সারা দিন রোদ। ঝলমল আলোয় পূর্ণ সবুজ-শ্যামল মাঠঘাট। অপরূপ শোভায় ছড়ানো সবুজে আকীর্ণ বন-বনানী। নিটোল, নির্মেঘ আর নির্মল আকাশের নিচে সহজ-সরল প্রাণবন্ত জনপদ। সুপ্তালোকের কিরণাভায় পূর্ণ কোলাহলময়। সূর্যের আভা ছড়ানো ঝলমল দিবাশেষে নির্মল বাতায়নের শান্ত-সন্ধ্যা। জ্যোৎস্নামাখা চাঁদের আলোয় মেতে থাকত সবাই। প্রশান্ত হয়ে উঠত সবার মন। মুক্ত বাতায়নে বেজে উঠত জীবনের গান। স্বাধীনতা ও মুক্তির গান। দীর্ঘ পথ শেষে কখনো বৃক্ষের ছায়ায় খুলে যেত স্বস্তি ও শান্তির দুয়ার। ক্লান্ত পথিক ওইসব দুয়ারে খুঁজে পেত প্রেম-নিঃসৃত ভালোবাসা।
স্বপ্নের বিপুল সম্ভারে অবুঝ বালকের চোখেও ভাসত সম্ভাবনার নতুন সূর্য।
শরতের শান্ত বিকেল কিংবা হেমন্তের পরশ সন্ধ্যায় সকল অবসাদ কেটে গিয়ে সবার মাঝে নেমে আসত স্বস্তি ও সুখময়তার শান্তিধারা।
কিন্তু আজ?
পৃথিবী আছে। প্রকৃতির আলো-আঁধারির খেলা ও বর্ণময় চাকচিক্য আছে। কিন্তু আলো নেই। মানুষ আছে কিন্তু হৃদয় নেই। স্বস্তি, শান্তি ও প্রেম-ভালোবাসা উঠে গেছে মানুষের ভেতর থেকে। দীপ্তালোকের আলো ঝলমলে পৃথিবীটা কেন যেন ক্রমাগত অন্ধকারের দিকেই ধাবমান!
গণমানুষের সুখ-শান্তি ও স্বাধীনতার আস্বাদের স্বপ্ন এখনো অধরা। শুধু জানি, শান্তি আসবে... কিন্তু কীভাবে, কখন? তা জানি না।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় :
‘আমি দেখি নাই তার মুখ, আমি শুনি নাই তার বাণী/ কেবল শুনি ক্ষণে ক্ষণে তাহার পায়ের
ধ্বনিখানিÑ/ ...আছি পাবার আশা নিয়ে, তারে হয়নি আমার পাওয়া।’
মানুষের ভেতরকার প্রেম ও ভালোবাসায় মরীচিকা পড়ে গেছে। অস্বস্তি, অবিশ্বস্ত হৃদয়হীন হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন। শান্তির পরিবর্তে নেমে এসেছে চরম অশান্তি। জনজীবনের সর্বত্র ভীষণ অস্বস্তি। কোমল মায়ার পরিবর্তে নিষ্ঠুরতা সর্বত্র ছেয়ে গেছে। পৃথিবী ও প্রকৃতিকে কলুষিত করার জন্য যুদ্ধবাজ দুষ্টচক্র এখন সবচেয়ে শক্তিশালী। আলোর বদলে ঘন আঁধারের কুণ্ড-কুয়ায় নিপতিত শান্তিকামী মানুষ। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা ও নৃশংসতায় পৃথিবী ছেয়ে গেছে কালো ধোঁয়ায়।
মানুষের প্রতি অমানবিক নির্দয় আচরণ রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্রই বিদ্যমান! একদিকে অবক্ষয়ী সমাজ, অন্যদিকে পৃথিবীর ক্ষমতাধর লোভী দুষ্ট শাসকের স্বৈরাচারী ব্যবস্থাই যেন প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রপুঞ্জের মূলনীতি!
যার ফলে সর্বত্র সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়। মানুষ নির্মম, নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরে।
প্রতিবছর কোনো না কোনো দেশে মানববিধ্বংসী যুদ্ধের ভয়াবহতায় পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। যার ফলে অবুঝ পৃথিবীতে ছেয়ে গেছে ভয়, শঙ্কা এবং আতঙ্কজনক ঘোর অমানিশা!
আসলে এই অমানিশা প্রকৃতির নিকট থেকে নয় (!), মানুষেরই সৃষ্টি, মানুষেরই কর্মের ফসল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কলঙ্কিত ইতিহাসের কথা সবার জানা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যেদিন শুরু হয়, সেদিনের সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লর্ড গ্রে বলেছিলেন, ‘ইউরোপের সর্বত্র আলো নিভে যাচ্ছে। আমাদের জীবনে আর সেই আলো জ্বলবে না।’
কী ভয়ংকর, বীভৎস ছিল মানববিধ্বংসী সেই যুদ্ধ। সাধারণ সৈনিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মৃত্যুযন্ত্রণা যে কতটা বীভৎস রূপ ধারণ করতে পারে (!), সেই সব মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞের কথা কস্মিনকালেও ভুলে যাওয়ার নয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মাত্র ২০ বছরের মাথায় পৃথিবীতে বিশ্ব মোড়লিপনার দৌরাত্ম্যে আবারও সমগ্র বিশ্বে যুদ্ধের দাবানল জ্বলে উঠল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধটি ছিল আরও ভয়ংকর, বীভৎস আরও বিভীষিকাময়। তারকাযুদ্ধের মরণখেলা আর হত্যাযজ্ঞের উন্মাদনায় পৃথিবীর দুষ্ট ও দুরাচার রাষ্ট্রনায়কদের প্রতিহিংসাপরায়ণ শক্তির মহড়া তখন ঘৃণিতভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল।
শুধু কি তা-ই? প্রতিবছর মানববিধ্বংসী যুদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই মানুষের অকালমৃত্যু হয়। যেদিকে তাকাই সব দিকেই মানবতার বিপর্যয়!
