২০১৬ সালের এক হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে এক লাখ ২০ হাজার বিটকয়েন চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এক সাইবার অপরাধী দম্পতি। এখন কেবল তাদের সাজার ঘোষণা আসা বাকী।
ওই ক্রিপ্টো সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য সাড়ে চারশ কোটি ডলার।
এই ক্রিপ্টো চুরির তদন্ত করতে গিয়ে গত বছর নিউ ইয়র্ক থেকে হিদার মর্গান ও তার স্বামী ইলইয়া লিখটেনস্টাইনকে গ্রেপ্তার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশকে ফাঁকি দিতে একজন র্যাপার ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন মর্গান।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ওই হ্যাকিংয়ের পেছনে নিজের হাত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন লিখটেনস্টাইন।
অর্থ পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই। কিন্তু মর্গান আরেক মামলায়ও ফেঁসে গেছেন। অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতারণার ও ষড়যন্ত্র করার।
অপরাধে ‘সাফল্য’ অর্জনের পর ‘র্যাজলখান’ ছদ্মনামে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু র্যাপ গানের মিউজিক ভিডিও ধারণের পাশাপাশি সেগুলো প্রকাশ করেন মর্গান।
সেইসব গানের লাইনে নিজেকে ‘ব্যাড-অ্যাস মানি মেকার’ ও ‘দ্য ক্রোকোডাইল অফ ওয়াল স্ট্রিট’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
এদিকে, মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এও কাজ করেছেন মর্গান, যেখানে বিভিন্ন প্রতিবেদনে নিজেকে একজন সফল প্রযুক্তি ব্যবসায়ীর পরিচয় দিতেন তিনি। পাশাপাশি, নিজের সম্পর্কে ব্যবহার করেছেন ‘অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা, সফটওয়্যার বিনিয়োগকারী ও র্যাপার’ বিশেষণও।
এত বিশেষণের অধিকারি ধরা পড়েন যখন ক্রিপ্টো কোম্পানি বিটফিনিক্স থেকে চুরি করা বিটকয়েন বিক্রি করার চেষ্টা করেন তিনি আর তার ’পার্টনার ইন ক্রাইম’ কম্পিউটার প্রোগ্রামার স্বামী।
এই দম্পতি এখন কারাভোগের দ্বারপ্রান্তে, যেখানে লিখটেনস্টাইনের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সাজা ২০ বছর ও মর্গানের বেলায় সেটি ১০ বছর হতে পারে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের গ্রেপ্তার করার সময় এক লাখ ১৯ হাজার লুকিয়ে রাখা বিটকয়েন জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে চারশ কোটি ডলার। আর এটিই মার্কিন বিচার বিভাগের ইতিহাসে কোনো একক অভিযানে সবচেয়ে বেশি অর্থ আটকের ঘটনা।
হ্যাকিং কার্যক্রম চালানোর সময় সেইসব বিটকয়েনের বাজারমূল্য ছিল সাত কোটি ১০ লাখ ডলার।
আদালতের নথিতে দেখা যায়, কীভাবে এই দম্পতি বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে কোটি কোটি ডলারের বিটকয়েনকে প্রচলিত মুদ্রায় রূপান্তর করে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেছে।
রেকর্ড অনুসারে এই দম্পতি-
বিটকয়েনগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে সেগুলোকে হাজার হাজার ভিন্ন ক্রিপ্টো ওয়ালেটে ভুয়া পরিচয়ে স্থানান্তর করেছেন।
ডার্ক ওয়েবের মার্কেটপ্লেস ‘আলফাবে’তে নিজেদের চুরি করা অর্থ অন্যান্য অপরাধমূলক ক্রিপ্টোমুদ্রার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন।
স্বর্ণের কয়েন কিনেছেন।
নিজস্ব বিটকয়েন তহবিলকে ‘বৈধ’ দেখাতে বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানি তৈরি করেছেন।
বিবিসি বলছে, বিটকয়েনের বিভিন্ন পাবলিক ব্লকচেইনে লেনদেন বিশ্লেষণে সক্ষম টুল ব্যবহারের সর্বশেষ ঘটনা হল মার্কিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই সফল অভিযান।
কীভাবে ধরা পরলেন তারা?
