লোকসানি কোম্পানি বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করবে সরকার

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:১৭ , অনলাইন ভার্সন
বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাক খাতের ১৬টি কোম্পানির মালিকানা বিক্রি করে দেবে সরকার। এর বাইরে এই বেশ কিছু কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসসহ শুধু লাভজনক কোম্পানিগুলো চালু থাকবে। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে গঠিত ১১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ২৮ নভেম্বর ১১ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির সভায় বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির বিষয়ে এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে, গত ২৪ নভেম্বর ‘বেক্সিমকো শিল্প পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটি’ গঠন করে। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে আহ্বায়ক করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট এই উপদেষ্টা কমিটি গঠিত হয়। গত ২৮ নভেম্বর ছিল এই কমিটির প্রথম বৈঠক।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সব মিলিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের কোম্পানির সংখ্যা ১৬৯। এর মধ্যে পোশাক খাতের কোম্পানির সংখ্যা ৩২। সবগুলো কোম্পানিই উৎপাদনে রয়েছে। এই ৩২টি কোম্পানির ১৬ টির মালিকানা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বেক্সিমকো গ্রুপের যেসব প্রতিষ্ঠান লোকসানে চলছে, সেগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন-ভাতা পরিশোধের পর বন্ধ করে দেওয়া হবে।

কমিটির প্রথম সভার কার্যবিবরণী অনুযায়ী, সভায় বেক্সিমকো গ্রুপের ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানকে এ, বি ও সি—এই তিন শ্রেণিতে ভাগ করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে ‘এ’ অর্থাৎ ভালো কোম্পানির শ্রেণিতে থাকবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। ‘বি’ শ্রেণিতে থাকবে ৩২টি কোম্পানি। আর বাকি সব কোম্পানি থাকবে সি শ্রেণিতে।

বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর এই শ্রেণিবিভাজনের প্রস্তাব দেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী। তার ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতে বেক্সিমকো গ্রুপের বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটির প্রথম সভায় চারটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রথমত বেক্সিমকো শিল্প পার্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিকদের আগামী তিন মাসের বেতন-ভাতার প্রয়োজনীয় অর্থ জোগান দেবে জনতা ব্যাংক। দ্বিতীয়ত, ‘বি’ শ্রেণির কোম্পানিগুলোর স্বত্ব বিক্রির জন্য এক্সপ্রেশন অব ইন্টারেস্ট (ইওআই) চূড়ান্ত করে ঋণদাতা জনতা ব্যাংক আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে জানাবে। তৃতীয়ত, হাইকোর্টে চলমান রিটের জবাব তৈরির জন্য একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করে প্রশাসকের কার্যপরিধি চূড়ান্ত করা। আইনজীবী নিয়োগের প্রয়োজনীয় খরচ দেবে অর্থ বিভাগ। চতুর্থত, এক সপ্তাহের মধ্যে বেক্সিমকোর কোম্পানিগুলোর শেয়ার হস্তান্তরের নিয়ন্ত্রণ নেবে কর্তৃপক্ষ, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব থাকবে বিএসইসি ও বেক্সিমকোর প্রশাসকের হাতে।

সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘শিল্পের শ্রমিকদের মজুরিসহ সার্বিক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু সম্প্রতি শ্রমিকেরা তাদের বকেয়া ও ন্যায্য মজুরি না পেয়ে প্রায়ই রাস্তাঘাট বন্ধসহ বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। ফলে পোশাকসহ অন্য খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।’

বেক্সিমকো গ্রুপ নিয়ে উপদেষ্টা কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করবেন না। বি শ্রেণির কোম্পানিগুলোর স্বত্ব বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন, কেউ কিনতে না চাইলে কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে শ্রমসচিব বলেন, ‘একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগে চেষ্টা করি। দেখিই না কী করা যায়। পোশাক খাতের কারখানাগুলো চালানোর জন্য আগে বিদেশি ক্রেতাদের আহ্বান জানানো হবে। আর কিছু কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দিয়ে পরিচালনার ব্যবস্থা করবে বিএসইসি।’

বেক্সিমকো গ্রুপকে সবচেয়ে বেশি অর্থায়ন করেছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংক। ফলে গ্রুপটি থেকে ঋণ আদায় না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে ব্যাংকটি। এ অবস্থায় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জনতা ব্যাংকের এমডি মজিবুর রহমান বলেন, ‘বেক্সিমকোর শ্রমিক-কর্মচারীদের তিন মাসের বেতন-ভাতা ও মজুরি বাবদ পরিশোধ করতে হবে ১৮০ কোটি টাকা। ব্যাংকের পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারকে জানাব। আর বি শ্রেণির কোম্পানিগুলোর জন্যও প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করব বিডাকে।’

গত ২৮ নভেম্বর উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান অংশ নেন। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান, অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, বেক্সিমকো লিমিটেডের রিসিভার মো. রুহুল আমিন এবং বেক্সিমকো গ্রুপকে ঋণ দেওয়া জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মজিবুর রহমানসহ আরও অনেকে।

ঠিকানা/এসআর
M M Shahin, Chairman Board of Editors, Thikana

Corporate Headquarter :

THIKANA : 7409 37th Ave suite 403

Jackson Heights, NY 11372

Phone : 718-472-0700/2428, 718-729-6000
Fax: + 1(866) 805-8806



Bangladesh Bureau : THIKANA : 70/B, Green Road, (Panthapath),
5th Floor, Dhaka- 1205, Bangladesh.
Mobile: 01711238078