২০২৪-এর ৫ আগস্ট নাটকীয় পরিবর্তন বাংলাদেশের মতো একটি স্বপ্নভূমি ও সামরিকভাবে দুর্বল দেশের সামনে এক বিরাট প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ যে দেশ আমাদের সবচেয়ে বড় মিত্র হিসেবে বিবেচিত ছিল দীর্ঘ ১৬ বছর ধরেই, সে দেশই মাত্র এক দিনের ব্যবধানে এখন আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসেবে গণ্য হচ্ছে! কী অবাক কাণ্ড, কী নাটকীয় ব্যাপার? সারা দুনিয়ার ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কতবার ঘটেছে, তা অবশ্য আমার জানা নেই। অবশ্য এটাও জানা নেই, যারা নিজেদের দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ও শ্রেষ্ঠ গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবি করে, তারাই আবার কেমন করে বা কোন যুক্তিতে প্রতিবেশী একটি দেশে এক চরম ফ্যাসিস্ট, প্রতিহিংসাপরায়ণ ও নগ্নভাবে দেশের ধন-সম্পদ বা টাকা-পয়সা লুটপাটকারী সরকারকে অন্ধভাবে সমর্থন করে যেতে পারে? নিজেদের দেশে অত্যন্ত কঠোর, কার্যকর ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত একটি সরকার কী করে প্রতিবেশী দেশের বারবার নির্বাচন চুরি করা একটি চরম অগণতান্ত্রিক দলের পক্ষে সাফাই গায়? আবার যখন হঠাৎ করেই কিছু না জানা, না বোঝার ভান করে কেবল একটি বৃহৎ শক্তিবলেই হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করে, তখন আমাদের অবশ্যই ভাবনায় পড়তে হয় বৈকি! এ ধরনের হুমকি-ধমকি, চোখ রাঙানো, গায়ে মানে না আমিই মোড়ল ইত্যাদির বিপরীতে অপেক্ষাকৃত ছোট ও দুর্বল দেশ হিসেবে আমরা ঠিক কোন পথে এগিয়ে গিয়ে আমাদের অত্যন্ত রক্তস্নাত-কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করব-সে চিন্তা থেকেই আমার নগণ্য এ নিবন্ধ।
আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ভারত আমাদের তুলনায় শুধু আয়তনেই ২৫ গুণ বড় নয়, সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির দিক থেকেও শক্তিশালী। তার চেয়েও বড় বিপদ হচ্ছে, আমরা ভারতের পেটের মধ্যে ঢুকে আছি। মিয়ানমারও আমাদের শত্রু বৈ মিত্র নয়। তার মানে কোনো সীমান্তেই আমাদের কোনো মিত্র নেই। কিন্তু ‘মিত্র’ আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে। কারণ ভারত যদি আমাদের আকাশে ১০০ যুদ্ধবিমান উড়িয়ে দিয়ে আমাদের সবগুলো ক্যান্টনমেন্ট ও বিমানবন্দর ধ্বংস করে দেয়Ñতখন আমরা কী করব? কোথায় পালাব? ১৯৭১ সালের মতো এবার কিন্তু পালানোর জায়গা নেই বা থাকবে না। তা ছাড়া ভারতের নৌবাহিনী সহজেই আমাদের সমুদ্রবন্দরগুলোতে ব্লকেড (Blockade) দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ভারত যদি ১০-২০ লাখ সৈন্য ও দুই হাজার ট্যাংক দিয়ে চতুর্দিক থেকে আমাদের আক্রমণ করে দেশের ভেতরে ঢুকে পড়ে, তখন আমরা করবটা কী?
