউনূসের সরকারও সাফল্যের পরিচয় দিতে পারছে, তা বলা যাবে না। এমনকি জনগণও যে এই সরকারের সাফল্যে সন্তুষ্ট হতে পারছে, সেটাও বলা যাবে না। তাই তো বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে জানা যাচ্ছে, এত রক্তপাত ও প্রাণহানির বিনিময়ে যে বাংলাদেশ মুক্তি অর্জন করল, সেই বাংলাদেশ নাকি অতীতমুখী আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছে মানুষ। সে কারণে পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হচ্ছে, ‘এক-এগারোর আরেকটি মঞ্চ কি প্রস্তুত হচ্ছে’। খুব ভয়ংকর সংকেত। এত বড় গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ের পর এ আশঙ্কা মানুষের প্রত্যাশিত হতে পারে না। বলা হয়েছে, ‘গণতন্ত্রের ট্রেন যেন সংস্কারের জটে আটকে গেছে। নতুন নির্বাচনের আকাশে কালো মেঘ ঘন হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব বাড়ছে।’ কেবল সরকারের সঙ্গে নয়, বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গেও রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এসবের প্রেক্ষাপটেই রাজনীতির পাঠ যারা নিয়েছেন, তারা আশঙ্কা করছেন, ‘আবার আরেকটি এক-এগারোর মঞ্চ তৈরি হচ্ছে।’ কিন্তু এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকারের মতো ইতিপূর্বে আর কোনো সরকারই রাজনৈতিক দল এবং জনগণের দিক থেকে এমন সমর্থন পায়নি। তবু কেন মাত্র ৫-৬ মাসেই এমন নাকাল অবস্থা, সেটা বড়ই দুর্বোধ্য। কমবেশি সবাই বুঝতে পারে, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দল এবং জনগণের দূরত্ব যত বাড়বে দেশ ও জনগণের দুর্ভোগ তত বাড়বে। কিন্তু সংস্কার ও নির্বাচনের বিতর্কে যদি জনগণের দুর্ভোগ-দুর্গতি বৃদ্ধি পায়, তবে তার কোনোটি জনগণ ন্যায্য বলে ভাবতে পারে না।
যদি আমরা সবাই দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করি, তবে দেশের অগ্রগতি কখনো রুদ্ধ হতে পারে না। অন্যদিকে দেশের মানুষও দুর্ভোগ-দুর্গতিতে পতিত হতে পারে না। আজ তাই প্রশ্ন উঠছে, আমরা আসলে কতটা দেশ ও জনগণের কথা ভেবে রাজনীতি করছি, তা আবারও ভাবার সময় এসেছে।
তাই তো ৫৪ বছর পরও প্রচারমাধ্যমে নিউজ হয়, ‘স্বাধীনতার স্বপ্নপূরণ আজও হলো না’ বা ‘স্বাধীনতা যাদের নেতৃত্বে অর্জিত হলো, তারাও মানুষকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হলো’। সহিংসতা, সংঘাত, সংঘর্ষ এখনো একই ধারায় প্রবাহিত। সমাজ থেকে বৈষম্য, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন দূর হয়নি আজও। ২০০৬ সালে বাংলাদেশে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিয়ে নির্যাতনের নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করে। সেটা হচ্ছে সেনাসমর্থিত সরকারপদ্ধতি। সেবার সেই সরকারের প্রধান হন ড. ফখরুদ্দীন আহমদ। সেই সরকারের স্থায়িত্বকাল ছিল ২০০৮ সাল পর্যন্ত।
