যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে তোলপাড়

টিউলিপের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৪০ , অনলাইন ভার্সন
দুর্নীতি দমনের মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগে হতভম্ব যুক্তরাজ্য। শেখ হাসিনার সাথে যোগসাজশে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প থেকে ৫৯ হাজার কোটি টাকা অর্থ লোপাটের বিস্ফোরক অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বুধবার যুক্তরাজ্যের সর্বাধিক প্রচারিত ট্যাবলয়েড ‘ডেইলি মেইল’ প্রথম পাতায় ফলাও করে সে খবর ছেপেছে। সব মিলিয়ে টিউলিপকে নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

‘পুতিনের সহায়তায় নির্মিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ৪ বিলিয়ন পাউন্ড ঘুষ নেয়ার অভিযোগে তদন্তের মুখে কিয়ের স্টার্মারের দুর্নীতি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবার’ শিরোনামে ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডেইলি মেইল। এতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি বন্ধের দায়িত্বে নিয়োজিত ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তার মাতৃভূমি বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি ঘিরে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের এ তদন্তের আওতায় টিউলিপ ছাড়াও আছেন তার মা শেখ রেহানা ও খালা- বাংলাদেশের উৎখাত হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

ডেইলি মেইল বলে, কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা গণবিক্ষোভ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে শত শত বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার জেরে আগস্টে বোন শেখ রেহানাকে সাথে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান হাসিনা। অভিযোগ উঠেছে, বেশি অর্থ ব্যয় দেখিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়া-বাংলাদেশের মধ্যে ১০ বিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তির মধ্যস্থতা করেন টিউলিপ। ওই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশের হাইকোর্ট এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ দেয়। 

রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘রোসাটম’ বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণে সহায়তা করছে। ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে এ বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষর করেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে সময় লেবার পার্টির তৎকালীন কাউন্সিলর টিউলিপ উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল। 

পত্রিকাটি আরো জানায়, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন টিউলিপের খালাতো ভাই, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও চাচা তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধেও তদন্ত করছে। 

ডেইলি মেইলের পক্ষ থেকে বিশাল অংকের এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ বিষয়ে টিউলিপের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও, তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। যদিও তার ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, এসব অভিযোগ বানোয়াট। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুকের দাবি, হাসিনা পরিবারের বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মিথ্যাচার ও শতভাগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। হাসিনার ভাগ্নী হওয়ার কারণেই টিউলিপকে আক্রমণ করা হচ্ছে বলে দাবি ফারুকের। 

ডেইলি মেইল জানায়, চলতি বছরের জুলাইতে সিটি মিনিস্টার হওয়ার পর থেকে আরো কয়েকটি বিষয়ে বিতর্কিত হয়েছেন টিউলিপ। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে পার্লামেন্টের বিধান ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগে বলা হয়, প্রায় ১৪ মাস ধরে বাসা ভাড়া থেকে আসা আয়ের কথা গোপন রেখেছেন তিনি। বিধান অনুসারে, ২৮ দিনের মধ্যে এসব আয়ের কথা প্রকাশ করতে হয়। এ নিয়ে তদন্ত হওয়ার পর ঘটনা সত্য প্রমাণিত হওয়ায় ক্ষমা চান টিউলিপ। অনিচ্ছাকৃত ভুল ধরে নিয়ে সেবারের মতো তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। 

এরপর আগস্টে সংবাদমাধ্যম ‘দ্য মেইল অন সানডে’র এক প্রতিবেদনের জেরে আবারও বিতর্কিত হন টিউলিপ। প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুই বছর আগে ২ মিলিয়ন পাউন্ডের যে বিলাসবহুল বাড়ি টিউলিপ ভাড়া করেন, সেটি মূলত তার খালা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক রাজনৈতিক সহযোগীর। 

দুদকের অভিযোগপত্রের বরাতে ডেইলি মেইল জানায়, রূপপুর প্রকল্প থেকে টিউলিপ ও তার পরিবারের লোপাট করা অর্থের মধ্যে ৭০৯ মিলিয়ন পাউন্ড দেশ থেকে পাচারে প্রাচ্য লিমিটেড নামের ভুয়া একটি প্রতিষ্ঠান কাজ করে। যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয় ওই অর্থ। 

ডেইলি মেইল আরো জানায়, অতীতে বিভিন্ন সময়ে খালা শেখ হাসিনাকে ‘রোল মডেল’ বলে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন টিউলিপ। তবে আগস্টে উৎখাত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত খালাকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। তবে, খালার কট্টর রাজনৈতিক দলের সাথে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সংশ্লিষ্ট টিউলিপ। একসময় তিনি আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন। 

এদিকে, নিজ দেশের একজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের এমন গুরুতর অভিযোগে গভীর উদ্বেগ জানাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল টোরি বা কনজার্ভেটিভ পার্টি। টোরি এমপি জো রবার্টসন বলছেন, বাংলাদেশে অর্থ লোপাটের ঘটনায় টিউলিপের সংশ্লিষ্টতা কী, এটি এখন এক গুরুতর প্রশ্ন হয়ে সামনে এসেছে। এমন ভয়াবহ অভিযোগ, যা নিয়ে তদন্ত চলছে, এরপরও টিউলিপ কীভাবে মন্ত্রীর পদে আছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রবার্টসন। 

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট বলেছে, টিউলিপের ওপর প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের আস্থা আছে। তিনি তার দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। 

তবে টোরি শিবির টিউলিপের বিষয়টিকে মোটেই সরলভাবে দেখছে না। ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে পুতিনের সাথে হাসিনার বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের নতুন কিছু ভিডিও সামনে আসায় বিতর্ক আরো জোরালো হচ্ছে। সেসব ভিডিওতে শেখ হাসিনার সাথে টিউলিপকেও চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়। যদিও টিউলিপ সে সময় তার রাশিয়ায় যাওয়াকে একটি পারিবারিক ভ্রমণ বলে উল্লেখ করেছিলেন। 

ওই ঘটনার ৯ বছর পর ‘দ্য মেইল অন সানডে’ পুতিন ও হাসিনার পাশে হাস্যোজ্জ্বল টিউলিপের ছবি প্রকাশ করে। সে সময় লেবার পার্টি জানায়, টিউলিপ বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক প্রতিনিধি দলের অংশ ছিলেন না, কেবল একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। তবে নতুন করে সামনে আসা ভিডিওগুলোতে টিউলিপকে ক্রেমলিনের ভেতরে দেখা যায়। সেদিনই রূপপুর পারমাণবিক চুক্তির পাশাপাশি ১ বিলিয়ন পাউন্ডের অস্ত্র চুক্তি করেন পুতিন। 

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, হাসিনা গার্ড অব অনার নিয়ে মস্কোতে যুদ্ধে নিহত অজ্ঞাত সৈনিকদের সমাধিতে ফুল দিচ্ছেন। সেখানেও টিউলিপকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের সাথে অংশ নিতে দেখা যায়।  

এসব বিষয়ে ডেইলি মেইলকে টোরি পার্টির একজন মুখপাত্র বলেন, এসব ভিডিও থেকে ২০১৩ সালে রাশিয়ায় টিউলিপের তথাকথিত পারিবারিক ভ্রমণ নিয়ে গুরুতর অনেক প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। এখন সময় এসেছে, এসব নিয়ে টিউলিপ সিদ্দিককে যথাযথ জবাবদিহিতার আওতায় আনার। 

ঠিকানা/এএস 
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078