মনে আছে ১৯৭০ সালের আফ্রিকার বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘বায়াফ্রা’র কথা কিংবা মাত্র ক’বছর আগের শ্রীলঙ্কার তামিল বিদ্রোহীদের কথা। বিদেশি সাহায্যের অভাবে তারা কেউ সফল হতে পারেনি। অবশ্য আমাদের মাঝে যারা ধর্ম নিয়ে বেশি মাতামাতি করতে ভালোবাসেন, তারা অবশ্য মনে মনে ভাবছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য সময় হলেই ‘ফেরেশতা যোদ্ধাদের’ পাঠিয়ে দেবেন। যদি তা-ই হতো, তাহলে দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে যুদ্ধরত কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্য কোনো ফেরেশতা যোদ্ধার দেখা মিলছে না কেন? মাত্র এক বছরে ইসরায়েল সরকার কমপক্ষে ৫০ হাজার মুসলমান নারী-পুরুষ-শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করল এবং আরও করবে; কিন্তু সেখানেও কোনো ফেরেশতা যোদ্ধার দেখা নেই কেন? তাই বলি, বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে আসুন। কল্পনার জগতে থেকে যুদ্ধজয় করার স্বপ্ন না দেখে বাস্তব জগতে ২৫ গুণ বড় শত্রুকে বাধা দেওয়ার শক্তি না থাকার কারণেই যথার্থ ‘মিত্র’ খোঁজায় ব্যস্ত হোন। ‘যথার্থ’ বলছি এ কারণে যে কাগুজে বাঘদের সঙ্গে মিত্রতা করে লাভ নেই। পাকিস্তান তো নিজেকেই আর সামলাতে পারছে না। আর তারা যে কত ভালো-তা তো আমরা ১৯৭১ সালেই দেখেছি। আর চীন বা জাতিসংঘ? আগে চীনের কথাই বলি। ১৯৪৯ সাল থেকেই তারা তাইওয়ানকে নিয়ে হাজার হাজার বার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ভাবসাব দেখলে মনে হয়, তারা আগামীকালই তাইওয়ান দখল করে ফেলবে। কিন্তু সেই ‘কাল’ ৭৫ বছর ধরেই ‘কাল’ হয়ে রইল। ক্ষুদ্রকায় ‘তাইওয়ান’ এখন উন্নয়নের দিক থেকে জাপানকে ‘টেক্কা’ দিচ্ছে। ভেবে দেখুন, ক্ষুদ্রকায় তাইওয়ানের পেছনে আছে কোন বড় শক্তি? সে কারণেই মহাচীন মাত্র ১০০ মাইল দূরের ছোট্ট দ্বীপটিকে দখল করতে পারছে না, অথচ বারবার দাবি করে যাচ্ছে যে তারা নাকি এখন দুনিয়ার অন্যতম বৃহৎ শক্তি।
এরপর বলি জাতিসংঘের কথা। নখ বা দন্তবিহীন জাতিসংঘ শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত-কাগুজে বাঘ আর কাকে বলে? Defense Pact বা যথার্থ সামরিক চুক্তি বা Treaty না থাকলে বিপদের সময় সবাই শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি মানে কোনো রকম দায়সারাগোছের সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত হবে-কাজের বেলায় ঘোড়ার আণ্ডা। Google করে দেখুন, এ বিশ্বে সবচেয়ে Defense Treaty রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, বাহরাইন, ফিলিপাইন, জাপান এমনকি সৌদি আরবও চুক্তি করল বলে। একটি ক্ষুদ্রকায় দ্বীপ খবধংব দিতে চাচ্ছেন না কিন্তু ভারত আক্রমণ করলে সমগ্র বাংলাদেশ যে মাস দুয়েকের মধ্যেই গিলে খাবেÑতখন কী হবে? বিদেশি সাহায্যের আশায় কি তখন বসে বসে আঙুল চুষবেন?
১৯৭১ সালে ১২০০ মাইল দূর থেকে আগত পাকিস্তানি দুর্বৃত্তরা কি মাত্র ৩০ দিনেই সমুদ্র, পূর্ব বাংলা দখল করে নেয়নি? পেরেছিলাম কি আমরা তাদের ঠেকিয়ে রাখতে? যদিও শতকরা ৯৬ ভাগ মানুষই স্বাধীনতাযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। অবশ্য আমাদের অত্যন্ত গলাবাজ, সাধারণ বুদ্ধিহীন বড় নেতা সাহায্য করতে উদ্্গ্রীব দূরদর্শী, মহৎ হৃদয় ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ না করে আমাদেরই চরম শত্রু ইয়াহিয়া-ভুট্টোর সঙ্গে তথাকথিত আলোচনায় মত্ত হলেন পাকিস্তানকে টিকিয়ে রেখে সে দেশেরই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক আশায়। সাতই মার্চের বক্তৃতা শুনে শুনে মগজ ধোলাই হয়ে যাওয়া নতুন প্রজন্মের মানুষ এসব অতীব সত্য ঘটনার আর কতটুকুই-বা জানেন?