প্রতিহিংসা ও পাশবিকতার চরম বিপর্যয়ে একে অপরকে অবৈধ মারণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার উন্মাদনায় কত নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
তবে এতটুকু বলা যায়, শুধু হিটলারের মাধ্যমেই ৬০ লাখ নিরীহ ইহুদি (ইহুদিদের হিসাবমতে ) করুণভাবে মারা গিয়েছিল। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে জাপানি সৈন্যদের যুদ্ধংদেহী সবক দেওয়ার জন্য ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট আমেরিকা কর্তৃক নিক্ষিপ্ত মানববিধ্বংসী পারমাণবিক বোমায় হিরোশিমা-নাগাসাকির ধ্বংসলীলার অবস্থা কী ভয়ংকর ও বীভৎস রূপ ধারণ করেছিল (?), তা সবাই অবগত। তখনকার মানববিধ্বংসী ভয়ংকর বোমা হামলায় নিরপরাধ ও নিরীহ লাখো মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছিল, সেই বীভৎস দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব। সেই মারণাস্ত্রের ভয়াবতা এত তীব্র এবং এতই ভয়ংকর ছিল, যার শিকারে লাখ লাখ মানুষ বিকলাঙ্গ হয়েছিলেন এবং পর্যায়ক্রমে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
সেই সময়কার বোমা হামলার এত বছর পরও সেখানকার বিষাক্ত বোমার তেজস্ক্রিয়তা আজও বিদ্যমান। যার দূষিত বায়ুপ্রবাহের প্রতিক্রিয়ায় সেখানকার বিভিন্ন স্থানে এখনো বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নিচ্ছে!
পরমাণু বোমার ক্ষতি সম্পর্কে সেই সময়কার আণবিক বোমা তৈরির উদ্ভাবক একজন বিজ্ঞানী হকচকিতভাবে নিজেদের আবিষ্কার নিয়ে আক্ষেপসূচক প্রশ্ন করেছিলেন :
‘ক্রিমিনালদের হাতে কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। ক্রিমিনালদের হাতে সেসব পড়লে মহাসর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।’
আসলে তো তা-ই, যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং পৃথিবীর মানববিধ্বংসী সন্ত্রাসীরা রেডিয়াম ও কেমিক্যালের অপব্যবহার ঘটিয়ে অর্থাৎ রাসায়নিক পরমাণুর অপপ্রয়োগে পৃথিবীতে অনেক অঘটন ঘটাতে পারে।
তবে এটাও ঠিক, বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারেরই একটি ভালো-মন্দ দিক আছে। পরমাণুজনিত বিষাক্ত কেমিক্যাল কিংবা বারুদসহযোগে দেশলাইয়ের কাঠির মতো ছোট্ট পেনসিল সাইজের শক্তিশালী বোমা দ্বারা প্রাসাদোপম সর্বোচ্চ বিল্ডিংও যে উড়িয়ে দেওয়া যায়, তাও পৃথিবীতে ইতিপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সর্বোচ্চ ও সুদৃশ্য টুইন টাওয়ার ও তৎসংলগ্ন টাওয়ারসমূহ (মোট ৭টি টাওয়ার) সন্ত্রাসী হামলায় ধূলিসাৎ হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। যেখানে কয়েক হাজার নিরীহ মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছিল। বিষাদময় সেই ভয়াবহ ঘটনার দৃশ্যের কথা মনে উঠলে এখনো গা শিউরে ওঠে।
বলছিলাম সন্ত্রাস ও মানববিধ্বংসী সেসব তাণ্ডবের ঘটনা পৃথিবী যেমন দেখেছে, তেমনি বর্তমানে তার চেয়েও ভয়ংকর মানববিধ্বংসী ঘটনার অবতারণা ঘটছে। ফ্যাসিজমের ধারক মুসোলিনি থেকে হিটলারের প্রকৃত প্রেতাত্মাদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পৃথিবীর অধিকাংশ স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূলনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বত্র ক্ষমতার উন্মাদনায় অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতা।
পৃথিবীর নিকৃষ্টতম নিষ্ঠুর বর্বরতা ঘটানো হচ্ছে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে। সেখানকার অসহায় নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষকে হত্যালীলার উন্মত্ত নেশায় মেতে উঠেছে হাল-আমলে ইসরায়েলের উগ্রবাদী শাসক। প্রতিদিন শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। পৃথিবী সকরুণভাবে দেখছে বীভৎসতার ভয়ংকর রূপ। বিশ্বের শান্তিকামী সমগ্র মানুষ ক্ষোভে-দুঃখে ফুঁসে উঠছে। সবাই একযোগে অবৈধ ইসরায়েলের আগ্রাসন ও যুদ্ধ বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রতিকার হচ্ছে না। বিশ্বমোড়লদের মাঝে কোনো দয়ার সঞ্চার হয় না!
