কথায় বলে, দুজন বাঙালি মিলে যদি কিছু একটা প্রতিষ্ঠা করে, কিছুদিন পরই দেখা যাবে সেটা দুভাগ করে দুজন দুই ভাগের প্রধান হয়ে বসেছে। স্বদেশে ভাঙনের এই খেলা চলছেই। দেশ ছেড়ে আমরা যারা পরবাসে এসে বাস গড়েছি, দেখা যাবে যত অঞ্চলের মানুষ রয়েছি, সেই সব অঞ্চলের নামে একেকটা সংগঠন গড়ে তুলেছি। প্রথম প্রথম কী প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা, মধুর সম্পর্ক একে অপরের সঙ্গে। সবাই সবার আত্মার পরম আত্মীয়। প্রথম প্রথম এ রকম মাখামাখিÑএকেক সময় একেক জনের বাড়িতে সংগঠনের সবার দাওয়াত, নেমন্তন্ন, অঢেল খাওয়াদাওয়া।
কিছুদিন পরই হয়তো দেখা যাবে এই হৃদ্যতায় ফাটল ধরেছে। ভালোবাসা ফিকে হতে শুরু করেছে। একজনকে দেখলে আরেকজনের মুখ ভারি। চোখ ফিরিয়ে নেওয়া। ঢলঢল ভাব উবে গেছে। আর নেমন্তন্ন নেই। খাওয়াদাওয়ার আগের সেই উৎসব উৎসব ভাব নেই। ভাঙনের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পাবেÑসবার একসঙ্গে বসে হাসি-ঠাট্টা নেই। পরিষ্কার বুঝতে পারা যাবে, গ্রুপে গ্রুপে বসে কয়েকজনের আলাদা চলাফেরা, পৃথক ওঠাবসা। এক কার্যালয়ে বসলেও বুঝতে পারা যায়Ñতারা আর এক নেই, দুই হয়ে গেছে। ঐক্যে ফাটল ধরেছে। প্রথমে চুলের মতো চিকন ফাটল, যা প্রায় চোখেই পড়ে না। সেই ফাটল ধীরে ধীরে বড় হতে হতে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ঐক্যবদ্ধ থাকাই গেল না। শেষ পরিণতি সংগঠন আলাদা। সাইনবোর্ড আলাদা। অফিস নিজস্ব হলে তার দখল নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা।
সংগঠনের যারা বয়স্ক, সেই মুরব্বিদের বারবার চেষ্টা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। কখনো কখনো সাময়িকভাবে ঐক্যের প্রয়াস সফল হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা দীর্ঘস্থায়ী হতে দেখা যায়। কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই ঐক্যে আবার ফাটল এবং এক বা একাধিক বিভক্তি। কোনো সালিস বা ঐক্যপ্রক্রিয়াই টেকসই হয় না। ঠিকানার পাঠককুল নিশ্চয় এবার কিছু দৃষ্টান্ত দেখতে চাইবেন। কথার পাশাপাশি যদি চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যায়, তার ওপর দৃঢ় আস্থার ভিত্তিটা আরও জোরালো হয়।
অতিসাম্প্রতিক ঘটনা, যেটা ঠিকানার ১৩ নভেম্বর সংখ্যায় শেষের পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে ‘ভাঙলো চট্টগ্রাম সমিতি’ শিরোনামে। গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাচন হয়। ভোটাররা ভোট দিয়ে সমিতির কর্মকর্তা নির্বাচিত করেন। ফলাফলও ঘোষিত হয়। সেই ফলাফলে মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষসহ ১৩ জনকে এবং তাদের প্রতিপক্ষ প্যানেলের ছয়জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু এই ফলাফল ঘোষণার ছয় দিন পর সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্য আরেকটি ফলাফল ঘোষণা হলে তা মাকসুদ-মাসুদ প্যানেল প্রত্যাখ্যান করে। বিজয়ী ছয় কর্মকর্তা ভবনের দখল নিয়ে ভবনের মধ্যে শপথ নেন। আর মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের বিজয়ী ১৩ জন ভবনের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে শপথ নেন। এই বিভেদ নিরসন না হওয়ায় প্রবাসের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতি নিশ্চিত ভাঙনের মুখোমুখি। এটা হয়েই চলছে।
শুধু যে চট্টগ্রাম সমিতি এই ভাঙনের মুখে তা নয়, প্রবাসের আরও বড় বড় সংগঠন এরই মধ্যে ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙনের শিকার হয়েছে আরেকটি বড় এবং মর্যাদাসম্পন্ন সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের ক্রয়কৃত বাড়ি বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে। দীর্ঘদিনের একটা প্রভাবশালী ও বড় সংগঠন ছিল জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। এরপর ভাঙনের তালিকায় আছে সিলেট সদর থানা অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা জেলা অ্যাসোসিয়েশন, কুলাউড়া অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজার্সি। এর বাইরেও হয়তো বিভক্ত সংগঠনের তালিকায় আরও সংগঠনের নাম রয়েছে। প্রবাসে এত এত সংগঠন যে, কখন কোন নতুন সংগঠন জন্ম নিচ্ছে এবং কোন সংগঠন ভাঙছে, নিত্য তার খবর রাখা বা খবর পাওয়া কঠিন।
সংগঠনের এসব ভাঙাভাঙিতে সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের যে খুব একটা হাত বা উসকানি থাকে, তেমনটা নয়। বলা যায়, এসব ভাঙিভাঙিতে সংগঠনের সাধারণ সদস্য এবং প্রবাসীরা দুঃখ পান, ক্ষুব্ধ হন। তারা অসহায়ের মতো এসব ভাঙন দেখেন এবং কষ্ট পান। এসব ভাঙাভাঙিতে কোনো আদর্শগত দ্বন্দ্ব থাকে না। এসব ভাঙনের পেছনে সাধারণত কমিটির কর্মকর্তাদের অন্তর্দ্বন্দ¦ ও স্বার্থগত কারণ কাজ করে। সাধারণ প্রবাসীরা কামনা করেন সবাই মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করতে। তারা মনে করেন, নিজেদের মধ্যে ঐক্য থাকলে, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি থাকলে প্রবাসের জীবন অনেক সহজ, আনন্দময় হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। প্রবাসজীবনে শক্তি ও সাহস নিয়ে বসবাস করা যায়। কিন্তু সব সংগঠনেই কিছু পদলোভী মানুষ থাকে। তারা কোনো সংগঠনে ঢুকেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা কোনো কর্মকর্তার পদ প্রত্যাশা করে। তাদের এই অতিপ্রত্যাশাই সংগঠন ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের কামনা, এই পদ প্রত্যাশার কারণে যেন আর কোনো ভাঙন বা অনৈক্য দেখা না দেয়। প্রবাসে আমরা একে অপরের ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু। একে অপরের পাশে থাকলে আমরা আরও ভালো থাকব। ঐক্যই শক্তিÑএই কথাটা সব সময় মনে রাখা খুব জরুরি।
কিছুদিন পরই হয়তো দেখা যাবে এই হৃদ্যতায় ফাটল ধরেছে। ভালোবাসা ফিকে হতে শুরু করেছে। একজনকে দেখলে আরেকজনের মুখ ভারি। চোখ ফিরিয়ে নেওয়া। ঢলঢল ভাব উবে গেছে। আর নেমন্তন্ন নেই। খাওয়াদাওয়ার আগের সেই উৎসব উৎসব ভাব নেই। ভাঙনের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পাবেÑসবার একসঙ্গে বসে হাসি-ঠাট্টা নেই। পরিষ্কার বুঝতে পারা যাবে, গ্রুপে গ্রুপে বসে কয়েকজনের আলাদা চলাফেরা, পৃথক ওঠাবসা। এক কার্যালয়ে বসলেও বুঝতে পারা যায়Ñতারা আর এক নেই, দুই হয়ে গেছে। ঐক্যে ফাটল ধরেছে। প্রথমে চুলের মতো চিকন ফাটল, যা প্রায় চোখেই পড়ে না। সেই ফাটল ধীরে ধীরে বড় হতে হতে শেষ পর্যন্ত দেখা গেল ঐক্যবদ্ধ থাকাই গেল না। শেষ পরিণতি সংগঠন আলাদা। সাইনবোর্ড আলাদা। অফিস নিজস্ব হলে তার দখল নিয়ে মামলা-মোকদ্দমা।
সংগঠনের যারা বয়স্ক, সেই মুরব্বিদের বারবার চেষ্টা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। কখনো কখনো সাময়িকভাবে ঐক্যের প্রয়াস সফল হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা দীর্ঘস্থায়ী হতে দেখা যায়। কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই ঐক্যে আবার ফাটল এবং এক বা একাধিক বিভক্তি। কোনো সালিস বা ঐক্যপ্রক্রিয়াই টেকসই হয় না। ঠিকানার পাঠককুল নিশ্চয় এবার কিছু দৃষ্টান্ত দেখতে চাইবেন। কথার পাশাপাশি যদি চাক্ষুষ দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যায়, তার ওপর দৃঢ় আস্থার ভিত্তিটা আরও জোরালো হয়।
অতিসাম্প্রতিক ঘটনা, যেটা ঠিকানার ১৩ নভেম্বর সংখ্যায় শেষের পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়েছে ‘ভাঙলো চট্টগ্রাম সমিতি’ শিরোনামে। গত ২০ অক্টোবর চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাচন হয়। ভোটাররা ভোট দিয়ে সমিতির কর্মকর্তা নির্বাচিত করেন। ফলাফলও ঘোষিত হয়। সেই ফলাফলে মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের সভাপতি ও কোষাধ্যক্ষসহ ১৩ জনকে এবং তাদের প্রতিপক্ষ প্যানেলের ছয়জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে। কিন্তু এই ফলাফল ঘোষণার ছয় দিন পর সোশ্যাল মিডিয়ায় অন্য আরেকটি ফলাফল ঘোষণা হলে তা মাকসুদ-মাসুদ প্যানেল প্রত্যাখ্যান করে। বিজয়ী ছয় কর্মকর্তা ভবনের দখল নিয়ে ভবনের মধ্যে শপথ নেন। আর মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের বিজয়ী ১৩ জন ভবনের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে শপথ নেন। এই বিভেদ নিরসন না হওয়ায় প্রবাসের অন্যতম বৃহৎ সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতি নিশ্চিত ভাঙনের মুখোমুখি। এটা হয়েই চলছে।
শুধু যে চট্টগ্রাম সমিতি এই ভাঙনের মুখে তা নয়, প্রবাসের আরও বড় বড় সংগঠন এরই মধ্যে ভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙনের শিকার হয়েছে আরেকটি বড় এবং মর্যাদাসম্পন্ন সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের ক্রয়কৃত বাড়ি বিক্রি করাকে কেন্দ্র করে। দীর্ঘদিনের একটা প্রভাবশালী ও বড় সংগঠন ছিল জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। এরপর ভাঙনের তালিকায় আছে সিলেট সদর থানা অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা জেলা অ্যাসোসিয়েশন, কুলাউড়া অ্যাসোসিয়েশন অব নিউজার্সি। এর বাইরেও হয়তো বিভক্ত সংগঠনের তালিকায় আরও সংগঠনের নাম রয়েছে। প্রবাসে এত এত সংগঠন যে, কখন কোন নতুন সংগঠন জন্ম নিচ্ছে এবং কোন সংগঠন ভাঙছে, নিত্য তার খবর রাখা বা খবর পাওয়া কঠিন।
সংগঠনের এসব ভাঙাভাঙিতে সংগঠনের সাধারণ সদস্যদের যে খুব একটা হাত বা উসকানি থাকে, তেমনটা নয়। বলা যায়, এসব ভাঙিভাঙিতে সংগঠনের সাধারণ সদস্য এবং প্রবাসীরা দুঃখ পান, ক্ষুব্ধ হন। তারা অসহায়ের মতো এসব ভাঙন দেখেন এবং কষ্ট পান। এসব ভাঙাভাঙিতে কোনো আদর্শগত দ্বন্দ্ব থাকে না। এসব ভাঙনের পেছনে সাধারণত কমিটির কর্মকর্তাদের অন্তর্দ্বন্দ¦ ও স্বার্থগত কারণ কাজ করে। সাধারণ প্রবাসীরা কামনা করেন সবাই মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করতে। তারা মনে করেন, নিজেদের মধ্যে ঐক্য থাকলে, সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি থাকলে প্রবাসের জীবন অনেক সহজ, আনন্দময় হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। প্রবাসজীবনে শক্তি ও সাহস নিয়ে বসবাস করা যায়। কিন্তু সব সংগঠনেই কিছু পদলোভী মানুষ থাকে। তারা কোনো সংগঠনে ঢুকেই সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক বা কোনো কর্মকর্তার পদ প্রত্যাশা করে। তাদের এই অতিপ্রত্যাশাই সংগঠন ভাঙনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের কামনা, এই পদ প্রত্যাশার কারণে যেন আর কোনো ভাঙন বা অনৈক্য দেখা না দেয়। প্রবাসে আমরা একে অপরের ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু। একে অপরের পাশে থাকলে আমরা আরও ভালো থাকব। ঐক্যই শক্তিÑএই কথাটা সব সময় মনে রাখা খুব জরুরি।