যাহোক, মূল কথায় ফিরে আসি। এটা ১৯৭১ সাল নয়। এক জঘন্য বর্ণবাদী, অমানুষ পশুশক্তি ‘মোদি’ ও তার নিকৃষ্টতম সাম্প্রদায়িক বিজেপির খপ্পরে পড়ে যাওয়া ভারত সরকার এখন পাঁয়তারায় লিপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম দিয়ে শুরু করে নানা অছিলায় সমগ্র বাংলাদেশকেই গিলে ফেলে তাদের চিরস্বপ্ন অখণ্ড ভারত কায়েম করার এক অদম্য বাসনায়। এ যুগের বিরাট শক্তি, বিশাল বাজার ভারতকে খেপিয়ে কেউ যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে আসবে না অনেক ছোট বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে। তাই সময় থাকতেই আমাদের তা-ই করতে হবে, যা করে টিকে আছে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, কাতারসহ দুনিয়ার ছোট-বড় কমবেশি ৫০টি রাষ্ট্র। Very Simple to Understand.
বি. দ্র. এ নিবন্ধটি লিখেছিলাম ৫ নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনের আগে। সবারই ধারণা ছিল ডেমোক্র্যাটিক দলের কমলা হ্যারিসই এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। কিন্তু মাত্র আট বছরের ব্যবধানে দু-দুবার মার্কিনিরা যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করল না, শুধু তারা ‘নারী’ বলেই। নারী অধিকার নিয়ে যারা সদাই সোচ্চার দুনিয়াজুড়ে, তারা নিজেরাই ‘নারী’ প্রেসিডেন্ট চায় না তাদের নিজেদের দেশে। মনে মনে ভাবি, ধর্মের নামে নারীদের পুরুষের সমান মর্যাদা দিতে অস্বীকার করা ‘তালেবানদের’ সঙ্গে তাহলে মার্কিনিদের আর তফাতটা রইল কোথায়?
যাহোক ‘ট্রাম্প’ সাহেবের ভূমিধস বিজয় সারা দুনিয়ার রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনাকে ওলট-পালট করে দিল। যেসব মুসলিম ভাই ‘গাজা’ নীতির কারণে বাইডেনকে গালাগাল করে ট্রাম্পকে এবার ভোট দিয়েছেন, তারা আসলেই ট্রাম্পকে মোটেও জানেন না। এবার ট্রাম্পের আসল রূপ অর্থাৎ ধর্ম ও বর্ণের কারণে কে কত বেশি ‘সাম্প্রদায়িকতা’য় বিশ্বাস করেন, তারই নমুনা এ বিশ্ব দেখতে পাবে। আফগানিস্তানের তালেবানরা তো অন্য দেশ দখল করে না। কিন্তু মার্কিনি ও ইসরায়েলি তালেবানরা কেমন করে চরম মানবতাবিরোধী Double Standard ধরনের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে, সারা দুনিয়ায় এবার দেখা যাবে বৈকি?
আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, ভারত আমাদের তুলনায় শুধু আয়তনেই ২৫ গুণ বড় নয়, সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির দিক থেকেও শক্তিশালী। তার চেয়েও বড় বিপদ হচ্ছে, আমরা ভারতের পেটের মধ্যে ঢুকে আছি। মিয়ানমারও আমাদের শত্রু বৈ মিত্র নয়। তার মানে কোনো সীমান্তেই আমাদের কোনো মিত্র নেই। কিন্তু ‘মিত্র’ আমাদের খুঁজে বের করতেই হবে। কারণ ভারত যদি আমাদের আকাশে ১০০ যুদ্ধবিমান উড়িয়ে দিয়ে আমাদের সবগুলো ক্যান্টনমেন্ট ও বিমানবন্দর ধ্বংস করে দেয়Ñতখন আমরা কী করব? কোথায় পালাব? ১৯৭১ সালের মতো এবার কিন্তু পালানোর জায়গা নেই বা থাকবে না। তা ছাড়া ভারতের নৌবাহিনী সহজেই আমাদের সমুদ্রবন্দরগুলোতে ব্লকেড (Blockade) দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ভারত যদি ১০-২০ লাখ সৈন্য ও দুই হাজার ট্যাংক দিয়ে চতুর্দিক থেকে আমাদের আক্রমণ করে দেশের ভেতরে ঢুকে পড়ে, তখন আমরা করবটা কী?
