বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির কাছে এক অনন্য অনুভূতির মাস। বিজয়ে সীমাহীন আনন্দ। স্বাধীনতা মানুষের জীবনে পরম পাওয়া। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু নেই। এক তুলনাহীন পাওয়ায় আনন্দ। গলা খুলে গাইতে ইচ্ছে করে, ‘আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে।’ স্বাধীনতা নিয়ে মানুষের কত আবেগ, কত আদিখ্যেতা। ‘স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে’। স্বাধীনতা ব্যতীত বাঁচাটা অর্থহীন। পায়ে শিকল পরে কেউ স্বাধীনতার গান গাইতে পারে না। স্বাধীনতা যে কী, তা বুঝি ব্যাখ্যার অতীত। পরাধীন জীবন, নিজেকে বিকশিত না করতে পারার জীবন। নিজের সব প্রতিভা জলাঞ্জলি দিয়ে প্রভুর দাসত্ব করার যন্ত্রণা ভোগের জীবন। ‘যারা স্বর্গগত, তারা এখনো জানে, স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি’। এ জন্মভূমি আর কিছু নয়, স্বাধীন স্বদেশ।
ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ আমাদের চিরকাক্সিক্ষত বিজয়ের দিন। পাকিস্তানি বাহিনির বিরুদ্ধে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিজয়ের দিন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা যত লড়াই-সংগ্রাম করে দাবি আদায় করেছে, সব আন্দোলন সংগ্রামেই তাদের জীবন দিতে হয়েছে। তবে বাঙালিদের নিজস্ব জাতীয় পতাকা ওড়াতে এবং জাতীয় সংগীত গাওয়ার অধিকার আদায় করতে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, তা তুলনাহীন। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা অর্জনের পথে ডাক দিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই বাঙালিদের যার যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার ডাক দিলেন। সে ডাকে মুষ্টিমেয় কিছু বাঙালি সাড়া না দিলেও প্রায় সমগ্র বাঙালি জাতি চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সংগ্রামে।
দুনিয়ার মানুষ মনে করল, এই অসম লড়াইয়ে বাঙালিদের বিজয় প্রায় অসম্ভব। সেই অসম্ভবকে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের ভেতরের মানুষদের অকুণ্ঠ সমর্থন আর সহযোগিতায় সম্ভব করে তোলেন। ২৪ বছর ধরে পূর্ব পাকিস্তানকে উপনিবেশ বানিয়ে শোষণ-বঞ্চনা এবং অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়ে বাঙালিদের দাস বানিয়ে ফেলার যে চক্রান্ত নিয়ে পাক শাসককুল অগ্রসর হচ্ছিল, তাকে ঠেকিয়ে দেয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে অল পাকিস্তান শাসনের যে ম্যান্ডেট পান, সেই ফলাফলকেও ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো যৌথ ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। ১ মার্চ ১৯৭১-এ পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করে দেয়। ইয়াহিয়া-ভুট্টোর এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে আগুন জ্বলে ওঠে। সে সময় পূর্ব পাকিস্তান শাসিত হতে থাকে মূলত শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায়। সে সময় সংলাপের প্রহসন করে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করে বাঙালিদের নিধন করে তাদের শাসন অটুট রাখা হয়। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের নির্দেশ দিয়ে ইয়াহিয়া, ভুট্টোসহ সংলাপে অংশ নেওয়া পাকিস্তানের সকল সামরিক ও অসামরিক নেতারা রাতের অন্ধকারে পশ্চিম পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর। পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা ইউনিভার্সিটির হলসমূহ, বিশেষ করে হিন্দু ছাত্রদের জগন্নাথ হলকে বধ্যভূমিতে রূপান্তরিত করে।
কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী ফাঁকা মাঠ পায়নি। ২৬ মার্চ থেকেই বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে প্রতিরোধে নেমে পড়ে। অবশেষে ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিরা বিজয়ের পতাকা ওড়ান। কিন্তু যে মুক্তির লড়াইয়ে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হলেন, ২ লক্ষাধিক মা-বোন সম্ভ্রম হারালেন, ৫৩ বছরেও মানুষ মুক্তি পেল না। স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। বিজয়ের পর মানুষের দুর্ভোগ, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা শেষ হলো না। স্বাধীনতার পর কতবার পরিবর্তন হলো শাসন পরিচালনায়, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন এল না। সর্বশেষ পরিবর্তন জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। এবারও পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। তবু আমরা আশাবাদী। পরিবর্তন হবেই এবং যে পরিবর্তন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আনবে। আমাদের আজকের আশাবাদ আগামীকাল বাস্তবে রূপ নেবে। সেই আশা বুকে বেঁধে আমরা আজও দিন কাটাই। লড়াই-সংগ্রাম করে চলি।
সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাসহ সব শহীদের প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা।
ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ আমাদের চিরকাক্সিক্ষত বিজয়ের দিন। পাকিস্তানি বাহিনির বিরুদ্ধে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে বিজয়ের দিন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা যত লড়াই-সংগ্রাম করে দাবি আদায় করেছে, সব আন্দোলন সংগ্রামেই তাদের জীবন দিতে হয়েছে। তবে বাঙালিদের নিজস্ব জাতীয় পতাকা ওড়াতে এবং জাতীয় সংগীত গাওয়ার অধিকার আদায় করতে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, তা তুলনাহীন। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা অর্জনের পথে ডাক দিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই বাঙালিদের যার যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করার ডাক দিলেন। সে ডাকে মুষ্টিমেয় কিছু বাঙালি সাড়া না দিলেও প্রায় সমগ্র বাঙালি জাতি চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল সংগ্রামে।
দুনিয়ার মানুষ মনে করল, এই অসম লড়াইয়ে বাঙালিদের বিজয় প্রায় অসম্ভব। সেই অসম্ভবকে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের ভেতরের মানুষদের অকুণ্ঠ সমর্থন আর সহযোগিতায় সম্ভব করে তোলেন। ২৪ বছর ধরে পূর্ব পাকিস্তানকে উপনিবেশ বানিয়ে শোষণ-বঞ্চনা এবং অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়ে বাঙালিদের দাস বানিয়ে ফেলার যে চক্রান্ত নিয়ে পাক শাসককুল অগ্রসর হচ্ছিল, তাকে ঠেকিয়ে দেয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে অল পাকিস্তান শাসনের যে ম্যান্ডেট পান, সেই ফলাফলকেও ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো যৌথ ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। ১ মার্চ ১৯৭১-এ পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত করে দেয়। ইয়াহিয়া-ভুট্টোর এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে আগুন জ্বলে ওঠে। সে সময় পূর্ব পাকিস্তান শাসিত হতে থাকে মূলত শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায়। সে সময় সংলাপের প্রহসন করে পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তানি বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করে বাঙালিদের নিধন করে তাদের শাসন অটুট রাখা হয়। ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের নির্দেশ দিয়ে ইয়াহিয়া, ভুট্টোসহ সংলাপে অংশ নেওয়া পাকিস্তানের সকল সামরিক ও অসামরিক নেতারা রাতের অন্ধকারে পশ্চিম পাকিস্তানে পালিয়ে যায়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে পাকিস্তানি সেনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরীহ ঘুমন্ত বাঙালিদের ওপর। পিলখানা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা ইউনিভার্সিটির হলসমূহ, বিশেষ করে হিন্দু ছাত্রদের জগন্নাথ হলকে বধ্যভূমিতে রূপান্তরিত করে।
কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী ফাঁকা মাঠ পায়নি। ২৬ মার্চ থেকেই বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ মেনে প্রতিরোধে নেমে পড়ে। অবশেষে ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিরা বিজয়ের পতাকা ওড়ান। কিন্তু যে মুক্তির লড়াইয়ে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হলেন, ২ লক্ষাধিক মা-বোন সম্ভ্রম হারালেন, ৫৩ বছরেও মানুষ মুক্তি পেল না। স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। বিজয়ের পর মানুষের দুর্ভোগ, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা শেষ হলো না। স্বাধীনতার পর কতবার পরিবর্তন হলো শাসন পরিচালনায়, কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন এল না। সর্বশেষ পরিবর্তন জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। এবারও পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। তবু আমরা আশাবাদী। পরিবর্তন হবেই এবং যে পরিবর্তন মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আনবে। আমাদের আজকের আশাবাদ আগামীকাল বাস্তবে রূপ নেবে। সেই আশা বুকে বেঁধে আমরা আজও দিন কাটাই। লড়াই-সংগ্রাম করে চলি।
সবাইকে বিজয়ের শুভেচ্ছা। একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাসহ সব শহীদের প্রতি আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা।