হাসিনা পরিবারের অর্থনৈতিক দুর্নীতি
(দ্বিতীয় অংশ)
৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তার পরিবার এবং দলীয় কর্মীদের দ্বারা সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ঘুষ, দুর্নীতির মহোৎসব নিয়ে বিভিন্ন প্রচার মিডিয়ায় অনেক ধরনের লেখালেখি হয়েছে। তবে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে একটি দাবি তোলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় দেশ থেকে ৩০ কোটি ডলার পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দুদকেরও এই দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। দুদকের দেওয়া তথ্যমতে, রূপপুরে স্থাপিত দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে বলে তাদের ধারণা। ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা, তার ছেলে জয় এবং ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করেছেন বা পাচার করা হয়েছে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে যখন চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল, তখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপস্থিতিতে ওই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছেলে জয় এবং ভাগনি টিউলিপও উপস্থিত ছিলেন। পুতিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই তিনজনের ছবি সেই সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। এই ঘটনার পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এর পর থেকে একটা গোপন সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছিলেন। তবে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের ওই আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাও তাদের লন্ডন প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া জয়ের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের আরও একটি অভিযোগ রয়েছে, যা হংকং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সজীব ওয়াজেদের নামে বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে স্থানীয় একটি মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক ছাড়াও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়েছে। এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০০৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। প্রকল্পের স্থান হিসেবে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুর নামক স্থানকে নির্বাচিত করা ২০২৪ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তার প্রাথমিক কাজ শুরুর লক্ষ্য নিয়ে রাশিয়ার রোসাটোম অ্যাটসিক এনার্জি করপোরেশনের সহযোগিতায় চুল্লি নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ সম্পাদন করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং রুশ ফেডারেশন সরকারের মধ্যে রাষ্ট্রীয় এক ক্রেডিট চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে দুটি পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের কথা, যা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাবে। ওই প্রকল্পটির জন্য পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতুর পাশের নদীর তীরে স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল এবং সেই মোতাবেক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ শুরুও হয়েছিল। ২০২৪ সালে কাজ শেষ করে উৎপাদনে যাওয়ার কথা।
কিন্তু সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনসহ অর্থনৈতিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকের নামটা খুব জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। তার কারণ টিউলিপ যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার একজন সদস্য। তিনি এখন ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তার কাজের ভেতরে রয়েছে যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতিকে চিহ্নিত করা। কিন্তু তিনি নিজেই দুর্নীতিকেন্দ্রিক একটা খবরের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে চার বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের একটি খবর স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম হওয়া ছাড়াও কেউ কেউ তার পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি হয়েছিল, তার তিনি মধ্যস্থতা করেছিলেন বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। ঘটনার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও উপস্থিত ছিলেন। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ১৯ ডিসেম্বর তাকে একটি তদন্ত টিমের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে সানডে টাইমস তার ২২ তারিখের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করেছে। এ ছাড়া ডেইলি মেইল তার প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করেছে, আগামী মাসে এ বিষয় নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিককে আবারও তদন্ত টিমের মুখোমুখি হতে হবে। টিউলিপ সিদ্দিকের এই পরিণতির পরে বিরোধী রক্ষণশীল দলের সংসদ সদস্য জো রবার্টসন একটি প্রশ্ন তুলেছেন। এ রকম এক অভিযোগ নিয়ে টিউলিপ তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে দুর্নীতির এক ভয়াবহ কাহিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। একেবারে উপরের লেবেল থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত। ওই প্রকল্পের আবাসিক ভবনের জন্য ১৬৯ কোটি টাকার কেনাকাটায় সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ৩৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার ভেতরে ছিলেন ৩০ জন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এবং চারজন ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের।
উল্লেখ্য, তিনটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চারটি ভবনে আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। তারা চুক্তি অনুযায়ী জিনিস ক্রয়ে এতটাই অনিয়ম করেছিল যে ইতিহাসের কোনো তালিকায় তাদের সেই কাজের মূল্যায়ন করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যেমন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রয়কৃত একটি বালিশের মূল্য দেখিয়েছিল ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা এবং সেই বালিশটা নিচে থেকে আবাসিক ভবনের একটি রুমের বিছানার ওপরে নেওয়ার জন্য শ্রমিকের মজুরির পরিমাণ তারা দেখিয়েছিল ৭৬০ টাকা এবং কাভারসহ কমফোর্টারের ক্রয়মূল্য দেখিয়েছিল ১৬ হাজার ৮০০ টাকা।
এভাবে বিদেশি একটা বিছানার চাদরের ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৯৩৬ টাকা। পাঁচটি কুড়িতলা ভবনের জন্য যে পরিমাণ কেনাকাটা সম্পন্ন করেছিল তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তা এক অবিশ্বাস্য বিষয় ছিল। শুধু এ ধরনের দুর্নীতি করে ওই মানুষগুলো ওই সময়ে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। ওই ধরনের একই ঘটনা ঘটিয়েছিল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারের সহযোগিতায় কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওটির জন্য মেডিকেল সরঞ্জাম এবং ভবনের জন্য পর্দা ক্রয়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়ম করেছিল ওই চিহ্নিত অপরাধী চক্র। এ ছাড়া ওই সময়ে ওই ফরিদপুর হাসপাতালের আইসিইউয়ের পর্দা ও আসবাব কেনায় ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পে মেসার্স অনিক ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাজারমূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক দাম দেখিয়ে ৫২ কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও ওই বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে তখন টিম গঠনের উদ্যোগ নেওয়া ছাড়াও কয়েকজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি ওই পর্যন্তই ছিল।
শেখ হাসিনার অন্যতম উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যিনি এখন আরও কয়েকজন হেভিওয়েট মন্ত্রীর সঙ্গে কারাগারে আছেন, তিনি রিমান্ডে গিয়ে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা কয়েকজনকে তার উপদেষ্টা পদে মনোনয়ন দিয়ে রেখেছিলেন। এরা সবাই উপদেষ্টা পদবি ব্যবহার করলেও এদের কোনো পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী আমলে নিতেন না। তিনি যেটা ভালো মনে করতেন, সেটাই করতেন আর সব সময় মেগা প্রকল্প গ্রহণে উৎসাহ দিতেন। কারণ মেগা প্রকল্প গ্রহণ করতে পারলে বড় অ্যামাউন্টের টাকা সরানোর সুযোগ থাকে। তাই রূপপুর প্রকল্প নিয়ে কথা উঠলেও আরও একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিলেন শুধু ভারতের স্বার্থ বাজায় রাখতে গিয়ে, সেটা ছিল সুন্দরবন বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে যে ম্যানগ্রোভ বনটির অবস্থান, তার নাম সুন্দরবন। ভৌগোলিকভাবে এই বন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বাংলার বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশের অংশে পড়েছে ৫ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার আর ভারতের