সেই ২০০৮ সালের নির্বাচনই তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে শেষ নির্বাচন। এর বাইরে ৯০, ৯৬ এবং ২০০১ এর নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সম্পন্ন হয়। এরপর আর কোনো নির্বাচনেই জনগণের ভোটের গণনায় সরকার পরিবর্তনের সুযোগ পায়নি স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ। আর সব সরকারের পরিবর্তন ঘটেছে রাষ্ট্রপতিকে হত্যার মাধ্যমে নয়তো গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে। কত প্রত্যাশা আর স্বপ্নের দেশ স্বাধীন বাংলাদেশ। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। মানুষ স্বাধীন ও নিজের পছন্দমতো প্রার্থীকে ভোট দেবে। সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থীদের দল সরকার গঠন করবে। সেই সরকার দেশের মানুষের শাসক না হয়ে সেবক হবে। জনগণের স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে কাজ করবে। জনগণ বারবার একেকটা শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করে তাদের পতন ঘটিয়েছে, আর বারবার ঠকেছে। বারবার বঞ্চিত হয়েছে, তাদের স্বপ্ন লুট করে নিয়েছে যারা ক্ষমতায় বসেছে তারা। তারা যে নামে, যে আদর্শের কথা বলে, যে পোশাকেই ক্ষমতায় বসুক, তারা কখনো জনগণের সরকার হয়নি। জনগণের স্বপ্নও পূরণ হয়নি।
তাই তো গত বছর, ২০২৪ এর ৫ আগস্ট যখন শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের সাজানো বাগান ভেঙে পড়ল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণ-অন্দোলনে, সে সময় নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ড. ইউনূসের সরকারও সাফল্যের পরিচয় দিতে পারছে, তা বলা যাবে না। এমনকি জনগণও যে এই সরকারের সাফল্যে সন্তুষ্ট হতে পারছে, সেটাও বলা যাবে না। তাই তো বিভিন্ন মিডিয়ার খবরে জানা যাচ্ছে, এত রক্তপাত ও প্রাণহানির বিনিময়ে যে বাংলাদেশ মুক্তি অর্জন করল, সেই বাংলাদেশ নাকি অতীতমুখী আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছে মানুষ। সে কারণে পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হচ্ছে, ‘এক-এগারোর আরেকটি মঞ্চ কি প্রস্তুত হচ্ছে’। খুব ভয়ংকর সংকেত। এত বড় গণ-অভ্যুত্থানে বিজয়ের পর এ আশঙ্কা মানুষের প্রত্যাশিত হতে পারে না। বলা হয়েছে, ‘গণতন্ত্রের ট্রেন যেন সংস্কারের জটে আটকে গেছে। নতুন নির্বাচনের আকাশে কালো মেঘ ঘন হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব বাড়ছে।’ কেবল সরকারের সঙ্গে নয়, বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গেও রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
এসবের প্রেক্ষাপটেই রাজনীতির পাঠ যারা নিয়েছেন, তারা আশঙ্কা করছেন, ‘আবার আরেকটি এক-এগারোর মঞ্চ তৈরি হচ্ছে।’ কিন্তু এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। অন্তর্বর্তী সরকারের মতো ইতিপূর্বে আর কোনো সরকারই রাজনৈতিক দল এবং জনগণের দিক থেকে এমন সমর্থন পায়নি। তবু কেন মাত্র ৫-৬ মাসেই এমন নাকাল অবস্থা, সেটা বড়ই দুর্বোধ্য। কমবেশি সবাই বুঝতে পারে, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দল এবং জনগণের দূরত্ব যত বাড়বে দেশ ও জনগণের দুর্ভোগ তত বাড়বে। কিন্তু সংস্কার ও নির্বাচনের বিতর্কে যদি জনগণের দুর্ভোগ-দুর্গতি বৃদ্ধি পায়, তবে তার কোনোটি জনগণ ন্যায্য বলে ভাবতে পারে না।
যদি আমরা সবাই দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করি, তবে দেশের অগ্রগতি কখনো রুদ্ধ হতে পারে না। অন্যদিকে দেশের মানুষও দুর্ভোগ-দুর্গতিতে পতিত হতে পারে না। আজ তাই প্রশ্ন উঠছে, আমরা আসলে কতটা দেশ ও জনগণের কথা ভেবে রাজনীতি করছি, তা আবারও ভাবার সময় এসেছে।