ওই দম্পতির অন্যতম ভুল ছিল চুরি করা বিটকয়েন ব্যবহার করে ‘ওয়ালমার্টে’র বিভিন্ন ভাউচার কিনে সেগুলো দিয়ে কেনাকাটা করা।
“আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই ওয়ালমার্ট গিফট কার্ডের সঙ্গে বিটফিনিক্স হ্যাকিংয়ের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়। তাতে এই তদন্ত আরও একধাপ এগিয়েছে।” --বলেন এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ক্রিপ্টো বিশ্লেষক কোম্পানি ‘চেইনালিসিস’-এর প্রতিষ্ঠাতা জনাথন লেভিন।
“গিফট কার্ড কেনা বা বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ ও ক্রিপ্টোমুদ্রায় অর্থ স্থানান্তরে ধরা পরার ঝুঁকি নিয়ে এই দম্পতি সম্ভবত ভাবেননি।”
পুলিশ ওই দম্পতির ম্যানহ্যাটন অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালানোর পর তারা সেখানে এমন কিছু ‘ফাঁপা’ বই খুঁজে পায়, যেগুলোর মাঝখানে মোবাইল ফোন লুকানো সম্ভব।
পাশাপাশি, ওই অভিযানে তারা বেশ কিছু ‘বার্নার’ হ্যান্ডসেট, ইউএসবি কেবল ও নগদ ৪০ হাজার ডলারও খুঁজে পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
বার্নার হ্যান্ডসেট বলতে সাধারণত সস্তার মোবাইল ফোন বোঝায় যেগুলো বিশেষ কোনো প্রয়োজনে অল্প সময় ব্যবহারের পর সাধারণত ফেলে দেওয়া হয় বা নষ্ট করে ফেলা হয়।
এ ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি স্প্রেডশিট ডিক্রিপ্ট করেছে, যেখানে ওই দম্পতির গোপনে অর্থ পাচারের বিভিন্ন জটিল প্রক্রিয়ার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এর ফলেই চুরি করা অর্থের সিংহভাগই পুনরুদ্ধারের সুযোগ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আদালতের নথিতে তদন্তকারীরা বলছেন, মর্গান ও লিখটেনস্টাইন রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। আর লিখটেনস্টাইনের জন্মও সেখানে।
বিবিসি বলছে, এই পরিকল্পনা সফল হলে তারা হয়ত ধনকুবেরদের মতো জীবন পেতেন, আর যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থেকেও বেঁচে যেতেন।
ওই হ্যাকিং কার্যক্রমের প্রভাব গিয়ে পড়েছিল বিটফিনিক্সের অন্যান্য গ্রাহকের ওপরও। সে সময় নিজেদের সামগ্রিক তহবিলের ৩৬ শতাংশ হারিয়েছিল ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জটি।
এখন বিটফিনিক্স ও যেসব গ্রাহক ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোম্পানির মালিকানার অংশ পেয়েছেন, তারা ওই চুরি করা বিটকয়েন পুনরুদ্ধারের অপেক্ষায় আছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
ঠিকানা/এসআর
ওই ক্রিপ্টো সম্পদের বর্তমান বাজারমূল্য সাড়ে চারশ কোটি ডলার।
এই ক্রিপ্টো চুরির তদন্ত করতে গিয়ে গত বছর নিউ ইয়র্ক থেকে হিদার মর্গান ও তার স্বামী ইলইয়া লিখটেনস্টাইনকে গ্রেপ্তার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশকে ফাঁকি দিতে একজন র্যাপার ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তার ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন মর্গান।
আদালতে দেওয়া সাক্ষ্যে ওই হ্যাকিংয়ের পেছনে নিজের হাত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন লিখটেনস্টাইন।
অর্থ পাচারের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই। কিন্তু মর্গান আরেক মামলায়ও ফেঁসে গেছেন। অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতারণার ও ষড়যন্ত্র করার।
অপরাধে ‘সাফল্য’ অর্জনের পর ‘র্যাজলখান’ ছদ্মনামে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু র্যাপ গানের মিউজিক ভিডিও ধারণের পাশাপাশি সেগুলো প্রকাশ করেন মর্গান।
সেইসব গানের লাইনে নিজেকে ‘ব্যাড-অ্যাস মানি মেকার’ ও ‘দ্য ক্রোকোডাইল অফ ওয়াল স্ট্রিট’ হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।
এদিকে, মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এও কাজ করেছেন মর্গান, যেখানে বিভিন্ন প্রতিবেদনে নিজেকে একজন সফল প্রযুক্তি ব্যবসায়ীর পরিচয় দিতেন তিনি। পাশাপাশি, নিজের সম্পর্কে ব্যবহার করেছেন ‘অর্থনীতিবিদ, উদ্যোক্তা, সফটওয়্যার বিনিয়োগকারী ও র্যাপার’ বিশেষণও।
এত বিশেষণের অধিকারি ধরা পড়েন যখন ক্রিপ্টো কোম্পানি বিটফিনিক্স থেকে চুরি করা বিটকয়েন বিক্রি করার চেষ্টা করেন তিনি আর তার ’পার্টনার ইন ক্রাইম’ কম্পিউটার প্রোগ্রামার স্বামী।
