রোহিঙ্গা আপদে ফিরছে বিপদ

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:২৯ , অনলাইন ভার্সন
বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যসহ অন্যান্য এলাকায় চলমান সংঘাত ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে নদী সাঁতরে পাহাড় ডিঙিয়ে অনেকটা নিশব্দে তাদের আগমন। সংখ্যায় এরই মধ্যে ৭০-৭৫ হাজার হয়ে গেছে। রোহিঙ্গা ঢল বন্ধ করতে কক্সবাজারে জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থা- ইউএনএইচসিআরের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। একপর্যায়ে এসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক রোহিঙ্গাবিষয়ক ন্যাশনাল টাস্কফোর্সের সদস্যদের।
কথা উঠেছে সরকারের দিক থেকে গোপনীয়তা ও নীরবতা নিয়ে। মিয়ানমার থেকে এত সংখ্যক মানুষ অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকল, সরকার হাত-পা গুটিয়ে কেন বসে থাকল? দুই মাস এটা গোপন রাখল কেন? প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মর্যাদায় সারা পৃথিবীতে বিশাল উঁচু স্তরে। কিন্তু পররাষ্ট্র সম্পর্কে তার কোনো প্রতিফলন নেই, আঞ্চলিক সংকট নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বেশির ভাগ এলাকাসহ আঞ্চলিক সেনাসদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির হাতে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকায় তাদের মহড়া। এ অবস্থায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত কীভাবে চলবে, সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক প্রতিরোধ এবং সীমান্ত বাণিজ্য কীভাবে চালানো হবে? মিয়ানমার রাষ্ট্রের চেয়ে সেখানে বড় অথরিটি আরাকান আর্মি। বাংলাদেশের জন্য একটি বিব্রতকর অবস্থা। রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের বাদ দিয়ে প্রকাশ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ কূটনীতিবিরোধী। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কণ্ঠেও সেই বার্তা। তিনি বলেছেন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে নেওয়া নন-স্টেট অ্যাক্টর আরাকান আর্মির সঙ্গে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দর-কষাকষি করতে পারে না।
মিয়ানমার থেকে গত কিছুদিনে যারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে, তাদের ফেরত দেওয়া যাচ্ছে না। আবার ঘোষণা দিয়ে জানান দেওয়াও যাচ্ছে না। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কক্সবাজারে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। এর বিপরীতে জাতিসংঘের রেজিস্ট্রেশনভুক্ত হলে বাংলাদেশে সব ধরনের সাহায্য মিলবে সেই আশায় নতুন করে আরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে। এর পরও রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম স্থগিত করার আগে ২০-২২ দিনে ইউএনএইচসিআর নতুন রেজিস্ট্রেশন করেছে ৬২ হাজার রোহিঙ্গার। রোহিঙ্গা আমদানির দালালরাও বেশ সক্রিয়। বাংলাদেশের নীতিগত অবস্থান আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে না দেওয়া। তবে পরিস্থিতির মোড় এখন ভিন্ন দিকে। রাখাইনে আঞ্চলিক সেনাসদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ আরাকান আর্মির হাতে চলে যাওয়া মিয়ানমারের জান্তা সরকারের জন্য একটি বড় ধাক্কা। এটি ছিল রাখাইনে জান্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা সর্বশেষ শক্ত ঘাঁটি। আরাকান আর্মি রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডুর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। সেখানে অনেক রোহিঙ্গার বাস। আরাকান আর্মির কাছে জান্তা সরকার পরাজিত হওয়ার পর চাপে পড়েছে রোহিঙ্গারা। তাদের অনেকের ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশই এখন তাদের পথ। অনেকে এপারে এসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের আত্মীয়স্বজন ও পূর্বপরিচিতদের বাসায় উঠছে। আবার কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তালিকাভুক্ত থাকলেও টেকনাফ ও উখিয়ায় বাসা ভাড়া করে থাকে। তাদের কাছে আশ্রয় জুটছে অনেকের। মুখে মুখে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা বলা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা মুখে আনার অবস্থাও নেই।
ভারতের সঙ্গে দেশের স্বার্থ ইস্যুতে সরকারের কঠোর অবস্থান দৃশ্যমান হলেও মিয়ানমারের বর্তমান শাসকদের সঙ্গে তা নেই। দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থাও বিগড়ানো। বিএনপি আবারও রাজপথের আন্দোলনে নামতে যাচ্ছে। দলটির সব কার্যক্রম এখন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে। ‘২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়’- নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় বিএনপি। জামায়াত বলছে, তারা সৎ, কর্মঠ ও সাহসী তরুণদের হাতে দেশকে তুলে দিতে চায়। এসবের যোগফলে গণতন্ত্রের ট্রেন সংস্কারের জটে আটকে গেছে। নতুন নির্বাচনের আকাশে কালো মেঘ ঘন হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব বাড়ছে ক্রমশ। সঙ্গে বাড়ছে সন্দেহ এবং অবিশ্বাসও।
ব্রিটেনের বিখ্যাত ইকোনমিস্টকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, তরুণসমাজ আমাদের বিশ্বকেও বদলে দিতে পারে। তারা দেশ গড়তে চায়। তাদের তিনজন কেবিনেটে চমৎকার কাজ করছে। তাদের সক্ষমতা রয়েছে। আরেক প্রশ্নে বলেছেন, আমাকে আমার কাজ থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। এ কাজে আমাকে জোর করা হয়েছে। আমি তো আমার কাজ করছিলাম। তা উপভোগ করছিলাম। এ জন্যই আমি প্যারিসে ছিলাম। আমাকে প্যারিস থেকে টেনে আনা হয়েছে কিছু করার জন্য। সুতরাং আমি আমার পুরোনো দায়িত্বে ফিরে যেতে পারলে খুশি হব, যে কাজ আমি করেছি। আমার সারা জীবন এটা উপভোগ করেছি। তরুণসমাজ এই কাজকে ভালোবাসে। ফলে আমি আমার টিমের কাছে ফিরে যাব।
ড. ইউনূসের এসব সুন্দর সুন্দর কথার মাঝে অন্য কিছু দেখছেন রাজনীতিকেরা। বিশেষ করে বিএনপি। আরেকটি ওয়ান ইলেভেনের মঞ্চের প্রস্তুতি আঁচ করছে তারাসহ আরও কোনো কোনো মহল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ আবার জটিল পরিস্থিতির ঘেরে পড়ছে কি না, তা নিয়ে বিশ্লেষণ অনেক। বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত কারার জন্য যা যা করার, তার সব আগেই করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার সেখান থেকে দেশকে টেনে তুলবে না, নিজেও পড়বে- সেই জিজ্ঞাসাও ঘুরছে। শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক ডামাডোলের পর এ রকম সমস্যাগুলো সামনে আসে। তারা সফলতার সঙ্গে সেগুলো উত্তরণ করে। দেশের মূল্যস্ফীতি ৭০% থেকে ৫% এ নামিয়ে আনে। আর্থিক খাতে দৃশমানভাবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনে। এরপর নির্বাচন হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ একটা নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটিতে আবার গণতন্ত্রের উত্তরণ ঘটে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে ভিন্ন চিত্র। আর্থিক, প্রশাসনিক আর রাজস্ব খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দূরে থাক, সাধারণ মানের পরিবর্তনও আনা যায়নি।
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078