অংশে পড়েছে ৪ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটারের মতো। আবার বাংলাদেশর মোট অংশের প্রায় ৪ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে স্থলভাগ এবং বাকি ১ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার জলাভূমি নিয়েই গঠিত সুন্দরবনের বাংলাদেশ এলাকা। প্রাচীন ইতিহাসের তথ্যমতে, প্রায় ২০০ বছর আগে মূল সুন্দরবনের পুরো দুই অংশ মিলে ওই বনের বিস্তৃতি ছিল ১৬ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটারের মতো কিন্তু বর্তমানে সংকুচিত হয়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারে। ১৯৭৫ সালে ওই বনকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এবং ১৯৯৭ সালে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ হিসেবে ঘোষণা দেয় সুন্দরবনকে। ব্রিটিশ শাসনামলে সুন্দরবন ছিল স্থানীয় জমিদারদের দখলে। পরে ওই বনের ওপর ইংরেজ শাসকদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। একাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের প্রাথমিক সময়কালে সুন্দরবনকে বাংলাদেশ বন বিভাগের খুলনা সার্কেলের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছিল। নলিরান, বুড়িমারী, চাঁদপাই, গোয়ালিনী, শরণখোলাÑগাঙ্গেয় বদ্বীপ নামে খ্যাত ওই সুন্দরবনকে জড়িয়ে রয়েছে এসব নামে-বেনামে প্রায় ৪৫০টির মতো নদী। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো বনাঞ্চলকে ঘিরে এতগুলো নদীর বয়ে যাওয়ার ইতিহাস নেই। সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্য এখানেই। আবার এই ৪৫০ নদীর প্রায় সবগুলোর উৎপত্তিস্থল হচ্ছে পদ্মা বা গঙ্গা নদীতে। আবার সুন্দরবনের কোনো কোনো নদী সমুদ্রে মেশার আগ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাইল পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে আছে। এ ছাড়া সাগর তটভূমিতে ৬০ মাইল লম্বা একটানা ম্যানগ্রোভ প্রাচীর দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জনপদের জন্য এক রক্ষাকবচের মতো কাজ করছে। এ ছাড়া প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে দুই হাজার মেট্রিক টন মাছ আহরিত হয়। সেই সঙ্গে এক হাজার টন ইলিশ মাছ এবং ৪ হাজার ২০ মেট্রিক টন চিংড়ি ও কাঁকড়া আহরিত হয়ে থাকে। এই সীমাহীন প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়াও প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে ১৫ হাজার মণ মধু এবং ৩০ মেট্রিক টনের মতো মোম উৎপাদিত হয়, যা বার্ষিক কোষাগারের জন্য এক উল্লেখযোগ্য বিষয়। এ ছাড়া পুরো বাংলাদেশের সর্বগ্রাসী কাঠের চাহিদাও পূরণ করে থাকে এই বন। সবকিছু মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যে পরিমাণ রাজস্ব যোগ হয়, তার পরিমাণ ১০ কোটি টাকার মতো। শুধু চিংড়ি খাত থেকেই আয় হয় ৪ কোটি টাকার ওপরে। ২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে এই বনের শাখানদীসমূহে এবং ওই মাছ শিকারসহ অন্যান্য খাতে যেসব মৎস্যজীবী পরিবার মাছ শিকারসহ অন্যান্য খাতে জড়িত রয়েছেন তার সংখ্যা ১০ লাখের কাছাকাছি। মোদ্দাকথা হলো ওই সুন্দরবন ওই ১০ লাখ পরিবারের ভরণপোষণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।
এ ছাড়া যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে অনন্য এক মর্যাদায় অভিষিক্ত করে রেখেছে, সেই বাঘের অভয়ারণ্য সুন্দরবন। এ ছাড়া রয়েছে ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, আট প্রজাতির উভচর প্রাণী ও ৩০০ প্রজাতির বিচিত্র সব পাখপাখালি। এমন একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বনকে শুধু ভারতের স্বার্থ বজায় রাখতে গিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ওই বনের কাছাকাছি স্থান বাগেরহাটের রামপাল এলাকায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। ভারতের সহায়তায় শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়লাভিত্তিক তিনটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। তার মধ্যে একটির জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল সুন্দরবনের কাছে রামপালে। অন্য দুটির মধ্যে একটির জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল মহেশখালীতে এবং আরেকটি পটুয়াখালীতে। সবগুলোই ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র। নিয়ম অনুযায়ী ঘনবসতিপূর্ণ কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ কোনো অঞ্চলের ২৫ মাইলের কাছাকাছি ওই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো অনুমতি না থাকলেও সরকারি ভাষ্যমতে