জাতিসংঘের অধিবেশনগুলোতে যুদ্ধ বন্ধের দাবি উঠছে এবং উত্থাপিত প্রস্তাবসমূহ মোড়লদের ভেটোতে নিদারুণভাবে নাকচ হয়ে যাচ্ছে! জাতিসংঘের সকল মানবিক সংস্থাগুলোর ওপরও ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। ইসরায়েলের নিষ্ঠুর শাসক উল্টো জাতিসংঘকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ফিলিস্তিনিদের সকল আবাসভূমি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য বর্বরোচিত পাশবিকতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে।
পৃথিবীর লেটেস্ট মারণাস্ত্র ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষের ওপর প্রয়োগ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রদানকৃত অত্যাধুনিক বোমা ও লেটেস্ট ক্ষেপণাস্ত্রের অপব্যবহার।
আসলে এসব ঘটনার কুফলসমূহ বিজ্ঞানের আবিষ্কারের অসৎ ব্যবহার। পৃথিবীর মানুষকে আলোর পথ থেকে সরিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার অপচেষ্টা। এ কথা সত্য, বিজ্ঞানের বদৌলতে বিশ্ব উন্নত থেকে আরও উন্নততর হয়ে উঠছে। মানুষ আলোর সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। সেই বিজ্ঞানকেই পৃথিবীর দুষ্ট শাসক মানববিধ্বংসের কাজে অবলীলায় ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে বিজ্ঞানের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের পরিবেশকে অবলীলায় দূষিত ও কলুষিত করে।
এভাবেই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সন্ত্রাস ও অবৈধ দখলদারদের হাতে বন্দী। এ ছাড়া অনেক দেশেই অবৈধ আগ্রাসন ও রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বহাল। উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমার, সিরিয়া, সৌদি আরবসহ অনেক রাষ্ট্রই তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি সরকারের অমানবিক নির্মম আগ্রাসনে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ইয়েমেন তছনছ হয়ে গেছে! সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন নারী-শিশুসহ কয়েক লাখ নিরীহ মানুষ।
মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরতান্ত্রিক দেশ ছাড়াও অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিভিন্ন শহর ইসরায়েলি আগ্রাসনের স্থায়ী বধ্যভূমি। ইসরায়েলের আগ্রাসনে একসময়কার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি এখন কোনো রাষ্ট্র নয়, একটি মৃত্যু উপত্যকা। অথচ এই ফিলিস্তিন ছিল সভ্যতার লীলাভূমি, যেখানে ইসরায়েলি দস্যু শাসকের হাতে প্রতিনিয়ত শুধু মানুষ মরে। পারমাণবিক বোমা তথা বর্তমান সময়ের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র বড় দেশগুলোর গুদামে মজুত আছে।
আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ বৃহৎ শক্তির হাতে অনেক পূর্ব থেকেই পারমাণবিক বোমা রয়েছে। তেমনি ইসরায়েলের মতো (ক্ষ্দ্রু সীমায়িত) দখলদার রাষ্ট্রের কাছেও পারমাণবিক বোমা ও মারণাস্ত্র কারখানা আছে। একইভাবে ইরান, পাকিস্তান ও ভারতের কাছে মারণাস্ত্র মজুত করারও অভিযোগ রয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অমুসলিম দেশ ছাড়াও কোনো কোনো আলখেল্লাধারী মুসলিম একনায়কতান্ত্রিক দেশ ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়া থেকে পর্যাপ্ত মারণাস্ত্র কিনে নিজের দেশের স্বৈরতন্ত্রকে বিপজ্জনকভাবে আরও স্থায়ী ও গতিশীল করে তুলছে!
এসব দেশের কেউ কেউ বাইরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখে খই ফোটায়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয়ংকর দুষ্টচারিতায় মানুষ হত্যার অনাচারবৃত্তি চালিয়ে যায়। যেমন ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র ক্রেতা বন্ধুরাষ্ট্র হলো মিসর ও সৌদি আরব।
আহ! পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রপুঞ্জের নিক্ষিপ্ত ভয়ংকর মারণাস্ত্রে অবলীলায় প্রাণ হারাচ্ছে গরিব দেশগুলোর নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া সমগ্র বিশ্বের সব রকম বর্বরতা ও নৃশংসতাকে হার মানিয়ে কয়েক বছর আগে মিয়ানমারে ঘটেছে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় রকমের মানবিক বিপর্যয়! মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্মম শিকার মিয়ানমারের নিরপরাধ রোহিঙ্গা জাতি। বর্তমানে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশের সীমান্তে কয়েক লাখ নিরীহ রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে আছে।
সবকিছুকে হার মানিয়ে বিগত বছরে ইসরায়েলি শাসকের নির্বিচার বোমা হামলা, বর্বরতা ফিলিস্তিনে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। ফিলিস্তিনিদের সমস্ত দালান-কোঠা ও বাড়িগুলোকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে! গাজা উপত্যকাসহ সমগ্র ফিলিস্তিনে নিদারুণ মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়ে, গণহত্যা চালিয়ে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করা হয়েছে। সর্বত্র মৃত্যুর বিভীষিকা!
একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং মানববিধ্বংসী যুদ্ধ বন্ধ করার জোরালো দাবি উঠেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সকল মানবিক সংগঠনসহ সমগ্র বিশ্ব বিক্ষুব্ধ। সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষ যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার। যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সকল দেশ, এমনকি খোদ ইসরায়েলের জনগণও বর্তমান ইসরায়েলি শাসক ও ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছেন। প্রতিদিন ইসরায়েলি বোমা হামলায় ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র মানুষগুলো নিহত হচ্ছেন।
স্বপ্ন-উচ্ছ্বাস আর সম্ভাবনা নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষও নিজ ভূখণ্ডে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চায়। তাদের এই চাওয়া ও স্বাধীনতাসংগ্রাম ৭৬ বছর ধরেই চলছে। ফিলিস্তিনের অধিকারহারা, মুক্তিকামী মানুষের ন্যূনতম ও মৌলিক অধিকার হরণ করেছে ইসরায়েলি দস্যুরাষ্ট্র।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বীভৎসতা ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। গত বছর থেকে এককভাবে ফিলিস্তিনে আগ্রাসন, বোমা হামলা ও নিপীড়নে অর্ধলক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৪৫ হাজার এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন এক লাখের অধিক ফিলিস্তিনি। বেশির ভাগ নারী-শিশুসহ ফিলিস্তিনের প্রতি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীকে বিতাড়ন করেছে। গাজা সিটি এখন সম্পূর্ণ ধ্বংস ও ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘসহ পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্র ইসরায়েলি বর্বরতার নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েই ইসরায়েল বেপরোয়া ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের লাখ লাখ আর্তপীড়িত উদ্বাস্তু মানুষের শেল্টারে বর্বর হামলা চালিয়ে তাদের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বিতাড়িত করছে। একইভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ লেবাননের ওপর ভয়ংকর বোমা হামলা শুরু করেছে। গাজা সিটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার পর এখন ঐতিহ্যবাহী লেবাননে চালানো হচ্ছে বীভৎস বর্বরতা। বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ইসরায়েল মানববিধ্বংসী তৎপরতা অব্যাহত রেখে চলেছে।
পৃথিবীর যুদ্ধংদেহী চরমতম অশান্তির অশুভ দাবানলের মধ্যেও কোনো কোনো রাষ্ট্রে গণবিপ্লবের বাতাবরণ বইতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ও সিরিয়া তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। উল্লিখিত রাষ্ট্রসমূহে দীর্ঘ দিনের দুঃশাসন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রবল গণরোষ এবং চূড়ান্ত গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পলায়ন ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট দেশের গণমানুষের মাঝে কিঞ্চিৎ আশার আলো সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামী দিনে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন নির্মোহ প্রশাসন, ন্যায়ভিত্তিক আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রচলন।
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বসন্ত্রাসের বীজ বপনকারী রাষ্ট্রসমূহের খামখেয়ালিপনায় বিশ্বমানবতার নাভিশ্বাস। ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের ভয়াবহতায় বিশ্বের অর্থনীতি চরমে গিয়ে ঠেকছে। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে যুদ্ধরত দেশগুলোয় শান্তি ফিরে আসতে পারে। কেননা পৃথিবীর মানুষ যুদ্ধ চায় না। তারা চায় শান্তি, স্বস্তির সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ এবং নিরাপদ আবাসভূমি।
২০২৫ সালের নতুন বছরে নব উদ্দীপনায় নতুন আলোয় পৃথিবীতে নেমে আসুক শান্তির বাতাবরণ। এই সুন্দর পৃথিবী ও প্রকৃতি আবার আলোকিত হয়ে উঠুক। মানববিধ্বংসী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে কেটে যাক নৈরাশ্যের ঘন অন্ধকার।
পৃথিবীর ধ্বংসবাজ শাসকদের বুঝতে হবে, মরণঘাতী যুদ্ধ দিয়ে শান্তি আসে না। জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং জোরপূর্বক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে আলবার্ট আইনস্টাইনের একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ছে:
‘জোর করে শান্তি পাওয়া যায় না, সেটি কেবল অনুধাবন করার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে।’
ক্ষমতার লোভ ও উগ্র উন্মাদনায় প্রতিহিংসার ভয়ংকর রূপ দেখানো যায়। শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় না। মানুষের ভালোবাসা আদায় করা যায় না। পৃথিবীর সন্ত্রাসের হোতা এবং স্বৈরাচারী শাসকদের হৃদয়ে মানুষকে ভালোবাসার উপলব্ধি আসুক। মানবপ্রেম ও ভালোবাসার ছোঁয়ায় সভ্যতার বর্ণচ্ছটায় প্রকৃতি ও মানবভূবন আবার দ্যুতিময় ও ধন্য হয়ে উঠুক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অন্যায়, অনাচার, নির্দয়, নিষ্ঠুর ও অমানবিক আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ বন্ধ হোক। বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠুক বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ। মানুষ আবারও তার আত্মশক্তিতে জেগে উঠুক। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক
স্বপ্নের বিপুল সম্ভারে অবুঝ বালকের চোখেও ভাসত সম্ভাবনার নতুন সূর্য।
শরতের শান্ত বিকেল কিংবা হেমন্তের পরশ সন্ধ্যায় সকল অবসাদ কেটে গিয়ে সবার মাঝে নেমে আসত স্বস্তি ও সুখময়তার শান্তিধারা।
কিন্তু আজ?