মনে আছে ১৯৭০ সালের আফ্রিকার বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘বায়াফ্রা’র কথা কিংবা মাত্র ক’বছর আগের শ্রীলঙ্কার তামিল বিদ্রোহীদের কথা। বিদেশি সাহায্যের অভাবে তারা কেউ সফল হতে পারেনি। অবশ্য আমাদের মাঝে যারা ধর্ম নিয়ে বেশি মাতামাতি করতে ভালোবাসেন, তারা অবশ্য মনে মনে ভাবছেন, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য সময় হলেই ‘ফেরেশতা যোদ্ধাদের’ পাঠিয়ে দেবেন। যদি তা-ই হতো, তাহলে দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে যুদ্ধরত কাশ্মীরের মুসলমানদের জন্য কোনো ফেরেশতা যোদ্ধার দেখা মিলছে না কেন? মাত্র এক বছরে ইসরায়েল সরকার কমপক্ষে ৫০ হাজার মুসলমান নারী-পুরুষ-শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করল এবং আরও করবে; কিন্তু সেখানেও কোনো ফেরেশতা যোদ্ধার দেখা নেই কেন? তাই বলি, বাস্তব দুনিয়ায় ফিরে আসুন। কল্পনার জগতে থেকে যুদ্ধজয় করার স্বপ্ন না দেখে বাস্তব জগতে ২৫ গুণ বড় শত্রুকে বাধা দেওয়ার শক্তি না থাকার কারণেই যথার্থ ‘মিত্র’ খোঁজায় ব্যস্ত হোন। ‘যথার্থ’ বলছি এ কারণে যে কাগুজে বাঘদের সঙ্গে মিত্রতা করে লাভ নেই। পাকিস্তান তো নিজেকেই আর সামলাতে পারছে না। আর তারা যে কত ভালো-তা তো আমরা ১৯৭১ সালেই দেখেছি। আর চীন বা জাতিসংঘ? আগে চীনের কথাই বলি। ১৯৪৯ সাল থেকেই তারা তাইওয়ানকে নিয়ে হাজার হাজার বার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। ভাবসাব দেখলে মনে হয়, তারা আগামীকালই তাইওয়ান দখল করে ফেলবে। কিন্তু সেই ‘কাল’ ৭৫ বছর ধরেই ‘কাল’ হয়ে রইল। ক্ষুদ্রকায় ‘তাইওয়ান’ এখন উন্নয়নের দিক থেকে জাপানকে ‘টেক্কা’ দিচ্ছে। ভেবে দেখুন, ক্ষুদ্রকায় তাইওয়ানের পেছনে আছে কোন বড় শক্তি? সে কারণেই মহাচীন মাত্র ১০০ মাইল দূরের ছোট্ট দ্বীপটিকে দখল করতে পারছে না, অথচ বারবার দাবি করে যাচ্ছে যে তারা নাকি এখন দুনিয়ার অন্যতম বৃহৎ শক্তি।
এরপর বলি জাতিসংঘের কথা। নখ বা দন্তবিহীন জাতিসংঘ শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত-কাগুজে বাঘ আর কাকে বলে? Defense Pact বা যথার্থ সামরিক চুক্তি বা Treaty না থাকলে বিপদের সময় সবাই শুধু বক্তৃতা-বিবৃতি মানে কোনো রকম দায়সারাগোছের সমর্থন দিয়েই ক্ষান্ত হবে-কাজের বেলায় ঘোড়ার আণ্ডা। Google করে দেখুন, এ বিশ্বে সবচেয়ে Defense Treaty রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, বাহরাইন, ফিলিপাইন, জাপান এমনকি সৌদি আরবও চুক্তি করল বলে। একটি ক্ষুদ্রকায় দ্বীপ খবধংব দিতে চাচ্ছেন না কিন্তু ভারত আক্রমণ করলে সমগ্র বাংলাদেশ যে মাস দুয়েকের মধ্যেই গিলে খাবেÑতখন কী হবে? বিদেশি সাহায্যের আশায় কি তখন বসে বসে আঙুল চুষবেন?
১৯৭১ সালে ১২০০ মাইল দূর থেকে আগত পাকিস্তানি দুর্বৃত্তরা কি মাত্র ৩০ দিনেই সমুদ্র, পূর্ব বাংলা দখল করে নেয়নি? পেরেছিলাম কি আমরা তাদের ঠেকিয়ে রাখতে? যদিও শতকরা ৯৬ ভাগ মানুষই স্বাধীনতাযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন। অবশ্য আমাদের অত্যন্ত গলাবাজ, সাধারণ বুদ্ধিহীন বড় নেতা সাহায্য করতে উদ্্গ্রীব দূরদর্শী, মহৎ হৃদয় ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যোগাযোগ না করে আমাদেরই চরম শত্রু ইয়াহিয়া-ভুট্টোর সঙ্গে তথাকথিত আলোচনায় মত্ত হলেন পাকিস্তানকে টিকিয়ে রেখে সে দেশেরই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার এক আশায়। সাতই মার্চের বক্তৃতা শুনে শুনে মগজ ধোলাই হয়ে যাওয়া নতুন প্রজন্মের মানুষ এসব অতীব সত্য ঘটনার আর কতটুকুই-বা জানেন?
যাহোক, মূল কথায় ফিরে আসি। এটা ১৯৭১ সাল নয়। এক জঘন্য বর্ণবাদী, অমানুষ পশুশক্তি ‘মোদি’ ও তার নিকৃষ্টতম সাম্প্রদায়িক বিজেপির খপ্পরে পড়ে যাওয়া ভারত সরকার এখন পাঁয়তারায় লিপ্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম দিয়ে শুরু করে নানা অছিলায় সমগ্র বাংলাদেশকেই গিলে ফেলে তাদের চিরস্বপ্ন অখণ্ড ভারত কায়েম করার এক অদম্য বাসনায়। এ যুগের বিরাট শক্তি, বিশাল বাজার ভারতকে খেপিয়ে কেউ যুদ্ধের ঝুঁকি নিতে আসবে না অনেক ছোট বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে। তাই সময় থাকতেই আমাদের তা-ই করতে হবে, যা করে টিকে আছে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, কাতারসহ দুনিয়ার ছোট-বড় কমবেশি ৫০টি রাষ্ট্র। Very Simple to Understand.
বি. দ্র. এ নিবন্ধটি লিখেছিলাম ৫ নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনের আগে। সবারই ধারণা ছিল ডেমোক্র্যাটিক দলের কমলা হ্যারিসই এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। কিন্তু মাত্র আট বছরের ব্যবধানে দু-দুবার মার্কিনিরা যোগ্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করল না, শুধু তারা ‘নারী’ বলেই। নারী অধিকার নিয়ে যারা সদাই সোচ্চার দুনিয়াজুড়ে, তারা নিজেরাই ‘নারী’ প্রেসিডেন্ট চায় না তাদের নিজেদের দেশে। মনে মনে ভাবি, ধর্মের নামে নারীদের পুরুষের সমান মর্যাদা দিতে অস্বীকার করা ‘তালেবানদের’ সঙ্গে তাহলে মার্কিনিদের আর তফাতটা রইল কোথায়?
যাহোক ‘ট্রাম্প’ সাহেবের ভূমিধস বিজয় সারা দুনিয়ার রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনাকে ওলট-পালট করে দিল। যেসব মুসলিম ভাই ‘গাজা’ নীতির কারণে বাইডেনকে গালাগাল করে ট্রাম্পকে এবার ভোট দিয়েছেন, তারা আসলেই ট্রাম্পকে মোটেও জানেন না। এবার ট্রাম্পের আসল রূপ অর্থাৎ ধর্ম ও বর্ণের কারণে কে কত বেশি ‘সাম্প্রদায়িকতা’য় বিশ্বাস করেন, তারই নমুনা এ বিশ্ব দেখতে পাবে। আফগানিস্তানের তালেবানরা তো অন্য দেশ দখল করে না। কিন্তু মার্কিনি ও ইসরায়েলি তালেবানরা কেমন করে চরম মানবতাবিরোধী Double Standard ধরনের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে, সারা দুনিয়ায় এবার দেখা যাবে বৈকি?