সুন্দরবনের চেয়ে রামপালের দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার আর বেসরকারি তথ্যমতে, এই দুই অঞ্চলের মধ্যে মাত্র চার কিলোমিটারের ফারাক। অতএব, সুন্দরবনের এত কাছাকাছি জায়গায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার কোনো কথা না থাকলেও সরকার ভারতের মন রাখতে গিয়েই সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেহেতু কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার কথা কিন্তু সে ধরনের প্রকল্পে যেখানে কয়লা ব্যবহারের হার ২ শতাংশ থাকার কথা, সেখানে মোট জ্বালানির ৫০ শতাংশ কয়লা নির্ভরতার কথা বলে উল্লিখিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন ১২ হাজার টন কয়লা জ্বালানি খাতে ব্যয়ের কথা বলে ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে সই করেছিল বাংলাদেশ। আসলে ভারতের নিম্নমানের কয়লা বিক্রির জন্য একটি ক্ষেত্র তৈরির উপায় হিসেবেই সেই সময়ে তারা শেখ হাসিনার কাঁধে বন্দুক রেখে পাখি শিকারে নেমেছিল। অভিযোগ রয়েছে, এই সময়ের এই সিদ্ধান্তটা ছিল আন্তর্জাতিক চুক্তির বরখেলাপ। কারণ ভারতের এনটিপিসির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে দেশের স্বার্থ বরাবরের মতো উপেক্ষিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী মাত্র ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করে ভারত ৫০ শতাংশের মালিকানা পাওয়ার বিষয়টা যথেষ্ট পরিমাণে লুকিয়ে রাখলেও বিষয়টা সংশ্লিষ্ট সবার কাছেই স্পষ্ট হয়েই ধরা দিয়েছিল; কিন্তু তা সত্ত্বেও গদি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে উচ্চবাচ্চ করেননি কেউ। সরকারের বিরোধী পক্ষ বিএনপি সেই সময়ে মিনমিনে কণ্ঠস্বরে আপত্তি তুললেও তা যে ধোপে টিকবে না, সেটা তারা ভালোই বুঝেছিল। তা ছাড়া তাদেরও একটা রাজনৈতিক দর্শন আছে, সেখানেও ভারত একটা ফ্যাক্টর, যদিও আওয়ামী লীগের মতো অতটা নয়। ওই সময়ে প্রচণ্ড আপত্তি তুলেছিল রামপাল কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। তাদের আপত্তির কারণ ছিল প্রস্তাবিত স্থানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে ঘরবাড়ি হারিয়ে কয়েক হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পথে নামবে। তা ছাড়া সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ও জীববৈচিত্র্য সীমাহীন ক্ষতির মুখে পড়বে। এ ছাড়া তেল গ্যাস খনিজসম্পদ বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ওই সময়ে প্রচুর প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা ছাড়াও দেশজুড়ে লং মার্চের আয়োজন করেছিল। সরকার তাদেরকে গায়ের জোরে প্রতিরোধ করতে চেয়েছে। দেশের জন্য চরম ক্ষতিকর ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত সুন্দরবন ধ্বংস করে ওই স্থানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন কেন অবৈধ হবে না, এমন একটা রুল জারি করতে বাধ্য হয়েছিল পর্যন্ত। কিন্তু তৎকালীন সরকার ওই সব বিষয়ে পাত্তা না দিয়ে কাজ করে গেছে এবং ওই সময়ে সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সুশীল সমাজ কী বলল না বলল সেসব শুনে সরকার চলে না।’ আর মন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘দেশের সুশীল সমাজ হলো জ্ঞানপাপী। এরা বিএনপি, জামায়াতের চেয়েও খারাপ।’ কিন্তু এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে এবং ভারত নিজেও সেই সব নিয়ম জানতে গিয়ে একসময় অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও জনরোষের পরে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল। একইভাবে শ্রীলঙ্কা সরকারের সঙ্গে ভারতের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য শ্রীলঙ্কা কয়লার পরিবর্তে গ্যাস ব্যবহারের দাবি জানালে ভারত সেটা মেনে নিয়েছিল। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের এই অনমনীয় মনোভাব বাস্তবায়নে সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল শেখ হাসিনার তৎকালীন তেলবাজ সরকার। যদিও সেই সময়ে সুন্দরবনে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে দেশজুড়ে জনরোষের কথা মাথায় রেখে উদ্বোধনের জন্য নির্ধারিত তারিখের ১৭ দিন আগে শেখ হাসিনা ঘটনাস্থলে না গিয়েই ভেড়ামারায় বসে কাজটা সারলেন, আর দিল্লিতে বসে ভারতের তৎকালীন সরকার মনমোহন সিং ভিডিও লিঙ্কে আঙুল রেখে যৌথ কাজে সম্মতি প্রদান করেছিলেন। (ক্রমশ)
(দ্বিতীয় অংশ)
৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর তার পরিবার এবং দলীয় কর্মীদের দ্বারা সরকারের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ঘুষ, দুর্নীতির মহোৎসব নিয়ে বিভিন্ন প্রচার মিডিয়ায় অনেক ধরনের লেখালেখি হয়েছে। তবে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে একটি দাবি তোলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় দেশ থেকে ৩০ কোটি ডলার পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। দুদকেরও এই দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। দুদকের দেওয়া তথ্যমতে, রূপপুরে স্থাপিত দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে বলে তাদের ধারণা। ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনা, তার ছেলে জয় এবং ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আত্মসাৎ করেছেন বা পাচার করা হয়েছে মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকে বর্ণিত বিবরণ অনুযায়ী, ২০১৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের জন্য রাশিয়ার সঙ্গে যখন চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল, তখন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপস্থিতিতে ওই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছেলে জয় এবং ভাগনি টিউলিপও উপস্থিত ছিলেন। পুতিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই তিনজনের ছবি সেই সময়ে সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। এই ঘটনার পরে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে এর পর থেকে একটা গোপন সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছিলেন। তবে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের ওই আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাও তাদের লন্ডন প্রতিনিধির মাধ্যমে প্রমাণ পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া জয়ের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাচারের আরও একটি অভিযোগ রয়েছে, যা হংকং কেম্যান দ্বীপপুঞ্জে সজীব ওয়াজেদের নামে বিভিন্ন অফশোর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে স্থানীয় একটি মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ও নিউইয়র্ক ছাড়াও যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হয়েছে। এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০০৯ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। প্রকল্পের স্থান হিসেবে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুর নামক স্থানকে নির্বাচিত করা ২০২৪ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি তার প্রাথমিক কাজ শুরুর লক্ষ্য নিয়ে রাশিয়ার রোসাটোম অ্যাটসিক এনার্জি করপোরেশনের সহযোগিতায় চুল্লি নির্মাণসহ অন্যান্য কাজ সম্পাদন করার জন্য বাংলাদেশ সরকার এবং রুশ ফেডারেশন সরকারের মধ্যে রাষ্ট্রীয় এক ক্রেডিট চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে দুটি পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের কথা, যা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে উৎপাদনে যাবে। ওই প্রকল্পটির জন্য পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং লালন শাহ সেতুর পাশের নদীর তীরে স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল এবং সেই মোতাবেক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ শুরুও হয়েছিল। ২০২৪ সালে কাজ শেষ করে উৎপাদনে যাওয়ার কথা।
কিন্তু সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে শেখ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনসহ অর্থনৈতিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকের নামটা খুব জোরের সঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে। তার কারণ টিউলিপ যুক্তরাজ্যের মন্ত্রিসভার একজন সদস্য। তিনি এখন ইকোনমিক সেক্রেটারি টু দ্য ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টার হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। তার কাজের ভেতরে রয়েছে যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের ভেতরের দুর্নীতিকে চিহ্নিত করা। কিন্তু তিনি নিজেই দুর্নীতিকেন্দ্রিক একটা খবরের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে চার বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের একটি খবর স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম হওয়া ছাড়াও কেউ কেউ তার পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের যে চুক্তি হয়েছিল, তার তিনি মধ্যস্থতা করেছিলেন বলে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছিল। ঘটনার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও উপস্থিত ছিলেন। এরই মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ১৯ ডিসেম্বর তাকে একটি তদন্ত টিমের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে বলে সানডে টাইমস তার ২২ তারিখের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করেছে। এ ছাড়া ডেইলি মেইল তার প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করেছে, আগামী মাসে এ বিষয় নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিককে আবারও তদন্ত টিমের মুখোমুখি হতে হবে। টিউলিপ সিদ্দিকের এই পরিণতির পরে বিরোধী রক্ষণশীল দলের সংসদ সদস্য জো রবার্টসন একটি প্রশ্ন তুলেছেন। এ রকম এক অভিযোগ নিয়ে টিউলিপ তার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে দুর্নীতির এক ভয়াবহ কাহিনি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। একেবারে উপরের লেবেল থেকে শুরু করে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত। ওই প্রকল্পের আবাসিক ভবনের জন্য ১৬৯ কোটি টাকার কেনাকাটায় সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল ৩৪ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার ভেতরে ছিলেন ৩০ জন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের এবং চারজন ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের।
উল্লেখ্য, তিনটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চারটি ভবনে আসবাব ও ইলেকট্রনিক পণ্য সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। তারা চুক্তি অনুযায়ী জিনিস ক্রয়ে এতটাই অনিয়ম করেছিল যে ইতিহাসের কোনো তালিকায় তাদের সেই কাজের মূল্যায়ন করা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যেমন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রয়কৃত একটি বালিশের মূল্য দেখিয়েছিল ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা এবং সেই বালিশটা নিচে থেকে আবাসিক ভবনের একটি রুমের বিছানার ওপরে নেওয়ার জন্য শ্রমিকের মজুরির পরিমাণ তারা দেখিয়েছিল ৭৬০ টাকা এবং কাভারসহ কমফোর্টারের ক্রয়মূল্য দেখিয়েছিল ১৬ হাজার ৮০০ টাকা।
এভাবে বিদেশি একটা বিছানার চাদরের ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছিল ৫ হাজার ৯৩৬ টাকা। পাঁচটি কুড়িতলা ভবনের জন্য যে পরিমাণ কেনাকাটা সম্পন্ন করেছিল তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তা এক অবিশ্বাস্য বিষয় ছিল। শুধু এ ধরনের দুর্নীতি করে ওই মানুষগুলো ওই সময়ে ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৯ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল। ওই ধরনের একই ঘটনা ঘটিয়েছিল ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন ডাক্তারের সহযোগিতায় কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালের ২০ আগস্ট ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওটির জন্য মেডিকেল সরঞ্জাম এবং ভবনের জন্য পর্দা ক্রয়ে ১০ কোটি টাকার অনিয়ম করেছিল ওই চিহ্নিত অপরাধী চক্র। এ ছাড়া ওই সময়ে ওই ফরিদপুর হাসপাতালের আইসিইউয়ের পর্দা ও আসবাব কেনায় ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্পে মেসার্স অনিক ট্রেডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বাজারমূল্যের চেয়ে অস্বাভাবিক দাম দেখিয়ে ৫২ কোটি ৫৫ লাখ ৭১ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছিল। যদিও ওই বিষয়গুলো নিয়ে পরবর্তী পর্যায়ে তখন টিম গঠনের উদ্যোগ নেওয়া ছাড়াও কয়েকজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টি ওই পর্যন্তই ছিল।
শেখ হাসিনার অন্যতম উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যিনি এখন আরও কয়েকজন হেভিওয়েট মন্ত্রীর সঙ্গে কারাগারে আছেন, তিনি রিমান্ডে গিয়ে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা কয়েকজনকে তার উপদেষ্টা পদে মনোনয়ন দিয়ে রেখেছিলেন। এরা সবাই উপদেষ্টা পদবি ব্যবহার করলেও এদের কোনো পরামর্শ প্রধানমন্ত্রী আমলে নিতেন না। তিনি যেটা ভালো মনে করতেন, সেটাই করতেন আর সব সময় মেগা প্রকল্প গ্রহণে উৎসাহ দিতেন। কারণ মেগা প্রকল্প গ্রহণ করতে পারলে বড় অ্যামাউন্টের টাকা সরানোর সুযোগ থাকে। তাই রূপপুর প্রকল্প নিয়ে কথা উঠলেও আরও একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিলেন শুধু ভারতের স্বার্থ বাজায় রাখতে গিয়ে, সেটা ছিল সুন্দরবন বিদ্যুৎকেন্দ্র।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে যে ম্যানগ্রোভ বনটির অবস্থান, তার নাম সুন্দরবন। ভৌগোলিকভাবে এই বন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বাংলার বিশাল এলাকা নিয়ে গঠিত। বাংলাদেশের অংশে পড়েছে ৫ হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার আর ভারতের অংশে পড়েছে ৪ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটারের মতো। আবার বাংলাদেশর মোট অংশের প্রায় ৪ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে স্থলভাগ এবং বাকি ১ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটার জলাভূমি নিয়েই গঠিত সুন্দরবনের বাংলাদেশ এলাকা। প্রাচীন ইতিহাসের তথ্যমতে, প্রায় ২০০ বছর আগে মূল সুন্দরবনের পুরো দুই অংশ মিলে ওই বনের বিস্তৃতি ছিল ১৬ হাজার ৭০০ বর্গকিলোমিটারের মতো কিন্তু বর্তমানে সংকুচিত হয়ে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারে। ১৯৭৫ সালে ওই বনকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল এবং ১৯৯৭ সালে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অংশ হিসেবে ঘোষণা দেয় সুন্দরবনকে। ব্রিটিশ শাসনামলে সুন্দরবন ছিল স্থানীয় জমিদারদের দখলে। পরে ওই বনের ওপর ইংরেজ শাসকদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। একাত্তর-পরবর্তী বাংলাদেশের প্রাথমিক সময়কালে সুন্দরবনকে বাংলাদেশ বন বিভাগের খুলনা সার্কেলের অধীনে ন্যস্ত করা হয়েছিল। নলিরান, বুড়িমারী, চাঁদপাই, গোয়ালিনী, শরণখোলাÑগাঙ্গেয় বদ্বীপ নামে খ্যাত ওই সুন্দরবনকে জড়িয়ে রয়েছে এসব নামে-বেনামে প্রায় ৪৫০টির মতো নদী। পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো বনাঞ্চলকে ঘিরে এতগুলো নদীর বয়ে যাওয়ার ইতিহাস নেই। সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্য এখানেই। আবার এই ৪৫০ নদীর প্রায় সবগুলোর উৎপত্তিস্থল হচ্ছে পদ্মা বা গঙ্গা নদীতে। আবার সুন্দরবনের কোনো কোনো নদী সমুদ্রে মেশার আগ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মাইল পর্যন্ত প্রশস্ত হয়ে আছে। এ ছাড়া সাগর তটভূমিতে ৬০ মাইল লম্বা একটানা ম্যানগ্রোভ প্রাচীর দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জনপদের জন্য এক রক্ষাকবচের মতো কাজ করছে। এ ছাড়া প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে দুই হাজার মেট্রিক টন মাছ আহরিত হয়। সেই সঙ্গে এক হাজার টন ইলিশ মাছ এবং ৪ হাজার ২০ মেট্রিক টন চিংড়ি ও কাঁকড়া আহরিত হয়ে থাকে। এই সীমাহীন প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়াও প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে ১৫ হাজার মণ মধু এবং ৩০ মেট্রিক টনের মতো মোম উৎপাদিত হয়, যা বার্ষিক কোষাগারের জন্য এক উল্লেখযোগ্য বিষয়। এ ছাড়া পুরো বাংলাদেশের সর্বগ্রাসী কাঠের চাহিদাও পূরণ করে থাকে এই বন। সবকিছু মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যে পরিমাণ রাজস্ব যোগ হয়, তার পরিমাণ ১০ কোটি টাকার মতো। শুধু চিংড়ি খাত থেকেই আয় হয় ৪ কোটি টাকার ওপরে। ২০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে এই বনের শাখানদীসমূহে এবং ওই মাছ শিকারসহ অন্যান্য খাতে যেসব মৎস্যজীবী পরিবার মাছ শিকারসহ অন্যান্য খাতে জড়িত রয়েছেন তার সংখ্যা ১০ লাখের কাছাকাছি। মোদ্দাকথা হলো ওই সুন্দরবন ওই ১০ লাখ পরিবারের ভরণপোষণের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে।
এ ছাড়া যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে অনন্য এক মর্যাদায় অভিষিক্ত করে রেখেছে, সেই বাঘের অভয়ারণ্য সুন্দরবন। এ ছাড়া রয়েছে ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, আট প্রজাতির উভচর প্রাণী ও ৩০০ প্রজাতির বিচিত্র সব পাখপাখালি। এমন একটি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বনকে শুধু ভারতের স্বার্থ বজায় রাখতে গিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ওই বনের কাছাকাছি স্থান বাগেরহাটের রামপাল এলাকায় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। ভারতের সহায়তায় শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়লাভিত্তিক তিনটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। তার মধ্যে একটির জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল সুন্দরবনের কাছে রামপালে। অন্য দুটির মধ্যে একটির জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছিল মহেশখালীতে এবং আরেকটি পটুয়াখালীতে। সবগুলোই ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র। নিয়ম অনুযায়ী ঘনবসতিপূর্ণ কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদসমৃদ্ধ কোনো অঞ্চলের ২৫ মাইলের কাছাকাছি ওই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো অনুমতি না থাকলেও সরকারি ভাষ্যমতে সুন্দরবনের চেয়ে রামপালের দূরত্ব মাত্র ১৪ কিলোমিটার আর বেসরকারি তথ্যমতে, এই দুই অঞ্চলের মধ্যে মাত্র চার কিলোমিটারের ফারাক। অতএব, সুন্দরবনের এত কাছাকাছি জায়গায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার কোনো কথা না থাকলেও সরকার ভারতের মন রাখতে গিয়েই সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যেহেতু কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যাওয়ার কথা কিন্তু সে ধরনের প্রকল্পে যেখানে কয়লা ব্যবহারের হার ২ শতাংশ থাকার কথা, সেখানে মোট জ্বালানির ৫০ শতাংশ কয়লা নির্ভরতার কথা বলে উল্লিখিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রতিদিন ১২ হাজার টন কয়লা জ্বালানি খাতে ব্যয়ের কথা বলে ভারতের সঙ্গে চুক্তিতে সই করেছিল বাংলাদেশ। আসলে ভারতের নিম্নমানের কয়লা বিক্রির জন্য একটি ক্ষেত্র তৈরির উপায় হিসেবেই সেই সময়ে তারা শেখ হাসিনার কাঁধে বন্দুক রেখে পাখি শিকারে নেমেছিল। অভিযোগ রয়েছে, এই সময়ের এই সিদ্ধান্তটা ছিল আন্তর্জাতিক চুক্তির বরখেলাপ। কারণ ভারতের এনটিপিসির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে দেশের স্বার্থ বরাবরের মতো উপেক্ষিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী মাত্র ১৫ শতাংশ বিনিয়োগ করে ভারত ৫০ শতাংশের মালিকানা পাওয়ার বিষয়টা যথেষ্ট পরিমাণে লুকিয়ে রাখলেও বিষয়টা সংশ্লিষ্ট সবার কাছেই স্পষ্ট হয়েই ধরা দিয়েছিল; কিন্তু তা সত্ত্বেও গদি টিকিয়ে রাখতে গিয়ে উচ্চবাচ্চ করেননি কেউ। সরকারের বিরোধী পক্ষ বিএনপি সেই সময়ে মিনমিনে কণ্ঠস্বরে আপত্তি তুললেও তা যে ধোপে টিকবে না, সেটা তারা ভালোই বুঝেছিল। তা ছাড়া তাদেরও একটা রাজনৈতিক দর্শন আছে, সেখানেও ভারত একটা ফ্যাক্টর, যদিও আওয়ামী লীগের মতো অতটা নয়। ওই সময়ে প্রচণ্ড আপত্তি তুলেছিল রামপাল কৃষিজমি রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। তাদের আপত্তির কারণ ছিল প্রস্তাবিত স্থানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে ঘরবাড়ি হারিয়ে কয়েক হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে পথে নামবে। তা ছাড়া সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ও জীববৈচিত্র্য সীমাহীন ক্ষতির মুখে পড়বে। এ ছাড়া তেল গ্যাস খনিজসম্পদ বিদ্যুৎ ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি ওই সময়ে প্রচুর প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা ছাড়াও দেশজুড়ে লং মার্চের আয়োজন করেছিল। সরকার তাদেরকে গায়ের জোরে প্রতিরোধ করতে চেয়েছে। দেশের জন্য চরম ক্ষতিকর ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে মহামান্য হাইকোর্ট পর্যন্ত সুন্দরবন ধ্বংস করে ওই স্থানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন কেন অবৈধ হবে না, এমন একটা রুল জারি করতে বাধ্য হয়েছিল পর্যন্ত। কিন্তু তৎকালীন সরকার ওই সব বিষয়ে পাত্তা না দিয়ে কাজ করে গেছে এবং ওই সময়ে সরকারের একজন মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সুশীল সমাজ কী বলল না বলল সেসব শুনে সরকার চলে না।’ আর মন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘দেশের সুশীল সমাজ হলো জ্ঞানপাপী। এরা বিএনপি, জামায়াতের চেয়েও খারাপ।’ কিন্তু এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন রয়েছে এবং ভারত নিজেও সেই সব নিয়ম জানতে গিয়ে একসময় অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুতে তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও জনরোষের পরে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল। একইভাবে শ্রীলঙ্কা সরকারের সঙ্গে ভারতের যৌথ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫০০ মেগাওয়াটের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য শ্রীলঙ্কা কয়লার পরিবর্তে গ্যাস ব্যবহারের দাবি জানালে ভারত সেটা মেনে নিয়েছিল। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের এই অনমনীয় মনোভাব বাস্তবায়নে সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল শেখ হাসিনার তৎকালীন তেলবাজ সরকার। যদিও সেই সময়ে সুন্দরবনে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে দেশজুড়ে জনরোষের কথা মাথায় রেখে উদ্বোধনের জন্য নির্ধারিত তারিখের ১৭ দিন আগে শেখ হাসিনা ঘটনাস্থলে না গিয়েই ভেড়ামারায় বসে কাজটা সারলেন, আর দিল্লিতে বসে ভারতের তৎকালীন সরকার মনমোহন সিং ভিডিও লিঙ্কে আঙুল রেখে যৌথ কাজে সম্মতি প্রদান করেছিলেন। (ক্রমশ)