পৃথিবী আছে। প্রকৃতির আলো-আঁধারির খেলা ও বর্ণময় চাকচিক্য আছে। কিন্তু আলো নেই। মানুষ আছে কিন্তু হৃদয় নেই। স্বস্তি, শান্তি ও প্রেম-ভালোবাসা উঠে গেছে মানুষের ভেতর থেকে। দীপ্তালোকের আলো ঝলমলে পৃথিবীটা কেন যেন ক্রমাগত অন্ধকারের দিকেই ধাবমান!
গণমানুষের সুখ-শান্তি ও স্বাধীনতার আস্বাদের স্বপ্ন এখনো অধরা। শুধু জানি, শান্তি আসবে... কিন্তু কীভাবে, কখন? তা জানি না।
রবীন্দ্রনাথের ভাষায় :
‘আমি দেখি নাই তার মুখ, আমি শুনি নাই তার বাণী/ কেবল শুনি ক্ষণে ক্ষণে তাহার পায়ের
ধ্বনিখানিÑ/ ...আছি পাবার আশা নিয়ে, তারে হয়নি আমার পাওয়া।’
মানুষের ভেতরকার প্রেম ও ভালোবাসায় মরীচিকা পড়ে গেছে। অস্বস্তি, অবিশ্বস্ত হৃদয়হীন হয়ে যাচ্ছে মানুষের জীবন। শান্তির পরিবর্তে নেমে এসেছে চরম অশান্তি। জনজীবনের সর্বত্র ভীষণ অস্বস্তি। কোমল মায়ার পরিবর্তে নিষ্ঠুরতা সর্বত্র ছেয়ে গেছে। পৃথিবী ও প্রকৃতিকে কলুষিত করার জন্য যুদ্ধবাজ দুষ্টচক্র এখন সবচেয়ে শক্তিশালী। আলোর বদলে ঘন আঁধারের কুণ্ড-কুয়ায় নিপতিত শান্তিকামী মানুষ। নিষ্ঠুরতা, পাশবিকতা ও নৃশংসতায় পৃথিবী ছেয়ে গেছে কালো ধোঁয়ায়।
মানুষের প্রতি অমানবিক নির্দয় আচরণ রাষ্ট্রপুঞ্জ থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্রই বিদ্যমান! একদিকে অবক্ষয়ী সমাজ, অন্যদিকে পৃথিবীর ক্ষমতাধর লোভী দুষ্ট শাসকের স্বৈরাচারী ব্যবস্থাই যেন প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রপুঞ্জের মূলনীতি!
যার ফলে সর্বত্র সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়। মানুষ নির্মম, নৃশংসভাবে হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। সর্বত্র নিরাপত্তাহীনতায় সাধারণ মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মরে।
প্রতিবছর কোনো না কোনো দেশে মানববিধ্বংসী যুদ্ধের ভয়াবহতায় পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারায়। যার ফলে অবুঝ পৃথিবীতে ছেয়ে গেছে ভয়, শঙ্কা এবং আতঙ্কজনক ঘোর অমানিশা!
আসলে এই অমানিশা প্রকৃতির নিকট থেকে নয় (!), মানুষেরই সৃষ্টি, মানুষেরই কর্মের ফসল।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কলঙ্কিত ইতিহাসের কথা সবার জানা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যেদিন শুরু হয়, সেদিনের সন্ধ্যায় নিজ দপ্তরের জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লর্ড গ্রে বলেছিলেন, ‘ইউরোপের সর্বত্র আলো নিভে যাচ্ছে। আমাদের জীবনে আর সেই আলো জ্বলবে না।’
কী ভয়ংকর, বীভৎস ছিল মানববিধ্বংসী সেই যুদ্ধ। সাধারণ সৈনিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মৃত্যুযন্ত্রণা যে কতটা বীভৎস রূপ ধারণ করতে পারে (!), সেই সব মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞের কথা কস্মিনকালেও ভুলে যাওয়ার নয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মাত্র ২০ বছরের মাথায় পৃথিবীতে বিশ্ব মোড়লিপনার দৌরাত্ম্যে আবারও সমগ্র বিশ্বে যুদ্ধের দাবানল জ্বলে উঠল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধটি ছিল আরও ভয়ংকর, বীভৎস আরও বিভীষিকাময়। তারকাযুদ্ধের মরণখেলা আর হত্যাযজ্ঞের উন্মাদনায় পৃথিবীর দুষ্ট ও দুরাচার রাষ্ট্রনায়কদের প্রতিহিংসাপরায়ণ শক্তির মহড়া তখন ঘৃণিতভাবে প্রদর্শিত হয়েছিল।
শুধু কি তা-ই? প্রতিবছর মানববিধ্বংসী যুদ্ধ ও রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই মানুষের অকালমৃত্যু হয়। যেদিকে তাকাই সব দিকেই মানবতার বিপর্যয়!