এই দম্পতি এখন কারাভোগের দ্বারপ্রান্তে, যেখানে লিখটেনস্টাইনের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সাজা ২০ বছর ও মর্গানের বেলায় সেটি ১০ বছর হতে পারে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের গ্রেপ্তার করার সময় এক লাখ ১৯ হাজার লুকিয়ে রাখা বিটকয়েন জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে চারশ কোটি ডলার। আর এটিই মার্কিন বিচার বিভাগের ইতিহাসে কোনো একক অভিযানে সবচেয়ে বেশি অর্থ আটকের ঘটনা।
হ্যাকিং কার্যক্রম চালানোর সময় সেইসব বিটকয়েনের বাজারমূল্য ছিল সাত কোটি ১০ লাখ ডলার।
আদালতের নথিতে দেখা যায়, কীভাবে এই দম্পতি বিভিন্ন কৌশল খাটিয়ে কোটি কোটি ডলারের বিটকয়েনকে প্রচলিত মুদ্রায় রূপান্তর করে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেছে।
রেকর্ড অনুসারে এই দম্পতি-
বিটকয়েনগুলোকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে সেগুলোকে হাজার হাজার ভিন্ন ক্রিপ্টো ওয়ালেটে ভুয়া পরিচয়ে স্থানান্তর করেছেন।
ডার্ক ওয়েবের মার্কেটপ্লেস ‘আলফাবে’তে নিজেদের চুরি করা অর্থ অন্যান্য অপরাধমূলক ক্রিপ্টোমুদ্রার সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন।
স্বর্ণের কয়েন কিনেছেন।
নিজস্ব বিটকয়েন তহবিলকে ‘বৈধ’ দেখাতে বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানি তৈরি করেছেন।
বিবিসি বলছে, বিটকয়েনের বিভিন্ন পাবলিক ব্লকচেইনে লেনদেন বিশ্লেষণে সক্ষম টুল ব্যবহারের সর্বশেষ ঘটনা হল মার্কিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই সফল অভিযান।
কীভাবে ধরা পরলেন তারা?
ওই দম্পতির অন্যতম ভুল ছিল চুরি করা বিটকয়েন ব্যবহার করে ‘ওয়ালমার্টে’র বিভিন্ন ভাউচার কিনে সেগুলো দিয়ে কেনাকাটা করা।
“আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই ওয়ালমার্ট গিফট কার্ডের সঙ্গে বিটফিনিক্স হ্যাকিংয়ের সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়। তাতে এই তদন্ত আরও একধাপ এগিয়েছে।” --বলেন এই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ক্রিপ্টো বিশ্লেষক কোম্পানি ‘চেইনালিসিস’-এর প্রতিষ্ঠাতা জনাথন লেভিন।
“গিফট কার্ড কেনা বা বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ ও ক্রিপ্টোমুদ্রায় অর্থ স্থানান্তরে ধরা পরার ঝুঁকি নিয়ে এই দম্পতি সম্ভবত ভাবেননি।”
পুলিশ ওই দম্পতির ম্যানহ্যাটন অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালানোর পর তারা সেখানে এমন কিছু ‘ফাঁপা’ বই খুঁজে পায়, যেগুলোর মাঝখানে মোবাইল ফোন লুকানো সম্ভব।
পাশাপাশি, ওই অভিযানে তারা বেশ কিছু ‘বার্নার’ হ্যান্ডসেট, ইউএসবি কেবল ও নগদ ৪০ হাজার ডলারও খুঁজে পেয়েছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
বার্নার হ্যান্ডসেট বলতে সাধারণত সস্তার মোবাইল ফোন বোঝায় যেগুলো বিশেষ কোনো প্রয়োজনে অল্প সময় ব্যবহারের পর সাধারণত ফেলে দেওয়া হয় বা নষ্ট করে ফেলা হয়।
এ ছাড়া, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি স্প্রেডশিট ডিক্রিপ্ট করেছে, যেখানে ওই দম্পতির গোপনে অর্থ পাচারের বিভিন্ন জটিল প্রক্রিয়ার বিশদ বর্ণনা রয়েছে। এর ফলেই চুরি করা অর্থের সিংহভাগই পুনরুদ্ধারের সুযোগ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আদালতের নথিতে তদন্তকারীরা বলছেন, মর্গান ও লিখটেনস্টাইন রাশিয়ায় পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। আর লিখটেনস্টাইনের জন্মও সেখানে।
বিবিসি বলছে, এই পরিকল্পনা সফল হলে তারা হয়ত ধনকুবেরদের মতো জীবন পেতেন, আর যুক্তরাষ্ট্রের গ্রেপ্তারী পরোয়ানা থেকেও বেঁচে যেতেন।
ওই হ্যাকিং কার্যক্রমের প্রভাব গিয়ে পড়েছিল বিটফিনিক্সের অন্যান্য গ্রাহকের ওপরও। সে সময় নিজেদের সামগ্রিক তহবিলের ৩৬ শতাংশ হারিয়েছিল ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জটি।
এখন বিটফিনিক্স ও যেসব গ্রাহক ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোম্পানির মালিকানার অংশ পেয়েছেন, তারা ওই চুরি করা বিটকয়েন পুনরুদ্ধারের অপেক্ষায় আছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিবিসি।
ঠিকানা/এসআর