প্রতিহিংসা ও পাশবিকতার চরম বিপর্যয়ে একে অপরকে অবৈধ মারণাস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিহত করার উন্মাদনায় কত নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
তবে এতটুকু বলা যায়, শুধু হিটলারের মাধ্যমেই ৬০ লাখ নিরীহ ইহুদি (ইহুদিদের হিসাবমতে ) করুণভাবে মারা গিয়েছিল। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে জাপানি সৈন্যদের যুদ্ধংদেহী সবক দেওয়ার জন্য ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট আমেরিকা কর্তৃক নিক্ষিপ্ত মানববিধ্বংসী পারমাণবিক বোমায় হিরোশিমা-নাগাসাকির ধ্বংসলীলার অবস্থা কী ভয়ংকর ও বীভৎস রূপ ধারণ করেছিল (?), তা সবাই অবগত। তখনকার মানববিধ্বংসী ভয়ংকর বোমা হামলায় নিরপরাধ ও নিরীহ লাখো মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছিল, সেই বীভৎস দৃশ্যের বর্ণনা দেওয়া অসম্ভব। সেই মারণাস্ত্রের ভয়াবতা এত তীব্র এবং এতই ভয়ংকর ছিল, যার শিকারে লাখ লাখ মানুষ বিকলাঙ্গ হয়েছিলেন এবং পর্যায়ক্রমে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
সেই সময়কার বোমা হামলার এত বছর পরও সেখানকার বিষাক্ত বোমার তেজস্ক্রিয়তা আজও বিদ্যমান। যার দূষিত বায়ুপ্রবাহের প্রতিক্রিয়ায় সেখানকার বিভিন্ন স্থানে এখনো বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম নিচ্ছে!
পরমাণু বোমার ক্ষতি সম্পর্কে সেই সময়কার আণবিক বোমা তৈরির উদ্ভাবক একজন বিজ্ঞানী হকচকিতভাবে নিজেদের আবিষ্কার নিয়ে আক্ষেপসূচক প্রশ্ন করেছিলেন :
‘ক্রিমিনালদের হাতে কোনো কিছুই নিরাপদ নয়। ক্রিমিনালদের হাতে সেসব পড়লে মহাসর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।’
আসলে তো তা-ই, যুদ্ধবাজ রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং পৃথিবীর মানববিধ্বংসী সন্ত্রাসীরা রেডিয়াম ও কেমিক্যালের অপব্যবহার ঘটিয়ে অর্থাৎ রাসায়নিক পরমাণুর অপপ্রয়োগে পৃথিবীতে অনেক অঘটন ঘটাতে পারে।
তবে এটাও ঠিক, বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারেরই একটি ভালো-মন্দ দিক আছে। পরমাণুজনিত বিষাক্ত কেমিক্যাল কিংবা বারুদসহযোগে দেশলাইয়ের কাঠির মতো ছোট্ট পেনসিল সাইজের শক্তিশালী বোমা দ্বারা প্রাসাদোপম সর্বোচ্চ বিল্ডিংও যে উড়িয়ে দেওয়া যায়, তাও পৃথিবীতে ইতিপূর্বে প্রমাণিত হয়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সর্বোচ্চ ও সুদৃশ্য টুইন টাওয়ার ও তৎসংলগ্ন টাওয়ারসমূহ (মোট ৭টি টাওয়ার) সন্ত্রাসী হামলায় ধূলিসাৎ হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। যেখানে কয়েক হাজার নিরীহ মানুষের করুণ মৃত্যু হয়েছিল। বিষাদময় সেই ভয়াবহ ঘটনার দৃশ্যের কথা মনে উঠলে এখনো গা শিউরে ওঠে।
বলছিলাম সন্ত্রাস ও মানববিধ্বংসী সেসব তাণ্ডবের ঘটনা পৃথিবী যেমন দেখেছে, তেমনি বর্তমানে তার চেয়েও ভয়ংকর মানববিধ্বংসী ঘটনার অবতারণা ঘটছে। ফ্যাসিজমের ধারক মুসোলিনি থেকে হিটলারের প্রকৃত প্রেতাত্মাদের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম পৃথিবীর অধিকাংশ স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূলনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বত্র ক্ষমতার উন্মাদনায় অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতা।
পৃথিবীর নিকৃষ্টতম নিষ্ঠুর বর্বরতা ঘটানো হচ্ছে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে। সেখানকার অসহায় নারী-শিশুসহ নিরীহ মানুষকে হত্যালীলার উন্মত্ত নেশায় মেতে উঠেছে হাল-আমলে ইসরায়েলের উগ্রবাদী শাসক। প্রতিদিন শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। পৃথিবী সকরুণভাবে দেখছে বীভৎসতার ভয়ংকর রূপ। বিশ্বের শান্তিকামী সমগ্র মানুষ ক্ষোভে-দুঃখে ফুঁসে উঠছে। সবাই একযোগে অবৈধ ইসরায়েলের আগ্রাসন ও যুদ্ধ বন্ধের জোর দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রতিকার হচ্ছে না। বিশ্বমোড়লদের মাঝে কোনো দয়ার সঞ্চার হয় না!
জাতিসংঘের অধিবেশনগুলোতে যুদ্ধ বন্ধের দাবি উঠছে এবং উত্থাপিত প্রস্তাবসমূহ মোড়লদের ভেটোতে নিদারুণভাবে নাকচ হয়ে যাচ্ছে! জাতিসংঘের সকল মানবিক সংস্থাগুলোর ওপরও ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। ইসরায়েলের নিষ্ঠুর শাসক উল্টো জাতিসংঘকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ফিলিস্তিনিদের সকল আবাসভূমি ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে দিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামীদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য বর্বরোচিত পাশবিকতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছে।
পৃথিবীর লেটেস্ট মারণাস্ত্র ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষের ওপর প্রয়োগ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রদানকৃত অত্যাধুনিক বোমা ও লেটেস্ট ক্ষেপণাস্ত্রের অপব্যবহার।
আসলে এসব ঘটনার কুফলসমূহ বিজ্ঞানের আবিষ্কারের অসৎ ব্যবহার। পৃথিবীর মানুষকে আলোর পথ থেকে সরিয়ে অন্ধকারে নিমজ্জিত করার অপচেষ্টা। এ কথা সত্য, বিজ্ঞানের বদৌলতে বিশ্ব উন্নত থেকে আরও উন্নততর হয়ে উঠছে। মানুষ আলোর সভ্যতা ও আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। সেই বিজ্ঞানকেই পৃথিবীর দুষ্ট শাসক মানববিধ্বংসের কাজে অবলীলায় ব্যবহার করে থাকে। বর্তমানে বিজ্ঞানের অপব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের পরিবেশকে অবলীলায় দূষিত ও কলুষিত করে।
এভাবেই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ সন্ত্রাস ও অবৈধ দখলদারদের হাতে বন্দী। এ ছাড়া অনেক দেশেই অবৈধ আগ্রাসন ও রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বহাল। উত্তর কোরিয়া, মিয়ানমার, সিরিয়া, সৌদি আরবসহ অনেক রাষ্ট্রই তার নিকৃষ্টতম উদাহরণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি সরকারের অমানবিক নির্মম আগ্রাসনে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ইয়েমেন তছনছ হয়ে গেছে! সেখানে প্রাণ হারিয়েছেন নারী-শিশুসহ কয়েক লাখ নিরীহ মানুষ।
মধ্যপ্রাচ্যের স্বৈরতান্ত্রিক দেশ ছাড়াও অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিভিন্ন শহর ইসরায়েলি আগ্রাসনের স্থায়ী বধ্যভূমি। ইসরায়েলের আগ্রাসনে একসময়কার স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি এখন কোনো রাষ্ট্র নয়, একটি মৃত্যু উপত্যকা। অথচ এই ফিলিস্তিন ছিল সভ্যতার লীলাভূমি, যেখানে ইসরায়েলি দস্যু শাসকের হাতে প্রতিনিয়ত শুধু মানুষ মরে। পারমাণবিক বোমা তথা বর্তমান সময়ের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র বড় দেশগুলোর গুদামে মজুত আছে।
আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ বৃহৎ শক্তির হাতে অনেক পূর্ব থেকেই পারমাণবিক বোমা রয়েছে। তেমনি ইসরায়েলের মতো (ক্ষ্দ্রু সীমায়িত) দখলদার রাষ্ট্রের কাছেও পারমাণবিক বোমা ও মারণাস্ত্র কারখানা আছে। একইভাবে ইরান, পাকিস্তান ও ভারতের কাছে মারণাস্ত্র মজুত করারও অভিযোগ রয়েছে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অমুসলিম দেশ ছাড়াও কোনো কোনো আলখেল্লাধারী মুসলিম একনায়কতান্ত্রিক দেশ ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়া থেকে পর্যাপ্ত মারণাস্ত্র কিনে নিজের দেশের স্বৈরতন্ত্রকে বিপজ্জনকভাবে আরও স্থায়ী ও গতিশীল করে তুলছে!
এসব দেশের কেউ কেউ বাইরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুখে খই ফোটায়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ভয়ংকর দুষ্টচারিতায় মানুষ হত্যার অনাচারবৃত্তি চালিয়ে যায়। যেমন ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র ক্রেতা বন্ধুরাষ্ট্র হলো মিসর ও সৌদি আরব।
আহ! পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রপুঞ্জের নিক্ষিপ্ত ভয়ংকর মারণাস্ত্রে অবলীলায় প্রাণ হারাচ্ছে গরিব দেশগুলোর নারী, শিশু ও সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া সমগ্র বিশ্বের সব রকম বর্বরতা ও নৃশংসতাকে হার মানিয়ে কয়েক বছর আগে মিয়ানমারে ঘটেছে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় রকমের মানবিক বিপর্যয়! মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নির্মম শিকার মিয়ানমারের নিরপরাধ রোহিঙ্গা জাতি। বর্তমানে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রাণ বাঁচানোর জন্য বাংলাদেশের সীমান্তে কয়েক লাখ নিরীহ রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে আছে।
সবকিছুকে হার মানিয়ে বিগত বছরে ইসরায়েলি শাসকের নির্বিচার বোমা হামলা, বর্বরতা ফিলিস্তিনে নারী-শিশুসহ হাজার হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। ফিলিস্তিনিদের সমস্ত দালান-কোঠা ও বাড়িগুলোকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে! গাজা উপত্যকাসহ সমগ্র ফিলিস্তিনে নিদারুণ মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়ে, গণহত্যা চালিয়ে মৃত্যু উপত্যকায় পরিণত করা হয়েছে। সর্বত্র মৃত্যুর বিভীষিকা!
একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং মানববিধ্বংসী যুদ্ধ বন্ধ করার জোরালো দাবি উঠেছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সকল মানবিক সংগঠনসহ সমগ্র বিশ্ব বিক্ষুব্ধ। সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষ যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সোচ্চার। যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সকল দেশ, এমনকি খোদ ইসরায়েলের জনগণও বর্তমান ইসরায়েলি শাসক ও ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছেন। প্রতিদিন ইসরায়েলি বোমা হামলায় ফিলিস্তিনের নিরস্ত্র মানুষগুলো নিহত হচ্ছেন।
স্বপ্ন-উচ্ছ্বাস আর সম্ভাবনা নিয়েই মানুষ বেঁচে থাকতে চায়। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী মানুষও নিজ ভূখণ্ডে স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করতে চায়। তাদের এই চাওয়া ও স্বাধীনতাসংগ্রাম ৭৬ বছর ধরেই চলছে। ফিলিস্তিনের অধিকারহারা, মুক্তিকামী মানুষের ন্যূনতম ও মৌলিক অধিকার হরণ করেছে ইসরায়েলি দস্যুরাষ্ট্র।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বীভৎসতা ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। গত বছর থেকে এককভাবে ফিলিস্তিনে আগ্রাসন, বোমা হামলা ও নিপীড়নে অর্ধলক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৪৫ হাজার এবং মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন এক লাখের অধিক ফিলিস্তিনি। বেশির ভাগ নারী-শিশুসহ ফিলিস্তিনের প্রতি ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে গাজার ২৩ লাখ অধিবাসীকে বিতাড়ন করেছে। গাজা সিটি এখন সম্পূর্ণ ধ্বংস ও ধূলিসাৎ করে দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘসহ পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্র ইসরায়েলি বর্বরতার নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছে। একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েই ইসরায়েল বেপরোয়া ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে।
ফিলিস্তিনের লাখ লাখ আর্তপীড়িত উদ্বাস্তু মানুষের শেল্টারে বর্বর হামলা চালিয়ে তাদের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে বিতাড়িত করছে। একইভাবে পার্শ্ববর্তী দেশ লেবাননের ওপর ভয়ংকর বোমা হামলা শুরু করেছে। গাজা সিটিকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেওয়ার পর এখন ঐতিহ্যবাহী লেবাননে চালানো হচ্ছে বীভৎস বর্বরতা। বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ইসরায়েল মানববিধ্বংসী তৎপরতা অব্যাহত রেখে চলেছে।
পৃথিবীর যুদ্ধংদেহী চরমতম অশান্তির অশুভ দাবানলের মধ্যেও কোনো কোনো রাষ্ট্রে গণবিপ্লবের বাতাবরণ বইতে শুরু করেছে। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ও সিরিয়া তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। উল্লিখিত রাষ্ট্রসমূহে দীর্ঘ দিনের দুঃশাসন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে গণজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রবল গণরোষ এবং চূড়ান্ত গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরশাসকের পলায়ন ঘটেছে। সংশ্লিষ্ট দেশের গণমানুষের মাঝে কিঞ্চিৎ আশার আলো সৃষ্টি হয়েছে। তবে আগামী দিনে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন নির্মোহ প্রশাসন, ন্যায়ভিত্তিক আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার প্রচলন।
পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বসন্ত্রাসের বীজ বপনকারী রাষ্ট্রসমূহের খামখেয়ালিপনায় বিশ্বমানবতার নাভিশ্বাস। ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের ভয়াবহতায় বিশ্বের অর্থনীতি চরমে গিয়ে ঠেকছে। একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে যুদ্ধরত দেশগুলোয় শান্তি ফিরে আসতে পারে। কেননা পৃথিবীর মানুষ যুদ্ধ চায় না। তারা চায় শান্তি, স্বস্তির সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ এবং নিরাপদ আবাসভূমি।
২০২৫ সালের নতুন বছরে নব উদ্দীপনায় নতুন আলোয় পৃথিবীতে নেমে আসুক শান্তির বাতাবরণ। এই সুন্দর পৃথিবী ও প্রকৃতি আবার আলোকিত হয়ে উঠুক। মানববিধ্বংসী যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে কেটে যাক নৈরাশ্যের ঘন অন্ধকার।
পৃথিবীর ধ্বংসবাজ শাসকদের বুঝতে হবে, মরণঘাতী যুদ্ধ দিয়ে শান্তি আসে না। জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকা এবং জোরপূর্বক শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ মুহূর্তে আলবার্ট আইনস্টাইনের একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পড়ছে:
‘জোর করে শান্তি পাওয়া যায় না, সেটি কেবল অনুধাবন করার মাধ্যমেই অর্জিত হতে পারে।’
ক্ষমতার লোভ ও উগ্র উন্মাদনায় প্রতিহিংসার ভয়ংকর রূপ দেখানো যায়। শান্তি প্রতিষ্ঠা হয় না। মানুষের ভালোবাসা আদায় করা যায় না। পৃথিবীর সন্ত্রাসের হোতা এবং স্বৈরাচারী শাসকদের হৃদয়ে মানুষকে ভালোবাসার উপলব্ধি আসুক। মানবপ্রেম ও ভালোবাসার ছোঁয়ায় সভ্যতার বর্ণচ্ছটায় প্রকৃতি ও মানবভূবন আবার দ্যুতিময় ও ধন্য হয়ে উঠুক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অন্যায়, অনাচার, নির্দয়, নিষ্ঠুর ও অমানবিক আগ্রাসনমূলক যুদ্ধ বন্ধ হোক। বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠুক বৈষম্যহীন মানবিক সমাজ। মানুষ আবারও তার আত্মশক্তিতে জেগে উঠুক। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা।
লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক